- মা, স্যার তোমাকে দেখা করতে বলেছেন - প্রথম দিন ভূগোল কোচিং থেকে ফিরে দিব্যা তার মাকে জানালো।
- আর জানতো আমার মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে মনে হল কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলেন স্যার।
- এ আবার কি কথা? যতো সব উদ্ভট চিন্তা তোর" - মেয়েকে মৃদু ধমক দেন প্রতিমা ।
- স্যার আসবো?
- হ্যাঁ আসুন। আপনি?
- আমি দিব্যার মা।
- ও হ্যাঁ , আসুন আসুন। বসুন।একটা কথা জিজ্ঞেস করবো বলে আপনাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডেকে পাঠিয়েছি, আগেই মাপ চেয়ে নিচ্ছি, প্লিজ
কিছু মনে করবেন না। দিব্যা কি আপনার নিজের গর্ভ জাত সন্তান ?
- মানে? আপনি কি বলতে চান?
- জানতাম আপনি অবাক হবেন।
প্রতিমা অবাক না হলেও মনে মনে বেশ রেগে যায় ।
"একে চেনেন?" মোবাইলে একটা ছোট মেয়ের ছবি দেখিয়ে ভূগোল স্যার প্রতিমাকে জিজ্ঞেস করেন। "ও তো দিব্যা, আমার মেয়ে "! এবার গলার জোর বাড়ে তাঁর । "না। ম্যাডাম, এটা আমার স্ত্রীর ছোটবেলার ছবি। দেখুন দু জনে একদম এক দেখতে, কোথাও একটুও অমিল নেই। চোখ, নাক, মুখের আদল সব এক!"
এবার রাগে একেবারে ফেটে পড়ে প্রতিমা। স্যারের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে ওঠে - "কি! কি বলছেন আপনি? একজনের সাথে আর একজনের মিল থাকতেই পারে , কিন্তু তার জন্য আপনি আমাকে ওই প্রশ্ন করতে পারেন না । মতলবটা কি একটু বলবেন?"
"তাহলে খুলেই বলি, আমি সস্ত্রীক পাঁচ মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার শিকার। স্ত্রীর দেহ পেলেও কন্যাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। আজও জানতামনা ও বেঁচে আছে কিনা? ও থাকলে এখন দিব্যার বয়সিই হবে। কাল ওকে দেখে আমি চমকে যাই ,অনেকক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। প্লিজ আপনি সত্যিটা বলুন। আপনার সাথে তো ওর কোনো মিল চোখে পড়ছেনা। কোথায় পেলেন ওকে?"
ভূগোল স্যারের প্রশ্নে ভেঙে পরে প্রতিমা। বলে "স্যার ,আমিও একজন আপনার ই মতো। স্বামী, স্ত্রী মিলে বাপের বাড়ি আসছিলাম। তার মাত্র সাত মাস আগে আমার বিয়ে হয়েছিল। দুর্ঘটনায় স্বামী প্রাণ হারান, বেঁচে যাই আমি তবে একটা পা গোড়ালি থেকে বাদ যায়। এই দেখুন..." - বলে গোড়ালির কাপড়টা সামান্য উঁচু করে প্রতিমা ।
" স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক ক্ষতিপূরণ এবং তাঁর ডি. ভি .সি র চাকরীটা আমি পাই। অর্থের অভাব না থকলেও বাঁচার অর্থ খুঁজে পাই না ,মা এবং বাবা অনেক দিন গত হয়েছেন ,রাহুলের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা মা ,অর্থাৎ আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ী আমার খোঁজ রাখেন নি, আমি একতরফা অনেক দিন চেষ্টা করে গেছি, লাভ হয়নি কিছু । কাজ করছি , বেঁচেও আছি, কিন্তু জীবন নেই যেন, হাহাকারে ভরা চারি দিক । এমন সময় এক দিন ডি,.ভি,সি র একজন অবসর প্রাপ্ত কর্মী আমাকে অনুরোধ করেন কিছু টাকা দিতে, এবং বলেন তাঁর বাড়ির কাজের লোক কোথা থেকে একটি ফুট ফুটে মেয়ে এনেছে, যার কোনো দাবিদার নাই ।আমার বাসার কাছে হওয়ার দরুন কৌতূহলবশত সেখানে যাই এবং কিছু সাহায্য করবো ঠিক করি। টাকার বদলে পিলু আমাকে দেখা মাত্র শিশুটি কে আমার কোলে দেয় আর আমিও পরম মমতায় ওঁকে আঁকড়ে ধরি, বাঁচার অর্থও যেন খুঁজে পাই, সেই থেকে ও আমার কাছে বড়ো হচ্ছে। হয়তো ও আপনার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ,তবু আমার অধিকার ওর উপর কিছু কম নয়। অবাস্তব কিছু দাবী না করলেই খুশী হব।"
রচনাকাল : ১/৯/২০২০
© কিশলয় এবং ইলা কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।