সকালটা সেদিনের ছিল ঝলমলে,
পূবের নবারুন জেগেছিল নিজ লালিমায় ,
হঠাৎ একরাশ কালো মেঘ ছেয়ে গেল আকাশে
বিষন্ন মলিনতার বার্তা বয়ে
নবারুন যেন গেল অস্তাচলে ।
থেমে গেল পাখিদের কলতান,
বাতাসে পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ,
থমথমে চারিদিক নিরব নিস্তব্ধ ।
মা ছিলেন তখন আধেক ঘুমের আবেশে,
দুঃস্বপন এক নেমে আসে মুদিত আঁখিপাতে ।
স্বপনে দেখলেন তীরবেঁধা পাখী এক আছড়ে পড়ল তাঁর কোলে,
রক্তাক্ত, প্রানহীন, নিস্পন্দ,নীরব।
আশঙ্কায় মায়ের বুক উঠল কেঁপে,
বেদনায় দুচোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা,
ঝাপসা চোখে ভেসে আসে খোকার মুখখানি।
হঠাৎ টেলিফোন বাজতেই দুঃস্বপন যায় থমকে,
চমকিত মায়ের ঘুম যায় ভেঙ্গে ।
সচকিত মা একছুটে টেলিফোন ধরতেই
ওপার থেকে ভেসে আসে এক নিঠুর নির্মম সত্য,
তাঁর একমাত্র পুত্র তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে বহু দূরে।
শত্রুর গুলিতে তাঁর বক্ষ হয়েছে ঝাঁঝরা।
ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত দেহে লুটায়ে পড়েছিল
পরাধীন দেশমাতার অশ্রুসিক্ত কোলে।
কিছুক্ষণ স্তব্ধ পলকহীন বোবা কান্না,
বাঁধভাঙা অশ্রুতে মায়ের চোখ হল ঝাপসা
শিরায় শিরায় প্রবহমান রক্ত হল শীতল,
সন্তানহারা, শোকাহতা মা হলেন মূর্ছিতা।
জ্ঞান ফিরতেই দেখলেন সামনে কফিনবন্দি পুত্রের দেহ।
চিরনিদ্রায় শায়িত শান্ত ক্ষতবিক্ষত
মায়ের দেখা দুঃস্বপনের পাখিটার মত।
আর্তনাদ হাহাকার বুকফাটা কান্নায়
আকাশ বাতাস হল ভারি,
অশ্রুর বানে মাটি হল সিক্ত।
চোখের সামনে বীরের সম্মানে শেষ যাত্রায়
চিরতরে বিদায় নিল তাঁর বীর শহীদ পুত্র।
এলোচুলে এলোবস্ত্রে মা হলেন পাগলিনীপ্রায় ।
বুকভরা আশায় অপেক্ষারতা মা ভেবেছেন-
বীরদর্পে পুত্র তাঁর আসবে ফিরে,
"মা -মা" ডেকে উঠে শুয়ে তাঁর কোলে
ক্লান্তির দেহে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে।
অবুঝ মায়ের মন মানতে পারে না
খোকা তাঁর চলে গেছে মাটির নীচে,
অন্ধকারে গভীর অতল তলে।
পাষাণমুরতি মা অজানা অচেনা দৃষ্টিতে ,
অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করে প্রলাপ বকে চলেছেন,
খোকা মোর বুকে আয়, ফিরে আয় , ফিরে আয়।
রচনাকাল : ৩/৮/২০২০
© কিশলয় এবং যুথিকা দেবনাথ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।