শ্রাবণের ওপর মন বড় অভিমানি আজ
বাইশ কেড়ে নিয়েছে যাকে।
আর কখনও কোনো মূল্যে
বাঙালি ফিরে পাবে কি তাকে?
না। আমরা আমাদের প্রাণের কবি, বাংলা ভাষার প্রাণপুরুষ রবি ঠাকুর কে ফিরে পাব না কোনোদিন। তবে তাঁকে খুঁজে পাব আপনার- আমার তথা সব বাঙালী র আবেগে। কবি গুরু বাঙালি র ইমোশন। বাঙলা মায়ের গুণী সন্তান। বাঙালির প্রেমে- অপ্রেমে ,সুখে- দুঃখে, হাসি- কান্নায় ,বিরহে- একাকীত্বে তিনি প্রেরণা ,সাহস জুগিয়েছেন।
সহজপাঠ্য সহজপাঠ এ বাঙালি বাংলা পড়তে শিখেছে। তার মিষ্টি লেখনীর যাদুতে শিশু ভোলানাথদের কাছে মাতৃভাষা হয়ে উঠেছে মাতৃদুগ্ধের মত স্বাদু ও সহজপাচ্য। কৈশোরে ও যৌবনে ভাবুক রোমান্টিক বাঙালি বুকে রেখে ঘুমিয়েছে শেষের কবিতা, চোখের বালি, গোরা। নরম মাটি মিঠে জল হাওয়ায় মানুষ বাঙালি। তার নরম আবেগঘন মন ভেসে গেছে, বারবার কাতর হয়েছে প্রেমে কিংবা বিরহে।
বাংলা ভাষার প্রেমে পড়তে শিখিয়েছেন তিনি। কলমের প্রতিটি অক্ষর এর ইন্দ্রজালে আজও আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছেন ভদ্রলোক। বিশ্বের দরবারে বাঙালির মুখ ঊজ্জ্বল করেছেন। তাকে বাঙালি মাথায় তুলে নাচবে নাচবে না তো কাকে নিয়ে নাচবে? আশ্চর্য! ও পাড়ার পাঁচুগোপাল কে নিয়ে নাচবে নাকি?
অনেকে কবিগুরু সম্পর্কে অনেক বিরূপ লেখা লেখেন। তার ব্যক্তিগত জীবন, প্রেম জীবন নিয়ে অনেক রকম কু বা রসালো মন্তব্য করেন যেগুলো হয়তো উচিত নয়। কবির যুগ প্রায় দুশো বছর আগের। যুগের পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে মানুষকে দেখতে হয়। হ্যাঁ শুধু দেখতেই হয় তাকে। বিচার করার যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা? না ঃ থাক।
আসলে মানুষকে ভগবান (আইকন)বানাতে বানাতে আমরা ভুলে যাই ভগবান হলেও তো মানুষ। রক্ত -মাংস- আবেগ- অনুভূতি র মজ্জায় গড়া। দোষ- গুণ আর ভালো- মন্দের কম্বিনেশন।
সাহিত্যানুরাগী দের শ্রাবণ এর কাছে পুঞ্জীভূত মেঘলা অভিমান টা রয়েই যায়। বাইশ কেড়ে নিয়ে ছে তাকে। দিয়েছে মৃত্যু যন্ত্রণা। বিচ্ছেদ শোকে ককিয়ে উঠেছে বাংলা। বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি।
অসংখ্য ঘাত -প্রতিঘাত সয়ে জীবনের দীর্ঘ আশিটা বছর পার করেছেন কবি। চোখের সামনে বিদায় নিয়েছে প্রিয় মানুষেরা। মা, বৌদিদি, স্ত্রী, প্রাণপ্রিয় সন্তান রা (কন্যা, পুত্র) তার চোখের সামনে শেষ নিঃশ্বাস নিয়েছে। ভালো বাসার মানুষেরা কেন সূর্য চন্দ্রের মত হয় না? ওরা আজ যায়, কাল আবার ফিরে আসে, পরশু আবার।
সহস্র বেদনায় পাথর হয়েছেন কবি। লিখেছেন
"আমার সকল দুখের প্রদীপ.....আমার ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন"।
২০ শ্রাবণ, ১৩৪৮। রোগ শয্যায় কবি। অন্তিম শয্যায়।
২২ শে শ্রাবণ ১৩৪৮। চিরদিনের মত থেমে গেল তার কলম। জীবন যত দিয়েছে কেড়েছে তার বেশি। সকল বিচ্ছেদ বেদনার সাক্ষাৎ শেষে তার ব্যথার পূজা হল সমাপন।
বাইশে শ্রাবণ শান্তি দিয়েছে কবিকে। চির শান্তি।
রচনাকাল : ৭/৮/২০২০
© কিশলয় এবং স্বাগতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।