#মানবতার_মন্দিরে
✍️আকাশ দত্ত
***********************
অন্ধকারে গলিটা পেরিয়েই বড়ো মন্দিরটা চোখে পরলো ইসমাইলের l প্রতিবার এই মন্দির চোখে পড়ে ওর যেতে আসতে , সন্ধ্যাবেলায় যখন সন্ধ্যা আরতি হয় সেটা দেখতে খুব ইচ্ছে করে ওর l একবার দুবার চেষ্টা করেছিলো মন্দিরে ঢোকার কিন্তু বকে ধমকে কয়েকটা কটু কথা বলে ওকে বের করে দিয়েছিলো পুরোহিতরা মন্দির থেকে l
ছোট্ট ইসমাইল সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল l শুধু একটা কথাই ওর মনে ঢুকে গেছিলো মুসলমানদের নাকি ঢোকা নিষিদ্ধ মন্দিরে l ঠাকুর তো এক তাহলে কেন এই ভেদাভেদ!
এরপর মন্দিরের সামনে দিয়ে গেলেও কখনো দাঁড়ায়নি ও মন্দিরের সামনে l মন্দিরের সন্ধ্যের আরতি বাইরে দিয়েই দেখতো ও l বাড়িতে আব্বা আম্মিকেও একই কথা জিজ্ঞেস করেছিলো কিন্তু কেউ উত্তর দিতে পারেনি l
আজ মন্দিরের সামনে থমকে দাঁড়িয়ে পরলো ও l বাইরে দিয়ে ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে প্রণাম করে করজোড়ে আবার এগোতে যেতেই একটা হাত আঁকড়ে ধরলো ওর হাত l চকিতে ঘুরে তাকাতেই দেখলো সামনে একটা ছোট বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে , অনেকটা ওর বয়েসি l ছেলেটা কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ইসমাইলের হাত ধরে ধীর পায়ে নিয়ে এলো মন্দিরের গর্ভগৃহের সামনে l মন্দিরের সামনেটা তখন ধুপ ধুনোর গন্ধে ম ম করছে l ইসমাইল কোনো পুরোহিত বা পান্ডাদের দেখতে পেলো না , ও ভয় ভয় এই প্রথমবার এগিয়ে গেলো রাধাকৃষ্ণের মূর্তির খুব কাছে l ঠাকুরের চোখের সামনে তাকিয়ে কেমন যেনো একটা মোহগ্রস্থ হয়ে গেলো ইসমাইল l ঠাকুর যেনো হাসিমুখে ওর পানেই তাকিয়ে রয়েছে l
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো ইসমাইলের l
সেই ছোট ছেলেটা এগিয়ে এলো l দুহাতে ইসমাইলের চোখের জল মুছিয়ে বললো ,
-“আমি কনক এই মন্দিরের সেবায়েত lআমি তোমায় প্রায় দেখি , তুমি দূর থেকে আরতি দেখো , কিন্তু মন্দিরের ভেতরে আসো না l তুমি মন্দিরে পুরোহিত ঠাকুরের ভয় আসো না জানি তবে চিন্তা করোনা ঠাকুর যে সবার l আমি তাই আজ নিয়ে এলাম তোমায় ঠাকুরের সামনে "
শেষের কথা আর শোনা হলো না ইসমাইলের l ও জড়িয়ে ধরলো কনককে l ওর চোখের জল তখন বাঁধ ভেঙেছে l
দূরে কোথাও শঙ্খ বেজে উঠলো পরপর তিনবার l
ঈশ্বর যে সবার , মানুষ তো এক l সকলের শরীরের তো বইছে এক রক্ত তাহলে কেন এই জাতি ভেদাভেদ কেন এই হিংসাদ্বেষ l
বিদ্রোহী কবির দুটো লাইন মনে পরে গেলো ,
“মোরা এক বৃন্তে দুটো কুসুম হিন্দু মুসলমান "
মুসলিম তার নয়ন মনি হিন্দু তার প্রাণ"
রচনাকাল : ১৫/৮/২০২০
© কিশলয় এবং আকাশ দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।