স্বাধিকার অর্জনের জন্য দেশের বিপ্লবী দের আমরা ভুলিনি কোনোদিন।ভারত মা জানে প্রত্যেকটা রক্তবিন্দু র মূল্য ,তার সন্তান দের তাকে মুক্তির অর্ঘ্য ,তাই তো বিনয় বাদল দিনেশ ,নেতাজি, গান্ধীজি,ক্ষুদিরাম,কানাইলাল,ভগৎ সিং,প্রফুল্ল চাকী ,মাস্টার দা কে আমরা ভুলিনি। মেয়েরা ও পিছিয়ে ছিলনা...মাতাঙ্গিনি হাজরা,প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এদের কথা বলতে বলতে দীক্ষার ঝাঁসি বাহিনী র দিকে চোখ পড়ে যায়।ওরা তাকিয়ে শুনছে তার কথা কি প্রত্যয় নিয়ে।
দীক্ষার ঝাঁসি বাহিনীই বটে ওরা ।তাইতো ওরা নুর্নেহা কে সমাজের পক্ষাঘাত, বাল্য বিবাহ থেকে বাঁচাতে পারলো।ঠিক সময়ে ওরা দীক্ষা কে খবর না দিলে আলোয় ফেরা হতো না নুর্নেহার।
দীক্ষা এই প্রত্যন্ত গ্রামে মাস্টারি করতে এসে দেখছে অশিক্ষা দারিদ্রতা ডেকে আনে, দারিদ্রতা আনে কুসংস্কার..কথা হলো ..বেশি বয়স হলে পাত্র জুটবেনা।।
মেয়ে গুলো তার বলি হয়,যতই রাষ্ট্রপতি মেয়ে দের বিয়ে আটকিয়ে পুরস্কার দিক, তাদের পড়া চালানোর জন্য,অথবা বিয়ের দিন বন্ধু বা শিক্ষক দের সাহায্যে বিয়ে আটকিয়ে আলোয় ফিরুক,তার প্রভাব ফলে নি এই গ্রামে।অভিভাবক মিটিং এ যতই আঠারো বছরের নিচে আর বিয়ে নয় ,তার কুফল নিয়ে ওরা শিক্ষক শিক্ষিকারা যতই বলুক ,একটাই কথা.. পড়িয়ে কি হবে,ছেলে পাবনা।
দীক্ষার তখন মনে হতো বিদ্যাসাগরের কথা .."হে,অবলাগন ,কেনো এই দেশে জন্মালে" ...
সত্যি তাই ,মেয়ে গুলো পনের বলি হতে হতে দড়ি বাঁধা ছাগ শিশু র মতোই তাদের জীবন বলি দিচ্ছে। মাসের মধ্যে হঠাৎ একটা মেয়ে ক্লাসে আসছেনা কেনো,জানা যায় বিয়ে হয়ে গেছে ম্যাম।
এই হলো এত বোঝানোর ফলাফল।নাবালিকা একদিন এ সাবালিকা, বিয়ে হলে, হোক না আঠারো বছরের নিচে।
কেনো বিয়ে দিলেন জানতে চাইলে দীক্ষা কে শুনতে হয় ...আপনি তো আর ওর বিয়ে দেবেননা দিদিমণি,আপনার মতো তো আর স্কুয়ে পড়াবে না আমাদের "মিয়ে "গুলা ,তাই ওর বাপ ভালো পাত্র পেংয়ে বিহা দিয়েং দিল।
কি বলবে দীক্ষা !! যে ওদের মেয়ে গুলো পড়লেও একদিন তার মতো হবে ;বুঝবেনা এরা।
বিয়ে হলো এদের মেয়েগুলোকে ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলার অস্ত্র।
"ঘোরতিমির ঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তবঅবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুরস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা"...
গাইতে গাইতে দীক্ষা র মনে হলো সে একা নয়।নিবিস্ততা ভাঙতে তার চোখ পড়লো যার দিকে , আশা করেনি ..ঠিক দেখছে তো, হুম নুর্নেহা ,
যাকে সে বাঁচাতে পেরেছে কন্যা বলি থেকে।
যদি ও নুর্নেহার বাবা মা জানে না একথা। তো জানপ্রাণ থাকবেনা তাহলে।
সে মনপ্রাণ দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছিল এই বিয়েটা ।তার বাহিনী খবর দিয়েছিল কিন্তু তারিখ টা ওদের জনা ছিলনা ।
কিন্তু স্কুলে আসার পথে ঠিক 14ই আগস্ট ,কন্যাশ্রী দিবসে র জন্য মেয়ে দের নিয়ে আসছিল যখন , তখন ওদের বাড়িতে ভুরিভোজ দেখে সন্দেহ হতে অন্য মেয়ে দের কাছে জানতে পারে নুর্ণেহার বিয়ে,মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিল দীক্ষার ।কেনো ও আগে জানতে পারেনি। স্কুল এ এসে তার এক সহকর্মীর থেকে নম্বর নিয়ে সোজা বিডিও অফিস এ ফোন ।কে ধরেছিল জানেনা।একটাই আর্জি ... মেয়েটা কে বাঁচান,স্কুলের নাম টা বলেছিল আর নুর্নেহার বাবার নাম ও ঠিকানা টা।কিছুক্ষণ পরে এক সমাজসেবী দাদা , যারা নাবালিকা বিবাহ রোধে লড়ছে তাকে ফোন করতে সেও বিডিও কে নিয়ে স্কুলে নেমে ছাত্রছাত্রী দের জিজ্ঞেস করতে তারাই রাস্তা দেখিয়ে দিল ।
বিডিও সাহেব গিয়ে আটকেছিল বিয়ে টা।দীক্ষা সত্যি কৃতজ্ঞ, শুধু ওদের সমক্ষে আসেনি।তাহলে আজ স্বাধীনতা দিবসে এই পতাকা তলে দাড়াতে হতনা।
আজ স্বাধীনতার এত বছর পরেও ,যেখানে মেয়েরা চন্দ্রভিযান এ যাচ্ছে,সেখানে এই ভাবে নিষ্পাপ মেয়েগুলো বলি হচ্ছে সমাজের , কোথা স্বাধীনতা, নারী মুক্তি ? কি সে জানেনা আজও ।নারী স্বাধীনতা মুখ লুকায় সমাজের যাঁতাকলে।
সে নুর্ণেহা কে কাছে ডাকে, আর তার বাহিনী কে,স্কুলের সবাই মিলে গেয়ে ওঠে ...মুক্তির মন্দির সোপান তলে।
স্বাধীনতা আমাদের দেশে সেদিন আসবে ,যখন প্রত্যেকটা মেয়ে তাদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকবে।যখন কন্যা ভ্রূণ হত্যা বন্ধ হবে, মেয়ে দের পুড়িয়ে মারা বন্ধ হবে,কোনো মেয়ে ধর্ষিত হবে না ।যেদিন সবাই ভাববে মেয়ে রা মায়ের রূপ। মেয়ে মনে বিষবৃক্ষ নয়।সেদিনই আসবে পূর্ণ স্বাধীনতা।সেদিন নেতাজী হাসবে তার ঝাঁসি রানী বাহিনীর মধ্যে,জাগ্রত বিবেক চেতনা য় উন্মোচিত হবে ভারত,সেদিন ভারত বর্ষ সূর্যের এক নাম হবে,নারীপুরুষ ভেদাভেদ নয়।রবি ঠাকুরের গানে....সবাই গাইবে .. "ও আমার দেশের মাটি তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা",
ঠিক দেশ মায়ের মত মেয়েরাও বন্দিত হবে তাদের শক্তি তে, মেধাতে।তারা গাইবে..আমার মুক্তি আলোয় আলোয়।তারা তো মতাঙ্গিনী হাজরা ,লক্ষী বাই ,কল্পনা দত্ত এর দেশের মেয়ে।ইতিহাস আজও তাদের কে ভোলেনি।দেশ স্বাধীন করতে মায়েদের ভূমিকা কম নয়।এমন মা না হলে এমন অগ্নি সন্তান ও ভারত মা পেতো না।ইতিহাস তার সাক্ষী।তাই তো ভারত মাতা কে মুক্ত করতে বীর শহীদের রক্তে নজরুল শৃঙ্খল ভাঙ্গার গান গেয়ে উঠেছিলেন।রবি ঠাকুর গেয়েছিলেন
...বিধির বাধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান__,
তুমি কি এমন শক্তিমান।
রচনাকাল : ১৫/৮/২০২০
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।