টাকা ভর্তি ব্যাগটা হাতে নিয়ে অন্ধকার সুনসান রাস্তা দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে চললাম। আমার ছেলেটাকে কে যেন কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে। মুক্তিপণ হিসেবে দশ লাখ টাকা চেয়েছে।
একটা ঘুপচি বাড়ির কাছে পৌঁছে ফোন করলাম কিডন্যাপারকে। আমাকে বাইরে দাঁড়াতে বললো। তারপর সেই বাড়ির ভিতর থেকে মুখ ঢাকা অবস্থায় একজন ষন্ডামার্কা চেহারার লোক বেরিয়ে আসলো।
আচমকা পাশ থেকে তীব্র গর্জন শুনতে পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম এক বীভৎস চেহারার কদাকার আকৃতির একটা জন্তুকে যার সারা শরীর জুড়ে কেমন যেন লাল দগদগে হয়ে ফুলে-ফুলে আছে, আর সেই ফোলা জায়গাগুলো দিয়ে রস বেরোচ্ছে।
জন্তুটা গর্জন করতে করতে সেই ষন্ডামার্কা চেহারার লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পরলো, তারপর তার টুঁটি ছিঁড়ে লোকটাকে নিমেষের মধ্যে ধরাশায়ী করে ফেললো। তারপর জন্তুটা করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার যেদিক থেকে এসেছিল, সেদিকে চলে গেলো।
আমার হঠাৎ মনে পরলো মাসখানেক আগে একদিন রাতেরবেলায় একটা কুকুর প্রচন্ড বিরক্তিকরভাবে কাঁদছিলো। লোকে বলে রাত-বিরেতে কুকুরের কাঁদা নাকি ভালো না। তার উপর আমার ছেলেটাও সবে ঘুমিয়েছে। কুত্তার কান্নার চোটে ওর ঘুমটা না ভেঙে যায়। মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেল। সাথে সাথে গিজারটা অন করে এক মগ গরম জল নিয়ে বারান্দায় গেলাম। দেখি বারান্দার একটু দূরেই কুত্তাটা পিছনদিক করে বসে বসে মরাকান্না কাঁদছে। সাথে সাথে মগের গরম জলটা নিয়ে ছুঁড়ে দিলাম কুত্তাটার গায়ে। গরম জল গায়ে পরার সাথে সাথে এক গগনভেদী আর্তনাদ করে কুত্তাটা সেখান থেকে দৌড়ে ছুটে চলে গেল। আমি তারপর ঘরে ঢুকে গেলাম।
সকালবেলায় বাইরে বেরিয়ে দেখি এক জায়গায় জটলা হয়ে আছে কিছু মানুষের। ওখানে গিয়ে দেখলাম একটা বাচ্চা কুকুরকে কে যেন গাড়ি চাপা দিয়ে চলে গেছে। তার থ্যাতলানো বডিটা সেখানে পরে আছে।
সেদিনকের কথা ভেবে আমার ভীষণ কান্না পেয়ে গেলো।
(সমাপ্ত)
রচনাকাল : ২৫/৭/২০২০
© কিশলয় এবং শুভেন্দু ভৌমিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।