কবরটার উপর উঠে বসে ছিল জালাল । কথা হচ্ছিল পাশের শ্যাওড়া গাছটাতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা পাণ্ডুরঙ্গার সাথে । দু-দিন আগের ঘটনা নিয়ে তারা কথা বলছিল । পাণ্ডুর বাঁশের লাঠিতে জালালের মাথাটা দু-ফাঁক হওয়ার মুহূর্তেই তার হাতের ছুরি বিঁধেছে পাণ্ডুর বুকে, তারপর ঐ দাঙ্গার আগুনের মাঝ থেকে বের করে কি করে ওদের দেহগুলোর সৎকার হল সে আর এক গল্প । তারপরেও পাক্কা দুদিন লেগেছে ওদের বুঝতে যে ওরা বেঁচে নেই ।
- হ্যাঁরে, এরপর আমাদের কি হবে? পাণ্ডু জিগ্যেস করল জালালকে ।...
- আর কি হবে, নরকে যাবি । শালা, আমাকে খুন করেছিস ।
- আর তুই কি বে হারামী? সাধু, না দরবেশ ! এবার দুজনেই হেসে উঠল, যা থাকে কপালে ।
দু-জনে তো ওরা বন্ধুই ছিল, কি করে কি হয়ে গেল... বাবরি মসজিদটা কি বস্তু- খায়, না মাথায় দেয়, কোনও ধারণাই ছিল না তাদের । একই কারখানায় কাজ করত, টিফিনের সময় রুটি-সব্জি-হালুয়া ভাগাভাগি করে খেত দুজনে ।
- জালালরে, নরকটা শুনেছি আমাদের কারখানার ফারনেসের মত, ওর মধ্যে ছেড়ে দেয় আর উঠতে চাইলেই যমদূতরা ডাঙ্গশের বাড়ি মারে ।
- এখন নাচতে এসে ঘোমটা পরলে তো চলবে না । শালা আমাদের দোজখটাই বা কম কিসে ? ...আরে, এটা আবার কি শুরু হল, পাণ্ডুয়া রে...।
জালালের কথা আর শেষ হল না, একটা তুমূল ঝড় এসে ওদেরকে কোথায় যে উড়িয়ে নিয়ে গেল । মনে হয় একটা ব্লাস্ট ফার্নেস জাতীয় কিছু, আত্মাদুটো তার ভিতরে পড়ে অন্য সব আত্মাদের সাথে ঘুরপাক খেতে লাগল । ধর্ম, জাতি, রূপ, দোষ-গুণ সব বাইরের পোষাকের মত খসে পড়তে লাগল একে একে ।
রচনাকাল : ২/৮/২০২০
© কিশলয় এবং তথাগত চক্রবর্তী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।