শয়তান
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখক : শুভেন্দু ভৌমিক
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১০ টি লেখনী ২৬ টি দেশ ব্যাপী ৫১৭৮ জন পড়েছেন।
- বাবু, দুটো খেতে দেবে আমায়? কতদিন কিছু খাইনি।

মন্দিরের সামনে কিছু গরীব-দুঃখীদের খাবার দিচ্ছিলেন যতীনবাবু। পাশ থেকে কথা শুনতে পেয়ে তাকিয়ে দেখলেন মলিন, চারিদিকে তাপ্পিমারা জামাকাপড় পরে একটা দশ-বারো বছরের মেয়ে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

- বাবু, দুটো খাবার দাও না গো! আমার মা'টাও কতদিন ধরে কিছু খায়নি। আগে মা তা'ও লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাপড় কাচার সাবান বিক্রি করতো, কিন্তু লকডাউনের জন্য সেই কাজটাও চলে যায়। লোকের থেকে চেয়ে-চিন্তে কিছুদিন চললো। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

- আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে নিয়ে যা তোদের দুজনের জন্যে খাবার। রাতের খাবারও একেবারে নিয়ে যাস।

- ধন্যবাদ বাবু।

- তোর নাম কি রে? তুই কোথায় থাকিস?

- আমার নাম সুমি। ঐ পাশের বস্তিতেই থাকি বাবু।

****************************

যতীনবাবুর পুরো নাম যতীন সরকার। বয়স প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই। পাঁচ বছর হলো ওনার স্ত্রী মীরাদেবী মারা গেছেন। তাঁদের কোনো সন্তানাদি নেই। নেই কথাটা ঠিক না, ছিল এক মেয়ে ও এক ছেলে। তারা কি একটা অজানা ব্যাধিতে মারা গেছে। বিশাল বড় বাড়িতে যতীনবাবু একাই থাকেন। সম্পত্তি ভোগ করার মত তিনকুলে কেউ নেই। সরকারী চাকুরে ছিলেন। রিটায়ার্ড হয়েছেন অনেকদিন। মাস গেলে পেনশানটুকু পান। তা'ই দিয়েই সপ্তাহে একটা দিন গরীব-দুঃখীদের খাওয়ান।

****************************

বেশ কিছুদিন পর রাস্তায় সুমির সাথে দেখা হলো যতীনবাবুর।

- এই সুমি, কিরে কোথায় যাচ্ছিস?

- বাবু, ঐ পাশের পাড়ায় এক বাবু আজ গরীবদের খাবার দিচ্ছে গো। ওখান থেকেই আজকের খাবার আনতে যাচ্ছি।

শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল যতীনবাবুর। এভাবে এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে-ঘুরে এইটুকু মেয়েকে তাদের দুজনের প্রত্যেক দিনের খাবার জোগাড় করতে হচ্ছে।

- চলি গো বাবু, দেরী হয়ে গেলে আর খাবার পাবো না।

- ঠিক আছে যা। কাল একবার আমার সাথে মন্দিরে দেখা করিস।

- আচ্ছা বাবু। চলি।

সুমি এক দৌড় লাগালো, পাছে সে পৌঁছাবার আগেই খাবার শেষ হয়ে যায়।

****************************

পরদিন মন্দিরে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য্য হয়ে পরলেন যতীনবাবু। কিন্তু সুমি আসলো না।

- আশ্চর্য..আজ আবার অন্য কোনো পাড়ায় খাবার আনতে দৌঁড়ালো নাকি! মেয়েটাকে কাল বলে দিলাম একবার দেখা করিস অথচ আজ কোনো পাত্তা নেই।

যতীনবাবু একবার পাশের বস্তিতে গিয়ে ঢুঁ মারলেন। আশ্চর্যের বিষয় বস্তিতে কেউ সুমি বা তার মা'র সম্পর্কে কোনো খোঁজ-খবর দিতে পারলো না।

- আজব ব্যাপার..মেয়েটা কী বেমালুম উড়ে গেলো? মনে মনে ভাবলেন যতীনবাবু।

****************************

বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে আসলো। যতীনবাবু বাড়ির দরজার তালা খুলছিলেন, হঠাৎ পিছন থেকে সুমির গলা পেলেন।

- বাবু, আজ দেখা করতে বলেছিলে!

- হ্যাঁ..বলেছিলাম। কিন্তু সে তো সকালে, মন্দিরের সামনে। আমি তো গিয়ে কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম তোর জন্য। তুই আসলি না দেখে তারপর তোদের বস্তিতে গিয়েও খোঁজ করলাম। সেখানেও তোদের খবর কেউ বলতে পারলো না। আর তুই আমার বাড়ি চিনলি কিকরে?

- মন্দিরের আশেপাশের লোকেদের থেকেই তোমার বাড়ির খোঁজ পেলাম গো বাবু।

- আচ্ছা বেশ। ভিতরে আয়।

যতীনবাবুর পিছু পিছু সুমিও ভিতরে ঢুকলো।

- এখানে বোস। আমি একটু ভিতর থেকে আসছি।

****************************

ঘন্টাখানেক পর..

-আমি কোথায়? কে কোথায় আছো বাঁচাও আমাকে..আমাকে বাঁচাও।

অন্ধকার ঘরের ভিতর থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে লাগলো সুমি। চেয়ারের সাথে তার হাত-পা মোটা দড়ি দিয়ে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বাঁধা। পাশের ঘর থেকে জোরে জোরে মন্ত্র পড়ার আওয়াজ আসতে লাগলো।

- কিরে তোর জ্ঞান ফিরেছে তাহলে!
ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলে উঠলেন যতীনবাবু।

- কতদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম আবার একটা সুযোগের জন্য। আজ তোকে বলি দিয়ে আমার কার্যে সিদ্ধিলাভ করবো। হা হা হা। জানিস বহুদিন ধরে আমার ইচ্ছে যে আমি মানুষকে বলি দিয়ে আবার মন্ত্রবলে সেই মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তুলবো। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারছিলাম না। আজ সফল হয়েই ছাড়বো। এই কাজের জন্য আমার নিজের ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েগুলোকেও নিজের হাতে বলি দিয়েছি। আজ তোর পালা।

- আমাকে ছেড়ে দাও, আমার মা চিন্তা করবে।

- দুর পাগলী মেয়ে। আমি খোঁজ নিয়েছি তোদের বস্তিতে। তোকে সুমি নামে ওখানে কেউ চেনে না। তোর চেহারার বিবরণ দিতে ওরা বলল- ঐ পাগলী মেয়েটার কথা বলছেন। তোর মা তো লকডাউনের সময় কাজ হারিয়ে সেই শোকে আর না খেতে পেয়ে মারা গেছে। তা'ও তুই নাকি রোজ রোজ এপাড়া-ওপাড়া দৌড়াদৌড়ি করে তোর আর তোর মায়ের জন্য খাবার নিয়ে আসিস। তোকে মেরে ফেললে কারুর কিছু যাবে-আসবে না।

- মা-মা বাঁচাও আমাকে।

- আবার পাগলামী শুরু করেছিস পাগলী! তোর মা তো কবেই মরে গেছে রে পাগলী। তাকে আর ডাকাডাকি করে বিরক্ত করিস না। চল এবার তোর সময় হয়ে গেছে।

তারপর যতীনবাবু সুমির গর্দানটা হাঁড়িকাঠে রেখে যেই বলি দিতে যাবেন অমনি প্রচন্ড জোর ঝড় উঠলো। দমকা হাওয়া এসে এক ঝটকায় যতীনবাবুকে ছিটকে ফেলে দিলো দূরে।

- মা মা, তুমি এসেছো!

যতীনবাবু উঠে এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলেন না। তারপর আবার যেই সুমির দিকে এগোতে যাবেন অমনি কে যেন তাঁর পা ধরে তাঁকে উল্টে ফেলে দিলো।

সুমি আনন্দে বলে উঠলো- ঠিক করেছো মা। এই লোকটা খুব দুষ্টু লোক। কত্ত ভালো ভালো কথা বলে, অথচ ভিতরে ভিতরে খুব পাজি। একে ছেড়ো না মা, একে ছেড়ো না।

এদিকে কোনো এক অশরীরী শক্তি যতীনবাবুকে ধীরে ধীরে টানতে টানতে সেই হাঁড়িকাঠের কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁর গলাটা হাঁড়িকাঠের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। তারপর এক ঝটকায় যতীনবাবুর মুন্ডু ধড় থেকে আলাদা করে দিলো।

সুমি আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো।
- একদম ঠিক করেছো মা, এই পাজী লোকটা উচিত শাস্তি পেয়েছে।

তারপর দমকা হাওয়ার ধাক্কায় যতীনবাবুর ঘরের দরজা খুলে গেল।

সুমির হাত-পায়ের বাঁধনগুলো নিজে-নিজেই খুলে গেলো। সুমি সেই দরজা দিয়ে একা একা বাইরে বেরিয়ে গেল।

****************************

- যা মা যা, তোর মায়ের কাছে ফিরে যা। বেঁচে থাকাকালীন নিজের ছোট-ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে নিজের চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখেছি এই মানুষটার পাগলামির জন্য। আর মরার পরেও আজ আবার একটা মা মরা মেয়ের জীবন শেষ করে দিতে চলেছিল মানুষটা। এইরকম শয়তান লোকেদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।

স্বামীর মুন্ডুহীন দেহের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মীরাদেবী।

                                   (সমাপ্ত)

(এই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। শুধুমাত্র মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে লেখা। এই গল্পের মাধ্যমে কোনোরকম কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না।)
রচনাকাল : ১/৮/২০২০
© কিশলয় এবং শুভেন্দু ভৌমিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 14  France : 4  Germany : 1  India : 113  Ireland : 13  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 1  Sweden : 12  Ukraine : 6  
United Kingdom : 2  United States : 120  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 6  China : 14  France : 4  Germany : 1  
India : 113  Ireland : 13  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 1  
Sweden : 12  Ukraine : 6  United Kingdom : 2  United States : 120  
লেখক পরিচিতি -
                          শুভেন্দু ভৌমিক ৬ ই মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর সাহিত্যের প্রতি দারুণ ঝোঁক। তিনি চাকরী করার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতে ভালোবাসেন। ফেসবুকের বিভিন্ন সাহিত্যগ্ৰুপে অণুগল্প, ছোটগল্প লেখালিখি করেন।

অবসর সময়ে বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে, সানডে সাসপেন্স শুনতে এবং টিভিতে ক্রিকেট-ফুটবল ম্যাচ দেখতে ভালোবাসেন। 
                          
© কিশলয় এবং শুভেন্দু ভৌমিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
শয়তান by Subhendu Bhowmick is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৬২৭১২৮
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী