রং
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখক : মোঃ তোফায়েল হোসেন
দেশ : Bangladesh , শহর : Moulvibazar

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , আগষ্ট
প্রকাশিত ২৮ টি লেখনী ৩০ টি দেশ ব্যাপী ১৩৭৬০ জন পড়েছেন।
Md. Tofayel Hossen
রং
মোঃ তোফায়েল হোসেন

মিম তাদের নিম গাছের নিচে দাড়িয়ে আমাকে মুখ ভেংচায়। রাগে অন্ধ হয়ে যাই তার এমন ফাজলামি দেখে। পাজির পা ঝাড়া মেয়ে একটা। টলটলে যৌবনে কারণে অকারণে কোন মেয়ে কি আমার মত তরতাজা যুবকের সাথে এমন করে! সামাজিকতার একটা বেড়াজাল যে আছে তা কি ভুলে গেল অনার্স পড়ুয়া এই মেয়েটা?

মিমরা আমাদের বাড়ির পাশে জায়গা কিনে এসেছে প্রায় আট বছর হয়ে গেছে। প্রথম তো শান্তই ছিল। বছর দুয়েক পর থেকেই তার এই উপদ্রব আমাকে সহ্য করতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের বেশ ভালো একটা সম্পর্ক। হরদম আসা যাওয়া চলে। তবে আমি কারণ ছাড়া ওখানে যাইনি কোনদিন।

মিমের এই দৃষ্টিকটু আচরণ নীরবে প্রশ্রয় দিচ্ছে দুই পরিবারই। কারণটা কিছুটা আচ করতে পারলেও পুরোপুরি বুঝে উঠা সম্ভব হচ্ছে না। তাবে এটা সত্যি মিমের বাবার চোখের বিষ এই আমি। ভদ্রলোক একদম দেখতে পারেননা আমাকে। উনার ভাষায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটা অকর্মা  হাদারাম নাকি আমি।

কথাটা মাঝে মাঝে আমার কাছেও সত্যি লাগে। আবার মাঝে মাঝে ভুল মনে হয়। হয়তো বা একটু ছন্নছাড়া বাউণ্ডুলে স্বভাব আমার, তাই বলে কি অকর্মা হাদারাম উপাধিতে আমাকে মানায়!

তবে মিম কখনো আমাকে সে রকম কোন উপাধি দেয়নি বরং তার ভাষাতে আমি একটা তুলতুলে পুরুষ পুতুল। বিচিত্র ভাবনা মেয়েটার। তবে তার ভাবনা নিয়ে আমি ভাবিনা। শুধু তার যন্ত্রণা নিয়েই ভাবি। আমি বরাবরই স্তব্ধ হয়ে যাই যখন তার সামনে পড়ি। কঠিন কথাগুলো সাজিয়ে রাখি তাকে বলবো বলে। কিন্তু তার শরীরের ভাষা, চোখের ভাষা, রূপের ভাষা আর মুখের ভাষা আমাকে নিরাশা করে দেয়।

এই তো গত পূর্ণিমায়; ভর সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় এসেছিল। চুপিসারে আমার কাছে এসে আশ্রমের নানদের মতো গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে গেল- ভালোবাসার সংজ্ঞা নাকি শেখা প্রয়োজন আমার। আমি তার কাছে পাঠশালার সন্ধান চাওয়ার আগেই সে প্রস্থান করলো আলাদা একটা ভঙ্গিতে হেলে-দোলে, এঁকে-বেঁকে।

ভালোবাসা না বুঝার মতো গর্দভ আমি নই। তবে মিমের মতো মেয়ের ভালোবাসার যোগ্য কিনা তা নিয়ে বুঝা বুঝির অনেক বাকি আছে। অফুরান এক ঝর্ণা যেন রূপসী এই মেয়েটা। কেন যে পড়ে আছে আমার মতো বাউণ্ডুলের পিছে? কি মরীচিকা তাকে এখানে ডুবিয়ে রেখেছে জিজ্ঞাস করা প্রয়োজন মনে করলাম।

সে উত্তর দিলো- এখানো তুমি ভালোবাসার “ভা” টাও শেখনি। অনেক শেখার বাকি আছে এ ব্যাপারে। আমি সাহস করে শিক্ষকের সন্ধান জানতে চাইলাম। সে শুধু একটু মুচকি হাসলো; কিছুই বললো না।

পরদিন মিম পাঠশালার সন্ধান জানালো। আমি ঠিকানা খুঁজে সেখানে গেলাম। নির্জন একটা পার্ক। জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে যুবক-যুবতী। তবে এরা শিক্ষক না শিক্ষার্থী- কিছুতেই বুঝে উঠতে পারলাম না। এরা পাঠদানরত না অধ্যয়নরত বুঝে আসলো না। তবে আমার দেহে, মনে, মস্তিষ্কে শিরশির-ঝিরঝির আর রক্তের উষ্ণতা দ্রুত গতিতে হ্রাস বৃদ্ধি আমাকে বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে দিলো না। দৌড়ে পালালাম ভালোবাসার পাঠশালা থেকে।

ফেরার পর মিম জানতে চাইলে তাকে বললাম- ওটা তো থিউরিটিক্যাল, এবার প্রেকটিক্যালটা কে শেখাবে? মিম সাথে সাথে আমাকে প্রেকটিক্যাল ক্লাসের প্রথম সবক দিয়ে দিলো। তার রাঙা অধর যখন আমার খসখসে ঠোঁট ছুঁয়ে গেল আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। খুনের দায়ে দণ্ডিত হওয়ার ভয়ে মিম নিজের বাসার দিকে এত দ্রুত দৌড়াল যে অলিম্পিকেও মনে হয় এমন দৌড় কেউ কোনদিন দেয়নি।

সেদিই সন্ধ্যাতারা জ্বলে উঠলে মিম এলো আমাদের বাসায়। আমি লজ্জ্বায় লাল রং ধারণ করে চুপিসারে বেরিয়ে গেলাম বাসা ছেড়ে। তারপর ফুটপাতে দাড়িয়ে রাস্তার সস্তা চা যখন খাচ্ছি ঠিক তখনিই মিমের বাবা এসে দাড়ালেন আমার সামনে।

ভদ্রলোক উনার গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে গেলেন একটা রেস্তোরেন্টে। অসস্তিতে ভোগতে লাগলাম। ভদ্রলোকের ছায়াও যেখানে আমি মাড়াতে চাই না সেখানে জলজান্ত মানুষটা আমার পাশে বসে আছেন। চুপচাপ বসে রইলাম। কি যেন বলতে চাইলেন ভদ্রলোক। চোখ নামিয়ে নিলাম উনার ভাজপড়া মুখের ওপর থেকে। ত্রিশ মিনিটের মত এই, সেই, আদেশ-উপদেশ দিয়ে তারপর আমাকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আমি জানি উনি যা বলতে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন তা তিনি বলতে পারেননি।

কিন্তু পরদিনই ভদ্রলোক আমাকে জানিয়ে দিলেন- না বলা সেই কথাটি। উনার দান করা অকর্মা হাদারাম উপাধিটা উনি ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর সেই থেকে মিমকে প্রশ্রয় দেয়া দুই পরিবারের সব সদস্যদের মাঝে উনিও অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলেন।

মিমের সাহস আরও বেড়ে গেল। আর আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। মিম প্রায়ই চাইত সেদিনের মতো আমাকে ধরাশায়ী করতে। কিন্তু আমার পলায়ন ক্ষমতা একটু বেশী থাকায় সে ব্যর্থ হতো। সে আমার সামনে এসে দাড়ালে কেমন যেন একটা কি হতো- প্রচণ্ড জ্বর এলে যেমন হয় তেমন। আমি ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর মতো কাঁপতাম। মিম হি হি করে হাসত আর হাসতই।

পহেলা বৈশাখে বর্ষ বরণ করা নাকি জরুরী। তবে আমি রং-এ রঙিণ হওয়া ছাড়া আর কিছই বুঝতাম না। মিম আমাকে জোর করে সেদিন নিয়ে গেলো রাস্তায়, রিক্সায় আর জানা অজানায়। বিমূর্ত আমায় বিমুগ্ধ করে শেখালো সংজ্ঞাসহ ভালোবাসার পূর্ণ বিবরণ। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। অন্যরকম ছোঁয়াছুঁয়ির অন্যরকম শিহরণ। অন্যরকম ভালো লাগার অন্যরকম উষ্ণতা।

বাসায় ফিরে লজ্জায় লাল। রং-এ রঙিণ হওয়ার পরও লিপস্টিকের লালে আঁকা ঠোঁটের আকৃতি আমার বুকের বাম পাশে শার্টের ওপর খুব স্পষ্টিই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এখানে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টা আমার কাছে সম্পর্ণ অজানা ছিল। মিমের বাবা এমনিতে আমাকে হাদারাম বলতেন না। তবে কেউ হয়তো জানতই না- যদি মিম কৌশলে এটা প্রকাশ না করতো। কিন্তু কোন প্রয়োজন ছিল না এ সবের। এমনিতেই বৈধতার সার্টিফিকেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে দুই পরিবার।

দশমদিন সন্ধ্যায় ঝড় এলো। আর বধু সেজে এলো চঞ্চল মিম। বাসরের প্রথম আসরেই নাকি বিড়াল মারতে হয়- এই উক্তির বাস্তবায়ন করতে বিড়াল খোঁজা শুরু করলাম। মিম আমাকে কান ধরে টেনে তুললো খাটের নিচ থেকে। আমি বিড়ালের সন্ধান করছি জানতে পেরে মুচকি হেসে বললো- কোথায় কি খোঁজতে হয় তাও কি আমাকেই শেখাতে হবে?

আমি বিড়ালের সন্ধান ছেড়ে আড়লের স্পন্দন খুজলাম। মিম এমন এক স্পন্দনের সন্ধান দিল যা শুধু রক্তের গতিতেই অনুভব করা যায়। পূর্ণতা পেল আমার এলোমেলো জীবন। মিমের চোখে মুখে ফোটে উঠল প্রশান্তির রং। আমি সে রং-এ রঙিণ হলাম। 

অতঃপর সাতমাসের মাঝামাঝি পৃথিবীর আলো দেখা ফুটফুটে এক ছেলের বাবা হয়ে ধাঁধাঁয় পড়ে গেলাম।
রচনাকাল : ৮/৮/২০২০
© কিশলয় এবং মোঃ তোফায়েল হোসেন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 2  Canada : 2  China : 8  France : 3  Germany : 2  Hong Kong : 1  Hungary : 6  India : 127  Ireland : 5  Romania : 1  
Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 5  Sweden : 13  Ukraine : 5  United Kingdom : 1  United States : 123  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 2  Canada : 2  China : 8  France : 3  
Germany : 2  Hong Kong : 1  Hungary : 6  India : 127  
Ireland : 5  Romania : 1  Russian Federat : 1  Saudi Arabia : 5  
Sweden : 13  Ukraine : 5  United Kingdom : 1  United States : 123  
© কিশলয় এবং মোঃ তোফায়েল হোসেন কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
রং by Md. Tofayel Hossen is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪২৫৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী