দৈত্য ও এক বালক
(গ্রীম ভাইদের রূপকথা)
মূল রচনা-Jacob Ludwig Karl Grimm and
Wilhelm Carl Grimm
অনুবাদ-দেবমাল্য মুখোপাধ্যায়
(মূল গল্পটি সম্পূর্ণ লেখেন নি লেখক দ্বয়। তাই আমি এই গল্পটির শেষে আরেকটু যোগ করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে)।
অনেকদিন আগের কথা৷ এক গ্রামে বাস করতো এক বৃদ্ধ কাঠুরিয়া৷ সে বনে কাঠ কাটতো৷ সারাদিন কাঠ কেটে, তা বাজারে বিক্রি করে যে কয় টাকা পেতো, তা দিয়েই চলতো তার সংসার৷ সংসার বলতে একটি মাত্র ছোট্ট ছেলে৷
সংসার খরচের টাকা থেকে একটু একটু করে বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমালো কাঠুরিয়া৷ তারপর এক সকালে সে টাকা ছেলেটির হাতে দিয়ে বললো,
: তোমার জন্য আমি এই কয়েকটি টাকা জমিয়েছি৷ তুমি আমার এক মাত্র সন্তান৷ তোমাকে স্কুলে যেতে হবে৷ চলো তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিই৷ তোমার পড়া লেখার পর আমি যখন খুব বৃদ্ধ হয়ে যাবো, যখন কাজ করতে পারবো না, তখন তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে৷ বৃদ্ধ বয়সে তো আর কুঠার চালাতে পারবো না৷ ঘরে আগুনের পাশে বসে থাকা ছাড়া আমার আর কি করার আছে বলো?
ছেলেটি স্কুলে ভর্তি হলো৷ পড়ালেখা করতে থাকলো খুব মনোযোগ দিয়ে৷ স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হবার আগে সে গেলো তাদের গ্রামে৷
আহা... তাদের গ্রামটি কত সুন্দর৷ তিন দিকে পাহাড়, একদিকে বন৷ ঘন বন৷ কত গাছ সেখানে৷
ছেলেকে দেখে বাবা বললো
: দেখো আমি তোমার জন্য আর কিছু করতে পারবো না৷ পেট চালাবার জন্য রুটি কেনার জন্য যতটুকু কাজ করা দরকার তার বেশী আমি কাজ করতে পারি না৷
বাবার অবস্থা দেখে ছেলেটি বললো
: দেখো বাবা আমাকে নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই৷ খোদা চাইলে আমাদের সবচেয়ে ভালো কিছু হতে পারে৷
বাবা ছেলেটির দিকে তাকালেন৷ এই ক বছরে তার ছেলেটি বেশ বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে৷
পরদিন বাবা যখন কাঠ কাটতে বেরুবে, তখন ছেলেটি বললো
: বাবা আমিও তোমার সঙ্গে যেতে চাই৷ আমিও কাঠ কাটবো৷
: তযতে পারো৷ কিন্তু এ কাজটি তোমার জন্য খুবই কষ্টের হবে৷ তুমি এ ধরনের পরিশ্রমে অভ্যস্ত নও৷ আমাদের বাড়িতে তো আর একটা কুঠার নেই৷ নতুন করে কেনার মত টাকাও নেই৷ ছেলেটি বললো
: এটা কোন সমস্যা নয়৷ আমরা আমাদের প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটি কুড়াল ধার করতে পারি৷ আমি জানি কাঠ বিক্রি করে আমরা নতুন একটি কুড়াল কিনতে পারবো৷
বাবা পাশের বাড়ি থেকে কুড়ালটি ধার করে আনলো৷ দুজন মিলে চলে গেলো বনে৷ সেখানে নানা রকম পাখি৷ কিচির মিচির শব্দ৷ কত রকমের গাছ, বুনো নানা জাতের ছোট গাছ মাটিতে, শ্যাওলাও আছে৷ বাবা গাছের ডাল কাটতে শুরু করলো৷ কিন্তু ছেলেটির জন্য এ কাজ মোটেও সহজ ছিল না৷
সূর্য যখন মাথার ঠিক উপরে তখন বৃদ্ধ লোকটি বললো
চলো আমরা একটু বিশ্রাম নিই৷ দুপুরের খাবারও খাওয়া দরকার৷
ছেলেটি বললো
: বাবা তুমি বিশ্রাম নাও৷ আমি বরং এ দিকটা ঘুরে দেখি৷ এখানে বেশ কয়েকটা পাখির বাসা দেখেছি৷
বাবা বললো
: বোকা ছেলে৷ এভাবে ঘুরলে তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে৷ কাজ করতে পারবে না৷ কাজ না করলে নতুন কুঠার কেনাও যাবে না৷
বাবার কথায় একটু হাসি দিয়ে সে বন দেখতে বের হলো৷ একটা পুরোনো ওক গাছে যখন সে উটলো, তখন গম গম আওয়াজ শুনলো৷ আকুতি৷
আমাকে বাচাও, আমাকে উদ্ধার করো৷
কে বলছে এ কথা প্রথমে বেশ ভয় পেয়ে গেলো ছেলেটি৷ বললো
: কোথায় তুমি?
: আমি ওক গাছের নীচে৷ শিকঁড়ের কাছে৷
ছেলেটি মাটি খুড়তে লাগলো৷ ওক গাছের বড় একটি শিকঁড়ের নীচে পেয়ে গেলো একটি নীল বোতল৷ সেখান থেকেই আসছে শব্দ৷ একটু কথাবার্তা বলে বোতলের ছিপি খুলে দিলো৷ তখনি ধোয়া বের হতে থাকলো৷ আর সেই ধোয়া এক সময় বিশাল দৈত্যর আকার ধারণ করলো৷ কালো কুচকুচে দৈত্য বের হয়েই সে বললো
: আমি মুক্তি পেয়েছি৷ এবার আমি তোমার ঘাড় মটকাবো৷
ভয় পেলো না ছেলেটি৷ বুদ্ধি করে বললো
: আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না৷ তুমি এত বড় কিন্তু এই ছোট্ট বোতলের মধ্যে ঢুকলে কি করে৷ আমাকে দেখাবে৷ দৈত্যটি আবার যেই ঐ বোতলের মধ্যে ঢুকে বসলো ঠিক তখনি ছেলেটি বোতলের ছিপি বন্ধ করে ফেললো৷ ..........তারপর কি হলো । তখন সেই দৈত্য বার বার বলতে লাগল, ওহে বালক আমায় মুক্তি দাও। কিন্তু বালক কিছুতেই শুনল না। তখন দৈত্য বলল, যদি তুমি আমায় মুক্তি দাও। তাহলে আমি তোমায় অগাধ ঐশ্বর্যের মালিক করে দেব। যা দিয়ে তোমার পরের বংশধরেরা রাজার হালে থাকবে। বালক টি দৈত্যের কথামত তাঁকে মুক্ত করে দিল। আর দৈত্য তাকে অনেক অনেক ধনসম্পদ এর মালিক করে দিল। সেই থেকে গরীব কাঠুরিয়া র দৈন্যদশা ঘুচল।
আমার কথাটি ফুরালো
নোটে গাছটি মুড়াল।।
রচনাকাল : ২/৭/২০২০
© কিশলয় এবং দেবমাল্য মুখার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।