স্বাধীনতার আরেক রুপ
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : মনি রায় ঘোষ
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , জুলাই
প্রকাশিত ৪৮ টি লেখনী ৪১ টি দেশ ব্যাপী ৩০৫০৩ জন পড়েছেন।
Moni Roy Ghosh
ঠিক সন্ধ্যের মুখে কান্ড টা ঘটল।পারা শুদ্ধ লোক জড়ো হয়েছে মোড়ের মাথার বাংলা মদের ঠেক এর সামনে।সেখানে রক্ত গঙ্গা বইছে আজ।সবাই তাকিয়ে দেখছে বটে,কিন্তু চক্ষু সকলেরই চরক গাছ।এই পাড়ায় এরকম কান্ডও যে কেউ কোনদিন ঘটাতে পারবে সেটা তো সবারই কল্পনার বাইরে।
শিবনাথ মজুমদার ওরফে শিবু মস্তান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে।তার চার পাশে জমাট রক্ত।শরীর টা অসার।
একটু দুরেই স্থির হয়ে বসে আছে দীপক।দীপক সমাদ্দার। ভাঙা মদের বোতলটা এখনো তার হাতের মুঠোয়।সেটাও রক্তে মাখামাখি।পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।তার আগে কেউই লাশের গায়ে হাত দেবেনা।দীপকও যেন পুলিশের জন্যই অপেক্ষা করছে।।ওর চোখ মুখ বড্ড বেশি রকম শান্ত।ভয়ের চিন্হমাত্র নেই।এরকমটা যেন হওয়ারই ছিল।
কিন্তু ওখানে উপস্থিত সকলের চোখ মুখেই প্রশ্ন চিহ্ন স্পষ্ট ।
দীপক বরাবরই খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে।কারো আগে পিছে খুব একটা থাকেনা।তবে কেউ কোন বিপদে পড়লে বা কারো কোন সাহায্যের প্রয়োজন হলে সে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করে।কিন্তু কোনদিনই কোন অশান্তি বা মারামারির মধ্যে সে নিজেকে জড়াতে পছন্দ করতনা।
বেশ কিছুদিন ধরেই দীপকের মন মেজাজ ভালো যাচ্ছিলনা ।কেমন যেন একটু চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল।

শিবনাথ মজুমদার ওরফে শিবু মস্তান ছিল পাড়ার তথা এলাকার দাদা।এম এল এ রঞ্জন ভৌমিক এর ডান হাত।এলাকার সকলেই তেনাকে একটু সমঝে চলত।ছয় সাত জনের একটা দল ছিল তার।তবে বেশি ভোগান্তি হত পাড়ার মেয়েদের।শিবুর উপদ্রবে রাস্তায় বেরোনো দায় হয়ে উঠেছিল।ঘরের বউ দের ও সে ছেড়ে কথা বলতনা ।বেশ কয়েকজনকে তার আখড়ায় তুলে নিয়ে গিয়ে পরের দিন আবার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে গেছে।।তবুও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার ক্ষমতা কারোই ছিলনা।প্রানের মায়া সব থেকে বড়।খুন খারাবি ধর্ষণ এসব তো শিবু মস্তানের বায় হাতের খেল।এলাকায় তার অবাধ বিচরণ।শুধু তাই নয়,ভয় দেখিয়ে জলের দামে বাড়িঘর লিখিয়ে নিত।তারপর সেখানে বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করত।প্রতিবাদ করলেই মেরে ফেলার হুমকি।শুধু হুমকি নয় বেশ কয়েকবার কাজেও করে দেখিয়েছে।এসব কিছু শিবুর নিত্য দিনের কিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।মুখ বুঝে এসব সহ্য করে এসেছে সকলেই।শিবু মস্তানের অত্যাচার সহ্য করাটা সকলের যেন অভ্যাসে দাড়িয়ে গিয়েছিল ।এটাই নিয়তি বলে মেনে নিয়েছিল সবাই।দীপক তো রীতিমত ভয় পেত শিবুকে।যে রাস্তায় শিবু আর তার দলের ছেলেরা থাকত দীপক ভুল করেও সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করত না।কি এমন ঘটল যে দীপক এমন বেপরোয়া হয়ে উঠল?
পাশের বাড়ির নীলিমার সাথে দীপকের বেশ ভাব ছিল।ছোটবেলা থেকেই তারা এক সাথে খেলাধূলা করে বড় হয়েছে।না প্রেমের সম্পর্ক নয়।নিখাদ ভাই বোনের সম্পর্ক।প্রত্যেক বছর নীলিমা ভাই ফোঁটা দেয় দীপককে।রাখী পড়ায় প্রত্যেক বছর ।তাদের সম্পর্ক দেখে অনেকেরই হিংসে হত।
বেশ কিছুদিন ধরেই দীপকের বাড়িটার ওপরে নজর পড়েছে শিবু মস্তানের।বেশ কয়েকবার সে কথা জানিয়েছিল দীপককে।বাবার স্মৃতি হিসেবে এই বাড়িটা ছাড়া যে আর কিছুই নেই সেকথা দীপক ও জানিয়েছিল শিবুকে।সে কিছুতেই এই বাড়িটা বিক্রি করতে চায়না।
না চোখ রাঙিয়ে নয় খুব শান্ত ভাবেই কথাগুলো বলেছিল শিবু কে ।তার উত্তরে শিবু বলেছিল "বাপের সৃতি মারাচ্ছ চাঁদু ,ভালয় ভালয় বাড়িটা লিখে না দিলে যে কটা টাকা পেতিস সে কটাও আর পাবিনা।মাঝ খান থেকে জান টাও খোয়াবি।শিবু মস্তান কে রাগাসনা বলে দিলাম"। বলা বাহুল্য দীপক আর টু শব্দটি করেনি।বাড়িটা হারানোর দুঃখে মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়াত।
কিন্তু সহ্যের সমস্ত বাধ ভেঙ্গে গিয়েছিল সেদিন,যেদিন শয়তান গুলো নীলিমাকে রাতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।সারারাত তন্ন তন্ন করে খুঁজেও নীলিমাকে পাওয়া যায়নি।পরের দিন কাক ভোরে আধমরা অবস্থায় বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় শিবু মস্তানের দল।    পুলিশকে জানানো হল,কিন্তু প্রত্যেক বারের মত এবারেও তাদের একই জবাব।কোন প্রমাণ নেই শিবুর বিরুদ্ধে।আর যদিও বা প্রমাণ পাওয়া যায় সেটা মিথ্যে প্রমাণ করতে কিংবা ধামাচাপা দিতে রঞ্জন ভৌমিক এর দু মিনিট লাগবে না।।
বোন এর মাথায় হাত রেখে সেদিন দিব্যি করেছিল দীপক ।শিবুর হাত থেকে সে সবাইকে মুক্ত করবে।আর কোন মেয়েকে যাতে সে তার ভোগের বস্তু না বানাতে পারে,আর কারো মাথার ছাদ যেন কেড়ে নিতে না পারে ।শিবুর ভয়ে কুকড়ে গিয়ে যেন কাউকে আর নিশ্বাস নিতে না হয়।চোদ্দই আগস্ট ঠিক সন্ধ্যের মুখেই ঘটনাটা ঘটিয়ে ছিল সে,দীপক জানত পাড়ার মোড়ে বাংলা মদের ঠেকেই দেখা মিলবে শিবু আর তার দলবলের।তাই সরাসরি সেখানেই গিয়ে উপস্থিত হয় দিপক। কারো কিছু বোঝার আগেই শিবুর সামনে পড়ে থাকা মদের বোতলটা নিয়ে দেয়ালে বাড়ি মেরে চোখের পলকে সেটা শিবুর পেটে ঢুকিয়ে দেয়।বেশ কয়েকবার আঘাত করে ধারালো বোতলটা দিয়ে।ঘটনাটা এতটাই আকস্মিক ঘটে যে তার দলের ছেলেগুলো ও হতভম্ব হয়ে যায়।দীপকের ওরকম ভয়ংকর রুপ দেখে তারা তৎক্ষনাত ওখান থেকে পালিয়ে যায়।কাজটা হয়ে যাওয়ার পর দীপক ও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারত,কিন্তু সে পালায় নি।সে তো কোন অন্যায় করেনি তাহলে সে পালাবেই বা কেন।তার চোখে মুখে ছিল এক অদ্ভুত তৃপ্তি।দীপক জানে এই সমাজে শিবু মজুমদার এর মত জানোয়ার দের অভাব নেই।এরা রক্ত বীজ এর দল।একজন মরলে একশ জন জন্মাবে।কিন্তু তবুও এভাবে এক জন কেও যদি শেষ করা যায় সাধারন মানুষের আত্ম বিশ্বাস হাজার গুন বেড়ে যাবে ।এভাবে একজন দীপক ও যদি জেগে ওঠে তবে শিবুদের সংখ্যা একদিন ঠিক বিলীন হয়ে যাবে ।
পনেরই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস ।সকাল থেকেই পাড়ায় হইচই। ছোট বড় সকলে মিলে পতাকা উত্তোলন করছে।চারিদিক থেকে ভেসে আসছে জাতীয় সঙ্গীত এর সুর।ভেসে আসছে বন্দে মাতরম।দীপক ইচ্ছে করেই চোদ্দই আগস্ট এর দিনটা বেছে নিয়ে ছিল শিবু কে শেষ করার জন্য।যাতে পনেরোই আগস্ট সকলে নির্ভয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করতে পারে ।
ফাসিঁ হোক বা যাবজ্জীবন দীপকের মুখে আজ জয়ের হাসি।
রচনাকাল : ১৪/৮/২০২০
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 10  France : 67  Germany : 101  Hungary : 2  India : 822  Ireland : 25  Lithuania : 2  Netherlands : 2  Norway : 36  
Romania : 11  Russian Federat : 16  Saudi Arabia : 5  Sweden : 12  Switzerland : 2  Ukraine : 64  United Kingdom : 10  United States : 216  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 10  France : 67  Germany : 101  
Hungary : 2  India : 822  Ireland : 25  Lithuania : 2  
Netherlands : 2  Norway : 36  Romania : 11  Russian Federat : 16  
Saudi Arabia : 5  Sweden : 12  Switzerland : 2  Ukraine : 64  
United Kingdom : 10  United States : 216  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মনি রায় ঘোষ ৮ ই ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তারপরে, খুব ছোটবেলায় তাঁর পরিবার কোলকাতা পাড়ি দিয়ে এখন কোলকাতার সোদপুর নিবাসী।

খুব ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালবাসা আর সেই থেকেই লেখার জগতে পদার্পণ। বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার জন্মস্থান বাংলাদেশ থেকেও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প এবং অনুগল্প লেখেন। এছাড়াও অনলাইন পত্র পত্রিকাতেও তার লেখা পাওয়া যায়। 
                          
© কিশলয় এবং মনি রায় ঘোষ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
স্বাধীনতার আরেক রুপ by Moni Roy Ghosh is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪১৬৩২
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী