ভালোবাসা থেকে যায়
আনুমানিক পঠন সময় : ৩ মিনিট

লেখিকা : শ্রেয়সী বিশ্বাস
দেশ : India , শহর : ব্যারাকপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মার্চ
প্রকাশিত ১১ টি লেখনী ২৩ টি দেশ ব্যাপী ৬৫৩৪ জন পড়েছেন।
Shrayasi Biswas
দিনটা রবিবার।আমার বয়স তখন প্রায় তেইশের চৌকাঠ টপকাবে।সুখিয়া স্ট্রিট দিয়ে হাঁটছি এমন সময় পিছন থেকে কে যেন জামাটায় টান দিল। পিছন ফিরে দেখি বছর তোরো-চৌদ্দর একটা মেয়ে। ধূলোবালি মাখা একটা ফ্রক পরা, চুলগুলো উসকোখুসকো। 
-বাবু, দুটো টাকা দেবেন? অনেকদিন কিছু খাইনি।!!
       মেয়েটাকে দেখে বড্ড মায়া লাগলো। ওর চোখদুটো দেখে মনে হল প্রবল যন্ত্রণার স্রোত বয়ে যাচ্ছে ওর মধ্যে দিয়ে।
-চল, তোকে কিছু খাইয়ে নিয়ে আসি।
-না, না বাবু আপনি টাকা দিন।
-কেন?, চল না ভালো কিছু খাইয়ে আনি।
-নাহ্, বাবু আপনি টাকা দিন। বাড়িতে ছোট বোন আছে।
-আর, মা-বাবা??
-জানি না। আপনি তাড়াতাড়ি টাকা দিন বড্ড খিদে পেয়েছে।
-আচ্ছা,চল তবে, তুই নিজে খেয়ে বোনের জন্যও নিয়ে যাস। কেমন?!!
-চলুন তবে।
       হোটেলে খেতে খেতে মেয়েটাকে অনেককিছুই জিজ্ঞাসা করলাম।
-নাম কি তোর??
-মুনিয়া। 
-ভিক্ষা করে কত টাকা পাস? কিছু কাজ করতে পারিসতো।
-(মৃদু হেসে) বাবু, আমরা গরিব। আমাদের মতো ছেলেমেয়েদের কে কাজ দেবে বলুন। সবাই ভাবে আমাদের পেটে টান যদি চুরি করে পালাই।
         মুনিয়ার কথাগুলো সোজা হৃদয়ে এসে লাগলো। ভাবলাম সত্যি,  আজকাল মানুষজনের যা চিন্তাভাবনা তাতে আর ওদের দোষ কোথায়।
-আমার বাড়িতে কাজ করবি? বাড়িতে মা, বাবা, ভাই আছে।
   কথাটা শোনার পর মনে হল ও যেন মরুভূমির মধ্যে মরুদ্দানের খোঁজ পেয়েছে।
-হ্যাঁ,চলুন।
   মুনিয়া খাওয়া শেষ করে, বোনের খাবার গুছিয়ে নিল। আর আমরা রওনা হলাম আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে। 
   বাড়িতে ঢুকতেই মুনিয়াকে দেখে মা ইতস্তত বোধ করলো। তবে মাকে সব বুঝিয়ে বলতে, মা দুবেলা খাবার আর কিছু টাকার বিনিময়ে মুনিয়াকে কাজে রাখতে রাজি হয়ে গেলো। 
   এভাবেই মাস পাঁচ ছয় কেটে গেলো। মুনিয়াও এখন বাড়ির সদস্য। আমার সাথে ওর যেন এক অদ্ভুত বন্ধন তৈরী হয়ে গেছে। মুনিয়া একদিন কাজে না এলে মনটা চঞ্চল হয়ে উঠত। ওর সারল্য আমায় ওর প্রতি দূর্বল করে দিয়েছিল। একদিন মুনিয়া সারাদিন কাজে না আসায় মনটা উদ্বীগ্ন হয়ে উঠল।কিন্ত সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎ মুনিয়া এসে হাজির। 
-বাবু, কিছু টাকা দেবেন? বোনের খুব জ্বর। ওষুধ আনতে যেতে হবে।
      মা হাতে টাকা দিতেই মুনিয়া তড়িৎবেগে বেরিয়ে গেলো।মায়ের মনটাও চঞ্চল হয়ে উঠেছে। মাকে সান্তনা দিলাম কিন্তু নিজে শান্ত হতে পারলাম না।
      একটু পর ফোন বেজে উঠলো। ফোন তুলতেই কে যেন বললো, আমাদের পরিচিত একজনের এক্সিডেন্ট হয়েছে।
      লোকটির দেওয়া ঠিকানাতে পৌঁছাতেই দেখলাম,  চারিদিকে লোকজন, পুলিস ভর্তি। ভীড় পেরিয়ে ভিতরে যেতেই আমার জগৎটা এক মূহুর্তে শূন্য হয়ে গেলো। এ তো মুনিয়া!!!!!
      শ্রবণকে মুনিয়ার কাছে যেতে কেউ আটকাতে পারল না সেদিন।মুনিয়াকে বুকে চাপে ধরে শ্রবণ চিৎকার করে আকাশ ফাটালো। এক সীমাহীন কষ্ট ঘেরাও করলো তাকে। শ্রবণ ভাবতেই পারল না তার প্রিয় মুনিয়া আর কোনোদিন তাকে 'বাবু' বলে ডাকবে না।
      তিন বছর হয়ে গেছে মুনিয়া নেই। মুনিয়ার বোন এখন শ্রবণদের বাড়িতেই থাকে। শ্রবণ এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির ম্যানেজার। অনেক উচ্চপদস্থ মানুষজনের সাথে তার ওঠা বসা। ঠিক যেমনটা মুনিয়া চাইত। শ্রবণ বাড়িতে জানিয়েছে সে বিয়ে করবে না। আজও সে রোজ মুনিয়ার কথা ভাবে,মনে মনে কথা বলে ওর সাথে। মুনিয়ার বলা সেই কথাগুলো আজও শ্রবণের কানে বাজে, 'বাবু আপনি খুব ভালো। দেখবেন একদিন আপনাকে অনেক মানুষ চিনবে, অনেক নামডাক হবে আপনার।
রচনাকাল : ৮/৮/২০২০
© কিশলয় এবং শ্রেয়সী বিশ্বাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  France : 3  Germany : 4  India : 107  Ireland : 4  Romania : 1  Russian Federat : 7  Saudi Arabia : 3  Sweden : 12  
Ukraine : 6  United States : 118  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  France : 3  Germany : 4  
India : 107  Ireland : 4  Romania : 1  Russian Federat : 7  
Saudi Arabia : 3  Sweden : 12  Ukraine : 6  United States : 118  
© কিশলয় এবং শ্রেয়সী বিশ্বাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালোবাসা থেকে যায় by Shrayasi Biswas is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৪৪৪৬
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী