"ওঠো, ওঠো, উঠে পর, খুব পারবে, খাটের পায়াটা ধরে ওঠো, ঠিক পারবে। রোজ তো নিজেই ওঠো, লোক দেখে কি ন্যাকামি বেড়েছে? আমি আর পারছি না। সারাদিন গু, মুত ঘাটতে ঘাটতে হাতে হাজা হয়ে গেল।"
উপরের কথাগুলো বলছে একজন অসুস্থ, অথর্ব, বৃদ্ধ বাবাকে তাঁর শিক্ষিত মধ্যে তিরিশের একমাত্র অবিবাহিত কন্যা।
জিতেন বাবু খুব অসুস্থ, মাঝে মাঝেই বিছানা ভিজান, মল ত্যাগ করে ফেলেন। অতিরিক্ত হাটাহাটি এই বয়সে করে এখন অচল। এক সময় ওনার খুব রমরমা ছিল। ঔষুধের কারবার। খাটতেন খুব, এক ছেলে, এক মেয়েকে তুলোয় মুড়ে রাখতেন। স্ত্রী আর নিজে সন্তানদের সবসময় সেরা ভাবতেন, তারা যদিও সাধারণ মানের ছিল। বয়স হলেও আজও তারা স্বনির্ভর হয়নি, ভীষণ ইগো, বড় কাজ ছাড়া করবেনা। অগত্যা জিতেনবাবু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিচিতদের কাছে ধার করে সংসার চালাতেন, কিন্তু ছেলে-মেয়েকে ভিক্ষার কথা বলতেন না, পাছে তারা কষ্ট পায় বা তাঁর উপর নিগ্রহের মাত্রা বাড়ায়। আগের সুখ তো আর দিতে পারেন না, তার উপর স্ত্রী দেহ রেখেছেন বছর ছয় হলো। সংসারের কর্তা এখন ছেলে-মেয়ে, যদিও তারা দুজনেই বেকার। খাওয়া শোয়া সব কিছু তেই তাদের গঞ্জনা শোনেন।
ওনাদের বাড়িতে বিশেষ কেউ যাতায়ত করেনা । ভীষন ইগো, তাই পরিজনদের সাথে সম্পর্ক রাখে না। বিছানা নস্ট করেন বলে তার শোবার জায়গা প্রচন্ড শীতেও খালি মেঝেয় শুধু শতরঞ্চি পেতে পাতলা তোষকের উপর। ঘরে আসবাব থাকলেও আজ আর জিতেন বাবুর হক নাই ওসব ব্যবহারের, বৃদ্ধ বাবাকে সবসময় গঞ্জনা শুনতে হয় "সংসার করতে কে বলে ছিল ,আমরা কি পৃথিবীতে ইচ্ছা করে এসেছি"।
রচনাকাল : ৭/৮/২০২০
© কিশলয় এবং ইলা কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।