স্বাধীনতার কর্মকান্ড
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : লিজা মন্ডল
দেশ : India , শহর : কোলকাতা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৫ টি লেখনী ২১ টি দেশ ব্যাপী ৮২৮৮ জন পড়েছেন।
স্বাধীনতা মানে ' স্ব অধীনতা ' অর্থাৎ কি না, নিজের অধীনে চলা । স্বাধীনতা বোলতে আমি বুঝি , নিজের মন যা চাইছে , নিজের বিবেক যে কাজে মত দেবে সেটাই তো স্বাধীনতা। মনের ইচ্ছাগুলো যখন বিবেকের তাড়নায় বহিঃপ্রকাশ ঘটায় , আমার মনে হয় , সেটাই স্বাধীনতা । আমার যদি লিখতে ইচ্ছা করে আমি তখনই লিখে ফেললাম , আমার কিছু বোলতে ইচ্ছা কোরছে তো বোলে দিলাম , কিছু কোরতে ইচ্ছা কোরছে কোরে ফেললাম। সাধারণত এটাই স্বাধীনতা। কিন্তু এই স্বাধীনতা সব-সময় শোভন নাও হতে পারে । দেশ ও দশের পক্ষে মঙ্গলদায়ক নাও হতে পারে। তাই আমার মনে হয় , স্বাধীনতার অর্থ স্বেচ্ছাচারিতা নয় , নয় লাগামহীন অবাধ আচরণ। সত্যিকারের স্বাধীনতা মানুষকে মার্জিত ও রুচিশীল কোরে তোলে। স্বাধীন চেতনার বিকাশ ঘটে।
৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲৲
স্বাধীনতা কথাটা কোথাও যদি কোনোভাবে আমাদের কর্ণগোচর হয় , সর্বাগ্রে যে চিত্র আমাদের মনের গভীরে ভেসে ওঠে তা হোলো , বাংলা তথা ভারতবর্ষে প্রায় দুশো বছর ইংরেজদের রাজত্বকাল। ইংরেজরা সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। আস্তে আস্তে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে তাদের বিচরণ শুরু হয়। বেশ কিছুদিন পরই ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌলার করুণ মৃত্যুতে এই ভারত ভূখণ্ডে ইংরেজ শাসনের প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয়। 

সাদা চামড়ার ইউরোপীয়রা ভারতীয়দের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালায়। এই অত্যাচারের প্রতিবাদে ভারতবর্ষের অনেক দেশপ্রেমীকে অমানবিক ও অসহনীয় নির্যাতন সহ্য কোরে আত্মবিসর্জন দিতে হয়েছিলো। পলাশীর যুদ্ধ থেকে শুরু কোরে তদানীন্তন ইংরেজ সরকারের গভর্নর লর্ড ক্লাইভ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক বাংলা শাসন কোরেছিলো আনুমানিক ১০০ বছর। ভারতের ইতিহাস সতত সুখের ইতিহাস নয়। অত্যাচার , লাঞ্ছনায় , অবমাননায় জর্জরিত ভারতবাসী সেই পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচন করে ' প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা ' পূর্ণ কোরে স্বাধীনতার  সূর্যটাকে আবার ভারতের ভাগ্যাকাশে তুলতে পেরেছিলেন। অসংখ্য বিপ্লবীর প্রাণের বিনিময়ে রক্তের আল্পনায় এসেছিলো স্বাধীনতা।

আমি ওপরে বর্ণিত যে স্বাধীনতার কথা বোলেছি তা হোলো দেশাত্মবোধের স্বাধীনতা। যা ভারতবর্ষের শিক্ষিতরাই শুধু বোঝে। ' স্বাধীনতা দিবস ' শতাংশের হিসেবে হয় তো পাঁচ-দশ, বা তার চেয়ে কিছু বেশী সংখ্যক মানুষ কি বোঝে এই শব্দের মানে ? তারপরও রেডিও , টিভিতে বিভিন্ন মঞ্চে-অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার জয়গান গাওয়া হচ্ছে।
               ও আমার দেশের মাটি 
               তোমার পরে ঠেকাই মাথা.......
মজার ব্যাপার , গানে গলা মেলাচ্ছেন দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা , ঘুষখোর অফিসার , ওষুধে-খাবারে ভেজাল মেশানো ব্যাবসায়ী। এমন একটা পরিস্থিতিকে আমরা মানে প্রগতিবাদীরাও মেনে নিয়েছি।আমরা যে সবাই স্বাধীন। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। এই স্বাধীনতা তো আমাদের জন্মসূত্রে পাওয়া। হ্যা , এটাই যে আমাদের বাক স্বাধীনতা।

ভারত এখন ১২০ কোটির দেশ। সবাই কি জানে ১৫ই আগস্টের অর্থ ? স্বাধীনতার কথা বার বার মুখে মুখে ঘুরলেও প্রকৃত স্বাধীনতার প্রশ্নে আজও আমরা উত্তর খুঁজি। কলকাতার ফুটপাথ থেকে রাজপথ , ঝুপড়ি থেকে হাই রাইস বিল্ডিং কারো কাছে স্বাধীনতা মানে হলিডে , আবার কেউ কেউ আজাদ ভারতের স্লোগানে দিন যাপন কোরছেন।

মাঝে মাঝে খুব আশাবাদী হয়ে যাই। আজ সকালে যেমন সূর্য উঠেছিলো , কালও তেমন উঠবে। মাঝে মধ্যে নিজেও বুঝতে পারি না ঠিক কাকে বলে স্বাধীনতা ? স্বাধীন দেশে সবসময় আমাদের থাকতে হয় হুমকি-উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে। আমার নিজের দেশে আমার নিরাপত্তা নেই। যাকে যে কোনো নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করায় কোনো বাধা নেই। ইচ্ছে কোরলেই হামলা চালানো যায়। অপমান করা যায় , গালিও দেওয়া যায়। অধিকার বঞ্চিত , স্বত্বন্ত্র মানুষ কেবলই ভয়ের প্রহর   গোনে। আর ভাবে , 
   স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় ?
    দাসত্ব-শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায় হে ,কে পরিবে পায়।

কিসের মুক্তি সে নিয়ে আসে ? তাহলে স্বাধীনতা কার ? ব্যক্তির ? পুঁজির ? গোষ্ঠীর ? সমাজের ? না কি আমার ? না কি আপনার ? আমাদের সংবিধানে লেখা আছে , ব্যক্তির ধর্মীয় মত প্রকাশের কথা , বাক স্বাধীনতার কথা। সব কিছুর সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা। ব্যক্তি - কর্ম - ধর্ম একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি পূর্ণতা পেতে পারে না । কর্ম , ধর্ম কারোর সাথেই ব্যক্তি বিশেষের কোনো বিরোধ নাই। সবই এক সূত্রে গাঁথা। এখানেই যে স্বাধীনতার মাহাত্ম।
রচনাকাল : ১৫/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লিজা মন্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 29  China : 11  France : 35  Germany : 84  India : 800  Ireland : 52  Japan : 2  Malaysia : 1  Netherlands : 2  Norway : 28  
Romania : 6  Russian Federat : 4  Saudi Arabia : 7  Sweden : 12  Ukraine : 44  United Kingdom : 9  United States : 240  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 29  China : 11  France : 35  Germany : 84  
India : 800  Ireland : 52  Japan : 2  Malaysia : 1  
Netherlands : 2  Norway : 28  Romania : 6  Russian Federat : 4  
Saudi Arabia : 7  Sweden : 12  Ukraine : 44  United Kingdom : 9  
United States : 240  
লেখিকা পরিচিতি -
                          লিজা মন্ডল (সাহা) ১৭ই মার্চ , উত্তর চব্বিশ পরগণার ব্যারাকপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ছোট থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি গান, নাচের চর্চাও করেছেন। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্য নিয়েই তাঁর পড়াশুনা। ছোটবেলা থেকেই গল্পের বই পড়ার প্রবণতা খুবই ছিল , তাছাড়া সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন লেখক-কবিদের গল্প , উপন্যাস, কবিতা ইত্যাদি পড়তেও তিনি ভালোবাসেন।  
                          
© কিশলয় এবং লিজা মন্ডল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
স্বাধীনতার কর্মকান্ড by Liza Mondal is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭১৭৩
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী