বাড়ির সবাই মণ্ডপে গেছে অষ্টমী পুজোর অঞ্জলি দিতে ।জোনাকিও নতুন শাড়ি পরে প্যাণ্ডেলে যাবে বলে তৈরী হচ্ছে । কলিংবেল বাজতেই দরজা খোলায় মদ্যপ বড়োদাদাবাবু ঝাঁপিয়ে পড়ে তার উপর। শেখর অল্প স্বল্প মদ খায় ,তবে আজ অষ্টমী,তাই হয়তো লাগামছাড়া। মণ্ডপে মাইকের আওয়াজে জোনাকির চিৎকার আশেপাশে পৌছোনো বেশ মুশকিল। লম্বা সুঠাম বড়োদাদাবাবুর কাছে জোনাকি মারাত্মক অসহায় আজ।
নিজের ঘর থেকে এসব দেখেই সুমন দাদাকে বলল, " তুই তো আমায় ঘেন্না করিস, আমার এঁটো ছুঁয়েছিস ?" মদ্যপ শেখর এক ঝটকায় জোনাকিকে ধাক্কা দিয়ে থুতু ফেলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো ।ভীত সন্ত্রস্ত জোনাকি কাঁপতে কাঁপতে ছোটদাদাবাবুর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। সুমন ওর মাথায় হাত রেখে বলল,আমায় ক্ষমা করে দিস ,আজ মিথ্যে বললাম তোর নামে।আমার এই মেয়েলিপনা, নারীসত্তা, রমণীসুলভ আচরণে দাদা ঘেন্না করে আমায় । বৌদি আসার আগে বহুবার মারধোর করেছে আমায় । বাবা মা বাঁচাতো। দৈহিক শক্তিতে দাদার সাথে আমি পারতাম না।তাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি।
মা এই দুর্গাঅষ্টমীর দিনে ছোটোবেলায় বেলুড় মঠে কুমারী পুজো দেখতে নিয়ে যেত । আজ তো অষ্টমী ।অনেক বছর দেখিনি কুমারী পুজো ।তোকে আজ যেন নতুন লাল শাড়িতে ঐরকম দেখাচ্ছে , ষোড়শী অম্বিকা ।গলায় যেন ফুলের মালা, গায়ে সোনার অলংকার, হাতে পদ্ম।মহাষ্টমীর দিন মা দুর্গা যে মেয়ের আকারে ভক্তের মাঝে আসে।মা বলতো, কুমারী পুজার অর্থ হলো মহিলাদের মূল্য প্রতিষ্ঠিত করা ।আজ তোর সম্মান নষ্ট হলে মা দুর্গার পুজোর এত আয়োজন সব যে বৃথা।
'ওঁ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে, শিবে, সর্বার্থসাধিকে ।
শরণ্যে ,ত্রম্বকে গৌরি, নারায়ণি, নমোহস্তুতে।।
সৃষ্টিস্থিতি বিনাশানাং,শক্তিভূতে , সনাতনী
গুণাশ্রয়ে , গুণময়ে , নারায়ণি নমোহস্তুতে।।
মণ্ডপের মাইকে তখন মহাষ্টমীর অঞ্জলির মন্ত্রধ্বনি নীলাকাশ, কাশফুল ছুঁয়ে যাচ্ছে ।
রচনাকাল : ১/৮/২০২০
© কিশলয় এবং অর্পিতা চক্রবর্তী কণ্ঠ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।