এ এক নতুন ধারার জন্মদিন।
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখক : প্রসেনজিৎ
দেশ : India , শহর : Howrah

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , এপ্রিল
প্রকাশিত ৫ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ৩৬৬৪ জন পড়েছেন।
Prasenjit
#এ_এক_নতুন_ধারার_জন্মদিন
✍ঈশান। 
০২.০৮.২০২০
**ঘটনা, চরিত্র কাল্পনিক। কোন এক রৌদ্রজ্জ্বল রবিবার সকাল। **

"আরে কি গো! সকাল হল যে। রবিবার, বাজার যাবে না নাকি? " বলতে বলতে সোনিয়া জানলার পর্দাটা খুলে দিল। হঠাৎ চোখে সকালের রোদের ঝলকানিতে ঘুমটা গেল ভেঙে। বাপ্পা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল, "আরে, ধূর বাবা! রোববারটাতো একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমাতে দাও। অন্যদিনতো ছেলের স্কুল থাকে। তখন তো সকালেই উঠি বলো! প্লিজ লক্ষীটি , ওরম করে না। একটু ঘুমাই। আর দেখো না, ছেলেটাও কেমন আমায় জড়িয়ে শুয়ে আছে। আমি উঠলেই উঠে পড়বে। " 
সোনিয়া বলল, "আচ্ছা বেশ, এই আমি তাহলে বসলাম! ভালোই তো, আমার ও কাজ নেই। বাপ-ব্যাটা মিলে আয়েশ করে ঘুমাও। খেতে হবে না কাউকে! আমার হয়েছে যত জ্বালা। কত ভালো ছিলাম পড়াশোনা, কেরিয়ার নিয়ে। কোন কূক্ষণে যে আমার এই আজন্ম কুঁড়ের সাথে বিয়ে হয়ে গেল, আর ছেলে ও হয়ে গেল। আমিতো এখন ঘরের ঝি-চাকর!  আমার কোন বিশ্রাম নেই। শুধু টাকা রোজকার করলেই হয় না বুঝলে। একটু ছেলেটাকে একটু পড়াতে পার তো! উদ্ধার হৈ তবে। "
বাপ্পা মুখটা কাচুমাচু করে বলল, " আরে, আবার আরম্ভ করলে রামায়ণ!  এর থেকে বাজার যাওয়া ভালো। ছেলেদের দু্ঃখ কেউ বুঝলো না। স্যাড লাইফ! "
রে রে করে তেড়ে এসে সোনিয়া বলল, "কি? স্যাড লাইফ! তা হবে না। এখন তো পুরানো হয়ে গেছি। বলি কাউকে মনে-টনে ধরলো বুঝি? "
বাপ্পা আমতো-আমতো করে বলল, "যা, বাবা! এটা আবার কখন বললাম! তুমিতো হা করলে হাওড়া বোঝো! "
সোনিয়া বলল, " ছেলে এখন ঘুমোচ্ছে। আমি পাশে আছি। তাড়াতাড়ি গিয়ে বাজারটা করে নিয়ে আসো। আজ ছেলের জন্মদিন তো! ফর্দ করে রেখেছি। যাও, নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি। ফেরার পথে কেকটা নিয়ে আসবে। দেখবে ক্যান্ডেল, বেলুন, ক্যান্ডি, সাজানোর সরঞ্জাম যেন ভুলে না যাও। যা ভুলো মন তোমার। "
"যে আজ্ঞে মহারানী! এবার যাই! ", বাপ্পা বলল ব্যাগটা হাতে নিয়ে। 
" যাই না, বলো, আসছি বৎস!" , সোনিয়া হেসে বলল। 
যেতে গিয়ে, আবার দুকদম পিছিয়ে বাপ্পা বলল, "আচ্ছা, আমি কি চা পাবো না? 
পাবো না, আমি এক কাপ চা! "
"ফর্দ দেওয়ার ছিল, দিয়ে দিয়েছি। এবার আসতে পারো। দেরি করেছো যেমন, তেমন বাজার ফিরতি চা-কাকু হয়ে চায়ের দোকানে চা খেয়ে নিও। ডায়লগ গুলো ওখানে দিও, ভাইরাল হয়ে ফুটেজ খাবে ফ্রিতে। ", মুচকি হেসে সোনিয়া বলল। 
রাস্তায় বেরিয়ে বাপ্পা ভাবতে লাগলো, আজ ছেলের জন্মদিন। ছেলেটা এইতো সেদিন জন্মালো। দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেল। স্মৃতির স্মরণী বেয়ে মনে পড়ে গেল তাদের বিয়ের কথা। ফর্সা নয়, শ্যামবর্ণা মেয়েটিকে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে  পুরস্কৃত হতে দেখেছিল। অসম্ভব গুনী মেয়ে। 
ফর্সা হলেই সুন্দর হয় না। মুখের মিষ্টতা, হৃদয়ের সৌন্দর্য আসল। সেটা ভগবান ওকে দিতে কার্পণ্য করে নি। বাপ্পার খুব বাজে স্বভাব হল, সে কোনদিন তার প্রশংসা করে না। অথচ, দোষ ধরে। যুক্তি হল, সমালোচনা করে সে তাকে পারফেক্ট হতে সাহায্য করছে। আর বেস্ট বলে কিছু হয় না। তাই, সে প্রশংসা করে না। আজব সব যুক্তি! 
এইসব ভাবতে ভাবতে, সে সব কেনাকাটা করলো। আর, বাড়ি ফিরতি বন্ধু-বান্ধবদের কমন একটা টেক্সট করলো, "আজ সন্ধেবেলা আসিস কিন্তু। দুজনের বার্থডে আছে। সারপ্রাইজ! "
বাড়ি এসে দেখল,মহারাজ উঠে পড়েছে। ছেলেকে ওরা পাপা বলে ডাকে। ডাকনাম। 
বাবাকে দেখে ছেলে দৌড়ে গিয়ে কাধে উঠে পড়ে বলল, "বাবা, কোথায় গিয়ছিলে?আমাকে নিয়ে যাওনি কেন? আমাকে ঘুরতে নিয়ে চল। আমি ট্রেন কিনতে চাই। কিনে দাও না। "
বাপ্পা বলল, "কি গো এগুলো ধরো তাড়াতাড়ি। আমি কিছু বন্ধুকে বলেছি। বিকেলে আসবে। তুমি তোমার বন্ধুদের বলে দিয়েছ তো? যাই, আমি ছেলেকে নিয়ে কেকটা আনি। এতো কিছু একসাথে পারিনি। "
সোনিয়া বলল, "কি!!  ঐ, এতোজনের রান্না আমি করতে পারবোনা। আমি মানুষতো নাকি! ছেলের জন্মদিন, আর আজও আমি খেটে মরবো।"
বাপ্পা এবার বিরক্তির সুরে বলল,"আহ!!  আমি কি তা বললাম নাকি! তোমাদের মেয়েদের বড়ো বাজে স্বভাব তো। হাফ শুনে চেঁচাও! রাখুন ভাড়া করেছি। ওরাই সব করবে, তুমি একটু দেখ। আমি চললাম ছেলেকে নিয়ে কেক আনতে। "
সোনিয়া, "আমাদের মেয়েদের মানে! মেয়েদের নিয়ে রিসার্চ করছো নাকি আজকাল? কি ব্যাপার! "
বাপ্পা, "যা তা একটা। চললাম। চলতো পাপা। তোর মায়ের মাথা সকাল বেলায় পুরো গেছে। পুরো তারকাটা! "
পাপা কাঁধে বসা অবস্থায় বলছে, "চল মেরে ঘোড়ে,টিকটিকিটিক.. "
বিকেল হতে না হতেই, সোনিয়ার হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে বাপ্পা বলল, "এটা পরো। "
প্যাকেট খুলে দেখল, সেই শাড়িটা!যেটা সেদিন ছেলেকে নিয়ে ফেরার পথে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁ করে দেখছিল। বাপ্পা কাঁধে টোকা মেরে বলেছিল, "পছন্দ! "
সোনিয়া বরাবর চাহিদাহীনের মতো সেদিন ও বলেছিল, "আরে না, না। কালারটা যারা খুব ফর্সা তাদের মানাবে। তাছাড়া, অনেক দাম। আমার তো অনেক আছে। টাকা নষ্ট কর না। চলো! "
নাহ! এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না! তবে, সে খুব খুশি হয়েছে প্রিয় রঙের শাড়িটা পেয়ে। বাপ্পা এদিকে একা হাতে জন্মদিনের ঘর সাজালো। সোনিয়াকেও ঢুকতে দিল না! বললেই বলছে, "সারপ্রাইজ! একেবারে দেখবে। " সোনিয়া ও  তাই আর জোর করলো না। নিশ্চয়ই কিছু ক্রিয়েটিভ কিছু করছে। স্ক্রু ঢিলেরা অমন একটু-আধটু হয়। 
সন্ধ্যা হতে একে একে অতিথি-বন্ধুরা এল। 
আনন্দের পরিবেশ তৈরি হল। মিউজিক, ডান্স, স্নাক্স চললো। এবার জন্মদিন পালন হবে। তার জন্য কেক কাটা হবে। তাই, সবাই ড্রয়িং রুমে এল। সেখানে এসে সবাই দেখল, দুটি কেক। দেওয়ালে লেখা, "হ্যাপি বার্থ ডে মাই টু হার্টস! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ বোথ! "
সবাই বলাবলি করছে, সোনিয়ার বন্ধুরাও অবাক। কারণ, আজতো শুধু পাপার জন্মদিন! সোনিয়ার তো নয়!  সোনিয়া পর্যন্ত হতবাক। সে বাপ্পার কাছে এসে বলল, "তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে না কি! মনে থাকে না আমার জন্মদিন, ইটস ওকে। বাট, সবার সামনে এভাবে হিউমিলিয়েট করলে কেন? "
বাপ্পা, ওকে কিছু না বলে মাইকটা নিয়ে সরে এসে বলল, "এভ্রি ওয়ান, লিসেন টু মি প্লিজ। 
হ্যাঁ, আমি সজ্ঞানে কোন রকম ভুল না করে, এটা বলছি যে আজ ছেলের সাথে ওর মায়ের ও জন্মদিন। ভাবছেন আমি পাগলের মতো বকছি। কারণ, আজতো সত্যিই ওর জন্মদিন নয়। তবে, আমি কেন বলছি এতো জোর দিয়ে। কারণ হল, সোনিয়া যেদিন ভূমিষ্ট হয়েছিল, সেদিন ও ছিল মেয়ে। আর, যখন, ও পাপার জন্ম দিল, সেদিন পাপার জন্মের সাথে ওর মা হিসেবে জন্ম হল। তাই, আজকের দিনটি আমার সোনিয়ার মা হওয়ার জন্মদিন। সাথে আমাদের ছেলের ও জন্মদিন। তাই, আমি লিখেছি আজ দুজনের জন্মদিন। কি বন্ধুরা, আপনারাই বলুন, আমি কি ভুল বললাম? "
ইতিমধ্যেই সোনিয়া চোখে জল নিয়ে বাপ্পার বুকে মিশে গেছে। বাপ্পাও দুহাত দিয়ে বেঁধে রেখে গেয়ে বলল, "আমার আছো তুমি, শুধু তুমি.. "
সোনিয়া লজ্জা পেয়ে বলল, "পাগল একটা। "
এভাবেই সবাইকে অবাক করে নতুন ভাবে ওরা আজ জন্মদিন পালন করলো। তবে, দুজনের নয়। তিনজনের। কারণ, ছেলের জন্মের সাথে বাপ্পারও যে জন্মদিন বাবা হিসেবে।।
©®সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত। 
রচনাকাল : ২/৮/২০২০
© কিশলয় এবং প্রসেনজিৎ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 14  France : 4  Germany : 1  India : 85  Ireland : 6  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 2  Sweden : 13  Ukraine : 7  
United States : 116  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 14  France : 4  Germany : 1  
India : 85  Ireland : 6  Russian Federat : 5  Saudi Arabia : 2  
Sweden : 13  Ukraine : 7  United States : 116  
© কিশলয় এবং প্রসেনজিৎ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
এ এক নতুন ধারার জন্মদিন। by Prasenjit is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৮৫৩
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী