শ্রাবণের ধারার মতো
আনুমানিক পঠন সময় : ২ মিনিট

লেখক : সনৎকুমার পুরকাইত
দেশ : India , শহর : ডায়মন্ডহারবার

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৯৭ টি লেখনী ৩৯ টি দেশ ব্যাপী ৩৬২৬৯ জন পড়েছেন।
Sanat Kumar Purkait
নন্দিতা ভক্তিমতী মেয়ে। বিয়ের আগে পূজা, ব্রত নিয়ে নিয়মনিষ্ঠা আর নীতিকথা শুনে বড় হয়েছেন। নন্দিতা বিয়ের পরেও শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার বাবা ভোলানাথের মাথায় জল দিতে স্থানীয় শিব মন্দিরে যায়। এবারেও তার অন্যথা হল না। বছর দুই হল নন্দিতার সাথে উজ্জ্বলের বিয়ে হয়েছে। সবকিছু ভালোই চলছিল। বেশ কয়েকমাস ধরে উজ্জ্বলের বাবা বিছানায় শায়িত। আজকের একটা বিশেষ কাজে উজ্জ্বলকে সকাল সকাল বেরিয়ে যেতে হয়েছে। যাওয়ার সময় অবশ্য নন্দিতাকে বলে গেছে বাবাকে যেন লক্ষ্য রাখে। বাড়িতে এখন নন্দিতা আর তাঁর শ্বশুরমশাই। নন্দিতা মন্দিরে যাবে বলে ঘরে দরজা বন্ধ করে বেশভুষাতে ব্যস্ত। এর মাঝে অসুস্থ শ্বশুরমশাই বেশ কয়েকবার একটু জল চেয়ে নন্দিতাকে ডাকলেও নন্দিতা শুনতে পান নি। সবকিছু রেডি করে বামহাতে পূজার সামগ্রী আর ডানহাতে একটা ঢাউস ডাব নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়েছেন। এমন সময় তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো বৃদ্ধ শ্বশুর বলে উঠল-

-মা, আমাকে একটু জল দেবে? খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।

-না বাবা, এই একটা ডাব পাওয়া গেছে। এটা তো ঠাকুরের মাথায় ঢালতে হবে।

-না মা, আমি ডাবের জল চাই নি, তুমি আমাকে ঘড়া থেকে খাবার জল দাও না।

-দেখছেন তো, আমার দুই হাতে নানান জিনিস। আমি এখন কি করে দিই বলুন তো। এগুলো এখন কোথায় রাখব, তাছাড়া স্নান করে আমি বাবার মাথায় জল না ঢেলে আপনার এই সব ছুঁতে পারবো না। আপনি একটু বিশ্রাম নিন। আমি মন্দিরে পূজা হয়ে গেলেই এসে জল দিচ্ছি। 

বলেই সদর দরজা বন্ধ করে নন্দিতা বেড়িয়ে গেল। মন্দিরে গিয়ে ভক্তের ভিড়ে বৃদ্ধ শ্বশুরের কথা গেল বেমালুম ভুলে। জল ঢালার পর যখন প্রসাদের অপেক্ষায় তখন সকাল থেকে উপোষ করা এক বৃদ্ধার মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া দেখে নন্দিতার সম্বিৎ ফিরল। নন্দিতা দৌড়ে বাড়িতে এসে দেখল বৃদ্ধ শ্বশুরের দেহ নিথর হয়ে গেছে। গাল হা হয়ে জিহ্বা বের হয়ে আসতে চাইছে। চোখগুলো যেন আরও বড় করে তাঁর অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে। চিৎকার করে পাশের বাড়ির কাকিমা কে ডাকলেন। তাঁর ছেলে অভিজিৎ ছুটে এসে দেখলেন সব শেষ। অভিজিৎ উজ্জ্বলের বাবার চোখ বন্ধ করে দুটি তুলসিপাতা এনে চোখের উপর দিয়ে দিল। নন্দিতা নিজের প্রচ্ছন্ন কৃতকর্মের কথা ভেবে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। রাত্রে যখন মন্দিরে নামযজ্ঞে ভক্তেরা মেতে উঠেছেন, ঠিক সেই সময় উজ্জ্বলের বাবাকে নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। রাতের পূজাতে আর নন্দিতা মন্দিরে যান নি, বলা ভালো তারপর থেকে শ্রাবণ মাস বা চৈত্রমাসে বাবা ভোলানাথের মাথায় যখন ভক্তের দল জল ঢালতে আসেন, তখন নন্দিতা আর উজ্জ্বল একটা ক্যাম্প করে জল, ছোলা আর বাতাসা প্রদান করে কৃচ্ছসাধন করেন। জল পূর্বের ন্যায় আজও ঢালেন শ্রাবণের ধারার মতো। শুধু ধর্মীয় বিধান আর নীতিশাস্ত্রের প্রভেদ তাঁর কাছে আজ জলের মত পরিষ্কার। তাই তিনি যতটা ভক্ত, তার থেকে বেশী মানবিক। 

রচনাকাল : ৩/৮/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 5  France : 34  Germany : 37  India : 465  Ireland : 9  Lithuania : 8  Norway : 12  Russian Federat : 9  Sweden : 9  
Switzerland : 1  Ukraine : 20  United Kingdom : 2  United States : 157  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 5  France : 34  Germany : 37  
India : 465  Ireland : 9  Lithuania : 8  Norway : 12  
Russian Federat : 9  Sweden : 9  Switzerland : 1  Ukraine : 20  
United Kingdom : 2  United States : 157  
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শ্রাবণের ধারার মতো by Sanat Kumar Purkait is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪২৭২৯৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী