ঢুঁন ঢুঁন ,হরে কৃষ্ণ ,ঢুঁন, মাইজি ,বহুজি... একতারা বাজিয়ে গান ধরে ... হরি দিন তো গেল ,সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে,.... । চলো চলো ওই ঢুঁন দাদু এলো ,এবার আমরা গান শুনবো , সুরবালা নাতির উদ্দেশ্যে বলেন ।
এখন দুপুর , ঘুম পাড়াচ্ছিলেন নাতিকে,এই সময় বৌমা বাড়ি থাকেনা, কাছাকাছি একটা k.g স্কুলে কাজ করে , মাঝে মাঝে টিফিনে বাড়ি আসে । আজ আসেনি, এক কাঁখে খোকনকে আর এক কাঁখে ভিক্ষার থালা নিয়ে বারান্দায় এসে দরজা খোলেন । নাতিকে কোল থেকে নামিয়ে রান্না ঘরে যান । এক গ্লাস জল আর খান চারেক বাতাসা একটা প্লেটে করে বৈরাগী র হাতে দেন ,ইশারায় বাইরে রাখা মোড়ায় বসতে বলেন। ছোট্ট খোকন পুরো বিষয়টি নিখুঁত ভাবে নিরীক্ষণ করে।
আজ রবিবার। কৃপা বাড়িতেই আছে তাই আয়া একটু ছুটি নিয়েছে । শাশুড়ি গত হবার পর আয়া রাখতে হয়েছে । মেয়েটি বেশ কাজের , খোকনকে খুব যত্ন করে, ওর বায়না মেটায় , খেলার সঙ্গী হয় , কোনো সময় বিরক্তি নেই। দেখতে দেখতে চার বৎসর হলো ছেলের ঠাম্মা আর নেই। ছুটির দিন, কাজ কর্ম সারতে একটু দেরি হয়েছে, খোকনের চোখ ঘুমে ছোট হয়ে এসেছে । কৃপা ছেলেকে ঘুম পাড়াতে যায় । শোবার আগে হালকা করে টিভি চালায় ।
ঢুঁন ঢুঁন হরে কৃষ্ণ... মাইজি ... বহুজি ... ঢুঁন.. ।
কেরে বাবা? এই ভর দুপুরে !কৃপার কপালে বিরক্তির ভাঁজ । .... ফের ঢুঁন....
এক লাফে বিছানা ছেড়ে খোকন বারান্দায় আসে । "মা ঢুঁন দাদু " এসেছে , কৃপা অবাক ,কাকে ঢুঁন দাদু বলছে? আসলে চার বৎসরে বৈরাগীর কথা বেমালুম ভুলে গেছে ।
- ও তুমি ! ... একি চেহারা তোমার ,অনেক দিন পরে যে !
- হ্যাঁ বহুজি , বয়স বেড়েছে তার উপর কেন্দুলি মেলা থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত লাগে তাই আসতে পারিনি ।
- ঠিক আছে , সাবধানে থেকো
বলতে বলতে রান্না ঘরে যায় কৃপা এবং ভিক্ষার থালা এনে বৈরাগী কে দেয় ।
" জল বাতাসা আনোনি ?" মাকে জিগ্যেস করে খোকন । ছেলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায় আর বলে, "তোমাকে ঘুমাতে বলেছি, যাও গিয়ে শুয়ে পর এক্ষুনি"।
মায়ের বকুনি খেয়ে ঘরে যায় কিন্তু শোয় না । রান্না ঘর থেকে নিজের ছোট্ট গ্লাসে করে জল আর হাতের মুঠোয় কটা বাতাসা এনে বৈরাগীকে দেয় । গ্লাস নামিয়ে সে খোকনের ছোট্ট মুঠি নিজের দু হাতের মধ্যে নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে বলে ," রাজা বেটা , বহুত বরা দিলওয়ালে তু, ভগবান তুকে আশীর্বাদ দেগা"।
কৃপা নির্বাক , চার বছরে ছেলের কথা স্পষ্ট হয়েছে , বুদ্ধিও বেড়েছে , তা ছাড়া ঠাকুমা যে শিখিয়েছে বাড়িতে অতিথি এলে আপ্যায়ন করতে।
রচনাকাল : ৭/৮/২০২০
© কিশলয় এবং ইলা কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।