বি কুইক কুইক
আনুমানিক পঠন সময় : ১০ মিনিট

লেখিকা : ঈশিতা রায় ব্যানার্জি
দেশ : Israel , শহর : Ariel

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , আগষ্ট
প্রকাশিত ৩ টি লেখনী ১৬ টি দেশ ব্যাপী ১৯১০ জন পড়েছেন।
Ishita Roy Banerjee
বি কুইক কুইক :

সেবার বর্ষাশেষে কুয়োপাড়ের জবা গাছে খড়কুটো দিয়ে ঘর বাঁধল ছোট্ট একটা বুলবুলি । জবা গাছেও যে পাখিরা বাসা বাঁধে, এর আগে জানা ছিল না ।

রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে, ছুটটে গিয়ে প্রথমেই বাসাটার হাল হকিকত দেখে আসতাম । বাড়ির এই নতুন অতিথি নিজের অজান্তেই মনজুড়ে বড়সড় একটা জায়গা করে নিল । ঘরের দৈনন্দিন কথাবার্তায় ঘুরেফিরে ঐ পাখি আর তার বাসার, তখন নিত্য আনাগোনা । দিনভর একটা নির্মল আনন্দ মা, দাদা আর আমাকে ছুঁয়ে যেতে লাগল । সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্তের ডাল- ভাতের জীবনে, এমন এক আকস্মিক ভালো লাগা, আমাদের সকলের বেশ  ভালো লাগছিল ।

প্রথম প্রথম আমাদের অহেতুক কৌতূহলী পর্যবেক্ষণ পাখিটা তেমন পছন্দ করত না । ওদের দেশের হিজিবিজি সাংকেতিক ভাষায় কত কথাই না শোনাত ! তীক্ষ্ম কন্ঠে- উচ্চস্বরে "পীক পীক" করে বলতো , " বলি! তোমাদের কি আর কোনো কাম- কাজ নাই । সারাটা দিন আমার ঘরের চারপাশে ঘুরঘুর করছ কেন?" ধীরে ধীরে আমাদের মুখগুলোর সাথে পাখিও কেমন একাত্ম হয়ে গেল । বোধ হয়, পাখির ছোট্ট হৃদয় আমাদেরকে ওর নিজের একজন মনে করেছিল । পাখির প্রাত্যহিকতা- উড়ে চলা- গান গাওয়া- ঝুঁটি দুলিয়ে কথা বলা- ছোটো ছোটো ডালে বসে হাওয়ার দোলনায় দোল খাওয়া ; এই সবের মাঝে আমাদেরকে সে আশ্রয় দিল । আশেপাশের বাড়ির ছোটো বাচ্চারাও আমাদের আনন্দযজ্ঞে যোগ দিল । তারাও পাখির পাড়ায় দুবেলা আসে । ছোট্ট মুখগুলো হয়তো বুঝেছিল, মানুষের ইঁট- বালি- পাথরের পৃথিবী থেকে পাখির দুনিয়া অনেক আলাদা ! অনেক পবিত্র, স্বচ্ছ ! 

একদিন খুব সকালে, থার্মো ডাইনামিক্সের বইটা খুলে সবে মাত্র পড়তে বসেছি । এমনই সময় পাশের বাড়ির ছোট্ট পলাশ একটা মুখোশ হাতে, হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে হাজির । এসে ও যা বলল, তা শুনে চমকে উঠলাম । পলাশ বলল, "দেখ পিসি, আমার এই ভুতুড়ে মুখোশটা । কালই সন্ধ্যায়, স্কুল মাঠের মেলা থেকে কিনে এনেছি । আমি না এই মুখোশে মুখ ঢেকে, আর একটা রংচঙে জামা পড়ে বুলবুলিটাকে ভয় দেখাব । দেখি! আমাকে ও চিনতে পারে কিনা ।" পলাশের পাগলামি শুনে উদ্বিগ্ন মনে, অনেক কষ্টে ওকে শান্ত করলাম । বললাম, "দেখ বাবু, পাখির সাথে মিশতে গিয়ে কোনো মুখোশের আড়াল চাই না । কোনো চটকদারি পোষাকের আবরণেও নিজেকে ঢাকতে হয় না । পাখির মনটা তোমার মতনই নরম- সরম । অল্পতেই ও ঘাবড়ে যায় । পাখির সামনে এমন সাজ- পোষাকে গেলে, দুষ্টু লোক ভেবে ভয়ে ও আৎকে উঠবে । তখন হয়তো, আমাদের উপর রাগ করে বাসা ছেড়ে চলে যাবে !" সব শুনে পলাশ ওর দুষ্টু বুদ্ধি ত্যাগ করল । সে যাত্রায় কোনো রকমে পাখিটা রক্ষে পেল । পলাশ বলল, "পিসি! এবার থেকে পাখির সাথে আমি 'উড়ন্ত- মিতালি' বানাব" । 'উড়ন্ত- মিতালি' আসলে যে কি, তা ঐ ছোট্ট পলাশরাই জানে ! পলাশের পাগলামি দেখে সেদিন অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করলাম-- পাখির সাথে সম্পৃক্ত হোলে, জীবনের একূল- ওকূল সবটাই যেন পাখ- পাখালির মতন ! কোনো প্যাঁচ কোশ নেই ! সহজ- সরল ! উড়তে চাইলে, যখন ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যাও । গান গাইতে ইচ্ছে করলে, গলা ছেড়ে সুর সাধো । তাল- ছন্দ- লয় নিয়ে মাথা না ঘামালেও, কেউ হইহই করে ডিকশনরী হাতে তেড়ে আসবে না । হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে, সম্ভব- অসম্ভবের গণ্ডী পেরিয়ে যদি পৌঁছে যাও অন্য কোনো ব্রহ্মাণ্ডে, কোনো মানা নেই । সেখানে নেই দিন গুজরানের তাগিদে ইঁদুর লড়াই । নেই ইচ্ছার মৃত্যু । নেই কোনো রেষারেষি- বিদ্বেষ । মানুষ পাখি হোলে, কল্পনার ফেরিওয়ালারা হয়তো এমন ভাবেই টলমল পায়ে বেঁচে উঠত ।


আমরা ছিলাম পাখির নিকটতম দোসর । বাসার সামনে এসে দাঁড়ালে পাখি তাই আর বকাবকি করত না । সুরেলা কণ্ঠে, "বি- কুইক কুইক" বলে আমাদের উপস্থিতিকে আমন্ত্রণ জানাত । তারপর নিমেষেই বাসা ছেড়ে উধাও হয়ে যেত । আমাদের প্রতি নির্মল এক ভরসা বোধ পাখির অন্তরে বাসা বেঁধেছিল । সুরে সুরে নেচে নেচে বলত, "তোমরা তো আছ আমার সাথে । আমার ঘর নিয়ে তাই কিসের চিন্তা !" অনেক ক্ষণ পর পাখি আবার ফিরে আসত দুটো খড়কুটো- ঘাস- পাতা মুখে নিয়ে । বাসা রিনোভেট করার কত না নতুন নতুন পরিকল্পনা! কবে থেকে সে ঘর সাজিয়েই চলল! সংগ্রহ করা সমস্ত উপকরণকে মাকড়সার জালে জড়িয়ে, বাটির মতন একটা ঘর বানালো । ঘর সাজানোর প্রতি এতো মনোযোগ কেন , সেটা কয়েকদিন পর আমরা টের পেলাম ।

একদিন সকালে দেখি, পাখির বাসায় হাল্কা গোলাপী রঙের দুটো ছোট্ট ছোট্ট ডিম । ঠিক যেন ছোটো খোকার খেলার মার্বেল । বাসায় নতুন অতিথি আসার আগমন । 'পাখির দেশের ভাষা' আমাদের জানা নেই । অবশ্য, সে ভাষা শেখা বড্ডো কঠিন। সে ভাষার বর্ণমালা অনুভূতির কম্পাঙ্ক দিয়ে শিখে নিতে হয় । মস্তিষ্কের কম্পাসে এ ভাষা ধরা দেয় না । মানুষ নামের জীবটা এত বড় উন্নত মস্তিষ্কের ধারক- বাহক হয়েও, পাখির সাবলীলতাকে শিখতে পারেনি । আমিও তাই আজও, পাখির ভাষাকে রপ্ত করতে পারিনি । সেদিন তাই মন উজাড় করে পাখিকে বোঝাতে পারিনি, ক্ষুদে ক্ষুদে ঐ ডিমগুলোকে দেখে আমরা তখন কতখানি আপ্লুত ছিলাম ! 


পাখির এখন নতুন দায়িত্ব । ও তাই ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায় না । সুতীক্ষ্ম দৃষ্টিতে হবু মা তার আসন্ন সন্তানের জন্মকে সদা- সর্বদা সুরক্ষিত করে চলেছে । আমরাও আশেপাশের বেড়ালগুলোকে তখন বাড়ির চৌহদ্দিতে ঘেঁষতে দিতাম না ।  বেড়াল তো ভুরি ভোজের গন্ধ শুঁকে শুঁকে গন্তব্যে হাজির হয় ! বেড়ালের আতঙ্কে পাখির মতন আমরাও ছিলাম জেরবার । দিনের বেলায় যখন তখন পাখির খোঁজ নেওয়া যায় । কিন্তু রাতের অন্ধকারে, আলো নিয়ে পাখির বাসায় কি আর উঁকিঝুঁকি মারা যায় ! তাছাড়া, রাতের বেলায় গাছে হাত দিতে নেই । পাড়ার বাচ্চারা তাই অদ্ভুত সব পরিকল্পনা বানাতে লাগল । খাড়া চুলের, তালপাতার সেপাই অষ্টম সবার আগে বলে উঠল, "রাতের বেলায় ওডোমস মেখে ফুল জামা- ফুল প্যান্ট পড়ে, টর্চ হাতে, আমরা পাখির বাসা পাহারা দেব। নিজেদেরকে কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করে প্রত্যেকে দুঘণ্টা করে পাহারা দিলেই তো হবে !" ওদের এই অদম্য আগ্রহে মুগ্ধ হলাম । বোধ হয়, শিশু মনই এমনভাবে ভাবতে পারে । প্রকৃতির তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনার সাথে একপ্রোতভাবে নিজেকে জড়াতে পারে । আমরাও বাচ্চাদের সাথে হইচই করে মেতে উঠলাম । কিন্তু এরপরেও নিয়মকানুনের কিছু বেড়াজাল থাকে । যে নিয়মকানুনের পরাকাষ্ঠায় আমরা সকলে কমবেশি চালিত । আমাদের এই অ্যাডভেঞ্চারাস পরিকল্পনা কারোর বাড়ির হাইকোর্টে পাশ হোলো না । সকলের মুখে একই কথা, " এই যে বাবাই- মামনি ! বলি তোরা তো অনেক বড় হয়েছিস । কলেজে পড়ছিস । পাখি- পাখি করে তোরা ঐ বাচ্চাগুলোকে সারাদিন নাচাচ্ছিস কেন?" পাখির প্রতি  আমাদের সহানুভূতিশীল মা- ও এ যাত্রায় আর ছোট্টটি হতে পারল না । মা বলল, "কাছেই গোঁসাই তলা । রাতবিরেতে বাঁদরামি না করলেই নয়? ভূতপ্রেত- সাপখোপ এসবের ভয় নেই তোদের ?" চারিদিক দিয়ে বকাবকির পালা যখন চলছে,  তারই মধ্যে মঞ্চে নামলেন বিন্দুর রাশভারি দাদু । কড়া ধাঁচের, পঁচাত্তর বছর বয়সী এই দাদুর নাম শুনলে পাড়ার সকলে এক বাক্যে ভয়ে কাঁপতে থাকে । নিবারণ দাদু, আমাকে আর দাদাকে ডেকে এনে ধমকের সুরে কড়া পাকের কয়েকটা কথা শোনালেন, "বাস্তব- অবাস্তব, আর কল্পনার অযৌক্তিকতা বা যৌক্তিকতা, সব কিছুর পরিপাকে মানব সমাজের 'কারণ' তৈরী হয় । মানুষের 'কার্য- কারণ'- এর সকল রীতিনীতি, বিধিবদ্ধ না হোলেও, সুবোধ গোপালের মতন মেনে চলাটাই বহু ক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয় । তাই রাতের বেলায় গাছের নীচে কোনো ভাবেই যাওয়া চলবে না ।" এতো কঠিন বিচারক যখন রায় দ্যান, তখন 'বিচার' না মেনে আর উপায় কি! সবাই আমরা চুপচাপ বাধ্য হয়ে মেনে নিলাম ।

রাতগুলো তখন এপাশ- ওপাশ করে কোনো রকমে পার করতাম । খাতা- বই নিয়ে সন্ধ্যায় পড়তে বসলেও বইয়ের পাতায় মন বসত না । একটা ভয় মেশানো দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে ধিকিধিকি করে জ্বলত । মাঝ রাত্তিরে পাখির বাসায় যদি বেড়ালের হামলা হয় ! বা অন্য কোনো নিশাচর পাখি যদি ডিমগুলো চুরি করে ! খাদ্য- খাদক সম্পর্ক রয়েছে পৃথিবী জুড়ে । খাদ্য পিরামিডে কোনো বুভুক্ষু মাংসাশী জীব আর একটি জীবকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে নিজের শক্তি চাহিদা মেটাবে - এটাই তো জাগতিক নিয়ম । এই নিয়ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না ! কিন্তু মানুষের দরদি হৃদয় কখনও কখনও হু হু করে আনমনে কেঁদে ওঠে । জাগতিক নিয়মের একটা ব্যতিক্রম প্রার্থনা করে । বুদ্ধিমান মানুষের বিদ্যা- বুদ্ধিতে 'পাখির ভাষা' পাঠোদ্ধার না হলেও, অন্ধকার গুহার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা একটা মহানুভব মন, কখনও সখনও আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে । তেমনই একটা মন নিজের সমস্ত কাজ ফেলে, শুধু পাখি আর তার ডিম দুখানার কথা ভাবতে লাগল । মনে- প্রাণে ঈশ্বরের কাছে খাদ্য- খাদক সম্পর্কের ব্যতিক্রম প্রার্থনা করলাম । ডিম দুখানার সুস্থতা প্রার্থনা করলাম ।

কয়েক দিন পর পাখির ঘর আলো করে ডিম ফুটে তুলতুলে দুটো ছানা বেরল । ভগবানের এ এক আজব কারখানা ! সৃষ্টির সকল সদ্যোজাত প্রাণই তাদের নির্মলতায় হৃদয়কে মুগ্ধ করে । শ্রষ্ঠা জীব সৃষ্টি করে আপন খেলার ছলে । আর, সেই 
খেলার খেয়ালে মানুষের জটিল মনের গ্রন্থি গলতে গলতে আলগা হয়ে যায় । পাখির ছোট্ট ছানা, অদৃশ্য মন্ত্রবলে আমাদের ছায়াপথে এসে পরিভ্রমণ করতে লাগল । 

ছানা দুটোকে, এক টাকার দুটো ছোট্ট ছোট্ট রসগোল্লা মনে হোতো । আলতো হাতে স্পর্শ করতে মন চাইত । মা বলে, "যাহা সত্য তাহাই সুন্দর" । একটা 'ছোট্ট সত্যের সূত্র'- কে কখনও যে এতো কাছাকাছি এমনভাবে আবিষ্কার করব, তাতো কস্মিনকালেও ভাবিনি ! মন তাই বারবার সত্যকে দুহাতে ছুঁতে চাইত । কিন্তু না ! তেমনটা কখনও ঘটেনি । সত্য শুধু হৃদয় দিয়ে চেখে দেখেছি ।

কচি কচি পাখি ঝটপট করে বড় হোতে লাগল । 'মা- পাখি' এদিক ওদিক থেকে খাবার খুঁজে আনে । ছা- পাখিরা অধীর আগ্রহে কিচির মিচির শব্দে, হাঁ করে মায়ের মুখ থেকে খাবার খায় । মা- শিশুর এই আত্মিক বন্ধন সমগ্র জীবকূলেই সত্য । এ ছিল আমার কাছে, অতীন্দ্রিয় রূপে নিজের মাকে উপলব্ধি করা । আমিও যেমন মায়ের হাতের রান্না, মায়ের ভাত খাইয়ে দেওয়া পছন্দ করতাম । ছা- পাখিও মায়ের মাঝে যেন আত্মহারা । এই দৃষ্টিনন্দন উপলব্ধি আমার সাথে আমার মাকে, আরও একবার মর্মে  মর্মে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল । কত স্নেহ- মমতায়, 'মা- পাখি' ছানাগুলোকে খাওয়াত । আমরা দূর থেকে হাসি মুখে দুচোখ ভরে দেখতাম সেসব । মা যেন মা- ই হয় । যেমন আমার কাছে আমার মা, তেমনি ছা- পাখিদের কাছে তাদের 'মা- পাখি' । আমার মা, 'পাখি- মা' সবাই যেন নৈসর্গিক আবেশে মিলে মিশে একাকার ।

পাখির ছানাগুলো প্রথম দিকে কালচে লাল রঙের ছিল । ক্রমশ ওরা পূর্ণাঙ্গ হোলো । ওরা আগে শুধু খাবার খেত । আর, ভাইয়ে ভাইয়ে ঠোঁট নড়িয়ে- পা দিয়ে মজার লড়াই করত । লড়াইয়ে মশগুল ছানারা, মায়ের কড়া শাসনে খানিক পরেই শান্ত হয়ে যেত । পাখির শৈশবলীলার এমন কত রঙিন অভিব্যক্তি , আমাদের মনকে শিশুসুলভ তারল্যে ভরিয়ে তুলল । মাটির দেহ নেমে এলো মাটির কাছে । পাখির এক চিলতে ঘরের, দৈনন্দিন জীবনের টুকিটাকিতে আমরাও আপাদমস্তক শরিক হলাম । পলাশ- অষ্টম পাখির ছানা দুটোর নাম রাখল 'রুকু শুকু' । পাড়ার সকলের প্রিয় 'রুকু শুকু'- কে দেখতে, লাঠি হাতে নিবারণ দাদুও এসেছিলেন । সেই প্রথম, উনি দাদার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, "ভালো ভালো । বেশ ভালো ।" সেই দিনটায়, আমি আর দাদা মনে মনে একটা যুদ্ধজয়ের আনন্দকে উপভোগ করলাম ।

হেসে- খেলে কেটে গেল কত  দিন! কত কত সবুজ স্মৃতির সম্মেলনে সমৃদ্ধ হোলো মন ! জীবনের তরে জীবনকে বইতে শিখলাম ! পাখির মুখের ভাষাকে, মন আর মস্তিষ্কের স্নায়বিক ভাষা রূপে না বানাতে পারলেও, জীবনের ঐকতান পাখির ধ্বনিতে, সোঁদা গন্ধে মুখরিত হোলো । মনের দুয়ার উন্মুক্ত হোলো । সেই খোলা পথে আলো এসে আলিঙ্গন করে । বায়ু এসে নতুন কোনো বুলবুলিদের গল্প  শোনায় । পাখির শরীর থেকে চুঁইয়ে পড়া আলোতে, বায়ুতে পাখির মতন ফুরফুরে হলাম ।

একদিন মনের বাসা রিক্ত করে, পাখি তার ছানাদের নিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল ! ভাবলাম, হয়তো আবার উড়ে আসবে ! হয়তো আবার "বি- কুইক- কুইক" বলে, আমাদের মন খারাপের স্তব্ধতাকে মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেবে ! কত কত দিন, কত অপেক্ষায় পথ চেয়ে রইলাম । কিন্তু কেউ আর ফিরে এলো না । আশেপাশে উড়ে যাওয়া প্রতিটা বুলবুলিতে 'ঐ ওদেরকে' খুঁজলাম । কিন্তু বুলবুলির প্রকৃতি রাজ্যে, কাউকেই তো চেনা চেনা লাগল না । পাড়ার বাচ্চারা দল বেঁধে খুঁজে এলো, আশেপাশের জবাগাছগুলোতে নতুন কোনো বাসা হয়েছে কিনা! কিন্তু কোথাও কোনো নতুন বাসা চোখে পড়ল না । প্রকৃতির ডাকে গা ভাসিয়ে প্রকৃতি মায়ের সন্তান , 'পাখি- মা আর মায়ের ছানা', হয়তো তখন অন্য কোনো ঠিকানায় । মেঘের ছায়া ভরা চোখে, প্রিয় পাখিকে ঐ আকাশের কোলে আমরা বিদায় জানালাম ।

আমাদের জন্য বিদায়ী উপহার রুপে পরে রইল , অজস্র ভালো লাগা দিয়ে সযত্নে- পরিপাটি করে বানানো, পাখির সেই খড়কুটোর বাসাটা ।।

ঈশিতা রায় ব্যানার্জি ।
রামাত হাগোলান স্ট্রিট, আরিয়েল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক, ইজরায়েল ।
রচনাকাল : ৩০/৮/২০২০
© কিশলয় এবং ঈশিতা রায় ব্যানার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 34  China : 16  Europe : 2  France : 2  Hungary : 2  India : 305  Ireland : 71  Israel : 45  Saudi Arabia : 1  
Sweden : 12  Ukraine : 2  United Kingdom : 2  United States : 384  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 34  China : 16  Europe : 2  
France : 2  Hungary : 2  India : 305  Ireland : 71  
Israel : 45  Saudi Arabia : 1  Sweden : 12  Ukraine : 2  
United Kingdom : 2  United States : 384  
লেখিকা পরিচিতি -
                          ঈশিতা রায় ব্যানার্জি অক্টোবর মাসের কুড়ি তারিখে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় ইছামতীর কোলে অবস্থিত বসিরহাট শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

ওনার বর্তমান বাস অধুনা ইজরায়েলের বহুল আলোচিত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে। 

তার শখের তালিকাটা বেশ বড়সড়। দেশী বিদেশী ও প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহ এবং মুদ্রা নিয়ে পড়াশোনা, ভারতীয় শাস্ত্র সঙ্গীত চর্চা, নতুন নতুন ভাষা শেখা, নানান ধরনের বই পড়া, লেখালেখি, দেশী-বিদেশী রান্না করা আর মন ভরে পৃথিবীকে দেখা। ওনার লেখালেখির অনুপ্রেরণা হোলো পৃথিবীর মানুষ, মানুষের সুখ- দুঃখ- আবেগ- অনুভূতি, ভূপ্রকৃতি, আর মূহুর্তবাদী জীবন। 
                          
© কিশলয় এবং ঈশিতা রায় ব্যানার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বি কুইক কুইক by Ishita Roy Banerjee is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৬২৫৮৫৬
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী