ভালোবাসার টান
আনুমানিক পঠন সময় : ৬ মিনিট

লেখিকা : শ্রেয়সী বিশ্বাস
দেশ : India , শহর : ব্যারাকপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মার্চ
প্রকাশিত ১১ টি লেখনী ২৫ টি দেশ ব্যাপী ৬৭৭০ জন পড়েছেন।
Shrayasi Biswas
গরমের ছুটি পড়েছে। আমি দূরসম্পর্কের এক পিসির বাড়ি যাব ঠিক করলাম। পিসি আর দুই দাদা। কিন্তু আমার বাবার সাথে ওদের সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। কিন্তু মায়ের জন্য সম্পর্কটা টিকে আছে। সম্পর্ক ভালো থাকতে ছোটবেলায় একবার গেছিলাম কিন্তু ছোট ছিলাম বলে কিছুই মনে নেই আমার।
      পিসির বাড়ি কুন্তলপুরে। জায়গাটা ছোট কিন্তু বেশ সুন্দর নাকি, গ্রাম ঠিক না আবার পুরো শহরও নয়, মায়ের মুখে শোনা। পিসিও নাকি খুব ভালো আমায় খুব ভালোবাসেন। তাই আমার যাওয়ার কথাতে মা একবারেই রাজি হয়ে যান।আমার ডাক নাম সোনাই।আমার বয়স এখন বারো। ক্লাস সেভেনে পড়ি। 
      পরের শনিবার বেরিয়ে পড়লাম পিসির বাড়ির উদ্দেশ্যে।মা সকালবেলায় ট্রেনে চাপিয়ে পিসিকে ফোন করে দিল। ছোড়দা স্টেশনে আমায় নিতে আসবে। কুন্তলপুর আমার বাড়ি থেকে দেড় ঘন্টার রাস্তা তাই বাবাও তেমন আপত্তি করলেন না।
      ট্রেন থেকে নেমেই দেখি ছোড়দা, বড়দা দুজনেই এসেছে। ট্রেন থেকে নামতেই ছোড়দা বললো, 
-কি রে সোনাই, কেমন আছিস? কত বড়ো হয়ে গেছিস।  
-পিসি কেমন আছে? আমি ভালোই আছি। বাবা, মা ভালোই আছে।
-চল তাড়াতাড়ি চল। তোকে বাড়ি দিয়ে আবার অফিসে বেরোতে হবে।
     আমরা হাঁটা শুরু করলাম। চারিদিকে গাড়ি, সাইকেল, খুব হট্টগোল। স্টেশনের কাছে বাজার। ঠাসা ভীড়। ছোড়দা সামনে কিছুটা এগিয়ে আর পিছনে আমার হাত ধরে বড়দা। হাঁটতে হাঁটতে বড়দা বলল,
-সেই ছোট্টবেলায় এসেছিলি। আজ কত বড় হয়ে গেলি। পড়াশোনা কেমন চলছে?
-ভালোই চলছে। রেজাল্ট ভালোই হয়েছে।
 হাঁটতে হাঁটতে বাজার পেরিয়ে কিছুটা এসে এক বিরাট জঙ্গল। বড়দাকে বললাম,  কত বড় জঙ্গল বড়দা। আমাদের ওদিকে এরকম নেই।
ছোড়দা পিছন ফিরে বললো, 
-কিরে কিছু খাবি নাকি? গরম গরম কচুরি, আলুরদম আর জিলিপি খাবি? 
-হ্যাঁ খাব।
    বড়দা বলল,  'তোরা খেয়ে নে। আমি এবার বেরোলাম, কাজে যেতে দেরি হয়ে যাবে। আজ তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করছি।' 
    বড়দা বেরিয়ে গেল। আমি আর ছোড়দা সামনের একটা খাবার দোকানে ঢুকলাম। খেতে খেতে ছোড়দাকে বললাম কত বড় জঙ্গল। কত সুন্দর। আমি এখানে ঘুরতে আসব। পাশ থেকে কে একজন বলে উঠলো, 'কি বলছ গো মামনি। এখানে তেনারা থাকেন, এই গহীন জঙ্গলে কেউ যায় নাকি'।
ছোড়দা বললো, 'নারে সোনাই এখানে রাতের বেলা বাঁশির শব্দ পাওয়া যায়। জঙ্গলটা একদম নিরাপদ নয়। ভুল করেও এদিকে আসবি না।'
-কিন্তু এই তেনারা মানে কারা?
-ওসব তুই বুঝবি না। খেয়ে নিয়ে চল তাড়াতাড়ি। 
খেয়ে উঠে তাড়াতাড়ি পা চালালাম। ছোড়দা আমায় বাড়ির গেটে ছেড়ে দিয়ে অফিস চলে গেল।
বাড়িতে ঢুকতেই পিসি,
-ও মা, সোনাই, কি মিষ্টি দেখতে হয়েছে রে তোকে। কেমন আছো সোনা মা?
-আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো পিসি?
-আমিও ভালো আছি। তুমি যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি খাবার আনছি।
-না গো পিসি। দাদা কচুরি,আলুরদম আর জিলিপি খাওয়ালো।
-আচ্ছা বেশ। তবে যাও ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও।
     আমি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম, এই তেনারা কারা?
     সারাদিন পিসির হাতে হাতে কাজ করে আর গল্প করে কেটে গেলো। পিসি আমার ছোটবেলা, বাবার ছোটবেলার কত মজার মজার গল্প বললো। 
     রাতে দশটার সময় পিসি বললো,  তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো সোনা মা। আমরা পরে খাব। আমি বেশি কথা না বাড়িয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্ত লাগছিলো খুব।
     রাত সাড়ে এগারোটায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। বাঁশির শব্দ। এই সেই বাঁশির শব্দ যার কথা ছোড়দা বলেছিল। পিসি পাশে ঘুমাচ্ছে।আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরোলাম। বড়দা, ছোড়দা দুজনেরই ঘরের দরজা বন্ধ মানে দুজনেই ঘুমাচ্ছে। আস্তে আস্তে সদর দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লাম। বাঁশির সে এক অদ্ভুত সুর। সেই সুর যেন আমায় টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারলাম না। ছোড়দার বারণ করা সত্ত্বেও জঙ্গলের দিকেই চলতে লাগলাম। এক সময় জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করলাম। কি মাদকতা সেই সুরে আমি নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলাম না। চলতে চলতে হঠাৎ পা দুটো থেমকে গেল। কে যেন পিছনে দাঁড়িয়ে, কাঁধে হাত দিল। আমার সারা শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। নড়তে পারছি না। ভয়ে চোখ বুজে মনে মনে হনুমান চল্লিশা জপ করতে লাগলাম। সারা শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেছে। 
-এখানে এত রাতে কি করছ? জানো না এখানে আসতে নেই।
  হঠাৎ এক ঝটকায় শরীরের আড়ষ্টভাব কেটে গেল।পিছন ফিরলাম আস্তে আস্তে। দেখলাম বছর আশির একজন বৃদ্ধ।বয়সের ভারে জরাজীর্ণ দশা, কুঁজো হয়ে গেছেন। তিনি আবার বললেন,
 -এত রাতে এখানে একা কি করছো তুমি? চল এখন থেকে।
 -কিন্তু ওই যে বাঁশির...............
-এখানে তেনাদের বাস।
  বলে উনি আমায় হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন। জঙ্গলের বাইরে এনে বললেন, 'আর এখানে আসবে না কোনোদিন।'
  হঠাৎ পিছনে কাঁধে হাত, 'এই কার সাথে কথা বলছিস? আর এখন এখানে কি করছিস?
  পিছন ফিরে দেখি বড়দা।' এই তো এই দাদু টা......
-কে দাদু? কোন দাদু?
-এই তো এখানে...
         বলে পিছনে ফিরতেই দেখি কেউ নেই। ওদিকে খেয়াল করিনি বাঁশির শব্দটাও থেমে গেছে।বড়দা বললো,
- কেউ নেই চল তুই।
- না ছিলো একজন।আমার সাথে কথা বলেছে। উনিই তো আমায় জঙ্গল থেকে বার করে আনলেন।
- একা এখানে কেনো এসেছিলি? শোন বাড়ি গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়বি কাউকে কিছু বলার দরকার নেই নাহলে খুব বকা খাবি পিসির কাছে।
- তুই এখানে কি করে এলি বড়দা?
- আমি তো কাজ থেকে ফিরছিলাম। তোকে দেখলাম তাই পিছু নিলাম। ভাগ্যিস এলাম নাহলে কি যে কেলেঙ্কারি ঘটাতিস। দিনকাল যা খারাপ। অনেক কাজের চাপ ছিলো,তাই দেরি হলো ফিরতে রে।
 বাড়ি ঢুকে বড়দার কথা মতো চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। বড়দাও নিজের ঘরে চলে গেল।পরদিন সকালে আটটায় ঘুম ভাঙলো। গত রাতে ঘটনা কাউকে কিছু বললাম না। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলাম,  বড়দার ঘর বাইরে থেকে বন্ধ বুঝলাম কাজে বেরিয়ে গেছে, আর ছোড়দার ঘর ভিতর থেকে মানে ছোড়দার এখনো ঘুম ভাঙেনি। কাল রাতের কথা পিসি কিছু জানতে পেরেছে কি না বোঝার জন্য খাবার টেবিলে পিসিকে জিজ্ঞেস করলাম, পিসি বড়দা কত রাত করে বাড়ি ফেরে গো? 
 -পিসি চমকে উঠে বলল, কি বললি?!!
 -বললাম যে, বড়দা কখন বাড়ি ফেরে?
 ছোড়দা আমার হাত ধরে বড়দার ঘরে নিয়ে গেলো। বড়দার ঘরে যেতেই আমার জগতটাই পাল্টে গেল। মনে হল আমি কল্পনার জগতে আছি। বড়দার ঘরে খাটের ওপর পাঁচ -ছটা বাঁশি সাজানো তার ওপরের দেওয়ালে বড়দার ছবি মালা দেওয়া। কিছুই মেলাতে পারলাম না। সব তালগোল পাকিয়ে গেলো। পিসি বললো,
 -সুজয় চলে গেছে সাত বছর হয়ে গেল। তুই তখন অনেক ছোট।
 -তাহলে ওটা কে? আর জঙ্গলে বাঁশি কি তবে..........উফফ্ মাথাটা অসহ্য যন্ত্রণা করছে? চোখমুখ অন্ধকার করে আসছে। তারপর কখন অজ্ঞান হয়ে গেছি জানি না।
    জ্ঞান ফিরে, চোখ খোলার পর বুঝলাম, বিছানায় শুয়ে আছি। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ অনেকটাই বেশি। চোখে তখনও অন্ধকার দেখছি। আবার চোখ বুজলাম, কাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবটা আবার করে ভেবে মেলানোর চেষ্টা করলাম। এমন সময় কানের কাছে এসে কে যেন বলল, 'কাউকে বলিসনা সোনাই, ওটা আমিই ছিলাম'।
রচনাকাল : ৩০/৭/২০২০
© কিশলয় এবং শ্রেয়সী বিশ্বাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 3  China : 16  France : 3  Germany : 3  India : 112  Ireland : 7  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 3  Sweden : 12  
Ukraine : 6  United States : 135  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 3  China : 16  France : 3  
Germany : 3  India : 112  Ireland : 7  Russian Federat : 2  
Saudi Arabia : 3  Sweden : 12  Ukraine : 6  United States : 135  
© কিশলয় এবং শ্রেয়সী বিশ্বাস কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভালোবাসার টান by Shrayasi Biswas is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪১০৮৪
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী