- ও মশাই, আপনার কাছে একটু আগুন হবে?
চা-এর দোকানে বসে চা খেতে খেতে একটু শান্তিতে খবরের কাগজ পড়বো, তার উপায় নেই৷ একবার ভদ্রলোকের দিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে পকেট থেকে লাইটারটা বের করে বাড়িয়ে দিলাম৷
- ধন্যবাদ৷
লাইটার দিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে মৌজ করে দু'টান দিয়ে এক কাপ চা-এর অর্ডার দিয়ে ভদ্রলোক আমার উল্টোদিকের বেঞ্চে বসলেন৷
- তা মশাই কী এখানে নতুন?
খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে আবার একবার ভদ্রলোককে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বললাম- তা এক প্রকার নতুনই বলতে পারেন৷ এই মাস ছ'য়েক হলো এসেছি৷ রোজই নাইট ডিউটি থাকে, তাই সকালের দিকটা বাড়িতে ঘুমিয়েই কাটাই৷ কাল নাইট ডিউটি ছিল না, তাই আজ দোকানে চা খেতে আসলাম৷
- ও আচ্ছা আচ্ছা৷ তা মশাই এর কী করা হয়?
- আমার ঐ একপ্রকার ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট বিজনেস বলতে পারেন৷ আর আপনি?
- হে হে..আমারও কতকটা ঐরকমই কাজ৷
তখন থেকে শালা শান্তিতে বসে কাগজটাও পড়তে দিচ্ছে না৷ অগত্যা চা-এর পয়সা মিটিয়ে উঠে পরলাম৷
- চলি তাহলে৷ আপনি কী কাগজ পড়বেন?
- হ্যাঁ দিন৷
ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিতে গেলেন৷ কিন্তু ঠিকমত না ধরতে পারায় হাত ফস্কে কাগজটা নীচে পরে গেল৷
- সরি সরি..
আমি কাগজটা তুলে ভালো করে ঝেড়ে-ঝুড়ে ভদ্রলোকের হাতে দিয়ে উল্টোদিকে হাঁটা লাগাতে যাবো, এমন সময় পিছন থেকে ডাক পরলো-
- ও মশাই, আপনার লাইটারটা নিয়ে যাবেন তো৷
ভদ্রলোক আমার হাতে লাইটারটা দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বললেন- হে হে ..পরে দেখা হবে৷ ভালো থাকবেন৷
আমিও একটু হেসে আবার ফেরার পথে পা বাড়ালাম৷
*********************
লাইটারটা পকেটে ঢুকিয়ে পকেট থেকে একটা চকচকে পাথর বের করে আনলাম- হীরে৷ হীরের দুত্যিতে আমার লোভী চোখটা চকচক করে উঠল৷ ভদ্রলোকের হাতের আংটিতে প্রথমে দেখেই ঠিক বুঝেছিলাম- এটা হীরে৷ এটা আমার হাতের এই প্ল্যাটিনামের আংটিটায় দারুন মানাবে৷
এসব ভাবতে ভাবতে ডান হাতটা চোখের সামনে ধরতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম- আমার আংটি?
(সমাপ্ত)
রচনাকাল : ৪/৮/২০২০
© কিশলয় এবং শুভেন্দু ভৌমিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।