ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (তৃতীয় পর্ব) ভাদুর কাহিনী ও আমার গীতিকবিতা
আনুমানিক পঠন সময় : ২ মিনিট

কবি : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৭৩০ জন পড়েছেন।
ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (তৃতীয় পর্ব)
ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


সমগ্র মানভূম এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক উৎসব হল  ভাদুপরব।এই পরবের উৎস সম্পর্কে নানা লোকগাথা প্রচলিত আছে।তবে বিশেষজ্ঞদের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত এর উৎস পুরুলিয়া জেলার কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজবাড়ী।এই রাজবাড়ীর থেকেই এই ভাদু পরবের সূচনা।ধীরে ধীরে এই পরব ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র পুরুলিয়া জেলায়।আবার পাশাপাশি অবস্থানের জন্য এই পরব ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া,বীরভূম,বর্ধমান জেলায়।


কিন্তু ভাদু পুজো কেন হয়?ভাদুর পরিচয়ই বা কি?এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় মতবাদটি হল-কাশীপুরের পঞ্চকোটরাজ নীলমণি সিং দেও-র এক কন্যা ছিলেন,যার নাম ভদ্রাবতী। খুব অল্প বয়সেই এই কন্যার মৃত্যু হয়।এই ঘটনায় শোকে মুহ্যমান রাজা প্রজাদের আদেশ দেন তাদের প্রিয় রাজকুমারী কে নিয়ে গান রচনার।প্রজারাও সেই আদেশ মেনে রাজকুমারীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গান গাইতে থাকেন ও উৎসবের আয়োজন করেন।


কাশীপুরের রাজার বিটি বাগদীঘরে কি কর।
হাতের জালি কাঁধে লয়ে সুখ সায়রে মাছ ধর।।


কাশীপুরের মহারাজা সে করে ভাদুপুজা
সন্ধ্যা হলেই ঝারইল বাজে থালে জিলিপি খাজা।


এই উৎসব কারা পালন করে সেই নিয়েও প্রচুর মতভেদ। তবে এটা বলা যায় যে এই উৎসব এই উৎসব সমগ্র মানভূম এলাকায় এক সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।


“তিরিশ দিন রাইখলাম ভাদু তিরিশ টিফুল দিয়ে
আর ত রাইখতে লাইরবঅ ভাদু চাতা হইলঅ বাদী গো।”


তবে ভাদু কে বিসর্জন দেওয়ার আগে ভাদু র মৃন্ময় মূর্তিকে বাড়ির ও গ্রামের সবাই বরণ করে। একে বলা হয় চুমানো। এরপর ভাদু কে মাথায় করে সারাগ্রাম ঘুরে ভাদু কে কোনও নদীতে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।


ভাদুকে বিসর্জনের আগে আরও একবার গ্রামের সবাই মেতে ওঠে ভাদু গান ও নাচে।এরপরই তাদের আদরের ভাদু ধন কে বিদায় দেওয়ার পালা,যদিও তাদের মন চায় না। তবুও নিয়ম তো মানতেই হয়। গ্রামের কোনো মহিলা ভাদুকে মাথায় নিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে জলাশয়ে।


জলাশয়ে আদরের কন্যাকে বিদায় দিয়ে সমস্ত গ্রামের মহিলারা সমবেতভাবে আবেগঘন কন্ঠে গেয়ে ওঠে-
“যাছঅ যদি ভাদুমনি কাঁদঅ কেনে অকারণ।
আর বছরে থাকি যদি আইনব গো প্রাণধন।”


ভাদু গানের আসর  আমার গীতিকবিতা (তৃতীয় পর্ব)
কথা - আঞ্চলিক সুর - অপ্রচলিত
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


ভাদর মাসে ভাদু-পূজা করি আমরা সকলে,
সংক্রান্তিতে বিদায় দিব অজয় লদীর জলে।
আমার ভাদু খেলতে যাবে অজয়ের বড়তলা,
মাঠে যেতে দেখবে ভাদু ওল আর কাঁচকলা।


উপর নামু কুলের গাছটি কুল কেনে ধরে না,
কুলের কাঁটা শক্ত কাঁটা পায়ে লাগলে যাতনা।
চল ভাদু চল হাট যাব হিজলগড়ার উ মাথায়,
ফুল বাতাসা গুড় বাতাসা বিক্রি হচ্যা দুটাকায়।


ভাদর মাসে ভরা লদী কুলিতে কত যেছ্যা জল,
কুলির জলে ডূবলে পরে পাবি নাকো আর থল।
আয় সরলা আয় মঙ্গলা, কুলিতে বাঁধ বাঁধাবো,
কুলির জলে সিনান করে উঠোনে চুল শুকাবো।


ভাদু তুমি কাঁদছ্য কেনে-
এ বছরে দুগ্গাপূজায় জামদানি শাড়ী দিব কিনে।


রচনাকাল : ৪/৯/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 11  France : 4  India : 105  Ireland : 23  Russian Federat : 1  Sweden : 18  Ukraine : 3  United States : 97  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 8  China : 11  France : 4  India : 105  
Ireland : 23  Russian Federat : 1  Sweden : 18  Ukraine : 3  
United States : 97  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- 2020 (তৃতীয় পর্ব) ভাদুর কাহিনী ও আমার গীতিকবিতা by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৫৯৩
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী