মহালয়া।
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : মুসকান ডালিয়া
দেশ : India , শহর : Dankuni

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৬ টি লেখনী ৩০ টি দেশ ব্যাপী ৯৯১৬ জন পড়েছেন।
মহালয়া।
----ডালিয়া।
********
দুদিন ধরেই আকাশের মুখ ভার। মাঝেমাঝেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। থেকে থেকেই মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে, আবার কমে যাচ্ছে। পথঘাট জলে ভিজে জলছবির সৃষ্টি হয়েছে যেন।
-
সুনয়না তাকিয়ে আছে উদাস দৃষ্টি মেলে। ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েটা টিউশন পড়তে গেছে। সন্ধ্যে হয় হয়। বেশ ভয় ভয় করে আজকাল। যা দিনকাল পড়েছে। মেয়েটা খুব সুন্দরী হয়ে উঠছে। একদম সুনয়নার মতই।
-
নাফিসা আপার সর্বসাকুল্য তিনখানা ঘর। একটা ছোট রান্নাঘর, বাথরুম। তাতেই একটা ঘরে থাকে মা মেয়ে। আর অন্য একটায় বিজয়।
বিজয় এসে সামনে দাঁড়ায়--" বউমনি- সোনাই এখনো এসে পৌঁছাল না যে। আমি একটু এগিয়ে দেখি। আবার তো মনেহয় মুষলধারায় বৃষ্টি নামবে।"
- তাই যা নাহয়। ওকে নিয়ে আয়।
এগিয়ে যায় বিজয়। এমনিতে মেয়ের ভয়ডর কিচ্ছু নেই। একাই একশো। তবু তো মেয়েই। বিজুর যেন চিন্তা লেগেই থাকে। এগিয়ে চলে বিজু।
-
ওই তো সোনাই আসছে।
আরে কাকাই তুমি আবার বৃষ্টি তে বেরুলে কেন?
-চল চল বেশি কথা বলিস না। খুব জোরে বৃষ্টি আসবে।
দুজনে হাঁটতে থাকে। পাশেই নাসির কাকার তেলেভাজার দোকান।
সোনাই বলে- চলো কাকাই মায়ের জন্য তেলেভাজা নিয়ে যাই। এই বর্ষায় জমবে ভালো।
দোকানে বেশ ভীড়।
-
ওদিকে চায়ের কাপ হাতে আনমনা সুনয়না।
বৃষ্টি দিনেএকা থাকলেই হাজার স্মৃতি মনে ভীড় করে আসে। খুব সুন্দরি ছিল সুনয়না। এক দেখায় শ্বশুরমশায় পছন্দ করে ঘরের বউ করে নিয়ে আসেন। বড় ঘরের বউ। সোনায় মোড়া আদরের পুতুল টিকে দেখে মা বাবার বুক ভরে উঠেছিল আনন্দে। দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে বিজয় ছিল খুব ভাল। কিন্তু বিমল ছিল উচ্ছৃঙ্খল। সঙ্গ দোষে যা হয়। কর্তাবাবু ভেবেছিলেন সুন্দরী সুনয়না কে পেয়ে ছেলে ঘরমুখো হবে। কিন্তু তা হয় না। শান্ত সুন্দর সুনয়নার উপর নানারুপ অত্যাচার চলতেই থাকে। অপরাধ বোধে ভুগে একসময় পৃথিবী থেকে চলে যান- কর্তা বাবু। বাবার পর বিজয় সাথ দিতে থাকেন বউমনি কে। কত আর বয়স তখন বিজুর। মাত্র পনেরো বছর। তাতেই সে বউমনির খেয়াল রাখতে থাকে। একসময় অন্তঃ স্বত্বা হন সুনয়না। ফুটফুটে সুন্দর এক মেয়ের জন্ম দেন তিনি। আদর করে নাম রাখেন পিহু।
-
প্রথম বছর টা ভালই কাটে। পিহু দেখতে তার কাকার মত। আর কাকারই বুকে পিঠে মানুষ হচ্ছে পিহু। নিন্দুকের চোখে লাগে। এটা দেখে বলাবলি শুরু হয়। নেশায় বুঁদ বিমল নিজের সন্তানকে বিজয়ের অবৈধ বলে চিৎকার শুরু করে।
সবকিছু সহ্য করলেও এবার নিজের আর সন্তানসম বিজয়ের অপমান সহ্য করতে পারেন না সুনয়না। মেয়ে আর কিশোর দেওরের হাত ধরে বেরিয়ে আসেন। বাবার সন্মান রক্ষার্থে বাপের বাড়ি আর ফিরে যান নি। নিজের দাইমা নাফিসা আপার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেই কেটে যায় বারো টি বছর।
-
আজও সেই রকম মন কেমন করা বৃষ্টির দিন।
লক্ষণ ভাইয়ের মত সীতামা কে আগলে রাখেন বিজয়। শিক্ষিতা সুনয়না বাড়িতেই গান শেখান আর বিজয় শিল্পী। মূর্তিকার। মাটির প্রতিমা গড়েন। নিঃসন্তান নাফিসা গত হয়েছেন। মায়ের স্নেহে কিভাবে আগলে রেখেছিলেন ভাবলে আজো চোখে জল আসে সুনয়নার।
-
বেশ অন্ধকার নেমেছে। এখনো মেয়ে আর বিজয় ফিরলো না যে। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায় রাংচিতার বেড়া দিয়ে ঘেরা গেটের কাছে। কই ওরা আসছে না তো। ওদিকে কে যেন দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে।
নির্ভয়া সুনয়না গম্ভীর গলায় বলে- কে?
ছায়ামূর্তি স্পষ্ট হয়। চিনতে পারেন সুনয়না।
- "ফিরে চলো সু, আমার মেয়েকে চাই। "
-মেয়ে? হাসে সুনয়না।- "কে মেয়ে? কার মেয়ে? তুমিই না বলেছিলে- ও তোমার সন্তান নয়। পনেরো বছরের সন্তানসম কিশোর ভাই কে অপবাদ দিয়েছিলে? আজ কেন ফিরে এসেছ?
ও শুধু আমার সন্তান। আমি কাউকে দেবো না।" বলে সুনয়না।
-তবে রে- কিছু বোঝার আগেই আচমকা কালো বেল্টের আঘাত পড়ে সুনয়না র উপর। উপর্যুপরি মারতেই থাকে বিমল। এর আগেও মারতে চেয়েছিল বিমল। কিন্তু পারেনি। আজ এতদিন পর সুযোগ পেয়েছে। আজ কেড়ে নেবে পিহুকে। বিজয়ের মেয়ে হয়ে থাকতে দেবে না।
মার খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যায় সুনয়না। বিজয় চেপে বসে বুকে।
--"খুব তেজ না তোর। স্বামী কে দরকার হয় না। কে তোর চাহিদা মেটায়?..ওই বিজু?
--ছিঃ.. ও আমার সন্তানের মত। বলতে তোমার মুখে বাঁধেনা।
বিমলের মুখে পৈশাচিক হাসি। টেনে নগ্ন করতে চায় সে।
অসহায় তবু হাল ছাড়েনা সু। ছটপট করতে করতেই কিছু খুঁজে বেড়ায়। হাতে আসে বেড়ার এক ভাঙা কাঠ। সেটাই কুড়িয়ে সজোরে আঘাত করে বিমলের মাথায়। আর্ত চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে বিমল। তবু সেই কাঠ টা দিয়েই পালটা আঘাত করে সুনয়না কে। দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে তার।
-
বাড়ি ফেরে পিহু আর বিজয়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে উঠোন। দুজনকেই ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সুস্থ হয় বিমল। কিন্তু চোখের আলো হারিয়ে যায় সুনয়নার।
তিন দিন পর জ্ঞান আসে। দুচোখ অন্ধকার দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে সু।
স্বান্তনা দেয় বিজু। বলে- বউমনি সব ঠিক হয়ে যাবে।
-
আজ মহালয়া। দেবীর চক্ষুদান করে মৃণ্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রুপে আনার দিন। দিন পিতৃতর্পণ এর।
আজ দুহাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছে বিজয়। পিহু ক্ষমা করেছে বাবাকে। জীবিত বাবাকে ক্ষমা তর্পণ করেছে সে।
-
ওদিকে সু র চোখে তৃতীয় বার অপারেশন। বিজুকে তিনদিন কোথাও দেখছে না কেন? মেয়েকে জিজ্ঞেস করে বিজু কই?
-- মা আজ মহালয়া। কাকাই আজ চক্ষুদান করেন জানো না?
মা চুপ করে যান। ধীরেধীরে চোখের বাঁধন খোলা হয়। এক চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ। অন্য চোখ অন্ধকার।
ওকি পাশের বেডে শুয়ে কেন বিজু? আর ওর একটা চোখের উপর বাঁধন কেন?
-
বিজু উঠে আসে। বউমনির পায়ে হাত রেখে বলে- মা তুমিও যে আমার আর এক মা। এতদিন মাটির মায়ের চোখ এঁকেছি। আজ মহালয়ায় আমার আসল মায়ের চোখ আঁকলাম মা। স্বার্থক হলো আজ আমার শিল্পী জীবন। আজ থেকে নাহয় আমার একটা চোখ দিয়েই পৃথিবী কে দেখো।
সবার চোখে জল। বিমল এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে।

দুরের রেডিওতে বেজে চলেছে মন কেমন করা সুর--" যা দেবি সর্বভূতেষু....
-
রচনাকাল : ৭/৮/২০২০
© কিশলয় এবং মুসকান ডালিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 12  France : 4  Germany : 3  Hong Kong : 1  Hungary : 1  India : 62  Romania : 1  Saudi Arabia : 4  Sweden : 12  
Ukraine : 2  United States : 77  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 12  France : 4  Germany : 3  
Hong Kong : 1  Hungary : 1  India : 62  Romania : 1  
Saudi Arabia : 4  Sweden : 12  Ukraine : 2  United States : 77  
লেখিকা পরিচিতি -
                          মুসকান ডালিয়া ১৯শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ এবং দুই সন্তানের জননী। এইসবের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। লেখালেখি তাঁর ভীষণ প্রিয়, তাঁর লেখার চেষ্টা সেই ছোট্ট বয়স থেকে। স্কুলের দেওয়াল পত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন ছোট ছোট পত্র-পত্রিকায় তিনি লেখালিখি করেন। তাছাড়া তিনি নানারকম অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখেন। লেখালিখির পাশাপাশি তিনি কনে সাজানো আর ঘর সাজানোর শখ রাখেন।

-"যদি প্রেরণা দাও, এক আকাশ গল্প লিখতে পারি।
সাহিত্য তোমাকে যে ভালবাসি ভারি।" 
                          
© কিশলয় এবং মুসকান ডালিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
মহালয়া। by Muskan Dalia is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫০৬৯৯৯
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী