সম্পর্ক
আনুমানিক পঠন সময় : ৬ মিনিট

লেখিকা : লাজলী কর
দেশ : India , শহর : Barasat

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুলাই
প্রকাশিত ৩ টি লেখনী ২০ টি দেশ ব্যাপী ১৭২৮ জন পড়েছেন।
Lazlee kar
"আপনি 
কি ঋষি বসু? একবার থানায় আসতে হবে।"
--এখন? না মানে কেনো? 
" আপনি এসে কথা বলুন" -- গুরুগম্ভীর অফিসারের এই আদেশে অবাক হলো ঋষি

ঝিলি দিন দিন যা শুরু করেছে তাতে কতদিন এই সম্পর্ক টা থাকবে কে জানে। কথায় কথায় ঝগড়া । ভালো কথা বললেও ঝিলি উল্টো মানে করছে ।
এইতো সেদিন ঋষি বললো -" এই ঝিল নীল সালোয়ার টা পড়িস না। ভালো লাগছে না"

-- " কি? তার মানে তুই বলতে চাইছিস নীল রঙে আমাকে মানায় না? আমার পছন্দের রং এটা তুই এটাই পড়তে বারন করছিস? ওয়াও অসাধারণ" 
ব্যাস এটা দিয়ে শুরু হয়ে কোথাকার জল যে কোথায় গড়িয়ে যায় খেয়াল থাকে না ঝিলির।
ঋষির সেদিন ঝিল কে হলুদ রঙে দেখতে চেয়েছিলো । ঝিলকে নীলে যেমন মানায় হলুদেও তাই ।কিন্তু ঝিল বুঝলোই না ঋষি ওদিনই শুধু ওকে নীল রং পরতে  বারণ করেছিল ...

নতুন বছরের প্রথম দিন বেরিয়েও একই ঘটনা....
--" কি হলো ঋষি এখনো আসছে না কেন? আশ্চর্য !! এতক্ষন দাঁড়িয়ে আছি যদি কোনো সেন্স থাকে ওর " 
-- " এই ঝিল sorry আমার একটা খুব ভুল হয়ে গেছে"
--" হোয়াট?  ভুল? আমি লাস্ট 30 min ধরে এখানে দাঁড়িয়ে। তোর ফোন কি করেছিস?"এই তো হাতেই ফোন । তাহলে নট রিচেবেল বলছে কেন?"
--" আরে শোন একটু থামবি তবে তো বলবো। আমি নতুন সিম নিয়েছি ভেবেছিলাম তোকে এখানে এসে ফোন করে চমকে দেবো ।কিন্ত দেখ না একদম নেটওয়ার্ক নেই"

---" কি??? নতুন সিম নিয়েছিস তবু আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করিসনি? তোর একবারও মনে হলোনা আমি দাঁড়িয়ে থাকবো?আমার কোনো আর্জেন্ট দরকার হতে পারে তোকে? এরকম surprise এর না কোনো দরকার নেই। ডিসগাস্টিং " 

ঝিলের রাগ টা খুব বেশি । একবার রেগে গেলে যাতা কথা বলে দেয় ।মানে রনচন্ডীর আর এক রূপ বলা যেতে পারে। আবার রাগ গলে জল হতেও বেশি সময় লাগে না। ওর মা নেই। বাবার  আদরে আদরে বাদর মেয়ে একটা ।
ঠান্ডা মাথার ঋষি সব কিছু খুব ভালো হ্যান্ডেল করতে পারে। সহজে রাগে না।কিন্ত একবার রাগলে সে রাগ বজ্রকঠিন হয়ে যায়।

ঋষির অফিস কলিগ সুজাতা । মেয়েটা বেশ ভালো আর খেতে খুব ভালোবাসে। নানারকম রান্না করে অফিসেও নিয়ে আসে । একদিন চ্যাটে সুজাতা ওকে জিগ্যেস করেছিলো " সুজি খেতে কেমন লাগে? আমি একদম ভালো খাইনা" 

ঋষি  রিপ্লাই এ লিখেছিল" i love suji "

সুজির যে কোনো আইটেম ঋষির দারুন প্রিয় । 

শুধু সেই মেসেজ টা দেখে ঝিলের বোম ফাটানো প্রতিক্রিয়া । ও ভেবেছে সুজাতা কেই ঋষি সুজি লিখেছে। ঋষির তো অন্য মেয়েকে পছন্দ , ঝিল যে এখন পুরোনো হয়ে গেছে ,ঝিলের আর কি প্রয়োজন .....এসব নিয়ে তর্ক বিতর্ক থেকে বেসামাল ঝগড়া ।

 ঋষির ও সেদিন মাথার ঠিক ছিলো না বলে দিয়েছিল দুম করে
" তোর মত গার্লফ্রেন্ড থাকার চেয়ে পরকীয়া করা ভালো? এত ভালোবাসি তোকে?তবু সন্দেহ তোর?কি চাস তুই ? সারাক্ষন তোর সাথে চ্যাট করি?তুই যদি ভাবিস আমাকে তোর ভেড়া করে রাখবি সেটা কোনোদিন হবে না। আমার প্রাইভেসি নেই না? একদম কোনো কথা বলবিনা চলে যা আমার সামনে থেকে"

 ঝিল পুরো থমকে গেছিলো । শুধু সেদিন নয় পরপর চারদিন কোনো যোগাযোগ করেনি ওর সাথে। ঝিলের মেসেজে ঘুম ভাঙা ঋষির রোজকার অভ্যাস। এই চারদিন কেমন যেন কি একটা নেই কি একটা নেই মনে হয়েছে । হোক কষ্ট  মনে তবুও ওকেও বোঝানো দরকার ওর রোজরোজ মেজাজ সহ্য করার জন্য ঋষি বসে নেই। বুঝুক একটু ।কস্ট পাক। প্রেমে একে অপরকে কষ্ট দিয়ে একটা যেন আলাদা শান্তি ।কেমন যেন বদলা নেওয়া নেওয়া ফিল হয়। কিন্তু ওই কদিন ঝিলকে সোশ্যাল মিডিয়া তেও পায়নি ঋষি।অন্তত অন আছে কিনা বোঝা যেতো। সব কিছুই বন্ধ করে দিয়েছিলো ঝিল। 

হটাৎ করে রেগে যাওয়ার এই বদ অভ্যাসটা কিছুতেই ছাড়তে পারছে না ঝিল। কত ভেবেছে হুট করে রাগবে না কিন্তু সেই কোনো না কোনো বার এতো বেশি রিয়াক্ট করে ফেলে আসে পাশের লোকজনের সহ্য করার সীমা পেরিয়ে যায়। কিন্ত ঋষি সব সহ্য করে। ওর ছোট খাটো বড় মাঝারি সব রাগ অভিমান চুপ করে শোনে ।কিন্তু ও নিজেও তো মানুষ ।কত সহ্য করবে বেচারা । খুব খারাপ লাগে ঝিলের ওকে ওতো কটু কথা বলার পর । সেদিনের দোষটা ঝিলের ই। আসলে সকাল থেকে কারেন্ট ছিলোনা ,কাজের লোক ও আসেনি তার মধ্যে বাবার জ্বর  । ঘর সামলে দেখা করতে এসে ঋষির ফোনে এমন মেসেজ দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি ।যা নয় তাই ঋষি কে বলে দিলো।একদম উচিত হয়নি বলা। কিন্তু ঋষি ও কি করে বলতে পারলো এভাবে? 
অভিমানের পাহাড় গলতে সময় লেগেছিলো চার দিন। যতই হোক ঝগড়া...নিজেদের প্রতিদিনের অভ্যাসের বদল কি কেউ বেশিদিন সহ্য করতে পারে?

" এখনো রাগ করে আছিস বল?ঋষি প্লিজ কথা বল।বলছি তো আমার ভুল। তুই সব সময় আমাকে সহ্য করে নিস । তোর মত কেউ ভালোবাসবে না আমায় । ওইই  ওই ওই ওই ...."

" i love u । পাগলী কত কষ্ট হয়েছে আমার জানিস? কেন করিস এসব । আমাকে বিশ্বাস করিস না? তোকে আমি কোনোদিন ঠকাতে পারবো না। আর sorry তো আমার ও বলা উচিৎ "
" আচ্ছা সেসব পরে হবে আগে দেখা কর আজ। চারদিন তোকে ছাড়া । প্লিজ হাতিবাগান আমিনিয়া তে দেখা করি আজ সন্ধ্যে বেলা?"

---" ok done । সাত টায়।" বললো ঋষি।


কম্পিউটারটা তখন shut down করছে ঋষি তখনই  ফোনটা আসে। 
ওলা টা জ্যামে শ্যামবাজার মোড়ের কিছু আগে দাঁড়িয়ে কিন্তু মোড়ে ওতো বড় জটলা দেখে বারবার ঝিলি কে ফোন করার চেষ্টা করে ঋষি। ধুর কেন নট রিচেবেল বলছে? তাহলে কি ওর মতোই নতুন সিম নিয়ে surprise দেবে কিছু? মেয়েটার মাথায় কখন যে কি হয়। 

" নাহ নাহ নাহ এটা ঝিল না অন্য কেউ।অফিসার এটা ঝিল কি করে হয়?ঋষির চিৎকারে থানার সামনে টা যেন কেঁপে যায়"
-- মিস্টার ঋষি বসু এই নম্বর থেকে লাস্ট কল আপনাকেই করা হয়েছিল তাই আমরা আপনাকে জানাই । আপনার কে হয় উনি?ওনার নাম টা কি ?হসপিটালে তো বলতে হবে। 

" নাহ উনি ঋষির কেউ না। এতো সুন্দর মিষ্টি চাঁদ পানা মুখটা থেঁতলে গেছে চেনা যাচ্ছেনা ঋষির ঝিলকে । এই ঝিল ঋষির কেউ হয়না কেউ না কেউ না কেউ না।


চারদিন যেন চার বছরের সমান ছিল। দুজনেরই পছন্দের বিরিয়ানী দিয়ে রাগ কমার একটা সেলিব্রেশন হয়তো হতো । কেমন লাগবে ঝিলকে চারদিন পর দেখতে। ধুস কেমন আবার একই রকম মিষ্টি । মনকাড়া হাসি টা দেখলেই তো ঋষি শেষ। এত সুন্দর কেউ হতে পারে? ঝিল যখন মুখ ভ্যাঙ্গায় তখনও ওকে হেভি কিউট লাগে । ওর চোখ মুখের নানা রকম অঙ্গ ভঙ্গি গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে হা হা করে হেসে ওঠে ঋষি নিজেই জানে না। ঝিলের ওই হাসি , ছোট্ট টিপ, কানে ঝুমকো , ক্ষণে ক্ষণে রাগ , চিৎকার করা, মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়া, কোনো কিছুই ফেরত পাবে না ও। 
চারদিন পরে দেখা করতে আসার সময় শ্যামবাজারে তাহাহুড়ো করে রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা বড় ট্রাক এসে.......। 
ঝিলাম সেন ..ঋষির আদরের ঝিল বা ঝিলি ।

জীবন বড় অদ্ভুত যখন যে জিনিসটা কাছে থাকে তার ভালো দিকটাকে আমরা খুব ভালোবাসে ফেলি। খারাপ দিকটা কিছুতেই মানতে পারিনা। ফেলে আসা সব কিছুই খুব মূল্যবান হয়ে যায় আমাদের কাছে। আজ ঋষি দেখতে চায় ঝিলের রাগ অভিমান। ওর সব  অভিযোগ শুনবে ও। একবার ঝিল আসুক সামনে একবার.....।একবার ওর গলা জড়িয়ে বলুক "ওইইইই...এই দেখ আমি.........."

 জমাট বাঁধা কান্না টা দলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে থাকে ঋষির। শত রাগ অভিযোগ করলেও ওরা কেউ কাউকে ঘেন্না করেনি । একটা তীব্র টান ছিল...ঋষি জানতো মুখে যাই বলুক  ঝিল ওকে সম্মান করে শ্রদ্ধা করে...ক্ষনিকের জন্য অসহ্য লাগতো ঝিলের ব্যবহার কিন্তু মিটে যেত সব অভিমান ......।

কিন্তু আজ ও চারদিনের অপেক্ষা আর ফুরোয় না.. হয়তো ফুরোবেও না....


ওদের নিজেদের "গল্প"টা লিখতে লিখতে হাত অবশ হয়ে গেল ঋষির...তুচ্ছ সব স্মৃতিও আজ টাটকা ...মনে হচ্ছে এই তো সেদিনেরই ঘটনা... বারবার চেষ্টা করেছে ও এই গল্পের "happy ending" করতে কিন্তু পারেনি আসলে "মিথ্যে" দিয়ে সত্যি কে আড়াল করা যায়না ....লেখার   আরো অনেক কিছু ছিল কিন্তু স্মৃতি যে অনেক সময় কলম কে থামিয়েও দেয় ...।




রচনাকাল : ১৯/৭/২০২০
© কিশলয় এবং লাজলী কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 5  China : 8  Europe : 1  France : 6  Germany : 1  India : 101  Ireland : 4  Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 7  
Sweden : 13  Ukraine : 6  United States : 148  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Australia : 1  Canada : 5  China : 8  Europe : 1  
France : 6  Germany : 1  India : 101  Ireland : 4  
Russian Federat : 2  Saudi Arabia : 7  Sweden : 13  Ukraine : 6  
United States : 148  
© কিশলয় এবং লাজলী কর কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সম্পর্ক by Lazlee kar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪০৬৯৬
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী