ফাঁদ
মোঃ তোফায়েল হোসেন
হে সৈনিক, তুমি কি আমায় ভালোবাসো না?
এভাবেই প্রশ্নটা করেছিল ষোড়শী মায়া।
সে এতটা রূপসী ছিল যে তার এই কথা শুনে উত্তরটা দিতে আমার কিছুটা দেরিই হয়ে যাচ্ছিল।
মুহূর্তের মধ্যে সে ক্ষেপে গেল। পাগলীর মতো আচরণ করতে লাগলো। তেড়ে আসলো আমার দিকে; হাত বাড়িয়ে চিলের মতো থাবা বসিয়ে দিল আমার মুখে। তার এই ক্ষুদ্ধ আচরনে আমি দ্বিধান্বিত হয়ে গেলাম।
অফিসিয়াল একটা তদন্তে গিয়েছিলাম মায়াদের বাড়ি। কিন্তু তখন বাড়িতে যে মায়া ছাড়া আর কেউ ছিলনা তা আমি জানতাম না।
অদ্ভুত সমস্যায় পড়ে গেলাম। একবার ভাবলাম মেয়েটা পাগল নয়তো! পরক্ষণে বাতিল করে দিতে বাধ্য হলাম।
প্রচণ্ড জ্বালা আর গরম রক্তের স্রোত বুঝিয়ে দিল মায়ার অকস্মিক ভালোবাসাময় (!) নখের আচড় আমায় রক্তাক্ত করে দিয়েছে।
তারপর হঠাৎ করেই সে বসে পড়লো আমার পায়ের কাছে। জড়িয়ে ধরলো দু’পা এক করে। কয়েক মুহূর্ত পর সে পরগাছা লতার মতো আমায় আকড়ে ধরে ধীরে ধীরে উঠতে লাগল। একসময় আমাতে লেপ্টে যখন পুরোপুরি সোজা হয়ে ঘাড় পিছনে বাঁকা করে দাড়ালো তখন খুব কাছ থেকে আমার দৃষ্টি তার দৃষ্টিতে পড়লো।
মায়ার চোখে অতীত স্মৃতি প্রদর্শিত হলো-
তিন বছর আগের কথা। গ্রীষ্মকালীন মহড়ায় ছিলাম তখন- মায়ার বাবার অন্য কর্মস্থলের পাশে। আর সেখানেই এক পড়ন্ত বিকেলে দেখেছিলাম তাকে। কেমন জানি একটা ঘোর লেগেছিল সৈনিক মনে। তা হয়তো বুঝেছিল মায়া। তাই পরদিন একটা ভালোবাসার চিটি পাঠিয়েছিল সে। কিন্তু চাকরির কড়া বাধ্য-বাধকতা আমাকে পাষাণ করে দিয়েছিল। শাস্তির ভয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম কঁচি মনের আহবান এবং পাঁচদিন পর ফিরেও এসেছিলাম সেই এলাকা থেকে। রেখে এসেছিলাম ভালোবাসাময় একটা অবুঝ মেয়ে।
আমার রক্ত মায়ার ফর্সা গলা আর বুকের সংযোগস্থল রাঙিয়ে দিল। সে আবারও নেশাধরা কন্ঠে বললো- তুমি আমায় ভালোবাসো?
এবার আর দ্বিধা না রেখেই নিজের সব ভুলে বলে দিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাক্য। সাথে সাথে অদ্ভুত আবদার করে বসলো সে এবং আমার মতামতের উপেক্ষা করেই টানতে লাগলো নির্জন বাড়ির নির্জন বিছানার দিকে। মায়া তখন এতটা আবেদময়ী ছিল যে আমি ডুবতে লাগলাম এবং ডুবেও গেলাম।
অদ্ভুতভাবে আবিষ্কার করলাম- মায়া কুমারী নয়।
অতঃপর পাতা ফাঁদে আটকালাম!
মায়ার তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বার জন্য দোষী হলাম! আমি প্রতারিত হলাম!
***
রচনাকাল : ২২/৮/২০২০
© কিশলয় এবং মোঃ তোফায়েল হোসেন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।