পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম...... স্বাধীন ভারত
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে সাহসিনী নারীদের কথা
কমলা নেহরু
ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর স্ত্রী এবং ইন্দিরা গাঁধীর মা, কমলা কৌর নেহরু, বিয়ে করেছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। প্রথম থেকেই নেহরু পরিবারের সঙ্গে দেশের কাজে লেগে পড়েন তিনি। ১৯২১-এর অসহযোগিতা আন্দোলনের সময় তিনি তাঁর বিশাল মহিলা বাহিনী নিয়ে এলাহাবাদে ধ্বংস করে দেন প্রচুর বিদেশি সামগ্রীর দোকান। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহমূলক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য যখন গ্রেফতার করা হয় তাঁর স্বামীকে, তখন নির্দ্বিধায় কমলা নেহরু এগিয়ে নিয়ে চলেন সেই বক্তৃতা। ক্রমেই ব্রিটিশরা বুঝতে পারে যে তাদের জন্য বেশ ভয়ের ব্যাপার হয়ে উঠছেন কমলা। ফলে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দু’বার তারা গ্রেফতারও করেন তাঁকে।
ম্যাডাম ভিকাজি কামা
দেশের মাটিতে না থেকেও, নিরলসভাবে ভারতের স্বাধীনতার জন্য কাজ করে গিয়েছিলেন ম্যাডাম কামা। প্লেগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ব্রিটেনে পাঠানোর পর বলা হয় যে দেশে ফিরে তিনি যেন আর স্বাধীনতার কাজে যোগ না দেন। তাই সারাজীবন বিদেশে থেকেই কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন এই পার্সি মহিলা। দাদাভাই নাওরোজির সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার সময় তিনি এবং শ্যামজি কৃষ্ণ ভর্মা স্থাপন করেন Indian Home Rule Society-এর। বিদেশের মাটিতে প্রথমবার ভারতের জাতীয় পতাকাও তোলেন ম্যাডাম কামা। ১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে International Socialist Conference-এ তোলা সেই পতাকার নাম ছিল Flag of Indian Independence।
অরুণা আসফ আলি
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অন্যতম প্রধান চরিত্র অরুণা আসফ আলি। লবণ সত্যাগ্রহের সময় তিনি নিয়েছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসেরও সক্রিয় সদস্য ছিলেন অরুণা। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের জন্য একসময় জেলবন্দিও করা হয় তাঁকে। তবে জেলের চার দেওয়াল কি আর আটকে রাখতে পারে তাঁর মতো ব্যক্তিত্বকে? জেলে থাকাকালীনও সব স্তরের বন্দিদের সমানাধিকারের জন্য টানা প্রতিবাদ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার প্রতিবাদের ফলে তিহার জেলের বন্দিদের অবস্থার উন্নতির বন্দোবস্তও করা হয় শেষ পর্যন্ত।
অ্যানি বেসান্ত
নিজে ভারতীয় না হয়েও সারাজীবন ভারতের স্বশাসনের জন্য আন্দোলন করে যাওয়ার কৃতিত্ব সম্ভবত আর কারওই নেই। ১৯০২-এ ভারতে এসে সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ এবং সিন্ধ জাতীয় কলেজিয়েট বোর্ডের স্থাপন করেন তিনি। ১৯১৪, সারা বিশ্ব যখন প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জর্জরিত, সেই সময় লোকমান্য তিলকের সঙ্গে মিলে তিনি শুরু করেন All India Home Rule League। এই সংস্থার চাপে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাধ্য হয় এই ঘোষণা করতে যে ভারতকে তারা স্বশাসিত হতে দিতে আগ্রহী। জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে অ্যানি বেসান্ত এক বছর কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদও সামলেছিলেন।
সুচেতা কৃপালানি
ইনি এমন একজন যাঁর নাম না বললে এই তালিকা অসম্পূর্ণই থেকে যেত। অন্যতম এই স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতের পার্টিশন দাঙ্গার সময় মহাত্মা গাঁধীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসেও সুচেতা কৃপালানি রেখে গিয়েছেন তাঁর অবদান। ভারতে সংবিধান তৈরির সময় তিনি সাংবিধানিক পরিষদের খসড়া কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও আরও একটি বিশাল কৃতিত্ব আছে কিন্তু তাঁর— কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে তিনি গেয়েছিলেন ‘বন্দে মাতরম’। স্বাধীনতার পরেও তিনি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার সংগ্রাম...... স্বাধীন ভারত
স্বদেশের গান (গীতি কবিতা) সপ্তম পর্ব
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
চল এগিয়ে চল,
পণ করেছি মায়ের কাছে ভাঙবো পরাধীনতার শৃঙ্খল।
হয়েছে সময় আর দেরী নয় মুক্তির পথে এগিয়ে চল।
ভীরু নই মোরা সাহসী মোরা দেহে আছে শক্তিবল,
পরাধীন ভারতমাতার মোরা করবো মোচন শৃঙ্খল।
পাষাণ কারায় কাঁদে দেখো ঐ কয়েদীর চোখে জল,
হয়েছে সময় আর দেরী নয় মুক্তিপথে এগিয়ে চল।
চল এগিয়ে চল,
পণ করেছি মায়ের কাছে ভাঙবো পরাধীনতার শৃঙ্খল।
হয়েছে সময় আর দেরী নয় মুক্তির পথে এগিয়ে চল।
পাষাণের কারাগার রুদ্ধ দুয়ার ভেঙে যাবে হুংকারে,
বিদেশী দানবদের পাঠাবো মোরা সুদূর সাগরপারে।
মানিনা আইন করবো মোরা আইন অমান্য আন্দোলন,
দিকে দিকে উত্তাল হয়ে উঠুক ভারতের নব জাগরণ।
চল এগিয়ে চল,
পণ করেছি মায়ের কাছে ভাঙবো পরাধীনতার শৃঙ্খল।
হয়েছে সময় আর দেরী নয় মুক্তির পথে এগিয়ে চল।
কান পেতে শোন কাঁদিছে নীরবে পরাধীন ভারতমাতা,
দেশের মাটিতে বিদেশী দানব, ওরা নয় ভাগ্যবিধাতা।
কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা জাগে আসমুদ্র হিমাচল,
হয়েছে সময় আর দেরী নয় মুক্তির পথে এগিয়ে চল।
চল এগিয়ে চল,
পণ করেছি মায়ের কাছে ভাঙবো পরাধীনতার শৃঙ্খল।
হয়েছে সময় আর দেরী নয় মুক্তির পথে এগিয়ে চল।
রচনাকাল : ১২/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।