ভূমিকা
ইতিহাস কথা বলে আর ইতিহাসের সেই স্মৃতির সরণি বেয়ে আমরা চলে যায় সেই তিক্ত মধুর অতীতের দিনগুলিতে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করতে বসলে তার অধিকাংশ স্থান জুড়ে জয়নগর মজিলপুরের কাহিনী বিদ্যমান থাকবে। এই স্থানের মাঝখান দিয়ে একসময় আদিগঙ্গার বিস্তার আর দত্ত, মিত্র ও মতিলালদের জমিদারি আর তার সাথে উড়িয়া ব্রাহ্মণদের সমাবেশ, বাংলাদেশ থেকে আগত একাধিক জনগোষ্ঠী ভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন যেমন ঘটিয়েছে, তেমনি এই স্থানের প্রতিপত্তি ও সমৃদ্ধি সারা ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু কয়েকশো বছর পেরিয়ে গেলেও জয়নগরের সেই মহিমা এখন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। প্রকৃতির উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, থাকলে আমরা আদিগঙ্গাকে ফিরিয়ে আনতাম। সেটা যখন পারব না, তাহলে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে, আমাদের এই শতাব্দী প্রাচীন পুরসভার উন্নয়নে আধুনিক চিন্তাভাবনার প্রয়োগ ঘটিয়ে জয়নগরকে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে দিতে হবে। যে জয়নগর তার বিখ্যাত মোয়ার অতুলনীয় স্বাদের কারণে জগতবিখ্যাত, সেই জয়নগরের স্থানে স্থানে যে এত ইতিহাস, এত স্থাপত্য লুকিয়ে আছে তা মানুষের কাছে একটু গুছিয়ে তুলে ধরতে হবে এবং সেই কাজে এগিয়ে আসতে হবে জয়নগরের নাগরিক কমিটি ও সহায়তা প্রদান করতে হবে পুরসভাকে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার গর্ব জয়নগর মজিলপুরের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে। সাধারণত মানুষের কাছে ধর্ম আর অতীত একটা আবেগের জায়গা। সেই অতীতের কথা তুলে ধরে মানুষকে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিলেই যথেষ্ট। কারণ আমরা আজও দেখি ধ্বনন্তরি কালীমন্দির বা রাধাবল্লভ মন্দিরে মানুষের ঢল নামে। তাই আমরা আজ জেনে নেব কিভাবে সেই জয়নগরের পর্যটনকে বিকাশ ঘটানো যায়-
জয়নগর-মজিলপুরের ইতিহাস
জয়নগরের ইতিহাস এই ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব না হলেও একটু তুলে ধরা দরকার। ১৮৫৫ সালের মহাবিদ্রোহের পর থেকে ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী মানসিকতা ও স্বদেশপ্রেমের ডাকে যখন সবে একটু একটু করে স্বায়ত্বশাসনের দানা বাঁধতে শুরু করেছে, সেই তখন থেকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত সমৃদ্ধশালী নগরী জয়নগর-মজিলপুর ও সেখানকার কৃতি সন্তানরা এঁকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিতে ধ্রুবতারার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে অবস্থান করে। স্বায়ত্বশাসনের অধিকার ছিনিয়ে আনার প্রস্তুতিপর্বে ১৮৬৫ সালে প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর পিতা পণ্ডিত হরানন্দ বিদ্যাসাগরের সভাপতিত্বে প্রথম তৈরি হল জয়নগর টাউন কমিটি। সেই কমিটি গঠনের মাত্র চার বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৬৯ সালে ১লা এপ্রিল তা জয়নগর পৌরসভা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে যা দক্ষিণ ২৪ পরগণাসহ সারা বাংলার প্রাচীন পুরসভাগুলির মধ্যে অন্যতম।
একসময়এই জয়নগর ও মজিলপুরের বুক চিরে প্রবল ধারায় প্রবাহিত হয়ে যেত আদিগঙ্গার ধারা যা আজ মৃতপ্রায় এবং মানুষ তাঁকে অধিগ্রহণ করে নিয়ে মিত্রগঙ্গা, ঘোষগঙ্গা, বোসগঙ্গা নাম দিয়ে পুকুরের ন্যায় প্রতিপালন করছেন। কিন্তু, কোন সভ্যতার বিকাশে নদীর ভূমিকা কতখানি তা ইতিহাসে হরপ্পা, মহেঞ্জাদারো, সিন্ধু-গাঙ্গেয় সভ্যতা দেখলে বোঝা যায়। অপরদিকে আমরা পুরাণে খুঁজলে দেখি সত্যযুগে নারায়ণ ক্ষীরোদসাগরের তীরে, ত্রেতায় রামচন্দ্র সরযু নদীর তীরে, দ্বাপরে কৃষ্ণ যমুনার কুলে, কলিতে জগন্নাথ সাগরপারে, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য ভাগীরথী গঙ্গার ঘাটে অবস্থান করে তাঁদের লীলা সম্পন্ন করেন। তাছাড়া কাশী, বারানসি, হরিদ্বার, পুরীধামের অবস্থান এই নদীমাতৃক সভ্যতার পক্ষে সওয়াল করেছে। ঠিক তেমনি আজ থেকে ২৪৩ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৭৫ সালের আগে পর্যন্ত এই স্থানে গঙ্গার মাহাত্ম্য বিদ্যমান ছিল এবং অবিভক্ত বাংলার চব্বিশ পরগণা জেলার সমৃদ্ধস্থান ছিল এই জয়নগর। মজিলপুর তার অনেক পরে সুন্দরবনের জঙ্গল হাসিল করে গঙ্গার মজে যাওয়া বক্ষে বাসস্থান গড়ে তোলেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যশোরের চন্দ্রকেতু দত্ত ও তাঁদের কুলগুরু শ্রীকৃষ্ণ উদ্গাতা ছিলেন।
মজার বিষয় ১৭৭৫ সালে যখন মুর্শিদকুলি খাঁ বেতরের কাছে খাল কেটে গঙ্গার মূল ধারা ঘুরিয়ে সরস্বতী নদীর মরা খাত দিয়ে বজবজ, রায়চক, ফলতা, ডায়মণ্ডহারবারের পাশ দিয়ে সাগরের মুড়িগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে মেশায় তখন থেকে আদিগঙ্গার মৃত্যু ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। ফলশ্রুতি হিসাবে আজ থেকে মাত্র ৩৬ বছর পূর্বে স্থাপন করেও ডায়মণ্ডহারবার পৌরসভার উন্নতি আমাদের কাছে ঈর্ষার কারণ। এর সাথে সাথে পুজালি, বজবজ, মহেশতলা পুরসভার সমৃদ্ধি শুরু হয়। আদিগঙ্গার কৃপা থেকে বঞ্চিত হয়েও শুধুমাত্র উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ও বৃহত্তর কলকাতার অংশবিশেষ হয়ে বারুইপুর আর সোনারপুর-রাজপুর পুরসভার উন্নয়ন অন্য মাত্রা নিয়ে নিল। এই জয়নগরের কৃতি সন্তানরা ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে রাজধানী কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এমনকি এই জয়নগরে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও নেতাজী সুভাষচন্দ্রের আগমন যেমন ঘটে, তেমনি প্রেমের অবতার মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য আদিগঙ্গার তীর ধরে চক্রতীর্থ ভ্রমণ করে শ্রীক্ষেত্র পুরীধামে গমন করেন। এই স্থানের পণ্ডিত মানুষদের তর্কশাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের কারণে একে দ্বিতীয় নবদ্বীপ বলা হত।বর্তমানে প্রমান হিসাবে এই জয়নগরের বুকে এত বিদ্যালয় বা বাড়িতে বাড়িতে সঙ্গীত ও নৃত্যসহ বিভিন্ন সংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্রের অবস্থান যথেষ্ট। ঘটনাচক্রে, এই জলপথে আগত বিদেশী মগ, পর্তুগীজ, ফরাসী জলদস্যুরা প্রায়শই জয়নগরে লুট সন্ত্রাস চালাত এবং নিকটবর্তী জঙ্গলে ঢেকে থাকা মগরাহাট এলাকায় লুকিয়ে থাকত। কথিত আছে এই মগ দস্যুদের নামানুসারে মগরাহাটের নামকরণ হয়েছে। সময়ের ফেরে সেই মগরাহাট আজ অনেক সমৃদ্ধি লাভ করলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পিছিয়ে আছে। আর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ইতিহাস যারা লিখেছেন তাঁদের বর্ণনায় এই আদিগঙ্গার তীরবর্তী জনপদের আলোচনা জায়গা পেয়েছে বেশী করে, যা মধ্যে জয়নগর অগ্রণী স্থানে। ইতিহাসের পাশাপাশি আমাদের এই স্থানের ভৌগোলিক পরিবেশ জেনে নেওয়া দরকার।
ভৌগলিক গুরুত্ব
ভারতবর্ষের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে দক্ষিনে প্রায় ৫০ কিমি দূরে অবস্থিত এই উপশহর যা দক্ষিণ ২৪ পরগণা তথা এককালের সারা বাংলার রত্নগর্ভা জয়নগর ও মজিলপুর আজও দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। কলিকাতার উপকণ্ঠে এবং সুন্দরবনের একেবারে প্রবেশদ্বারে এই পুরসভার অবস্থানের কারণে এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছিল যার প্রমান আজও বিদ্যমান। এই জয়নগরের সীমানা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে জয়নগরের সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে পুরসভার থেকে থানার গুরুত্ব বেশী দেওয়া হয়েছে। এই নগরের উত্তরদিকে শ্রীপুর ও দুর্গাপুর অঞ্চল, দক্ষিণদিকে ফুটিগোদা এবং পূর্বদিকে ফুটিগোদা ও সাহাজাদাপুর অঞ্চল,পশ্চিমদিকে অবস্থান করছে উত্তর দুর্গাপুর ও বিষ্ণুপুর অঞ্চল। জয়নগরের ভূগোলে জয়নগর ও মজিলপুর মৌজার পাশাপাশি গহেরপুর, বংশীধরপুরের কিছু অংশ, রামনারায়ণপুরের কিছু অংশ, তাজপুর-ফতেপুরের কিছু অংশ, বনমালীপুরের কিছু অংশ ও দোসরা ভগবানপুরের কিছু অংশের মৌজা এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে অনেক নতুন থানা তৈরির কারণে এলাকা বিভাজনে রদবদল যেমন ঘটেছে তেমনি বারুইপুর মহকুমা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে জয়নগর-মজিলপুরের আলিপুর মহকুমা থেকে বারুইপুরের অন্তর্গত করা হয়। বারিদহাটা পরগণার মধ্যে অবস্থিত এই স্থানের ভৌগোলিক গুরুত্ব তো ইতিহাসের আলোচনায় প্রমান পায়। কারণ গঙ্গার প্রবাহ অর্থ নিম্নগতিতে পলিসমৃদ্ধ এলাকা তা মানবসভ্যতার বিকাশে বড় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ব্যবসা বানিজ্যের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই আদিগঙ্গা। সেই সময় জয়নগর কিন্তু রেলপথে কলকাতার সাথে যোগাযোগ তৈরি হয় নি। খালপথে নৌকা করে মগরাহাট স্টেশনে এসে ট্রেন ধরে কলকাতায় যেতে হত। আদিগঙ্গার পূর্বদিকে কেবলমাত্র একটি পায়ে হাঁটা পথ ছিল যা সুন্দরবন থেকে কালীঘাট পর্যন্ত যাওয়া যেত। পরবর্তীকালে জয়নগরের সাথে কলকাতার সড়কপথে বাস চলাচল শুরু হলেও কালের নিয়মে তা বন্ধ হয়। বর্তমানে আবার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯২৮ সালে শিয়ালদহ থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর রেলে যুক্ত হলে এখানকার চালচিত্র বদলাতে থাকে।
তবে এই জয়নগরে বেশীরভাগ মানুষ এসেছে বাইরে থেকে যেমন গুনানন্দ মতিলাল ও চন্দ্রকেতু দত্ত যশোর থেকে আসেন তেমনি রামগোপাল মিত্র আসেন বেহালার বরিষা থেকে। আর আদিগঙ্গার মাহাত্ম্য ও তার দুই তীরে মন্দির ও শ্মশানের অবস্থান থাকায় নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মনদের আগমন ঘটে কারণ বেতর থেকে কাকদ্বীপের মুড়িগঙ্গা পর্যন্ত প্রবাহিত গঙ্গার মাহাত্ম্য নেই, ওটা কাটাগঙ্গা। ঐ জলে কোন মাঙ্গলিক কাজ আজও হয় না, কোন পুন্যলগ্নে কেউ স্নানও করে না। কিন্তু এই মজে যাওয়া জয়নগর বারাসাত বারুইপুরের গঙ্গায় মানুষ আজও ডুবে পুণ্য অর্জন করেন। যাইহোক, সেইসব বহিরাগত মানুষেরা নিজেদের প্রয়োজনে শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করেন এবং পরবর্তীকালে জয়নগরের সমৃদ্ধি অন্যান্য মানুষকে টেনে আনে তখন এখানকার অনেক বনেদি পরিবারের ব্রাহ্মন পরিবার কলকাতা শহরের দিকে চলে যেতে থাকেন। এবার আমরা দেখে নেব, এমন একটি প্রাচীন জনপদ যা রাজা প্রতাপাদিত্যের সময় থেকে বারেবারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়লেও তার মহিমা কোন অংশে কমেনি, শুধুমাত্র তার প্রাচীন স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের অবস্থানে। সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন জনপদের এক এবং অনন্য স্মারক ও মানুষের আবেগজড়িত মন্দির ও দেবদেবীকে সাথী করে জয়নগরের নাম পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে কিভাবে প্রতিস্থাপন করা যায় সেটাই নিম্নে বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা করা হল-
দেবী জয়চন্ডী মন্দির
ইতিহাস প্রসিদ্ধ উপন্যাস নকুলেশ্বর বিদ্যাভূষণ রচিত ‘কুমুদানন্দ’ গ্রন্থে প্রথম জয়নগরের নাম শোনা যায়। এই জয়নগরের রাজা নীলকণ্ঠ মতিলাল করদ রাজা হিসাবে রাজা সুবুদ্ধিরায়ের রায়নগর রাজ্য তথা রায়মঙ্গল ঠেকে সূর্যপুর ও পশ্চিমে সরস্বতী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এলাকার কিছু অংশ শাসন করতেন। এক হাজার এক সালে যখন সমগ্র জয়নগর ভেসে যায়, রায়নগর রাজ্যের অধিকাংশ জনশুন্য হয়ে পড়ে। নীলকণ্ঠ মতিলাল মগধের যুদ্ধে প্রাণ হারালে তার ভাই সপরিবারে যশোরে চলে যান, কিন্তু কয়েক পুরুষ পরেই ঐ বংশের সুপুত্র গুনানন্দ মতিলাল পৈতৃক সম্পত্তি ও কুলদেবী জয়চন্ডী দেবীকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন। সময়ের সাথে সাথে সেই মূর্তির পাশে দারুকাষ্ঠ দ্বারা নির্মিত নতুন মূর্তি রচনা করা হয়। সেই থেকে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১০১৮ বছর পূর্ব থেকে এই দেবী পূজিত হয়ে আসছেন। এই দেবীর নামে জয়নগরের নামকরণ বলে মনে করা হয়। এই দেবীর প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ মাসে একপক্ষকালব্যাপী রূপপরিবর্তনের মেলা ও পূজা হয়ে আসছে। এই জয়চন্ডী দেবীই যে জয়নগরের নামের সুত্রপাত সেটার ইতিহাস ব্যক্ত করতে হবে। অনেকে জয়নগরে বসবাস করছেন কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। কিন্তু, এই প্রবন্ধে স্থান সীমিত হওয়ায় বেশী কথা লেখা গেল না।
সম্বিতেশ্বর মন্দির
জয়নগর মজিলপুরের সুপ্রাচীন শিবতীর্থ শ্রী শ্রী সম্বিতেশ্বর মন্দির। আগেই বলেছি যে আদিগঙ্গার তীরে তীরে মন্দির ও শ্মশানের অবস্থান ছিল, আজও আছে। এমনই একটি মন্দির শ্রী শ্রী সম্বিতেশ্বর মন্দির। আদিগঙ্গার পূর্বতীরে অর্থাৎ মজিলপুরের জ্ঞানপীঠ বিদ্যালয়ের ঠিক পাশেই দত্তপাড়া যাওয়ার রাস্তার পাশেই এই মন্দির অবস্থান করছে। এই মন্দির নির্মাণের পিছনে যে ইতিহাস তা কয়েকটি শিশু খেলতে খেলতে একটি গোলাকার পাথর খুঁজে পান এবং দত্ত পরিবারের নায়েব পরিবারের দেওয়ান ঢোসা চন্দনেশ্বর নিবাসী কালাচাঁদ নাইয়া স্বপ্নাদেশ পান এই মন্দির স্থাপন করার। তিনিই ১২৯৮ বঙ্গাব্দে এই মন্দির নির্মাণে এগিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে চন্দ্রনাথ নাইয়া এই মন্দির সংস্কার করান। মন্দিরটি একসময় মজে যাওয়া গঙ্গার বক্ষে অবস্থান করায় মন্দিরের গঠনগত কয়েকটি অত্যাশ্চর্য ঘটনা বর্তমান। এই স্থানটি একসময় সুন্দরবনের অংশবিশেষও ছিল। মন্দিরের গর্ভগুহা থেকে একটি সুড়ঙ্গ থাকার কথা শোনা যায়, যেখান থেকে দুটি শৃগাল এসে ভোগের নৈবেদ্য গ্রহণ করে যেত। এছাড়াও এই মন্দিরের নিচে বিষধর সাপ ও ব্যাঙের একত্রে অবস্থানের কথা শোনা যায়। যারা মন্দিরের আরতির সময় শঙ্খ ঘণ্টার আওয়াজ পেলেই তারা চলে আসত প্রসাদ পেতে। বর্তমানে জনবসতির ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় এই ধরনের অলৌকিক ঘটনার দর্শন আর মেলে না। পর্যটক বা ভক্তদের সমাগম হতে পারে যদি এই অলৌকিক মন্দির সম্পর্কে যথাযথ প্রচার থাকে।
শ্যামসুন্দর মন্দির
জয়নগর পৌরসভার একেবারে শেষপ্রান্তে দুর্গাপুরের শ্যামসুন্দর মন্দির অবস্থিত। এখানকার বিগ্রহ দারুমূর্তি ৩ ফুটের মত উচ্চতা। শোনা যায় ১৮২১ সালে নন্দকুমার বসু বৃন্দাবন থেকে ফিরে মাতৃ আদেশে প্রায় তিনলক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মন্দির নির্মাণ করান এবং তাঁর জমিদারির এক বৃহৎ অংশ শ্যামসুন্দর জিউর নামে দেবোত্তর করে যান। এই মন্দিরের বিশেষ বৈশিষ্ট মন্দিরটি ফ্রেসকো দ্বারা সজ্জিত যা সমগ্র বাংলায় খুব কম। সুদুর জয়পুর থেকে আনা প্রস্তরে নির্মিত এই মন্দিরে কারুকার্যখচিত কাঠের সিংহাসনে বসানো আছে কষ্টি পাথরে নির্মিত শ্রীকৃষ্ণ ও অষ্টধাতু নির্মিত রাধারানীর বিগ্রহ। এই যুগলমূর্তিই শ্যামসুন্দরজিউ নামে পরিচিত। এখানেও একটি দোলমঞ্চ আছে গোষ্ঠমেলা, রাসযাত্রা ও দোলযাত্রার সময় বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়।
রাধাবল্লভ জিউর মন্দির
অন্যান্য মন্দিরের মত জয়নগরের প্রায় চার শতাব্দী প্রাচীন এই রাধাবল্লভের মন্দিরের গুরুত্ব জয়নগর ছাড়িয়ে এখন জেলার প্রত্যন্ত মানুষের কাছে জ্ঞাত। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মহারাজ প্রতাপাদিত্যের সাথে মোঘলদের যুদ্ধ হয়, সেইসময় খাড়ি থেকে কয়েকটি রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ মোঘল সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করতে বর্তমান রাধাবল্লভ জিউকে জয়নগরে এনে একটি ছোট মন্দিরে রাখা হয়।পরবর্তী কালে সেই মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ বারাসতের চৌধুরী বংশের জমিদার নির্মাণ করে দেন। এই দারুমূর্তির বিগ্রহের উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট। আদি গঙ্গার তীরে এই মন্দিরের নিত্যপূজা ও বাৎসরিক উৎসবে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে। রাধাবল্লভ জিউর চাঁদনী ও দোলমঞ্চ স্থানীয় মিত্রবংশের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণমোহন মিত্র মহাশয় নির্মাণ করেছিলেন। প্রতিবছর দোলযাত্রা ও গোষ্ঠমেলা মহাসমারোহে পালিত হয়। এখানে রাধামাধবকে সুসজ্জিত করে দোলমঞ্চে বসানো হয়। একসময়, গোষ্ঠমেলার সময়, এখানে একে একে দুর্গাপুর গ্রামের সরখেল পরিবারের কুলদেবতা শ্যামসুন্দর বিগ্রহ, কেটোয়ারা বনমালীপুরের দারুময় মদনমোহন বিগ্রহ, জয়নগরের মিত্র পরিবারের কুলদেবতা গোপীনাথ বিগ্রহ, মজিলপুরের হরিদাস দত্তের প্রস্তরনির্মিত রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ, পোড়া পরিবারের কষ্টিপাথরের শ্যামসুন্দর বিগ্রহ, বৃন্দাবন দত্ত পরিবারের রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ, জয়নগর উত্তরপাড়ার জিতেন্দ্রনাথ মিত্রের প্রস্তরনির্মিত প্রস্তরনির্মিত রাধাকৃষ্ণবিগ্রহ, গোপাল সরকারের বাসুদেব বিগ্রহ, মুলদিয়া ভবানিপুরের পালুইদের রাধাকান্ত বিগ্রহ, ঘোষদের রাধাগোবিন্দ বিগ্রহ, জয়নগরের ঘোষদের গোপাল বিগ্রহ সহ নানা জায়গা থেকে বিগ্রহ মহাসমারোহে এনে হাজির করা হতো। যে আনন্দধারায় মিশে যেত হিন্দুমুসলমান আবালবৃদ্ধবনিতা। সময়ের সাথে সাথে তা অনেকটা কমে গেলেও জৌলুস একটুও কমে নি। বর্তমানে সেই আদিগঙ্গার অবস্থান আর লক্ষ্য করা না গেলেও মন্দিরের পাশেই তার স্মৃতিস্বরূপ যে গঙ্গা তা রাধাবল্লভ গঙ্গা নামেই পরিচিত। এই গঙ্গা থেকে প্রাপ্ত শিবলিঙ্গকে মূল মন্দিরের পাশেই একটি ছোট মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন শ্যামাদাস ঘটক নামে একজন ভক্ত। ইহা চন্দ্রশেখর শিবলিঙ্গ নামে পরিচিত। মন্দিরের পূর্বদিকে রাধাবল্লভ গঙ্গার তীরেই অবস্থিত কদম্ববৃক্ষে একটি অলৌকিক ঘটনার বিবরণ শোনা যায়। প্রতিবছর দোলপূর্ণিমাতে এই গাছে কেবলমাত্র একটি কদমফুল ফোটে। এহেন প্রাচীন বিগ্রহ ও মন্দিরের টানে মানুষ দৌড়ে আসে। তবে এই ইতিহাস মন্দিরের সামনে একটি ফলক দিয়ে ছোট করে লিখে রাখলে তা পর্যটকদের জানতে সুবিধা হবে বলে মনে করি।
ধন্বন্তরি কালী মন্দির
ষোড়শ-সপ্তদশ শতক। সে সময় আদিগঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানগুলি ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা এবং নিরিবিলি। তন্ত্রসাধকরা গড়ে তুলছিলেন শক্তিসাধনার ক্ষেত্র। লোকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে গড়ে উঠছিল এই শক্তিসাধনার ক্ষেত্রগুলি। এরকমই একটি ক্ষেত্র হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দির। যাঁর প্রসিদ্ধি এখন সারা বাংলা জুড়ে।রেল লাইনের পূর্বদিকে মজিলপুর গ্রাম। মনে হয় আদিগঙ্গার মজে যাওয়া গর্ভে স্থানটির সৃষ্টি বলে নাম হয়েছে মজিলপুর। মজিলপুর পদ্মপুকুর নামেও খ্যাত।
অষ্টাদশ শতকের প্রথমভাগেও এইস্থান দিয়ে আদিগঙ্গার প্রবাহ বর্তমান ছিল, তখন আদিগঙ্গার পাড়ে পাড়ে বিভিন্নস্থানে শ্মশান বর্তমান ছিল। আজকের যেখানে ধন্বন্তরি কালী মন্দিরের অবস্থান, অখানেও একটা শ্মশান বিদ্যামান ছিল। নেতরা থেকে স্বামী ভৈরবানন্দ নামে এক সাধক নির্জন স্থান দেখে এখানে সাধনায় বসেন ও কিছুদিনের মধ্যে স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন মা ধন্বন্তরি কালী পাশের পদ্মপুকুরের গভীর জলে আমি উপেক্ষিতা হয়ে পড়ে আছি। আমাকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা কর, পূজা কর, তোর মঙ্গল হবে। স্বামীজি অনুসন্ধান করে একটি ৩০০ বছরের প্রাচীন কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি পান। বিগ্রহটিকে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরই নির্মিত একটি ছোট্ট কুটিরে। ইনিই হলেন মা ধন্বন্তরী কালী।সেখানেই তার কুঁড়েঘরে চলে মায়ের পূজা অর্চনা।
মজিলপুরের ঠাকুরবাড়ির আদিপুরুষ ছিলেন রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তী। পরিব্রাজকরূপে ভ্রমণকালে ভৈরবানন্দ নামে এক তন্ত্রসাধকের সাহচর্য লাভ ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সময়টা ছিল সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ। সেই সময়েই একদিন রাজেন্দ্রলাল রায়কে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী ধন্বন্তরী। পুকুরের কাছে পড়ে থাকা একটি নিম কাঠ থেকে দেবী বিগ্রহ তৈরির আদেশ দেন মা। পাথর বিগ্রহের স্থলে নির্মিত হয় নিমকাঠের বিগ্রহ। এই নিমকাঠের বিগ্রহ পূজিত হয়ে আসছে আজও। পরবর্তীকালে অবশ্য বড় হয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ।সমতল ছাদবিশিষ্ট কালীমন্দিরটি দক্ষিণমুখী। গর্ভমন্দিরে বেদির উপরে রয়েছে একটি কারুকার্যখচিত কাঠের রথসিংহাসন। তাতে পদ্মের উপরে শুয়ে আছেন মহাদেব। তাঁরই বক্ষস্থলে দাঁড়িয়ে অপরূপা দীপ্তিময়ী দেবী কালিকা। মহাদেবের মাথাটি দেবীর সামনের দিকে। শ্রীচরণে মল, দুটি কান কুণ্ডলশোভিত। বসন পরিহিতা দেবীর এলানো কেশ কোমর ছাড়িয়ে। সালঙ্কারা। ত্রিনয়নী দক্ষিণাকালী। নিকষকালো কষ্টিপাথরে নির্মিত বিগ্রহ। চোখ ও মনের তৃপ্তি দেয় এই মাতৃবিগ্রহ। দেবীমূর্তির পাশে দুটি ঘরে রয়েছে দুটি শিবলিঙ্গ।
বর্তমান মন্দিরের সেবায়েত কালিদাস চক্রবর্তী জানান, মন্দিরটি সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বছরের প্রাচীন। মজিলপুর নামের উদ্ভব নিয়ে নদীর মজে যাওয়া তত্ত্বে দ্বিমত নেই তাঁর। রেললাইনের ওপারে মা জয়চন্ডী অধিষ্ঠান করছেন বলে জানান তিনি, এই জয়চন্ডী ধন্বন্তরী মায়ের থেকেও ৪০০-৫০০ বছরের প্রাচীন। তিনি আরও জানান নদী-সংলগ্ন স্থানেই একটি বিরাট শ্মশান ছিল। সেখানে বসবাস করতেন এক সন্ন্যাসী। তিনিই সেবা করতেন মা ধন্বন্তরীকে। নদী মজে যাওয়ার আগে নদীপথেই বাণিজ্য করতেন দেশ-বিদেশের বহু জমিদার। একদিন রাত হয়ে যাওয়াতে কোনও এক জমিদার ডাকাতের ভয়ে এগোতে পারেননি নদীবক্ষে। নোঙর রেখে আশ্রয় নেন সন্ন্যাসীর কুটিরে। মাকে দেখে ভক্তি জন্মায় তাঁর অন্তরে। তারপর যাতায়াতের পথে মাঝে মাঝেই আসতেন সন্ন্যাসীর কাছে। একদিন সন্ন্যাসী অনুরোধ করেন ওই জমিদারকে। মা-কে প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধ। অনুরোধ ফেলতে পারেননি জমিদার। মাকে নিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন তিনিই। সেই জমিদারই পরবর্তীকালে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে দারু মূর্তি গড়ান। মূর্তিটি এককাঠের।
সেবায়েত আরও জানান, ধন্বন্তরী নামটি পরবর্তী কালের। ধন্বন্তরী হলেন দেবতাদের কবিরাজ। যিনি মরা মানুষকেও বাঁচিয়ে তুলতেন। ধন্বন্তরী মা নন, তিনি বাবা। মায়ের একটা স্বপ্নাদিষ্ট ওষুধ আছে, অব্যর্থ ওষুধ। গ্যাস, অম্বল জাতীয় রোগে এটি কাজ করে। সেই ওষুধ খেয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠত রোগীরা। ওষুধটা ধন্বন্তরীর মত কাজ দিত বলে সবাই মাকে ধন্বন্তরী বলেই ডাকত। সেই থেকেই মায়ের নাম ধন্বন্তরী।সেই সপ্তদশ শতাব্দী থেকে দেবীর নিত্যসেবাপুজো আজও চলে আসছে অপ্রতিহত গতিতে। কালীপুজো, অমাবস্যা, শনি-মঙ্গলবার এই দিনগুলি বাদ দিলেও প্রতিদিনই হাজারো পুণ্যার্থী ভিড় জমান মন্দির প্রাঙ্গণে। তবে বার্ষিক পুজো হয় বৈশাখ মাসে। সেই সময়ে মন্দির প্রাঙ্গণে ১৫ দিন ধরে চলে মেলা। সবচেয়ে বিস্ময়কর হল, এই ১৫ দিনই পরিবর্তিত হয় দেবীর বেশ। এখানে প্রতিবছর বৈশাখ মাসে এক পক্ষকাল ব্যাপী মায়ের রূপ পরিবর্তন মেলা ও পূজায় হাজার হাজার ভক্ত সমাগম ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে পূজা হয়। এর পাশে একটি শিবমন্দির ও শনিমন্দির পরে তৈরি করা হয়েছে। শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের একটি আশ্রম অদুরেই অবস্থান করছে।
