আমরা পয়লা জুলাই কে শুভ চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করি।এই দিনটি আমাদের কাছে আরো এক মহানায়কের জন্মদিন ও মৃত্যু দিন।আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিবস হিসেবে পালন করা হয় ।তিনি নিজে ও একজন খুব ভালো ডাঃ ছিলেন,এই জন্যই তার জন্ম ও মৃত্যু দিনটাকে আমরা চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করি।চিকিৎসকরা নিজেদের দায়িত্ব পালন সহ কারে মানুষকে তার রোগ নিরাময় করে সুস্থ করে তোলে।তারা হলো আমাদের কাছে ভগবানের মত।আমার অনেক দিন আগের একটা ঘটনা বলছি, আকাশের অনেক দিন ধরে পিঠে একটা টিউমার ছিলো,সে প্রথম তার গ্রামের ডাক্তারের কাছে দেখাতে গেল।গ্রামীণ ডাক্তার আকাশকে দেখে বললো, এই ঔষধগুলো লিখে দিলাম একমাস খেয়ে দেখ, তারপর আবার একদিন দেখাতে এসো।একমাস ঔষধ খাওয়ার পর ঐ টিউমারের সামান্য ফোলা ভাবটা কমে গেছে দেখে আকাশ আর দেখালো না ঐ গ্রামীণ ডাক্তারকে।ঠিক পাঁচ বছর পর আবার একই সমস্যা দেখা দিল আকাশের ।ঐ টিউমারটা বেশ বড়ো ও ব্যথা করতে লাগলো।আকাশ ভাবলো তাহলে কি ঐ গ্রামীণ ডাক্তারের ঔষধ কাজ করলো না?এই ভেবে সে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারকে দেখালো এবং সেই ডাক্তার ও ঔষধ আর ব্যথার মলম লিখে দিল।কিছু দিন খাওয়ার পর ব্যথা ও ফোলা কমেছে দেখে আর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হলো না।কিছু দিন পর ঐ টিউমার থেকে রস গড়িয়ে পরতে দেখে সে খুব ভয় পেয়ে গেল।সে ভাবলো ডাক্তার গুলো সব কি নিয়ে পড়াশুনা করেছে আমার সামান্য টিউমারটা সারাতে পারছে না।সঙ্গে সঙ্গে সে আমাকে নিয়ে কলিকাতার নাম করা ডাক্তারকে দেখালো।ডাক্তার সাহেব সব কিছু দেখে অনেক ব্লাড টেস্ট ও ঔষধ লিখে বললো,আপনি অনেক দেরি করে ফেলেছেন এই টেস্ট গুলো করিয়ে আমাকে দেখাবেন।সব কিছু টেস্ট করিয়ে আকাশ ঐ ডাক্তার সাহেবকে দেখালো।ডাক্তার বাবু সব কিছু দেখে বললো যাক আপনার ভাগ্য খুব ভালো।এই টিউমারটি যদি আর কিছু দিন থাকতো তাহলে ক্যান্সার হয়ে যেত।যত তাড়াতাড়ি পারেন অপারেশন করিয়ে নিন।আকাশ সেই কথা মতোন ঐ ডাক্তারবাবুর কাছে তার টিউমারটা অপারেশন করিয়ে নিল।এখন আকাশ পুরোপুরি সুস্থ ও ভালো আছে ।আমি অবাক হয়ে গেসলাম সেই দিন ডাক্তার সাহেবের ব্যবহার দেখে,প্রতিদিন তিন বার করে আকাশকে দেখে যেত।আকাশের টিউমার অপারেশনের পর,আকাশকে দেখভাল করার জন্য একটা সিস্টারকে ভালো করে বুঝিয়ে দিত কি কি করতে হবে।একটু কোনো ভুল হলে ঐ সিস্টারকে বকতো।এইভাবে একজন ডাক্তার বহু পুরানো জটিল রোগ সারিয়ে তুলতে পারে তাকে তো ভগবান ছাড়া কিছু ভাবা যায় না।কিন্তু আমরা মানুষ হয়েও সেই সব ভগবান সমতুল্য ডাক্তারকে মারধর ও অপমান করতে ছাড়ি না।যদি কোনো রোগী ঐ ডাক্তারের জন্য মারা যায়,এই সব দেখে আমি অবাক হই।আমরা যদি আমাদের রোগের উপসর্গ বা অসুবিধে গুলো ডাক্তারকে না বলি,তাহলে একজন ডাক্তার কি করে তার রোগের সঠিক চিকিৎসা শুরু করবেন।ডাক্তার তো সেই রোগির মনের ভেতরের অবস্থা কি তা জানতে পারছে না।আর একটা কথা না বলে পারছি না,আমরা কোনো ডাক্তারের পরামর্শ এবং ঠিক ঠাক ঔষধ খেলে সেই যতই কঠিন রোগ হোক না কেন সে রোগ অবশ্যই সারবে।কিন্তু আমরা কিছু মানুষ আছি ডাক্তারের কথা মতোন আমরা ঔষধ তো খাই না। তারপর সঠিক তার নিয়ম গুলো মানি না।শুধু শুধু ডাক্তারকে দোষ না দিয়ে আমাদের ও একটু ভাবা উচিত ।আমি আর কিছু বলছি না শুধু এইটুকু বলতে চাই,এই চিকিৎসক দিবসে,কোনো চিকিৎসককে অপমানিত করার আগে দেখুন কোন কারনে একটা রোগীর মারা গেল।কোনো ডাক্তার ই চাই না একটা রোগী তার হাতে মারা যাক,বরং ডাক্তার এটা চাই যে তার পেসেন্ট সুস্থ হয়ে বাড়ি যেতে পারে ।একমাত্র উদাহরণ আকাশ,আকাশ ডাক্তারের কথা মতোন যদি শুনতো তবে তার টিউমার অনেক আগেই সেরে উঠতো,এত বড়ো হতো না।
রচনাকাল : ৩০/৬/২০২০
© কিশলয় এবং অনাদি মুখার্জি কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।