ঠক! ঠক! ঠুক! ঠুক!
গভীর রাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বলে উঠলাম, দড়জায় ধাক্কা দিচ্ছে কে? উত্তরে কিন্তু আর সেই ছোট বেলার চেনা উক্তি টা এল না।
-“ কেউ না বাতাস”।
পরিবর্তে যা শুনলাম , শুনে চোখ র বুজে রাখতে পারলাম না। দরজার ওপাস থেকে এক মহিলা কণ্ঠ ভেসে এল,- “বাবু”।
বুক টা কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো। খুব চেনা এই স্বর। হ্যাঁ , সে ই।
এ আমি কাকে দেখছি? নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা। ছলছল চোখ এ নিকট থেকে নিকটবর্তী হতে লাগলো। আর আমি অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলাম, এই ভেবে যে আমি জীবিত না মৃত?
আবার সেই চেনা স্বর, “ হ্যাঁ বাবু, আমি এসেছি”।
প্রতিটা মানুষের জীবনে একটা সময় আসে যখন সে নূতন কিছু উপলব্ধি করে। আজ আমি করলাম , সেটা হল আনন্দাশ্রু। আজ যে সে ফিরে এসেছে।
এক অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে, আর আমি আঘোরে বলে চলেছি না বলা অনেক কথা , শত চেষ্টা করেও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারলাম্ না।
মনে পরে গেল সেই রাত, বহুদিন আগে রাতের আঁধারে হঠাৎ করেই সে হারিয়ে গিয়েছিল, শান্ত হয়ে গিয়েছিল নদীর স্রোত।
চিঠি লিখতে পারিনি কারন কোন ঠিকানা ছিলনা, কিন্তু রাত জাগা পাখি হয়ে প্রতিটা রাত অপেক্ষা করেছি।
সময় চলে যায়, চোখে ক্লান্তি আসে,
ডিঙির থেকে ডিঙি নদীর জলে ভেসে যায়।
ওপারের হাতছানি না থাকা সত্ত্বেও হৃদয় আজও ডেকে চলে , সেদিন রাতের হারিয়ে যাওয়া চরিত্র টা-কে।
আর তাই হয়ত বহু প্রতিক্ষার পর সেই চেনা স্বর শুনতে পেলাম, ফিরে পেলাম সেদিন রাতের হারিয়ে যাওয়া চরিত্র টা কে।
চারিদিক জুড়ে এক গভীর নিস্তবদ্তা। আমি ব্যাস্ত হয়ে উঠলাম সেই পুরানো টুকরো গুলি আবার কুড়িয়ে নিয়ে সাজাতে ,সাজাতে সাজাতে ভেসে গেলাম এক অচেনা আবেগে।
নিস্তবদ্তা ভেঙ্গে হঠাৎ ই আবার সেই চেনা স্বর আমকে বলল – “ আমি আসি তাহলে, তুমি ভাল থেকো। সেইবার না বলে যাওয়ায় ফিরতে হয়েছিল! তাই.........।
আমি চিৎকার করে উঠলাম বাবু............।।
ঘুম টা সত্যি এবার ভেঙ্গে গেল, বুঝলাম যে ঘুম তো আমার এই ভাঙল । তখন তো ভেঙ্গেছিল স্বপ্নরাজ্যে যাবার জন্য।
..........................অঞ্জন
রচনাকাল : ৬/৭/২০২০
© কিশলয় এবং অঞ্জন ব্যানার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।