দ্বাদশ শিব মন্দির
জয়নগর মিত্রপাড়ায় আদিগঙ্গার তীরে বেহালা-বড়িশা থেকে প্রখ্যাত রামগোপাল মিত্র জয়নগরে বসবাসের জন্য আসেন। এই রামগোপাল বাবুর পৌত্র কামদেব মিত্র আদিগঙ্গার তীর ধরে দ্বাদশ মন্দিরের প্রথম মন্দিরটি ১৭৬১ সালে নির্মাণ করান।সময়ের সাথে সাথে পরবর্তী পুরুষানুক্রমে এক একটি মন্দির স্থাপন ও পূজার মাধ্যমে বারোটি মন্দির তৈরি হয়। প্রতি মন্দিরে একটি করে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। একটি নবরত্ন হলেও বাকি মন্দিরগুলি সব আটচালা প্রকৃতির। ঘটনা হল গঙ্গার পশ্চিম উপকুল, বারানসি সমতুল। এখানে দ্বাদশ শিবমন্দিরের প্রতিচ্ছবি গঙ্গার জলে যখন পড়ে তা কোন অংশে দক্ষিনেশ্বর, বারানসির মতো শৈবতীর্থ থেকে কম সুন্দর লাগে না। এখানেও একটি কেন্দ্রীয় ফলক বসিয়ে এর ইতিহাস স্থাপন করা দরকার। এখানে দোলমঞ্চদর্শনীয় হলেও দোলের মেলা খুব একটা হয় না তবে রথযাত্রার মেলা বিখ্যাত।
ময়দা কালীবাড়ি
আদিগঙ্গার তীরে ময়দা বহু পুরানো একটি গ্রাম।১৮৬৯ সালে পৌরসভা গঠনের সাথে সাথে ময়দা তে অবস্থিত জয়নগর থানা ময়দা থেকে তুলে এনে পৌরসভার মধ্যে স্থাপন করা হয়। এই ময়দা গ্রামের পরিচিতি বাড়ে এখানকার জাগ্রত কালীমন্দিরের জন্য যা এককথায় ‘ময়দার কালী’ নামে সমধিক পরিচিত।ময়দার এই কালীমন্দিরের প্রাচীনত্ব নিয়ে নানান মতভেদ বর্তমান থাকলেও জনশ্রুতি আছে যে যখন আদিগঙ্গা তার পূর্ণশক্তি নিয়ে এখান থেকে প্রবাহিত ছিল তখন থেকে কালীঘাটের কালীমন্দিরের ন্যায় গঙ্গার তীরে ময়দার কালীবাড়ি স্বমহিমায় অবস্থান করছে। এই মন্দিরের দরজা নির্মাণ হয়েছে আদিগঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে চলা জাহাজের ভগ্নাবশেষ দিয়ে। কলিকাতার জমিদার সাবর্ণ চৌধুরীর বংশধর গঙ্গাধর চৌধুরী ১১৭৬ বঙ্গাব্দে এই মন্দির নির্মাণ ও সেবার জন্য প্রচুর সম্পত্তি দান করেন বলে জানা যায়। ময়দার আদি বাসিন্দা প্রয়াত সুনীল সরকারের মতে ময়দানব থেকে ময়দা’র জন্ম। পুরানে ময়দানব পাতালে থাকতেন। এই জায়গা সেই পাতালের নিদর্শন বলে অনেক গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এখানকার কালীমূর্তি কালো কষ্টি পাথরের মন্দির গহ্বরে প্রোথিত এবং খনন কাজ চালিয়ে এর শেষ পাওয়া যায় নি বলে স্থানীয় লোকের ধারনা। জলের মধ্যে এই পাথর প্রথিত আছে যা ইতিহাসে প্রত্নতাত্ত্বিক অস্তিত্ব বলে মনে করা হয়। প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম তারিখে গঙ্গা পূজা উপলক্ষে বিরাট আকারে মেলা ও পূজা হয়ে থাকে।
নিমপীঠ রামকৃষ্ণ মিশন
জয়নগর-মজিলপুরের অদূরেই অবস্থান করছে ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারা ও আদর্শ নিয়ে তৈরি নিমপীঠ রামকৃষ্ণ মিশন। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই মিশন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কারিগরি দক্ষতায় সারা ভারতবর্ষে এক উল্লেখযোগ্য স্থান অর্জন করে। বিজ্ঞানের গবেষণায় ও কৃষিতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেশ কয়েকটি পুরস্কার মেলে। যে সকল পর্যটক এই জয়নগর মজিলপুর ভ্রমণ করতে আসবেন তাঁদের কাছে এই রামকৃষ্ণ মিশন একটি দ্রষ্টব্য স্থান হিসাবে তুলে ধরা যাবে। তাতে জয়নগরের পর্যটন মানচিত্র আরও মজবুত হবে। কাছেই সারদা মিশন মা সারদা দেবীর দর্শন ও শিক্ষা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে, যা নারি শিক্ষার প্রগতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর সাথে কুলতলি থানার কৈখালীর মিশন ও সুন্দরবনের নদী ও জঙ্গলের হাতছানি যে রয়েছে তা তুলে ধরতে হবে।
কালিদাস দত্তের বাড়ি
বাংলার প্রখ্যাত ঐতিহাসিকদের মধ্যে ঐতিহাসিক কালিদাস দত্তের নাম উল্লেখযোগ্য। এই কালিদাস দত্ত প্রকৃতপক্ষে মজিলপুরের সুসন্তান আর চন্দ্রকেতু দত্তের বংশধর নামে সুপরিচিত। আগেই বলেছি যে এই জয়নগর রত্নগর্ভা। একথা হলফ করে বলা যায় যে যদি কালিদাস দত্ত না আসতেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণাসহ সুন্দরবনের ইতিহাস হয়তো বা অপ্রকাশিত থেকে যেত কিংবা বিকৃত হয়ে প্রকাশ পেত। এমনিতেই দক্ষিণ ২৪ পরগণার অনেকটাই অতীত কালের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে চর্চার অভাবে। সেই বিখ্যাত মানুষ কালিদাস দত্তের বাড়ি সংস্কার করে একটি ইতিহাসের স্মারক সমৃদ্ধ বা তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে সাজিয়ে একটি সংগ্রহশালা মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এখানে উমেশচন্দ্র দত্তের বাড়ি সংস্কার করেও জনগণের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া যেতেই পারে। অবশ্যই করে তাঁদের পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ করা যেতেই পারে।
শিবনাথ শাস্ত্রীর বাড়ি
রত্নগর্ভা জয়নগরের কৃতি সন্তান পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী। তাঁর শিক্ষা, সংস্কৃতি কলিকাতা ও রাজপুর সোনারপুরকে কেন্দ্র করে হলেও তিনি জয়নগরে শিকড়ের টান অনুভব করতেন। তাই তিনি আদি গঙ্গা ধরে নৌকা করে জয়নগরে মজিলপুরের বাসস্থানে যাতায়াত করতেন। তাঁর কথায়, ‘এইরূপ জনশ্রুতি প্রচলিত আছে যে, জাহাঙ্গীর বাদশার সময় যখন রাজা মান সিং যশোর নগর আক্রমণ করেন, তখন চন্দ্রকেতু দত্ত নামক একজন সম্ভ্রান্ত কায়স্থ ভদ্রলোক সপরিবারে যশোর বিভাগ হইতে পলায়ন করিয়া ঐ চড়ার উপরিস্থিত গ্রামে (মজিলপুর) সুন্দরবনের ভিতরে আসিয়া বসবাস করিয়াছিলেন। তাঁহার সহিত তাঁহার যজ্ঞ পুরোহিত ও কুলগুরু শ্রীকৃষ্ণ উদ্গাতা নামক এক ব্রাহ্মণ আসিয়া তাঁহারই প্রদত্ত এক সামান্য ভূমিখণ্ডে আপনার বাসস্থান নির্দেশ করেন। তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ’। তিনি বাংলার নবজাগরণে, স্বাধীনতা আন্দোলনে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে জয়নগর মজিলপুর ছাড়িয়ে সারা বাংলায় সাফল্যের সাথে তাঁর দর্শনকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর বসতবাটি সংস্কার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি, যেখানে তাঁর গ্রন্থ, জীবন ও কর্ম নিয়ে চিত্রপট, তাঁর সংস্কার ও দর্শন তুলে ধরা হবে।
বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের বাড়ি
জয়নগর শুধু শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদান রেখেছে তাই নয়, তাঁদের যুবচেতনার আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। এমন একজন বাংলা মায়ের দামাল ছেলে জয়নগর মজিলপুরের বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য। ১৯৩১ সালে ২৭ শে জুলাই জয়নগর-মজিলপুরের ছেলে বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে ঐতিহাসিক রাইটার্স অলিন্দ যুদ্ধের অন্যতম নায়ক দীনেশ গুপ্তের ফাঁসির হুকুমদাতা বিচারক গার্লিক কে নিধন করে ইতিহাসের পাতায় জয়নগর-মজিলপুর কে উজ্জ্বল করে রেখেছেন। তাঁর অকালে প্রাণ বিসর্জনকে কুর্নিশ জানাতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জেলাসদর আলিপুরে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। গুরুত্ব বুঝেই ঐ বছরের ১৮ ই অক্টোবর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস জয়নগর-মজিলপুরে এসেছিলেন দুর্গা পুজার অষ্টমীর দিন মজিলপুরের বোসপাড়ার ব্যায়াম সমিতির বার্ষিক সাধারন সভায় বক্তৃতা দিতে। এখানেই বোঝা যায় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়নগর-মজিলপুরের গুরুত্ব কতখানি ছিল। তখনও পর্যন্ত কেউ জানতেন না এই ব্যায়াম সমিতির ছেলে কানাইলাল কতবড় ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই হল ত্যাগ, দেশমাতৃকার চরণে আত্মবলিদানের নমুনা।এই ইতিহাস কি কম শিহরন জাগায়! আজকের দিনে বসে আমরা কেউ কি ভাবতে পারি যে এই মাটিতে ভারত অধিনায়ক নেতাজী সুভাষ এসে বিপ্লবের বীজ বুনে দিয়ে গেছেন। আজকের যুবসমাজকে স্বাধীনতার ইতিহাস পড়তে হবে, জানতে হবে দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমোচনে অতীতের ভাবধারা। কাদের আত্মবলিদানের ফসল হিসাবে আমাদের এই বর্তমান ভারতবর্ষ হাতে পাওয়া। আমাদের মনে রাখতে হবে তাঁদের স্মরণ করতে গিয়ে কোনভাবে অসম্মান না করে ফেলি। আমরা সেই কানাইলালের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে তাঁর বসতবাটি বা তার পাশে কোন একটি স্থানে একটি স্মৃতিশালা তৈরি করে তাঁর কর্ম ও জীবন বলিদানের ইতিহাস তুলে ধরলে তা মানুষের কাছে তথা ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এক নতুন অক্সিজেন প্রদান করবে বলে মনে করি।
বিষবৃক্ষ উপন্যাসের পটভূমি
সাহিত্যের মানুষ যারা তাঁরা যদি একবার জানতে পারেন যে তাঁদের পছন্দের ঔপন্যাসিক বা সাহিত্যিকের এক অতুলনীয় সৃষ্টির পটভূমি আজও বিদ্যমান, তাহলে তাঁরা সেই স্থান একবার হলেও ঘুরে দেখে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পান। এমনই একটি বিখ্যাত উপন্যাস বিষবৃক্ষ যা সাহিত্য সম্রাটের কলমের নির্যাস হলেও তাঁর পটভূমি লুকিয়ে এই মজিলপুরের দত্ত বাড়ির জমিদারি। আদিগঙ্গার মজে যাওয়া খাতে মজিলপুরের বিখ্যাত দত্ত পরিবারের জমিদারি ও হাঁকডাক ইতিহাসে উল্লেখ আছে। তবে এরা খুব অত্যাচারী ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে জমিদারি খতম করে। বিশেষ করে দাসী বা বাঈদের প্রতি এদের অমানবিক অত্যাচার এই দত্তরাজ সমাপ্তির অন্যতম কারণ বলে মনে করে স্থানীয় মানুষ। দত্ত বংশের উজ্জ্বল সন্তান অনেকেই ছিল এবং এই বংশের সঙ্গে একাধিক ভালো মানুষের পরিচয় বা আনাগোনার কথা শোনা যায়। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন বারুইপুরের সাবজুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন তখন এখানে এসে দত্ত পরিবারে বেশ কিছুদিন ছিলেন এবং তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘বিষবৃক্ষ’ রচনার পটভূমিকা হিসাবে এই দত্ত পরিবারের জমিদারি ও তার আনাচকানাচ কে বেছে নিয়েছিলেন যার অনেক অংশই আজও উপন্যাসের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সেই দত্ত পরিবারের গাম্ভীর্যতা হারিয়ে গেলেও সেখানে লালদত্ত ও সাদাদত্ত বাড়িতে দুর্গাপূজার ধুম লাগে। সেই সকল মানুষদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান বা বাড়ি আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলে মনে করি। শুধু এর প্রচার ও ব্র্যান্ডিং দরকার।
গঙ্গার পাড় বাঁধানো বৃক্ষরোপণ
আদিগঙ্গার মাহাত্ম্য নিয়ে নতুন করে কিছু লিখতে চাই না, শুধু এটুকুই বলতে চাই সারা ভারতবাসীর আবেগ জড়িয়ে আছে এই গঙ্গার সাথে। সেই গঙ্গা যখন এই স্থানকে একটা সময় সিঞ্চিত করেছে তাঁর অপার করুণাধারায়। সেই গঙ্গা মুখ ফিরিয়ে নিলেও তাঁর পবিত্রতা স্থানে স্থানে বিদ্যমান। আমরা একবার যদি ভেবে দেখি যে ডায়মন্ডহারবারের মত আমাদের এখানে যদি গঙ্গা আজও প্রবাহিত হত, আমরা যদি জয়নগর মজিলপুরের বাসভূমির ছাদে বসে গঙ্গা দর্শন করতে পারতাম, তাহলে ডায়মন্ডহারবার থেকে মানুষ ছুটে আসতেন আমাদের এই গঙ্গার পাড়ে অমলিন বাতাস পেতে। প্রাণখুলে শ্বাস নিতে। সেই গঙ্গা মুর্শিদকুলি খাঁর কারণে হোক আর কালের নিয়মে হোক আমাদেরকে বঞ্চিত করে চলে গেছে। কিন্তু যেটুকু রয়েছে তা সংস্কার করে আমরা তার চারিদিকে সুন্দর করে সাজিয়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষের একটু অবকাশের ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে। গঙ্গার দুই পাড় বরাবর বৃক্ষরোপণ করতে হবে। পৌরসভার ভিতরে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে শৌচালয় নির্মাণ করা জরুরী। ক্ষেত্রসমীক্ষা চলাকালীন দেখা গেছে যে পথচারী থেকে স্থানীয় মানুষের অনেকেই এই গঙ্গাকে বেছে নিয়েছেন মুত্রত্যাগের জায়গা হিসাবে। গঙ্গাকে ভালবাসতে হবে। ধর্মীয় জ্ঞানে না পারেন তার প্রাকৃতিক অবদান অস্বীকার করেন কিভাবে? পূর্বেই বলেছি একটা সভ্যতার বিকাশ বা তার উন্নয়নে নদীর কতটা ভূমিকা থাকে। তাই এই গঙ্গাকে মাতৃজ্ঞানে রক্ষা করতে হবে। স্থানে স্থানে বোর্ড বসিয়ে ইতিহাসের ছেঁড়া পাতা সাঁটিয়ে মানুষের ভাবের ঘরে চুরি করতে হবে। গঙ্গা যার দখলে থাকুক, সেই গঙ্গার ঐতিহাসিক বা পৌরাণিক মাধুর্য তুলে ধরতে হবে।
শেষকথা
জয়নগরকে সুন্দরভাবে জনসাধারনের জন্য তুলে ধরতে হলে কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। তবে এটি আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিমত, যদি কোন ভুল বলে থাকি মার্জনা করবেন পাঠক। এই জয়নগরের প্রথম সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হবে। মূল সড়কপথ সংস্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তা প্রশস্ত না হলে এই জয়নগর অনেকটাই উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে নিজ দোষে। ভারতীয় রেলের সাথে কথা বলে আমাদের জয়নগর মজিলপুর স্টেশনকে মডেল ষ্টেশনের মর্যাদা দিয়ে সংস্কার করতে হবে। শুধুমাত্র এর ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে সরব হতে হবে দলমত নির্বিশেষে। স্টেশন চত্বরের সকল অবৈধ নির্মাণ বা দোকান তুলে দিয়ে বাস বা অটো টার্মিনালের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মানুষ ট্রেন থেকে নেমে যদি বর্তমান ঘিঞ্জি অবস্থা দেখেন তাহলে তার মাথা থেকে সমস্ত অতীত বা ধর্মীয় ভাবাবেগ সরে যেতে পারে। মন্দির বা ঐতিহাসিক সৌধ ও তাঁদের পীঠস্থানগুলি সংস্কার বা সংরক্ষন করে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। যেসকল পত্রপত্রিকা, প্রবন্ধ, ডকুমেন্টস বা তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য আমার এই প্রবন্ধ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে সহায়তা প্রদান করেছে তাঁদের সকলের কাছে আমি বিনম্র চিত্তে কৃতজ্ঞ জানাই। সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এখানেই শেষ করছি।
রচনাকাল : ১৭/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।