বহুদিন পর শুভর সাথে দেখা । শুভ মানে আমার স্কুলের বন্ধু শুভাশিস ব্যানার্জি । শেষবার দেখেছিলাম যখন ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ত আর হোস্টেল পায়নি বলে বিডন স্ট্রীটের কাছে হর্তুকিবাগান লেনের একটা মেসে থাকত । এবার আমাকে প্রায় জোর করে কসবায় ওর বাসায় নিয়ে গেল ।
- তোর মনে আছে, সেবার হেদুয়া থেকে বাস ধরতে গিয়ে একটা মেয়ে আমাকে সময় জিগ্যেস করেছিল ? শুভ আমায় বাড়িতে বসিয়ে একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল ।...
- দূর, অত কি কারু মনে থাকে ? তারপর কি হয়েছিল ?
- আমি বলেছিলাম- ন'টা । তারপর হল কি, রোজই ওই মেয়েটা আমায় বাসষ্টপে এসে সময় জিগ্যেস করে, আর কি আশ্চর্য, প্রতিদিন সে সময় ঠিক ন'টাই বাজতো ।
- তারপর ?
- তারপর আর কি, একদিন কিভাবে জানিনা ও পাঁচমিনিট আগেই এসে পড়েছে । কটা বাজে জিগ্যেস করতেই আমি গম্ভীরভাবে বললাম, 'এখনও বাজেনি ।' ব্যস, সেদিনই আলাপ হল ।
- বলিস কিরে !
- ওর নাম স্নিগ্ধা । লেডি ব্রাবোর্নে পড়ত, থাকত স্কটিশেরই উল্টোদিকে একটা লেডিস হোস্টেলে । সেই শুরু । তারপর একই পাড়ায় থাকি, কাছাকাছি কলেজ, একই রুটে । পরের বছর আমরা দুজনেই কলেজের হোস্টেল পেয়ে গেলাম । তারপর গত বছর পাশ করে আরো কাছাকাছি এসে গেছি ।
- আরো কাছে মানে ?
- মানে বলছি । কই গো, কোথায় গেলে, হাঁক পাড়ল শুভ ...। এই যে, আলাপ করিয়ে দিই, তুই তো আগে দেখেছিস...স্নিগ্ধা মিত্র, এখন ব্যানার্জি । চা এনেছ তো, রাখ এখানে...আমার ছেলেবেলার বন্ধু ।
- আর বন্ধু বলিসনা আমাকে । শালা, এত বড় খবরটা চেপে ছিলি এতক্ষণ !
- আপনার বন্ধুকে চেনেন যখন ওর একটা কথাও বিশ্বাস করবেন না । সেরকম কিছুই হয়নি - স্নিগ্ধা হেসে বলল ।
- তাহলে কিরকমটা হয়েছিল শুনি !
জবাবে ওরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসি দিল শুধু । আমি- তখনও ব্যাচেলার, কিছু না বুঝে আরও হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম ।
রচনাকাল : ৮/৮/২০২০
© কিশলয় এবং তথাগত চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।