বৈশাখের রবি চির অস্তমিত অশ্রুঝরা ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায়
আনুমানিক পঠন সময় : ৭ মিনিট

লেখক : লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
দেশ : India , শহর : New Delhi

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০১৯ , সেপ্টেম্বর
প্রকাশিত ৯৩৫ টি লেখনী ৭২ টি দেশ ব্যাপী ২৬৭৭৫৮ জন পড়েছেন।
বৈশাখের রবি চির অস্তমিত  ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায়
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


চির উদ্ভাসিত রবি অস্তমিত প্রায়।
অশ্রুঝরা ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায়।
আবার এসো হে কবি!এই বসুধায়।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা ক্যালেন্ডারের দুটো মুখস্থ করা দিন, বাইশে শ্রাবণ, কবির প্রয়াণতিথি। পঁচিশে বৈশাখ জন্মতিথি। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি ব্যক্তিমননে আবদ্ধ থাকেন বিশেষ করে আবদ্ধ থাকেন এই দুটি দিনই। তাঁর মৃত্যু প্রায় সাতদ শক পার করে এসেছে তাঁর প্রয়াণ দিবসটি। তবু এ কথা বলা যায়, তাঁর সার্ধশততম জন্মবর্ষের পর থেকে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গজীবনে যেন প্রবাদের মতো বেশি করে ঢুকে পড়েছেন।
জন্মদিনের আড়ম্বর নিয়ে কবি নিজেই ১৩৪৩ সালে প্রবাসী পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘‘খ্যাতির কলবরমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা রয়েছে সেখানে স্থান নিতে আমার মন যায় না। আজ আমার প্রয়োজনে স্তব্ধতায় শান্তিতে।’’
আবার নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থে ‘মৃত্যু’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন—

‘‘মৃত্যু অজ্ঞাত মোর
আজি তার তরে
ক্ষণে ক্ষণে শিহরিয়া কাঁপিতেছি ডরে
এত ভালোবাসি
বলে হয়েছে প্রত্যয়
মৃত্যুরে আমি ভালো
বাসিব নিশ্চয়’’

রবীন্দ্রনাথের আত্মউন্মোচনগত নিজস্ব এক প্রত্যয় ছিল যা তার সৃষ্টির ক্রমবিবর্তনের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কবির অকাল স্ত্রী-বিয়োগ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘স্মরণ’ কাব্যগ্রন্থটি কবি স্ত্রীর মৃত্যুর অব্যহতি পরেই রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিজীবনে মৃত্যুকে বড় গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে কবির স্ত্রী বিয়োগ হয়। কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণীদেবীকে ‘ভাই ছুটি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন।

কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন তাঁর বয়স তখন মাত্র ঊনতিরিশ। তাঁদের উনিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে পাঁচটি সন্তানের জনক হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁদের জীবনে একে একে এসেছে—বেলা, রথী, রানির, মীরা ও শমি। তবে ‘স্মরণ’ কবিতাগুলি পড়ে মনে হয়, স্ত্রী চলে যাওয়ার পরই কবি যেন নতুন করে মৃণালিনীদেবীকে আবিষ্কার করেছিলেন। কবি তাঁর মিলন কবিতায় লেখেন—

‘মিলন সম্পূর্ণ আজি
হল তোমা-সনে
এ বিচ্ছেদ বেদনার
নিবিড় বন্ধনে’

রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর স্মৃতিতে ১৩০৯ সালের অঘ্রাণ মাসের বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রতীক্ষা, শেষকথা, প্রার্থনা, আহ্বান, পরিচয় ও মিলন কবিতাগুলি লেখেন। মৃণালিনীদেবীর শেষ বেলার বিদায় মুহূর্তের কথা মনে করেই পরবর্তীতে কবি লেখেন

‘‘দুজনের কথা দোঁহে
শেষ করি লব
সে রাত্রে ঘটেনি
হেন অবকাশ তব’’

‘শেষ কথা’ কবিতায় কবি লিখেছেন,

‘‘তখন নিশীথরাত্রি,
গেলে ঘর হতে
যে পথ চলেনি কভু,
সে অজানা পথে
যাবার বেলায় কোনো
বলিলে না কথা
লইয়া গেলে না কোনো বিদায়বারতা’’

প্রার্থনা কবিতায় স্ত্রী-হারা কবি লেখেন

‘‘আজ শুধু এক প্রশ্ন
মোর জাগে মনে
হে-কল্যাণী, গেলে যদি, গেলে, মোর আগে,
মোর লাগি কোথাও
কী দুটি স্নিগ্ধ করে
রাখিবে পাতিয়া শয্যা চিরসন্ধ্যা-তরে।’’

স্ত্রীর প্রতি কবির অশ্রুসজলে
লেখনী আমাদের বিহ্বল করে
‘‘মৃত্যুর নেপথ্যে হতে আরবার
এলে তুমি ফিরে নতুন বধুর
সাজে হৃদয়ের বিবাহমন্দিরে
নিঃশব্দ চরণপাতে’’

রবীন্দ্রনাথ ভাষাগত ভাবে ততটা আধুনিক হয়তো ছিলেন না, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে আজও মনে হয় সমকালীন। এক এক আধুনিক মানব। তাঁকে যতই কুক্ষিগত করে ফ্রেমবন্দি করে রাখার চেষ্টাপ্রসূত পরিকল্পনা চলুক—এই ২২শে শ্রাবণ দিনটিতে মনে করায় তিনি যথেষ্ট আধুনিকমনস্ক ছিলেন সেই গত শতকেও।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর সত্তর দশক পার হয়েও যেন মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের সাক্ষর বয়ে চলেছে আজও। সেই ১৯৪০ সালের কথা। পুত্রবধূ প্রতিমাদেবী পাশেই আছেন। অসুস্থ শরীরেই কবি লেখার ঘরে কবিতার খাতা নিয়ে এসে বসলেন। মংপু থেকে মৈত্রেয়ীদেবীও কালিম্পং-এর বাড়িতে চলে আসাতে কবি তাঁকে খুশি হয়ে কয়েকটি কবিতা শোনালেন। দুপুরে শরীর খারাপের মাত্রা আরও বাড়ল। চেতনাও আচ্ছন্ন। কাউকে তেমন করে চিনতে পারছেন না। সেই ঘোরের মাঝেও রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘‘আমার কী হল বল তো’’।
প্রথম তিন চার দিন হাতের কাছে হোমিওপ্যাথি ঔষধ যা ছিল, তাই দিয়েই কোনও রকমে কবির চিকিৎসা চলছিল। অবশ্য তার চেতনা পরদিনই ফিরে এসেছিল। তিন জন চিকিৎসক নিয়ে কলকাতা থেকে কালিম্পং চলে এলেন শ্রীপ্রশান্ত মহালনবিশ। রবীন্দ্রনাথকে অসুস্থ অবস্থায় সবাই কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ফিরে এলেন। জোড়াসাঁকোর দোতলার পাথরের ঘরে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ক’দিন কাটিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেন।

জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর সাধের শান্তিনিকেতনে। সে দিন তাঁর কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়ে—‘‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’’
এই সময়গুলোতে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত কাহিল, কখনও রোগশয্যায় আচ্ছন্ন। নিজে হাতে লেখার ক্ষমতাও তার আর নেই। তিনি তখন যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় কখনও শুয়ে শুয়েই বলে যাচ্ছেন, তাঁর মুখনির্সিত বাণী কবিতার ছন্দে লিখে রাখছেন রানী চন্দ। কবি কখনও রানী চন্দকে বলছেন লিখে রাখতে, ‘‘আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন—
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও ওরই মধ্যে কিছুটা মন্দের ভাল। শেষের দিকে, ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালকবালিকাদের ভোরের সঙ্গীত—অর্ঘ তিনি গ্রহণ করলেন তাঁর উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা,

‘‘এদিন আজি কোন
ঘরে গো খুলে দিল দ্বার
আজি প্রাতে সূর্য
ওঠা সফল হল আজ’’

কবির মন বলেছিল, ‘‘সবার শেষে যা বাকি রয় তাহাই লব।’’
রবীন্দ্রনাথের মানসিকতা তাঁর বৌদ্ধিক দৃষ্টির রেশ থেকে গেছে সমস্ত রচনায়। ‘গীতাঞ্জলি’ র শেষ পর্যায়ে ১৫৭তম কবিতায় কবি বলেন,

