কিছু কথা কিছু স্মৃতি
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখিকা : লিজা মন্ডল
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৫ টি লেখনী ২২ টি দেশ ব্যাপী ৯৪৫৩ জন পড়েছেন।
"যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয় , তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি , এ ক্ষেত্রে তিনজন সমাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা , মা এবং শিক্ষক।" 
শিক্ষক সম্পর্কে ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম এমনটাই মনে করেন। একজন মানুষের সাফল্যের পিছনে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জন্ম থেকে আমৃত্যু শিখে যাই আমরা । আর প্রত্যেক ক্ষেত্রে এক এক জন মানুষের কাছে শিক্ষা নিয়ে থাকি । একজন আদর্শ শিক্ষক কেবলমাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয় , তিনি তার ছাত্রছাত্রীকে জীবনে চলার পথে পরামর্শ দেবেন , সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ্য স্থির করে দেবেন। শুধুমাত্র জীবনে সফল হওয়া নয় , কিভাবে একজন ভালো মানুষ হতে হয় সে শিক্ষাও শিক্ষকরাই দিয়ে থাকেন। 

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশে কোনো বিখ্যাত শিক্ষক কিংবা উলেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনকে উপলক্ষ কোরে  এই দিবস পালন করা হয়। যেমন -- ১১ই সেপ্টেম্বর ডোমিনো ফসটিনো সারমেন্টটোর মৃত্যু দিবসে আর্জেন্টিনা শিক্ষক দিবস পালন করে। যদিও ভারত প্রথাগতভাবে হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে আষাঢ়  ( জুন--জুলাই )মাসের পূর্ণিমাতে গুরু পূর্ণিমা পালন করে। এই ব্যাপারে ওই আধ্যাত্মিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকদের মঙ্গলকামনায় নিবেদনের একটা সুযোগ বলা যেতে পারে। ১৯৬২ সাল থেকে সার্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনের দিন মানে ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক দিবসগুলোর মতো একই সাথে সারা বিশ্বে পালিত না হয়ে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে শিক্ষক দিবস পালিত হয়।

আমাদের জন্মের পর যেদিন থেকে আমাদের সামান্য কিছু জ্ঞান হয় ঠিক সেই দিন থেকে জীবনভর , প্রতিদিন , প্রতি মুহূর্তে আমরা শিখি। জীবন ধারণের রোজনামচা আমাদের প্রায় প্রতিদিনের অভিজ্ঞায় কতো কিছুই তো শিখতে বাধ্য হই। আমরা ঠেকে শিখি আবার ঠকেও শিখি । সেই ভাবে দেখতে গেলে , নার্সারী স্কুলে ভর্তির আগে পর্যন্ত আমরা বাড়িতেই  বাংলা অ আ ক খ , ইংরেজী A B C D বর্ণমালা , ১ থেকে ১০০ বা 1 থেকে 100 এছাড়াও ছড়া , রঙ চেনা , পশু পাখিদের ছবি দেখে চিনতে শেখা , রামায়ণের গল্প এছাড়াও নাচ গানের প্রাথমিক পর্ব , আবৃত্তি করা এতো কিছু শেখার হাতেখড়ি কিন্তু মা-বাবার কাছে। হামাগুড়ি বয়স থেকে হাঁটতে শেখা সবই তাদের কাছে। আমাদের বাবা ও মা -ই আমাদের প্রথম ও পরম গুরু। জীবনের অন্যতম শিক্ষক। 

এরপরেই নার্সারী বা প্রাথমিক শিক্ষার ভার পরে স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকার ওপর। তাদের স্নেহে , প্রশ্রয়ে , শিক্ষায় , সাহমর্মিতায় , মরমী সমালোচনায় , চরিত্র গঠনের দৃঢ় শিক্ষায় আমরা ঋদ্ধ হতে থাকি ক্রমশ ।
তারপরে , আর একটু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকার শিক্ষাদানের পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয়। আমাদের প্রত্যেকটি আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঠিক কি হবে ? ছোট থেকেই উচিত অনুচিতের বোধ আমরা শিখি তাদের কাছেই। বেশ মনে আছে আজও , কিছু শিক্ষিকারা ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীলা , আবার প্রয়োজনে ভীষণ কঠোর। আমাদের বাংলার শিক্ষিকা ছিলেন এমন গুণেরই অধিকারিণী । আজ যেটুকু লেখা খাতায় লিপিবদ্ধ করার ক্ষমতা রাখি তা শুধুমাত্র তাঁরই কৃপায় । তিনি যদি আমাদের ওই ভাবে কঠোর হয়ে  প্রতি অধ্যায় না পড়াতেন তাহলে আজ দুটো কথা লেখার ক্ষমতাও থাকতো না। আমি গার্লসস্কুলেই পড়তাম। স্কুলের সমস্ত নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতাম। সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ও আমাদের মধ্যে সাহিত্যের বীজ বুনে দেওয়া , পরীক্ষার খাতায় হাতের লেখা ভালো করা থেকে , বাংলা ব্যাকারণ ও ইংরেজী গ্রামারের ভীত গড়ে দেওয়া , এছাড়াও ইতিহাস , ভূগোল প্রায় ছবির মতো করে বুঝিয়ে দেওয়া সবই যেনো আজ সুখস্মৃতি। আজ মনে পড়ছে কিভাবে দিদিমনিরা অঙ্কের জটিল তত্ত্বগুলো ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে ভেঙে ভেঙে বুঝিয়ে দিতেন , রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানকে ভালোবাসতে শেখানো সমস্ত কিছুই তাঁরা আমাদের উজাড় করে দিয়েছেন। আমাদের স্কুলের দিদিমনিরা ছিলেন ছাত্রীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
স্কুলের গন্ডী পেড়িয়ে যেদিন কলেজে গিয়েছিলাম , সেদিন প্রফেসরদের উষ্ণ স্নেহ ও ভাবোচ্ছাসে নিজেদেরকে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম । ক্লাসে তাঁদের লেকচারে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতাম। আবার কোনো কোনো ক্লাসে তটস্থ থাকতাম প্রফেসরদের চোখ রাঙ্গানির কাছে। তাঁরাও প্রত্যেকে ছিলেন বাড়ির অভিভাবকের মতো। বেশ আনন্দময় পরিমণ্ডল যাকে বলে।

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ( ৫ই সেপ্টেম্বর,১৮৮৮ -- ১৭ই এপ্রিল , ১৯৭৫ ) ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি (১৯৫২-১৯৬২) এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি (১৯৬২-১৯৬৭)। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ , দার্শনিক ও অধ্যাপক। এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোনো পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় হন নি। বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি যথাক্রমে ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ নাইটহুডে সম্মানিত হন আর ১৯৫৪ তে ভারতরত্ন সম্মান পান। প্রথম জীবনে তিনি মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন (১৯১৮)। এই সময় তিনি বিভিন্ন উলেখযোগ্য পত্রিকায় লিখতেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বারবার অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
একবার শোনা যায় , রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর কিছু প্রিয় ছাত্র ও অধ্যাপক বন্ধু তাঁর জন্মদিন পালন করতে আগ্রহান্বিত হলে --- ডঃ রাধাকৃষ্ণণ তাঁদের বলেছিলেন , " আমার জন্মদিন পৃথকভাবে পালন না করে এর পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো। "
হ্যা , ঠিক সেই দিন থেকেই ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতে শিক্ষক দিবসরূপে পালিত হচ্ছে ।

দেশের অগণিত শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকান্ডের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁদের পেশাগত অবদানকে স্মরণে-বরণে শ্রদ্ধায় অতি ক্ষুদ্র আড়ম্বরের সহিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। একজন যথার্থ শিক্ষকই পারেন তাঁর ছাত্রের মধ্যে যথাযথ মনন বুদ্ধি চিন্তাকে বাস্তবরূপে প্রতিফলিত করতে। স্কুল কলেজে এছাড়া অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রছাত্রীরা ছোট্ট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাদের প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাকে উপহার দ্যায়। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাঁদের আশীর্বাদ স্বরূপ মিষ্টিমুখ করান। আগামীদিনের জীবনযাত্রায় প্রতিটি উপযুক্ত জীবিকা ও সৎ নাগরিক তথা মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষক- শিক্ষিকারাই। অবশ্যই প্রতিটা ছাত্রছাত্রীদেরও উচিত তাঁদেরকে যথার্থ সম্মান দেওয়া । তবেই শিক্ষক দিবসের সার্থকতা। 

[ বি : দ্র : প্রয়োজনার্থে কিছু তথ্য সংগৃহীত ]
রচনাকাল : ৩১/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লিজা মন্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 12  China : 21  France : 5  Germany : 1  India : 183  Ireland : 33  Japan : 3  Russian Federat : 14  Saudi Arabia : 5  Sweden : 10  
Ukraine : 5  United States : 174  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 12  China : 21  France : 5  Germany : 1  
India : 183  Ireland : 33  Japan : 3  Russian Federat : 14  
Saudi Arabia : 5  Sweden : 10  Ukraine : 5  United States : 174  
লেখিকা পরিচিতি -
                          লিজা মন্ডল (সাহা) ১৭ই মার্চ , উত্তর চব্বিশ পরগণার ব্যারাকপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ছোট থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি গান, নাচের চর্চাও করেছেন। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্য নিয়েই তাঁর পড়াশুনা। ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই পড়ার প্রবণতা খুবই ছিল , তাছাড়া সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন লেখক-কবিদের গল্প , উপন্যাস, কবিতা ইত্যাদি পড়তেও তিনি ভালোবাসেন।  
                          
© কিশলয় এবং লিজা মন্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
কিছু কথা কিছু স্মৃতি by Liza Mondal is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫০৭১১২