রক্ত গোলাপ (কার্গিল বিজয় দিবস)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখিকা : যুথিকা দেবনাথ
দেশ : India , শহর : মালদা

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , মে
প্রকাশিত ৩৮ টি লেখনী ৩৩ টি দেশ ব্যাপী ১৯৫৪৮ জন পড়েছেন।
সেদিন ছিল রজত ও নন্দিনীর প্রথম বিবাহবার্ষিকী । বাড়ীর অন্য সবাই আনন্দে মেতে থাকলে ও  নন্দিনী ছিল মনমরা,বিষন্ন কারণ রজত সেই শুভ দিনে তার কাছে উপস্থিত থাকতে পারেনি । বিয়ের মাসখানেক পরেই তার ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় সে কর্মক্ষেত্রে ফিরে যায় ।নিত্য চিঠি পত্রের আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রেমপর্ব সমুদ্র তরঙ্গের মত বয়ে চলে । নন্দিনী ও রজতের এই বেদনাবিধুর দিনগুলো , তাদের অব্যক্ত মনের কথাগুলো বাঙ্ময় হয়ে উঠত তাদের লেখনীতে । সুখ, দুঃক্ষ,স্বপ্ন, আনন্দ -সব একে অপরকে প্রকাশ করে মনের ভার কিছুটা হালকা করত ।
এইভাবে প্রতীক্ষার আশায় জগদ্দল পাথরের মতো একটি
 একটি দিন সরিয়ে মিলনের তৃষায় চাতকের মতো চেয়ে থাকত কবে রজত তার কাছে ফিরে আসবে।কবে তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে একে অপরের প্রাণ মন সব উজাড় করে দেবে।
এইভাবে প্রতীক্ষায় থেকে বিবাহবার্ষিকীর দিনে নন্দিনীর হাতে পৌঁছাল আবেগ অনুভূতি ভালোবাসার মোড়কে বাঁধা রজতের লেখা শেষ চিঠি:-----
প্রিয়তমা,  আজ এই প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে আমি তোমার কাছে উপস্থিত থাকতে না পেরে খুব ই দুঃখিত। তুমি  মন খারাপ কোরোনা। কাশ্মীরে কার্গিল সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। আমি একজন সৈনিক।তাই দেশের কাজের স্বার্থে ডাক আসলেই রণাঙ্গনে নামতে হবে। তুমি খুব ভালো থেকো। আমার জন্য চিন্তা কোরো না। যুদ্ধ থামলেই যেদিন আমি তোমার কাছে ফিরে যাব সেদিন তোমার জন্য নিয়ে যাব তোমার প্রিয় একগুচ্ছ লাল গোলাপ। আমাদের সজ্জিত বিজন ঘরে সেটি শোভা পাবে তোমার ভালবাসার ফুলদানিতে।সৌরভে ঘরটি সুরভিত হয়ে উঠবে। সেই রাতটি হবে শুধু ই তোমার আর আমার। তোমার পরনে থাকবে লাল বেনারসি, কপালে সিঁদুর টিপ,সিমন্ত ভরা সিঁদুর,গায়ে ফুলের গহনা, বিছানায় ছড়ানো রজনীগন্ধার পাপড়ি। ঘরের মাঝে থাকবে শুধু কয়েকটি জ্বলন্ত প্রেমের মোমবাতি।স্বল্প আলোকে আমাদের একান্ত নিশীথ রাতখানি মোহিনী রূপী হয়ে উঠবে।শুধু দুজনের হাতে হাত। দুচোখের চাহনিতে ঝরে পড়া বিরহ বেদনা অতৃপ্ত কামনা বাসনার অশ্রু মুছিয়ে তোমায় সমস্ত ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে ভরিয়ে তুলবো। বিবাহ বার্ষিকীর  অতৃপ্ত  , বাসনার মূহূর্তগুলো মুছিয়ে সুখে আনন্দে তোমায় ভরিয়ে রাখবো সারাজীবন।এই অপেক্ষায় রইলাম।     ইতি
                                 তোমারিই  প্রিয় :-
রজতের লেখা সেই স্বপ্নগুলো দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করে নন্দিনী চিঠিখানি বার বার চোখের সামনে মেলে ধরে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লো ।পরের দিন সকালেই বয়ে এল সেই দুঃসহ, মর্মান্তিক দুঃস্ংবাদ । তার ভালবাসা তাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে, যেখানথেকে রজত আর কোনোদিনই তার কাছ ফিরে আসবে না । রণক্ষেত্রে শত্রুর গুলিতে তার বক্ষ ঝাঁঝরা হয়ে গেছে । দেশমাতৃকার সম্মান রক্ষার্থে তার বুকের তাজা রক্ত   অঞ্জলি দিয়ে সে চির বিদায় নিয়েছে ।এক নিমেষেই নন্দিনীর চোখে নেমে এল ঘন কালো অন্ধকার। তার জীবনের সব আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । তার স্বপ্নের সেই একগুচ্ছ লাল গোলাপ যেন রজতের বুকের রক্তে স্নাত হয়ে রক্ত গোলাপ হয়ে গেল, ধীরে ধীরে সেগুলি শুকিয়ে কালো বিবর্ণ হয়ে তার মনের মাঝে উঁকি মারতে লাগলো । মোমবাতির আলোগুলো যেন দপ করে নিভে গিয়ে তার স্বপ্নমাখা রাতটিকে কুহকিনীতে রুপান্তরিত করল । রজতের স্বপ্নের জাল বোনা সাজানো ঘরটা তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ল । মনের আয়নায় দেখতে পেল রজতের পরানো কপালের সিঁদুরের টিপটি মূহূর্তে পুড়ে যেন কালো খাঁক হয়ে গেল । রজনীগন্ধার পাপড়ি পঁচা গন্ধে তার নি্ঃশ্বাস যেন ভারী বোধ হল । সুখের স্বপ্নগুলো তার কাছে এক ভয়ানক দূঃস্বপ্নে পরিনত হল । নতুন জীবনের শুরুতেই কয়েক পদক্ষেপ চলার পরেই নন্দিনীর জীবনে নেমে এল এই চরম বিপর্যয় , শুরুতেই শেষ হয়ে গেল তার দাম্পত্য জীবন। শোকাহত নন্দিনীর অবসন্ন দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল । উত্থান শক্তিও যেন সে হারিয়ে ফেলল। কয়েক মূহুর্ত কেটে যাওয়ার পরে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে মনে মনে ভাবল, সে একজন বীর সৈনিকের অর্ধাঙ্গিনী,তা‌র স্বামী দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। তাকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। এইভেবে সে তার সমস্ত আবেগ, অনুভূতি, অতৃপ্ত বাসনা, চাওয়া পাওয়া সবকিছুকে বুকের মধ্যে পাথর চাপা দিয়ে মনোবল সঞ্চয় করে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো। কম্পিত কন্ঠে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে উঠলো,"হে বীর সৈনিক,অমর রহে! তোমাকে শতকোটি সেলাম"। তুমি আজ শুধু আমারই  নও। প্রতিটি ভারতবাসীর মনে তুমি চিরভাস্বর, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নন্দিনীর এই দৃপ্ত কন্ঠধ্বনি আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়ে সমস্ত ভারতবাসীর নিকট পৌঁছে গেল।
রজতের মত আরো অনেক বীর সৈনিক এই কার্গিল যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, অধিকাংশ বীর সৈনিক জয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন। তাঁরা সকলেই সমগ্ৰ ভারতবাসীর গর্ব, ভারতমাতার অহংকার। নন্দিনীর মতোই সমগ্ৰ ভারতবাসী প্রতি বছর এই গৌরবময় কার্গিল বিজয় দিবসকে স্মরণ করে এই বীর সৈনিকদের জানায় আন্তরিক কুর্ণিশ ও সেলাম।
শত দুঃখ, বেদনার মাঝেও এই দিনটিতে নন্দিনীর বুক গর্বে ভরে ওঠে।


রচনাকাল : ১১/৭/২০২০
© কিশলয় এবং যুথিকা দেবনাথ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 12  France : 5  Germany : 2  India : 84  Romania : 1  Russian Federat : 7  Saudi Arabia : 7  Sweden : 12  Ukraine : 4  
United States : 82  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 12  France : 5  Germany : 2  
India : 84  Romania : 1  Russian Federat : 7  Saudi Arabia : 7  
Sweden : 12  Ukraine : 4  United States : 82  
লেখিকা পরিচিতি -
                          শ্রীমতি যুথিকা দেবনাথ একজন গৃহবধূ। জন্ম ৯ ই জুলাই অধুনা বিহারের কাটিহার শহরে। পিতার কর্মসূত্রে পরবর্তীতে মালদহে বসবাস। শিক্ষা জীবন সম্পূর্ণ মালদহ মহাবিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনে। বিবাহ সূত্রে বর্তমানে দমদম ক্যান্টনমেন্টে স্থায়ীভাবে বসবাস।
       ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি উনি গীটারেও শিক্ষা লাভ করেছেন। স্কুল জীবনে কবিগুরুর কিছু লেখনীপাঠ থেকে সাহিত্যানুরাগের  জন্ম। কলেজ জীবনে প্রবেশের পর কিছু কবিতা ও গল্প রচনা দিয়ে লেখালেখি শুরু।মে,২০২০ থেকে কিশলয় ই-পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখিকা। 
                          
© কিশলয় এবং যুথিকা দেবনাথ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
রক্ত গোলাপ (কার্গিল বিজয় দিবস) by Juthika Debnath is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫৪১০১০
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী