মনসা মঙ্গল কাব্য .... জয় জয় মা মনসা মা মনসার গল্প (তৃতীয় পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৫৬৫৮০ জন পড়েছেন।
মনসা মঙ্গল কাব্য  .... জয় জয় মা মনসা
মা মনসার গল্প (তৃতীয় পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে আর দশটা লোক দেবদেবীর মধ্যে  বিষাক্ত সাপের থেকে ত্রাণের একমাত্র দেবী রূপে মা মনসার মূর্তি সবচেয়ে বেশি পূজিত হতে দেখা যায়। এই মনসা মূর্তির আচ্ছাদিত পোশাক একদিকে যেমন শ্বেতবস্ত্র পরিধানে তিনি বিশ্ব শান্তি প্রদায়িনী, জগতের কল্যাাণ রূপী, জগতের ধারক বাহকের স্নেহ বাৎসল্যর রূপী মমতাময়ী জননীর এক ভাব মূর্ত প্রতীক স্বরূপ, ঠিক এর বিপরীতার্থে এই দেবীর এক রুদ্র ও বিনাশী ভাবমূর্তি রয়েছে যা অত্যহন্ত ভয়াল ভয়ঙ্করী।


শাস্ত্র অনুসারে কাল বিষাক্ত সর্প এই দেবীর অন্যরতম প্রধান বাহন। তাই এই দেবীর প্রতি অশ্রদ্ধা ও অভক্তির পরিণতি বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রানের বিনাশ ছাড়া আর কিছু নয় এমন কিছু কাহিনীর কথা প্রচলন রয়েছে এই অঞ্চলের সামাজিক রীতি নীতিতে। তাই এই দেবীর অনুগত ভক্তদের বেশিরভাগ ভক্তি অপেক্ষা ভয়ে এই দেবীকে বেশি পূজা দেয়। ফলতঃ জনপ্রিয়তা অতি সহজেই অর্জিত হয়ে যায়।


প্রতিটি গ্রামের সার্বজনীন থানে আর অন্যাশন্য। দু দশটি দেবদেবীর সঙ্গে একদিকে যেমন তাঁর দেবী মূর্তি অনুগত ভক্তদের থেকে পূজা পেয়ে আসছে আবার অজস্র ব্যািক্তিগত মন্দির বা থান রয়েছে যে মন্দিরের আরাধ্যে লৌকিকদেবী রূপে শুধুমাত্র তারই দেবীমূর্তি স্থান পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের লোক সমাজে মনসা দেবীর পত্তন, সময়কাল, লীলার মাহাত্ম্য  কথা বিস্তারিত তথ্যেে নিম্নে বর্ণনা করা হল ।


মনসা দেবীর সৃষ্টি রহস্য ও দক্ষিণাঞ্চলে তার পূজার পত্তন


মঙ্গল কাব্যের যে সমস্ত দেবী, দেবতারা বাংলার বুকে সুদীর্ঘদিন ধরে পূজিত হয়ে আসছে এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও ভয়াল ভয়ঙ্কর দেবী হিসেবে মানুষের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মা মনসার নাম। শাস্ত্রে বর্ণিত আছে যে তিনি নাগকুলের মূল আধিষ্ঠাত্রী সর্পকুলের প্রধান দেবী রূপে জগতে প্রতিষ্ঠিত।


মনসা আদি বৈদিক যুগের বা পুরাণের মহিমান্বিত বা রামায়ণ অথবা মহাভারতের যুগের মানুষের আরাধ্য কোনো দেবী নয়। প্রাগৈতিহাসিক যুগের শাস্ত্র গুলি ভালো করে অধ্যায়ন করে স্পষ্ট এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে সেকালে কেবলমাত্র বাসুকি নাগ ও পরবর্তীতে কৃষ্ণের কালে কালীও নাগ নামটি ছাড়া আর অন্য কোনোও বিশেষ সর্পের দেব দেবতার নাম পুরাণাদি গ্রন্থগুলিতে খুঁজে পাওয়া যায় না। নাগ কুলের অধিষ্ঠাতা দেবতা বাসুকি হলেন নাগেদের রাজা।


সাংস্কৃত শাস্ত্র ও উপপুরানে বলা হয়েছে নাগরাজ বাসুকির ভগিনী হল এই মনসা দেবী। সর্পকূলের দেবী নাগিনী নামটির দ্বারা এই সীদ্ধান্তে অনুমান হওয়া যায় যে ইহা আধা নর ও আধা সর্পের এক ভয়ঙ্কর মূর্তি বিশেষ কোনো রূপ অথবা ঐশ্বরিক শক্তিতে বলিয়ান কোনো বিশেষ বিষধর সর্প হবে যার মধ্যের রূপ পরিবর্তন করার ইচ্ছাশক্তি আছে । ইতিহাসের পাতায় যা স্কাইথীয় নামে পরিচিত। কিন্তু মনসা নামটির সঙ্গে সর্পের সম্পর্ক ঠিক কবে থেকে জগতে প্রচলিত হয়েছে তা গভীর অনুসন্ধানের একটা বিষয়।


এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে তাহার নাগ পরিবার, নাগরাজ বাসুকির ভগিনী তিনি তাই সেই কারনে দেবীর সঙ্গে সর্পের এই রূপ সম্পর্ক। যদিও শৈবপুরাণে দেবাদিদেব মহাদেবের সন্নিকটে যে বিষধর সর্পটির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে উদয় নাগ উহাতে সর্প দেবতাদের অনুচর স্বরুপ পূজিত হয়ে এসেছে। ব্যক্তিস্বতন্ত্র রূপে কোনো দেবতা বা দেবী রূপে অধিষ্ঠানের কথা পুরাণের কোথাও বা শাস্ত্রে উল্লেখ নেই।


বৈদিক যুগের মানুষ দেবীমূর্তি আরাধনার পরিবর্তে নিরাকার ব্রহ্মের ধ্যান, যাগযজ্ঞ ও প্রকৃতি পূজার প্রতি বেশি মনোযোগী হতেন। বেদ, পুরাণে স্পষ্ট তার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে – ‘ধ্যায় শূন্য অহর্নিশম’। অতএব এত্যদ্বারা এই সত্য প্রমাণিত হয় যে মনসা পূজার সৃষ্টি বিগত আটশো নয়শো বছরের মধ্যবর্তী কোনোও এক সময় হবে, ইহার পূর্বে নহে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখনও পর্যন্ত যে কয়টি পৌরাণিক মনসা মন্দির ও মনসা দেবীর খোদায় করা মূর্তির সন্ধান পেয়েছে ইহাদের অধিকাংশ মূর্তি সর্বোচ্চ সেন বংশের রাজাদের আমল পর্যন্ত পাওয়া গেছে।


সেনরাজ বিজয় সেনের আমলে প্রতিষ্ঠিত মনসা মূর্তির কয়েকটি প্রমাণ ও পাওয়া গেছে। সর্বোচ্চ ইহার থেকে আরো বিশ পঞ্চাশ বছর পূর্বে এই দেবীর জগতে অধিষ্ঠান হলেও সত্য হতে পারে কিন্তু তাহার এক কাঁচা পূর্বে নয়। কিন্তু মনসামঙ্গল কাব্যের মূল অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসা নামটির আদি সৃষ্টি বা উৎপত্তি ঠিক কবে এ সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধানের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। খ্রিষ্টীয় একাদশ দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে রচিত শাস্ত্র অথবা পুরাণ গুলির একটিতেও মনসা নামটি খুঁজে পাওয়া যায় না।


সর্বপ্রথম সাংস্কৃত ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, পদ্মপুরাণ, দেবী পুরাণ ও দেবী ভাগবত উপপুরাণে মনসা নামটির সহিত সাক্ষাৎ লাভ করা যায়।
রচনাকাল : ২০/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 8  France : 1  Germany : 1  Hungary : 1  India : 86  Ireland : 26  Russian Federat : 4  Sweden : 12  Ukraine : 6  
United States : 100  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 8  France : 1  Germany : 1  
Hungary : 1  India : 86  Ireland : 26  Russian Federat : 4  
Sweden : 12  Ukraine : 6  United States : 100  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
মনসা মঙ্গল কাব্য .... জয় জয় মা মনসা মা মনসার গল্প (তৃতীয় পর্ব) by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৩২৪৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী