চোখ খুলে দেখি চারিপাশটা পুরো বদলে গেছে কিন্তু এমনটা হলো তা আজও বুঝতে পারিনি |পুতুল ভয়ের নয় খেলারও নয় |ক্ষমতাটায় এলে তো একটা মানুষও যা খুশীতাই করতে পারে কিন্তু মানুষের শাস্তি হয় পুতুলের হয়না | মেলায় পরীকে তার বাবা একটা পুতুল কিনে দিয়েছে তবে পরীর পুতুলটা বিশেষ পছন্দ ন, খেলনাটা মন্দ নয় তবে ওর মন পড়ে ছিল পক্ষীরাজ ঘোড়ার দিকে|বাড়ি ফিরতে লেট হওয়ার ওরা তিনজন একসঙ্গে খেতে বসলো হাত-পা ধুয়ে|সেদিন রাতে চিকেন বিরিয়ানি আর কষা মাংস ছিল ডিনারে আর পরীর খাবার এত পছন্দ হলো যে সে চেটেপুটে তার খাবারটা খেয়ে ফেলল |রাতে নিজের ঘরে ঘুমাতে যাবার সময় পরী দেখলো যে পুতুলটা যে জায়গায় রাখা ছিল, সেই জায়গায় নেই ;সেটা সরে গিয়েছে|ভয়ে-ভয়ে সে এগিয়ে গিয়ে পুতুলটা মোড়ক থেকে খুলে পেলো সুন্দর দেখতে পুতুলটা, তখনই ওর মা সামনে এসে একটা তুলসীপাতা আর মধু চামচ করে তাকে খাইয়ে দিলো |রাতে পুতুলটা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে গিয়ে সে এক মিষ্টি গলার স্বর শুনতে পেলো যেন কেউ ওকে ডাকছে, বলছে, "পরী আমার কাছে এসো, উঠে এসো, আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দি, তোমার চুলের বিনুনি করেদি, আমার কাছে উঠে এসো, আমাকে একটা চুমু দাও"|হঠাৎ পরীর ঘুম ভেঙে গেলো আর সে দেখলো যে একজন মহিলা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যার মুখ দেখা যাচ্ছেনা কারণ তার মুখটা পুরোটা দেখা তার লম্বা কালো চুলে ঢাকা আর তার হাতটা ফ্যাকাশে তার দিকে তাকাতে গিয়ে সে বুঝলো যে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার চোখের রং লাল আর রক্তে তার জামা ভিজে গেছে, সে পরীকে এক রাস্তার ধারে নিয়ে গেলো যেখানে একটা ফোয়ারা ছিল কিন্তু তার জলের রং বাদামী|সেই রাস্তা ধরে চলতে চলতে সে দেখতে পেলো সিঁড়ি খুব খাড়া খাড়া, তার উপরে উঠে পরী দেখলো এক আশ্চর্য দৃশ্য;সুন্দর মনোরম পরিবেশ আর চারিদিকে পাখি, গাছপালা,আর সুরেলা বাঁশীর সুর|কিন্তু তারপরেই উঠলো ঝড় আর সেই ঝরে পরী ছিটকে গেলো এক অন্ধকার কূপে|"ওঠ! মা|ওঠ!আর কতক্ষন ঘুমাবি? আজ স্কুলে যাবিনা?পরী উঠে দেখে পুতুলটা আর নেই, অনেক খুঁজেও না পেয়ে সে মনখারাপ নিয়েই স্কুলে যায়, টিফিনে স্কুলের গ্রাউন্ডে সে দেখতে পায় হঠাৎ তাকে|এখন পরী অনেক বড়ো, চাকরি করে নাম করা বিদেশী কোম্পানিতে, মা বাবা দুজনেই খুব খুশী তবুও যখন রাতে ক্যাবে করে সে বাড়ি ফেরে তার সাথে থাকে সেই এলোচুলের মেয়েটাই সেই মেয়েটা যে তাকে কোনোদিনও ছেড়ে যায়নি সেই মেয়েটা যে তার সারা জীবনের সঙ্গী না হলেও তার অভিন্ন হৃদয়ের সঙ্গী |সত্যি হয়তো তার অস্তিত্ব আসল জগতের লোকে মানে না কিন্তু সেই পরীর সত্যিকারের বন্ধু তার সঙ্গী তার সবচাইতে কাঁচের বন্ধু, কখনো কখনো তার মনে হয় যে সেই মেয়েটা বোধহয় সে নিজেই অন্য কেউ নয় |যায় হোক পরী যার আসল নাম পরী যাই হোক তার কল্পনা জগতের বন্ধুকে নিয়ে খুব খুশী|সে ভাবে না যে তার অন্য কাউকে প্রয়োজন সে শুধু খুশী থাকতে চায় তার নিজের জগতে যা বাস্তব জগৎ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা প্রত্যেক প্রেক্ষাপটে|পরিধি একজন আইটি সেক্টরে কাজ করা কর্মচারী, বড়ো পোস্টে চাকরি তার,জীবনে সব আছে কিন্তু একজনের অভাব, তার নিজের বন্ধুর ; যাকে আয়নার সামনে এলে আর দেখা যায়না |
রচনাকাল : ৪/৯/২০২০
© কিশলয় এবং পৌষালী রায় কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।