...শেষ কথা...
গলাটা প্রচন্ড শুকিয়ে আসছে ছেলেটার.. মেনে নিতে পারছে না !!
তাহলে কি এটাই প্রাপ্য ছিল ওর..? নাকি... সে একটু বেশিই তার "পেত্নীর" থেকে আসা করে ফেলেছিল..
হয়ত কোনোদিনই কোনো কিছুই ছিল না তাদের মধ্যে.. কে জানে...
আর কিচ্ছু ভাবতে পারছে না সে!! মাথায় অসহ্য ব্যাথা করছে..!! বিছানায় এলিয়ে দিল শরীরটা.. ঘর অন্ধকার.. ফোন টা নিজে সুর করে জানান দিচ্ছে ছেলেটার মায়ের চিন্তা..
আর ছেলেটা..? ছেলেটার মনে পরে যাচ্ছে সেই দিনগুলোর কথা..!
যাই হোক ! এতটা পরে নিশ্চয়ই ভাবছো কে এই ছেলেটা..? কি হয়েছে ওর..? আর ওই "পেত্নী"... সে আবার কে..?
ছেলেটার ব্যাপারে আরেকটু পরেই না হয় বলি .. "পেত্নী" কে সেটাই আগে বলি..
নীলাক্ষী... খুব ভালো একজন মেয়ে। মন খোলা একজন মানুষ। অল্প শ্যামলা, মাঝারি গরন, লম্বাও খানিকটা.. সব থেকে সুন্দর হচ্ছে ওর ওই চোখ দুটো..! সরলতায় ভরা..! দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে কলকাতায় এসেছে Engineering পরতে। ওর ওই মিষ্টি স্বভাব টার জন্যই কলেজে এসে খুব তাড়াতাড়িই সবার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়..
আর বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার সেই "পচা দাদা" অনুরণন এর সাথে। এক বছরের সিনিওর..ছেলেটা এক কথায় যাকে বলে মাটির মানুষ.. প্রথম আলাপটা যদিও হয়েছিল এক মিষ্টি ঝগড়ার মাধ্যমেই.. চকোলেট নিয়ে ঝগড়া.. কিন্তু তারপর খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় "পচা দাদার" সঙ্গে। দাদার সঙ্গে ইয়ার্কি করাও যায়.. আবার কখনো কষ্ট হলে দাদাকেই বলা চাই..! যেনো কোনো কথা দাদাকে না বলা পর্যন্ত শান্তি হয় না নীলক্ষীর..
আর সেই "পচা দাদা" অনুরণনের? সত্যি বলতে, প্রথম প্রথম তার খুব কথা বলতে অসুবিধা হতো মেয়েদের সাথে.. সারাজীবন ছেলেদের স্কুলে পরে এসেছে সে। ছেলে বন্ধুই বেশি। এমনকি tuition এও সব ছেলেদের ব্যাচেই পড়তো...! কলেজে ভর্তি হয়েও তাই সে কোনো মেয়ের সাথে আজ পর্যন্ত ঠিক করে কথা বলতে পারে না.. তাই যখন জোর করে রাহুল, নীলাক্ষীর বান্ধবী শিমুলের Intro নিতে নিয়ে গিয়েছিল তখন বেশ বিরক্তই লেগেছিল অনুরণনের। ও ঠিক এসব পছন্দ করে না..! যাই হোক তারপর কিছু ভাবে হটাৎ কথা হয় শিমুলের সাথে..! এক স্পষ্টবাদী মেয়ে.. তাইই হয়ত ওর সাথে কথা বলতে সুবিধা হয়েছিলো অনুরণনের। সে নিজেও সত্যি কথা মুখের উপর বলতেই ভালবাসে।।
তারপর আসে শিমুল - নীলাক্ষী দের Fresher's Party.. কথা হয়েছিল শিমুলকে ক্যাডবেরী খাওয়াতে হবে। অনুরণন জানত না তখনও নীলাক্ষীর কথা। তাই একটাই নিয়ে গিয়েছিল.. শিমুলকে দেওয়ার সময় নীলাক্ষী রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল - "আমারটা কই..? শুধু ওর জন্যে আনলে তো..! ঠিক আছে বুঝলাম বুঝলাম.. ওই ই সব.. আমি তো কেউ না" এই বলে সে কি ঝগড়া..! এখন মনে পড়লে হাসি পায়।।
সেই প্রথম আলাপ নীলাক্ষীর সাথে.. তারপর শুরু হয় কথা বলা তাদের.. প্রথম বার কোনো মেয়ে, তার সাথে এত মন খুলে কথা বলছে..! মাঝে মাঝে তার অবাক লাগতো এই ভেবে - "মেয়েটা আমার সাথে এত কথা বলছে..? বন্ধুরা যে সবাই বলতো -"তোর সঙ্গে কোনোদিনও কোনো মেয়ে মিশবে না রে.. এরকম ছেলের সাথে কে কথা বলবে..? কোনো তো Attitude নেই তোর..! আর নিজেকে দেখেছিস..? ওই তো মোটা ভোঁদড় .."" আর এই কথাগুলোই সে নিজের জীবনে মেনে নিয়েছিল.. সত্যি তো তাই.. সে তো এরকমই..! কোনো ট্যালেন্ট ও তার নেই..!
আর তার সঙ্গেই কিনা ওই মেয়েটা কথা বলছে..? সত্যি বলতে কোনোদিন সে নিজে ভাবতেও পারেনি কেউ "তার" সাথে কথা বলবে..
মেসেজে কথা হওয়া থেকে ফোনে কথা বলা শুরু হলো..! এতদিনে অনুরণন বেশ সাবলীল হতে উঠেছে নীলাক্ষীর সাথে কথা বলতে..! তার নিজের দেওয়া "পেত্নী" নামে ডাকে তাকে। প্রথম প্রথম খুব রেগে যেত নীলাক্ষী.. তাই আরও বেশি করে রাগাত মেয়েটাকে..!
ভালো লেগে গেলো নীলাক্ষীকে.. বলতে পারো ভালবেসে ফেললো ওকে অনুরণন.. বন্ধুরা জানতে পেরে বললো - "বাবাহ্..! রণও নাকি ভালবাসে..! ও আর ওই ভালোবাসা শব্দটার সম্পর্ক তো ১৮০°"
হ্যাঁ.. ঠিকই বলেছে বন্ধুরা.. অনুরণন এরকমই "ছিল"... তার বন্ধুদের সে দেখেছে, বেশির ভাগ প্রেমগুলো শেষ পর্যন্ত থাকেনি..! তার মনে হয়েছে এই সব প্রেম করা মানেই নিজেকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়.. আর সেই মানুষটাই আজ প্রেমে পড়েছে..!
এইভাবেই চলতে থাকলো দুজনের জীবন.. যেকোনো অসুবিধায় পেত্নীর সবার আগে মনে পরে তার পচা দাদার কথাই.. অনুরণের মত এত ভালো দাদা পেতে সত্যিই ভাগ্যবতী মনে করে নিজেকে নীলাক্ষী।
তারপর,......
তারপর আজ পুজোর দশমী..!
অনুরণন ঠিক করে আজই নীলাক্ষী কে বলবে তার ভালোবাসার কথা.. যদিও সামনাসামনি বলতে পারলে আরও ভালো হতো.. কিন্তু সে এখন তার বাড়িতে গেছে.. তাই ফোন করেই বলবে..
ফোন করলো নীলাক্ষীকে অনুরণন..
- হ্যালো..
- হ্যাঁ.. বলো।
- কি করছিস..? পেত্নী...
- এই দেখো.. সবসময় এরকম বলবে না তো ..! পচা দাদা একটা...!!!
- সেই.. যাই হোক শোন না.. একটা কথা বলার ছিল
- হম বলো..
- আমার মনে হয় আজই তোকে কথাটা বলা উচিত..! তোর সঙ্গে আমি সারাজীবন পথ টুকু চলতে চাই..! পাবো তোকে আমার পাশে ..?
- (কিছুটা নিস্তব্ধতা) বলছি দাদা.. তোমাকে আমি সারাজীবন দাদা হিসেবেই দেখেছি.. তোমাকে সে ভাবে কখনো দেখিনি..!
- হ্যাঁ, জানি.. আমি তোর কাছে অতি নগণ্য এক মানুষ..! তাই বলে কি তোর এতটুকুও যোগ্য নই..?
- না সেটা বলছি না.. আসলে আমি অন্য কাওকে বলবি ..! আর তাই আর কারোর সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চাই না..
- (গলাটা ভারী হয়ে আসছে অনুরণনের) আচ্ছা ঠিক আছে.. বিজয়ার শুভেচ্ছা নিস.. আর ভালো থাকিস...
- হমম...
ফোন টা রেখে দেয় অনুরণন...
গলাটা প্রচন্ড শুকিয়ে আসছে ছেলেটার.. মেনে নিতে পারছে না !!
তাহলে কি এটাই প্রাপ্য ছিল ওর..? নাকি... সে একটু বেশিই তার থেকে আসা করে ফেলেছিল.. আবার যেনো এক ঘৃণা তৈরি হলো এই "ভালোবাসার" উপর..!
রচনাকাল : ৩/৮/২০২০
© কিশলয় এবং স্বস্তিক দত্ত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।