‘‘দিবস যদি সাঙ্গ হল
না যদি গাহে পাখি
ক্লান্ত বায়ু না যদি আর চলে
—এ বার তবে গভীর করে ফেলো গো মোরে ঢাকি’’
কিশোর বয়সে বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীর অকালমৃত্যু ও আরও পরে স্ত্রীর মৃত্যু এবং একে একে প্রিয়জনদের মৃত্যুর নীরব সাক্ষী ও মৃত্যুশোক—রবীন্দ্রনাথের এক অনন্য অভিজ্ঞতা লাভে সহায়ক হয়েছিল। কবি জীবনস্মৃতিতে ‘মৃত্যুশোক’ পর্যায়ে অকপটে লেখেন, ‘‘জগৎকে সম্পূর্ণ করিয়া এবং সুন্দর করিয়া দেখিবার জন্য যে দূরত্ব প্রয়োজন, মৃত্যু দূরত্ব ঘটাইয়া দিয়াছিল। আমি নির্লিপ্ত হইয়া দাঁড়াইয়া মরণের বৃহৎ পটভূমিকার উপর সংসারের ছবিটি দেখিলাম এবং জানিলাম, তাহা বড়ো মনোহর।’’
বিরহের সঙ্গে মিলনের, মৃত্যুর সঙ্গে অমৃতের, বেদনার সঙ্গে আনন্দের যে সম্পর্ক, সেই সৎ-চিৎ-আনন্দময় পরম ব্রহ্ম তথা আধ্যাত্মলোকের সন্ধান দেয় তাঁর সমূহ সৃষ্টি। বিশ্বপিতার অপার মহিমাকে মননে অনুধাবন করে কবি লিখেছিলেন,
‘‘হে সুন্দর হে সত্য, তুমি আমায় এ মোহ বাঁধন থেকে মুক্ত করো শূন্য করে দাও আমার হৃদয় আর এই শূন্যতার মাঝে আমার হৃদয় আসনে তুমি সুপ্রতিষ্ঠিত হও। দুঃখের অনলে দহনে মধ্য দিয়ে শোধন করে আমায় সুন্দর করো, গ্রহণ করো।’’
মৃত্যুকালীন সময় পর্বে অর্থাৎ অসুস্থ অবস্থায় রচিত রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু কবিতা ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা।

১) মরণের মুখে রেখে দূরে .যাও দূরে যাও চলে
২) মরণ বলে, আমি তোমায় জীবনতরী বাই
৩) আবার যদি ইচ্ছা করে
আবার আসি ফিরে
৪) পেয়েছি ছুটি বিদায়
দেহো ভাই
সবারে আমি প্রণাম করে যাই
ফিরায়ে দিনু ঘরের চাবি
রাখি না আর ঘরের দাবি
সবার আজি প্রসাদ বাণী চাই
৫) আবার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর
৬) জানি গো দিন যাবে
এ দিন যাবে
একদা কোন বেলা শেষে
মলিন রবি করুণ হেসে
শেষ বিদায়ের চাওয়া
আমার মুখের পানে চাবে
মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকো রোগশয্যায় শুয়ে রানী চন্দকে লিখে নিতে বলেছিলেন। কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক আগে চোদ্দো শ্রাবণ। রানী চন্দ সে দিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন—রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি
‘‘তোমার সৃষ্টির পথ
রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী—’’

এর পর কবি তাঁর পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীকেও চিঠি লিখতে বলেছিলেন। রানী চন্দ সেই চিঠি লিখে দেবার পর কবি অশক্ত হাতে কাঁপা কাঁপা অক্ষরে সইও করে দিয়েছিলেন, ‘বাবামশাই’। প্রতিমাদেবী নিজেও সে সময় খানিক অসুস্থ ছিলেন। শান্তিনিকেতন থেকে অসুস্থ শরীরেই তিনি রবীন্দ্রনাথের কাছে এসেছিলেন। কবির শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে কবির কানের কাছে মুখ এনে বলেছিলেন, ‘‘বাবামশাই, বাবামশাই, আমি এসেছি, আপনার মামণি। জল খাবেন?’’ রবীন্দ্রনাথ খুবই অস্পষ্ট স্বরে পুত্রবধূকে করুন ভাবে তখন বলেছিলেন, ‘‘ কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’’
২২শে শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের তিরোধান দিবসটিকে স্মরণ করে নতুন ‘বৃক্ষরোপণ উৎসব’ প্রচলিত শান্তিনিকেতনে। ১৯২৫ সালের ২৫শে বৈশাখ শান্তিনিকেতন উত্তরায়ণ বাসভবনের উত্তরপূর্ব কোণে নিজে হাতে কবি অশত্থ, আমলকি, অশোক, বেল ও বট—পাঁচটি বৃক্ষ চারারোপণ করে প্রথম বৃক্ষরোপণ উৎসবের আয়োজন করেন। আশ্রমকন্যা-সহ উপস্থিত সকলে কবির বৃক্ষবন্দনা গানটি গেয়ে মাঙ্গলিক আচারে পালন করেন সে দিনের বৃক্ষরোপণ উৎসব।

‘‘মরুবিজয়ের কেতন
ওড়াও শূন্যে
হে প্রবল প্রাণ। ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে
কে কোমল প্রাণ।
মৌনী মাটির মর্মের গান কবে উঠিবে ধ্বনিয়া মর্মর তব রবে,
মাধুরী ভরিবে ফুলে ফলে পল্লবে হে মোহন প্রাণ।’’

১৯২৮ সালে ১৪ জুলাই বর্ষা উৎসব দিন থেকে কবি বৃক্ষরোপণ উৎসব মহা সমারোহে শুরু করেন। গাছের চারা সুন্দর করে সাজিয়ে চতুর্দোলায় নিয়ে যাওয়া হয় রোপণ স্থানটিতে। সেটি ছিল বকুল চারা। এই উৎসব উপলক্ষে কবি ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-বোম এই পঞ্চভূতের উদ্দেশ্যে পাঁচটি কবিতা এবং বকুল চারাটির জন্য একটি মাঙ্গলিক রচনা করেছিলেন। মাঙ্গলিক মন্ত্রোচারণের মাধ্যমে রোপণ হয়েছিল সেই বকুল চারাটি। সেই চতুর্দোলার চার বাহকদের একজন ছিলেন শিল্পী নন্দলাল বসু। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা ও আয়োজকের গুরুদায়িত্ব ছিল পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ক্ষিতিমোহন সেন এবং সঙ্গীত পরিচালনায় দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপস্থিত ব্যক্তিরা ছিলেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, অনাথ বসু, সতেন্দ্রনাথ বিশী, সুধীর খাস্তগীর, মনোমোহন দে ইত্যাদি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। সে দিন অনুষ্ঠান শেষে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তাঁর বলাই নামে গল্পটি পাঠ করেছিলেন। ‘বনবাণী’ কাব্যগ্রন্থে উঠে এসেছে বৃক্ষের নামে কবিতা। ১৯৩৮ সালে শ্রীনিকেতনে বর্ষামঙ্গল হলকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসব এক সঙ্গে পালিত হয়েছিল। বৃক্ষরোপণ নিয়ে একটি কবিতা সেই অনাগত মৃত্যুচেতনার আভাষ দেখা যায় কবির লেখনীতে,

‘‘হে তরু, এ ধরাতলে
রহিব না যবে
সে দিন বসন্তে
নব পল্লবে পল্লবে
তোমার মর্মরধ্বনি
পথিকেরে কবে
ভালোবেসে ছিল কবি বেঁচেছিল যবে’’

আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। আগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ল। ৬ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ অগস্ট—রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে মন্ত্র জপ করা হচ্ছে—ব্রাহ্ম মন্ত্র

‘‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতম….’’
‘‘তমসো মা জ্যোতির্গময়…..’’
রবীন্দ্রনাথঠাকুর তখন মৃত্যু পথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট।


তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

রচনাকাল : ৭/৮/২০২০
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 6  China : 9  France : 3  Germany : 1  India : 123  Ireland : 17  Romania : 1  Russian Federat : 1  Sweden : 10  
Ukraine : 3  United States : 119  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 6  China : 9  France : 3  
Germany : 1  India : 123  Ireland : 17  Romania : 1  
Russian Federat : 1  Sweden : 10  Ukraine : 3  United States : 119  
© কিশলয় এবং লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বৈশাখের রবি চির অস্তমিত অশ্রুঝরা ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায় by Lakshman Bhandary is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৩৯৬২৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী