স্বাধীনতার সংগ্রাম...... স্বাধীন ভারত
স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) নবম পর্ব
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
স্বাধীনতার ইতিহাসে আজও যাঁরা উপেক্ষিত।
ঝাঁসির রানিকে নিয়ে দেশপ্রেমী ভারত উত্তাল, কিন্তু অসমের কনকলতা বরুয়া অপরিচিত। পদ্মভূষণ পাওয়া মণিপুরের রানি গাইদিনলিউ বা মিজোরামের ভারতরত্ন খুয়াংচেরার কথাও যেন অজানা। নাগা ও মিজোরা নেতাজির সঙ্গী হয়েছিল, স্বাধীন ভারতের প্রথম পতাকা উড়েছিল মইরাংয়ে। তবু স্বাধীনতার এত বছর পরেও ব্রাত্য উত্তর-পূর্ব ভারত।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম সংগঠিত মহিলা বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল? ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম কৃষক বিদ্রোহ কোথায়? কেউ জানে না। মাতঙ্গিনী হাজরার পাশাপাশি কনকলতা, ভোগেশ্বরীর কথা ‘মেনস্ট্রিম ভারত’-এর ইতিহাস বইয়ে পাওয়া যাবে না। ঝাঁসির রানিকে নিয়ে বই, সিনেমা, সিরিয়ালের ছড়াছড়ি, কিন্তু টেঙফাখরি তেহসিলদারের নাম কেউ জানে না। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অসমের নবীনচন্দ্র বরদলৈ, চন্দ্রনাথ শর্মা, হেমচন্দ্র বরুয়া, তরুণরাম ফুকন, প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ-এর নাম অন্তত অসমবাসী জানেন।
কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাকি উত্তর-পূর্ব কতটা জড়িত ছিল, কারা অস্ত্র ধরেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে—তার ইতিহাস খোদ অসমের মানুষও ভুলতে বসেছেন। আসলে সেই আন্দোলন কতটা ভারতকে মুক্ত করার আর কতটাই বা নিজের জমিকে দখলমুক্ত করা বা নিজের জনগোষ্ঠীকে স্বাধীন করার জন্য ছিল, সেই বিতর্কের আবর্তেই আটকে পড়েছেন টিরট সিংহ, গাইদিনলিউ, টেঙফাখরি বা নেতাজির সঙ্গী আঙ্গামি জাপু ফিজো-রা।
১৮৯১ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মণিপুরের রাজা টিকেন্দ্রজিৎ সিংহ। কিন্তু রাজপরিবারের বিশ্বাসঘাতকেরা হাত মেলায় ইংরেজদের সঙ্গে। কাংলা প্রাসাদের মাঠে রাসলীলার সন্ধ্যায় আক্রমণ চালিয়ে বহু মহিলা ও শিশুকে হত্যা করলেও মণিপুরি সেনার প্রবল প্রতিরোধে পিছোতে বাধ্য হয় ইংরেজ সেনা। স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পাঁচ ইংরেজ কর্তাকে হত্যা করে মণিপুরি বাহিনী। এর পরেই কোহিমা, শিলচর ও তামু থেকে ইংরেজদের তিন বাহিনী মণিপুর আক্রমণ করে কাংলা প্রাসাদ দখল করে। প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় টিকেন্দ্রজিৎ ও তাঁর সেনাপতিকে। থৌবাল জেলার খোংজামে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়ে প্রাণ দেন বীর পাওনা ব্রজবাসী।
মেঘালয়ের খাসি পাহাড় আগে ১৬ জন গোষ্ঠীপতির হাতে বিভক্ত ছিল। গুয়াহাটি দখল করে শ্রীহট্টের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপনের সময় ইংরেজরা বুঝল, স্বাধীন খাসি এলাকার নেতার সাহায্য ছাড়া তা সম্ভব নয়। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোষ্ঠীপতি ইউ টিরট সিংহের সঙ্গে সন্ধি করে ইংরেজরা। কিন্তু তাদের আগ্রাসন আঁচ করে রুখে দাঁড়ান স্বাধীনতাপ্রিয় টিরট। শুরু হয় কামান-বন্দুকধারী বাহিনীর সঙ্গে তির-ধনুক, তলোয়ার, বর্শাধারী জনজাতি সেনার লড়াই। টিরট-বাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের সামনে নাস্তানাবুদ হয় ইংরেজরা। চার বছর এ ভাবেই ইংরেজদের ঠেকিয়ে রাখার পর ধরা পড়েন টিরট। মারা হয় তাঁর সব সঙ্গীকে। ঢাকা জেলে আমৃত্যু বন্দি রাখা হয়েছিল টিরটকে।
এর পর পালা মিজোরামের। ইংরেজরা লুসাই পাহাড় দখল করতে এলে ১৮৯০ সালে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে প্রাণ দেন পাসালথা খুয়াংচেরা। মরণোত্তর ভারতরত্ন পাওয়া খুয়াংচেরার নাম ক’জন জানে! অবশ্য মিজোরা খুয়াংচেরাকে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, জো গোষ্ঠীর রক্ষায় প্রাণ দিয়েছিলেন তিনি।
মণিপুরের স্বশাসিত নাগা এলাকা থেকে ব্রিটিশ বাহিনীকে তাড়াতে তেরো বছর বয়সে লড়াই শুরু করেছিলেন রংমেই নাগা জনজাতির রানি গাইদিনলিউ। কিশোরী নেত্রী গাইদিনলিউ ইংরেজদের কর না দিতে জনগণকে রাজি করান। দলে দলে জেলিয়াংগ্র, রংমেই, জেমি নাগারা যোগ দেন তাঁর সঙ্গে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, অসমের গভর্নর ‘আসাম রাইফেলস’-এর দু’টি ব্যাটালিয়ন পাঠান তাঁকে ধরতে।
অসম, মণিপুর, নাগাল্যান্ডে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন গাইদিনলিউ। চলতে থাকে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। শেষে কাঠের কেল্লা বানিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়ে বছর ষোলোর গাইদিনলিউ ও তাঁর বাহিনীর উপরে আচমকা হামলা চালায় ‘আসাম রাইফেলস’-এর বিরাট বাহিনী। ১৯৩৩ থেকে গুয়াহাটি, শিলং, আইজল, তুরার জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরে তাঁর সঙ্গে শিলং জেলে দেখা করেন জওহরলাল নেহরু।
তিনিই গাইদিনলিউকে ‘রানি’ খেতাব দেন। মেলে মুক্তিও। পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন রানি। বাকি জীবন কাটান সমাজসেবায়।
পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম...... স্বাধীন ভারত
স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) নবম পর্ব
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আঁধার মুছে ফেলো
আলোর পথে চলো
ভারত আমার মাটি আমার,
বুক ফুলিয়ে বলো।
আঁধার মুছে ফেলো.........
কালো টাকার বাজার,
রুখবো মোরা এবার,
মোদের পাশে আছেন সাথে,
স্বাধীন দেশের সরকার,
মোর দেশ হতে ঘুচবে কবে
দূর্নীতি আর ভ্রষ্টাচার।
আঁধার মুছে ফেলো
আলোর পথে চলো
ভারত আমার মাটি আমার,
বুক ফুলিয়ে বলো।
আঁধার মুছে ফেলো.........
অন্ধকার যাবে মুছে,
ভ্রষ্টাচার যাবে ঘুচে,
ভারত হবে সোনার ভারত,
সুদিন আসবে আবার,
মোদের পাশে আছে সাথে
স্বাধীন দেশের সরকার।
আঁধার মুছে ফেলো
আলোর পথে চলো
ভারত আমার মাটি আমার,
বুক ফুলিয়ে বলো।
আঁধার মুছে ফেলো.........
মুছে ফেল আঁখি জল
তোমরা তো নও দুর্বল,
উচ্চ শিরে বুক ফুলিয়ে বলো
মান রাখো স্বাধীনতার,
রুখতে হবে দেশের বুকে
কালো টাকার বাজার।
আঁধার মুছে ফেলো
আলোর পথে চলো
ভারত আমার মাটি আমার,
বুক ফুলিয়ে বলো।
আঁধার মুছে ফেলো.........
কালো টাকার বাজার,
অভিশাপ যে সবাকার।
মোদের পাশে আছে সাথে,
স্বাধীন দেশের সরকার,
দেশ হতে যাবে ঘুচে এবার
দুর্নীতি আর ভ্রষ্টাচার।
আঁধার মুছে ফেলো
আলোর পথে চলো
ভারত আমার মাটি আমার,
বুক ফুলিয়ে বলো।
আঁধার মুছে ফেলো.........
রচনাকাল : ১৫/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।