শরতের আগমনী ( প্রবন্ধের সারি)
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাশফুল দেখলেই আমরা জেনে যাই শরৎ এসে গেছে। কাশফুল বাতাসে দোলে মোহনীয় ভঙ্গিতে। কাশফুলের মাঝখান দিয়ে স্বচ্ছ নীল আকাশ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
শিউলিও শরতের ফুল। রাতে ফুটে ভোরবেলায় ঝরে যায়। এ জন্য ফুটন্ত শিউলি ফুল দেখার সুযোগ কমই পাওয়া যায়। শেষরাতে শিউলির সুবাস ছড়িয়ে পড়ে বহুদূর পর্যন্ত। শিউলি নিয়ে কবিদেরও মাতামাতির শেষ নেই। শরতের সকালে হালকা শিশিরভেজা সবুজ ঘাসের ওপর ছড়িয়ে থাকা শিউলি ফুল কুড়ানোর মজাই আলাদা।
শরতের আরেক ফুল কামিনী। কামিনী ফুলও সন্ধ্যায় ফুটে ভোরেই ঝরে যায়। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ফোটে কামিনী। ফুলের গন্ধে চারদিক ভরে ওঠে।
জবা আর টগরও শরতের ফুল। শরতে পুকুর, ডোবা, হাওর, বিল সব জায়গায় ফোটে শাপলা ফুল। এ ছাড়াও জুঁই, কেয়া, মালতি, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম, দোলনচাঁপা, বেলী, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, রাধাচূড়া, পদ্ম, স্থলপদ্ম, নানা রকমের ফুলে হেসে ওঠে প্রকৃতি।
শরৎ এলেই মাঠজুড়ে দেখা দেয় নতুন ধানের সমারোহ। নতুন ফসলের আশা জাগে কৃষকের মনে। আর সেই ফসলকে ঘিরে চারদিকে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। ফুলের সুবাস আর পাখির কুজনে মুখরিত হয় পল্লীগ্রামের মাঠ-ঘাট-জনপদ।
শরৎ মানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর। শারদীয় দুর্গাপূজার শারদীয়া শব্দের আগমনই ঘটেছে শরৎ থেকে। এই শরতেই দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা কৈলাশ ছেড়ে মর্তে আসেন আর তাই নদীর পাড়ে কাশফুল জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথেই বাতাসে যেন ছড়িয়ে পড়ে- শরৎ এসেছে, পুজো আসছে।
রচনাকাল : ৩১/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।