"স্বাধীনতা" --এক বহুল আলোচিত, বহুকাঙ্ক্ষিত, বহুচর্চিত মারাত্মক রকমের অর্থবহ শব্দ।এই শব্দটি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে আলাদা রকমের অর্থ বহন করে। কেউ ব্যক্তি - স্বাধীনতায় বিশ্বাসী,কেউ কর্ম -স্বাধীনতায়,কেউ ধর্ম -স্বাধীনতায় কিন্তু সবাই একবাক্যে এটা স্বীকার করি যে স্বাধীনতা খুবই প্রয়োজনীয় সকলের কাছে।
৭২টি বসন্ত পেরিয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার বয়েস ৭৩ এ পা দেবে। পত পত করে উড়বে আমার দেশের পতাকা। গেরুয়া, সাদা,সবুজ আর মাঝে অশোক স্তম্ভ , আমার স্বাধীনতার পতাকা। রক্ত ঝরানো আন্দোলন করে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীকার অর্জন করার পতাকা। গর্বের ইতিহাস আমার,তাই আজকের দিনটা একটু আলাদা রোজের থেকে। স্বাধীনতার কথা বার বার আমাদের মুখে মুখে ঘুরলেও আমরা আজও স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ খুঁজে বেড়াই। বেশির ভাগ মানুষের কাছে আসলে এ এক ছুটির দিন হয়েই আসছে কবে থেকে কারণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা তাই তো জেনে এসেছি! ক'জন মানুষ জানি আমরা কত তরতাজা প্রাণের বিনিময়ে,কত সম্মানের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা অর্জন! শুধুমাত্র জানি ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর দিকে চোখে চোখ রেখে গর্জে উঠেছে কণ্ঠস্বর,
"বন্দেমাতম্...বন্দেমাতম্..."
"স্বাধীনতা" শব্দটি শুনলেই আমার কাছে আসে সেই গোধূলীলগ্ন যখন পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম আর উড়ে গেছিলাম ওই নীল মুক্ত আকাশে ডানা ঝাপটিয়ে মুক্তির উচ্ছাসে ওই খাঁচায় বন্ধ করে রাখা পাখির সাথে।
পাখি ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া আসলে কঠিন। মানুষ তো ভালোবেসে পাখিকে সোনার খাঁচায় পুরে রেখে নামি দামি খাবারও খেতে দেয় কিন্তু একে কি ভালোবাসা বলবো? পাখিদের তো সৃষ্টি করাই হয়েছে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোর জন্য। কিন্তু কিছু মানুষ শখের বশে বন্দি করে রাখে পাখিকে। আসলে পাখিদের বুদ্ধিমত্তার থেকে আমাদের বুদ্ধিমত্তা অনেক বেশি,তাই কোনো পাখি কোনোদিন কোনো পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে রাখে না। খাঁচায় বন্দি করে রাখে এক মানুষ এক মানুষকে। সে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে! আর পাখির মতো বন্দি থাকতে থাকতে আমরা নামি দামি খাবার পেয়েও ডুবে যাই অদ্ভুত অনাহারে ,নাহলে মেনে নি মনে। পাখিও ওমন মনে মনেই মানিয়ে নিতে শিখে যায়,তাই অনেক দিন পরেও যখন তাকে মুক্ত আকাশে মুক্তি দেওয়া হয় তখন সে নিজে ডানা মেলার ক্ষমতা, নিজের খাবার খুঁটে খাবার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকে। মুক্ত,স্বাধীন আকাশের সীমানা জুড়ে পাখির অবাধ বিচরণ তাই তাকে খাঁচায় আটকে রাখা আর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া তো একই। তেমনই এক বিকেলে খাঁচার মধ্যে দেখেছিলাম এক বসন্তবৌরিকে। একলা বসে উদাস চোখে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে-----
"তপ্ত বেলায়,শ্রান্ত কায়ায় একলা মনে হায় !
বিরহী বৌরি,বসে আছে কার যে অপেক্ষায়!!"
দূরে গাছের ডালে আরও কিছু বসন্তবৌরি বসে ডাকাডাকি করছে আপন মনে আর খাঁচার বসন্তবৌরি অপেক্ষা করছে সেই বন্ধুর যে তাকে মুক্তি দেবে,বাঁচতে শেখাবে নিজের ইচ্ছায়,ডানা মেলে উড়তে দেবে নীল মুক্ত আকাশে যেখানে কেউ নেই তাকে ধরবার। যাকে ঘুরতে দেবে উড়ে দূরে দূরে।খাঁচার দরজা শুধুমাত্র খোলার অপেক্ষা আর উড়ে গেলো আমার বসন্তবৌরি নীল মুক্ত আকাশে দূরের সূর্যের কাছে সোহাগে আদরে মেখে স্বাধীন হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে। আসলে যা মনকে নাড়া দেয় তা সৃষ্টি আর যিনি মনকে নাড়িয়ে দেন তিনি তো স্রষ্টা,তবে প্রশ্ন থেকেই যায় কতটা মেনে নিলাম আর কতটা মনে।
আহা কি তৃপ্তি,পেয়েছিলাম সেই দিন! মুক্ত হয়েছিলাম বসন্তবৌরির সাথে যেদিন। কবির কথায় বলি----
"স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর , কোকিলের গান ,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।"
শব্দ ঋণ : শ্রী অর্ণব দত্ত
স্বাধীনতা তুমি : জনাব শামসুর রহমান।
রচনাকাল : ১৪/৮/২০২০
© কিশলয় এবং সুমি ভট্টাচার্য্য কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।