ব্ল্যাকমেইল
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : চৈতালি ধর বারিক
দেশ : India , শহর : বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগণা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , এপ্রিল
প্রকাশিত ১০ টি লেখনী ২৯ টি দেশ ব্যাপী ৮১৬০ জন পড়েছেন।
Barik Chaitali Dhar
#ব্ল্যাকমেইল 

টুংটাং করে হঠাৎ কয়েকটা মেসেজ ঢুকলো বিদিশার ফোনে। ঘুমটা ভেঙে গেল বিদিশার।ফোনের  নেটটা অফ করতে ভুলে গেছে আজ বিহান কে ঘুম পাড়ানোর তাড়াহুড়োয়। বিহান বিদিশার তিন বছরের ছেলে।খুব দুরন্ত হয়েছে আজকাল।  সংসার আর বিহানকে একা হাতে সামলাতে গিয়ে তাই একেবারে নাজেহাল বিদিশা। 
বিছানার পাশের টেবিলে রাখা জল খেয়ে চশমাটা পরল বিদিশা। ফোনটা হাতে নিয়ে নেটটা অফ করতে যাবে, দেখলো ঘড়িতে তখন প্রায় ১টা বাজে। এত রাতে মেসেজ?একটু ইতস্তত হয়ে বিদিশা ফোনের ইনবক্সটা চেক করে। দেখলেও বিপ্লবের মেসেজ।।। 
****************** 
বিপ্লব বিদিশার ফেসবুক ফ্রেন্ড। মাসখানেক আগে আলাপ। বিপ্লব তুহিনের(বিদিশার স্বামী )কমন ফ্রেন্ড। তাই দেখেই বিপ্লবের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে বিদিশা। কয়েকবার কথাও হয়েছিল বিপ্লবের সাথে বিদিশার। ওই বাড়িতে কে কে থাকে, কি করে, এসব নিয়ে আর কি। বেশিরভাগ বিহান কে নিয়েই কথাবার্তা হত তাদের মধ্যে। তবে এই বিদিশা একটা জিনিস খেয়াল করে বিপ্লব আজকাল বড্ড গায়ে পড়ে কথা বলতে চায়,সেটা ঠিক বিদিশার ভালো লাগত না। তাই সপ্তাহখানেক বিদিশা বিপ্লবের মেসেজের কোন রিপ্লাই দিত না । আজকাল আর ওদের মধ্যে কোনো কথা হতো না। 
এর মধ্যে এত রাতে বিদিশার ফোনে বিপ্লবের মেসেজ, "বিদিশা তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না.।আমার সাথে কেন তুমি কোন কথা বলছো না?এই কয়েক দিনে তোমায় খুব ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি যদি আমার সাথে কথা না বলো  আমি আত্মহত্যা করব"।।
এসব  কথা শুনে বিদিশা খুব ভয় পেয়ে যায়। তুহিনকে কি বলবে? না, এত রাতে কি বা বলবে! 
তুহিনের আবার খুব মাথাগরম তাই যা করতে হবে বিদিশা কেই করতে হবে।

বেডরুম থেকে লিভিংরুমে বেরিয়ে এসে বিদিশা বিপ্লব কে রিপ্লাই দেয়, "কি বলছ এসব? আমি বিবাহিত, আর আমার হাসবেন্ড এসব কথা শুনলে কি হবে ভাবতে পারছো।দয়া করে আমায় আর এই ধরনের মেসেজ করবে না "।

ফোনটা  অফ করে শুতে যাবে আবার বিপ্লবের মেসেজ, না,তবে এবার কোনো text করে নি।পাঠালো কয়েকটা ছবি যা দেখে বিদিশার হাত পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়। সিলিং ফ্যান এ ওড়না বেঁধে বিপ্লব আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে সেরকম একটা ছবি তুলে পাঠায় বিদিশাকে।

"  কি করছো এটা, এরকম পাগলামির কোন মানেই হয়না। pls,এসব বন্ধ করো।। আচ্ছা, তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো। " বিদিশা মেসেজ পাঠালো।ভাবলো মাথা ঠান্ডা হলে  বিপ্লবকে সে বোঝাবে এটা পাগলামি ছাড়া আর কিছু না।।

***★************
বিহান, তুহিন আর তুহিনের বাবা-মা। এই নিয়ে বিদিশার সংসার। তুহিনের সঙ্গে বিদিশার সাত বছরের সম্পর্ক। দু'বছরের প্রেম আর পাঁচ  বছরের বিবাহিত জীবন। তুহিন ভীষণ সংসারী ছেলে। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে। বিহান জন্মানোর পর থেকে আরও  কর্তব্যপরায়ন হয়ে ওঠে। সুখের সংসারে বিপ্লব যেন ঝোড়ো হাওয়া। 

প্রায় দিন সে বিদিশা কে ভয় দেখাতো আত্মহত্যার। বিদিশাও সেই ফাদে পা দিয়ে ফেলে। বিপ্লবের সব কথা শুনতে বাধ্য হত পাছে বিপ্লব আত্মহত্যা করে। অনেক বুঝিয়েও লাভ হয় নি।। 

************
আজকাল বিদিশা একটু বেশি ফোনে ব্যস্ত থাকে। তুহিন সেটা খেয়াল করে। জিজ্ঞেস করলেই বলে বন্ধুদের সাথে কথা বলছি।এই নিয়ে মাঝে মধ্যে অশান্তিও হয় আজকাল।। এতসব অশান্তি সামলাতে পারছে না আর বিদিশা। একদিন বিপ্লব কে খুব কড়া ভাষায় বলে "দেখো বিপ্লব তোমার সাথে আর যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। আমায় আর বিরক্ত করবে না।" বিপ্লবকে সেদিন fb তে ব্লক করে বিদিশা।কয়েকদিন পর বিদিশার ফোনে একটা অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজ আসে, 
কয়েকটা স্কিনসট(বিদিশা আর বিপ্লবের chat list)  আর তার  কিছু অশালীন ছবি। কি ভাবে পেল ছবি ভাবতে ভাবতে আসে আরও কয়েকটা মেসেজ,"তোমার হাসবেন্ড কে এইসব দেখালে কি হবে ভাবতে পারছো??"

বিদিশার শিরদাঁড়া ঠান্ডা হয়ে যায়। তুহিন সত্যিই তো কিছু জানে না এসবের। আর তাছাড়া বিদিশা যে নির্দোষ সেটাই বা প্রমান করবে কিভাবে? বিদিশা খুব  সংসারী,  বড় ভালো মেয়ে। এইসব ঘটনা জানতে পারলে কেইবা ওকে বিশ্বাস করবে। ভাবতে ভাবতে বিদিশার চোখ থেকে তখন জল পড়ছে। সে শুধু একজনের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলো সেদিন, এখন সেটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়ালো।। সেই ভুলেরই মাশুল দিতে বিদিশা আরো একটা ভুল করতে গেল। সে ঠিক করে এইসব জানাজানি হওয়ার আগেই সে  নিজেকে শেষ করে দেবে।।। 

রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েছে। বিহান কেও খুব আদর করে  বিদিশা ঘুম পাড়িয়ে দিল। আজ খুব অন্যমনস্ক লাগছিল বিদিশাকে। তুহিন সেটা খেয়াল করে। 

সবাই ঘুমিয়ে পরার পর বিদিশা ঘর ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় ছাদের দিকে। হাতে ছিল একটা ওড়না। চিলেকোঠায় গিয়ে ওড়নাটাকে শক্ত করে বেঁধে ফেলে বিদিশা। পাশে রাখা একটা টুলের ওপর উঠে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলতে যাবে, এমন সময় আর্তনাত তুহিনের......... "কি করছো বিদিশা! "
বিদিশা তখন ছটফট করে ঝুলছে আর সামনে দেখছে তুহিন  দৌড়াচ্ছে তাকে বাঁচাতে। 

*************
তুহিন সেদিন বিদিশাকে বাঁচিয়ে নিয়েছিল। আর বেঁচে গিয়েছিল একটা ফুটফুটে ছেলের ভবিষ্যৎ।। 
শেষমেষ সব কথা তুহিন কে জানিয়েছিল বিদিশা। তুহিন বলেই হয়তো সেই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পেরেছিল সেদিন বিদিশাকে।। সংসারটা শেষ হতে হতে বেঁচে গিয়েছিল ওদের।। 

ব্ল্যাকমেইল................। বড় সাংঘাতিক শব্দটা।সব পুরুষ তো আর তুহিন না। আমাদের আনাচে-কানাচে আজ অনেক বিদিশা আর অনেক বিপ্লব। তাই খুব সাবধান।। সোশ্যাল মিডিয়ার সাংঘাতিক এই ফাঁদে পা দেবেন না। ভয় না পেয়ে সামনে আসুন।যাতে বিপ্লবের মত কিছু মানুষ সাহস না পায় আরেকটা বিদিশার জীবন নষ্ট করার।। শাস্তি পাক এরকম ব্ল্যাকমেইলাররা।।

✍চৈতালি ধর বারিক 


রচনাকাল : ১৯/৭/২০২০
© কিশলয় এবং চৈতালি ধর বারিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 21  Germany : 1  India : 98  Ireland : 3  Japan : 1  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  Ukraine : 3  United States : 98  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 21  Germany : 1  India : 98  
Ireland : 3  Japan : 1  Russian Federat : 3  Saudi Arabia : 3  
Ukraine : 3  United States : 98  
লেখিকা পরিচিতি -
                          চৈতালি ধর বারিক ২৬শে মার্চ দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বজবজে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ। এর পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। কবিতা লেখা তাঁর ভীষণ প্রিয়, এর সাথে সাথে তিনি আবৃত্তিও করেন।
তিনি নানান অনলাইন পত্র-পত্রিকাতেও লেখেন। 
                          
© কিশলয় এবং চৈতালি ধর বারিক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ব্ল্যাকমেইল by Barik Chaitali Dhar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৮৮৮২
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী