প্রকৃতির বিজ্ঞানই প্রকৃত বিজ্ঞান
আনুমানিক পঠন সময় : ৯ মিনিট

লেখক : সনৎকুমার পুরকাইত
দেশ : India , শহর : ডায়মন্ডহারবার

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৯৭ টি লেখনী ৪০ টি দেশ ব্যাপী ৩৭৮১৪ জন পড়েছেন।
সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকে মানুষের অভ্যাসে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে স্রষ্টার সৃষ্টিকে অস্বীকার করা বা মান্যতা দেওয়া। তাই আজ কলম ধরলাম সম্পূর্ণ অন্য একটি দিগন্ত উন্মোচন করার জন্য। বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে জ্ঞান ও অজ্ঞানতার পার্থক্য খুঁজে বের করা দরকার। বিশেষ রূপে জ্ঞান অর্জন করাকে যদি আমরা বিজ্ঞান বলে ধরে নিই তাহলে কোন কিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জানার ঘাটতিকে আমরা অজ্ঞানতাই বলা ঠিক মনে করব। মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে মানুষ তাঁর করাল থাবা বসিয়েছে প্রকৃতির উপর। ফলে মানুষ প্রকৃতির যে সুসম্পর্ক ছিল তা আজ বিঘ্নিত। মানুষের হাতে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার এসে যাওয়ায় মানুষ দুনিয়াকে করেছে মুষ্টিবদ্ধ। ভাবতে শুরু করেছে যে মানুষ প্রকৃতির এই লড়াইয়ে মানুষ জিতে যাবে। প্রকৃতি মানুষের দ্বারা হবে নিয়ন্ত্রিত। সাম্প্রতিক কালের কেরল সহ বেশ কিছু জায়গার বন্যা আমাদেরকে ভাবিয়েছে। উন্নত দেশের উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে বন্যাকে নিবারন করা যায় নি, প্রকৃতির এই উন্মত্ত লীলাখেলায় সকল প্রযুক্তির ধ্বজা নিয়ে কেরল আজ নিঃস্ব হতে বসেছে। যে কেরলে মাত্র কয়েকমাস আগে কাবেরী নদীর জলবণ্টন নিয়ে কেরল, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর আইনি লড়াই চলছিল সেই স্থানে আজ জলের বন্যা বয়ে গেল। এটাই প্রকৃতির খামখেয়ালীপনা। প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো করে চলতে না দিয়ে নিজের প্রয়োজনে মানুষ যখন প্রকৃতিকে চালনা করতে শুরু করে তখন ঘটে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সুত্রপাত।

আমরা যারা আধুনিক সভ্যতার মানুষ তাঁরা বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে সকল প্রকৃতির নিয়মকে অস্বীকার করে বলে দিই যে ঐ সকল নিয়ম হল ধর্মীয় গোঁড়ামি, ওসবে বিশ্বাসে কাজ নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের সম্রাটদের এটাও জানতে হবে সভ্যতার যাত্রা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ঐ সকল নিয়ম কানুন চিরশ্বাস্বত সে কেউ মানুক আর নাই মানুক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের উচ্চশ্রেণীর লোকেরা প্রকৃতির নিয়মের সাথে নিজেদের বিধান জারি করে ধর্মীয় গোঁড়ামির জায়গা তৈরি করে দিয়েছে সেটা অবশ্য ঠিক। কিন্তু তাই বলে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সাথে সাথে ধর্মীয় বিধান সব মিথ্যা হয়ে যাবে তা হয় না। কালের ক্রমবিবর্তনে যার উৎপত্তি এবং প্রবহমান কাল ধরে যেসকল বিধান কার্যকরী তা কিকরে একমুহূর্তে লয় হয়ে যাবে! 

আমরা জানি প্রকৃতি আর মানুষের গুরুত্বের বিচারে ভূগোল দর্শনে নিয়ন্ত্রনবাদ আর সম্ভাবনাবাদ নামক দুই পৃথক ভাবধারার জন্ম। সে বিষয়ে গভীর আলোচনায় না গিয়ে শুধু বলতে পারি ভিদাল দ্য লা ব্লাশে আর লুসিয়েন ফেভর ইতিহাস ও ভূগোলের মেলবন্ধনের মাধ্যমে যে চিরাচরিত প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রনবাদের বিনাশ ঘটিয়ে নতুন তত্ত্ব প্রকাশ করেন সেখানে মানুষকে প্রধান করে প্রকৃতিকে বিভিন্ন সম্ভাবনার কোষাগার বলে উল্লেখ করেছেন। এই মতবাদে মানুষের মর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে বলা হয় যে প্রকৃতির উন্মোচিত সম্ভাবনাগুলিকে মানুষ কিভাবে গ্রহণ ও ব্যবহার করবে তা সম্পূর্ণভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁদের যৌথ মতবাদের সারমর্ম হলঃ “এই বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ কোন স্থানে সেই স্থানের অধিবাসীদের শুধুমাত্র একটি নয়, একাধিক ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ বা সুবিধার দ্বার উন্মোচন করে দেয় এবং সেই স্থানের জনজাতি সেইসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে কোনটি গ্রহণ করবে তা নির্ভর করে তাঁদের প্রয়োজন, আদর্শ, ইচ্ছা, রুচি, ক্ষমতা বা সামর্থ্যের উপর। কোন স্থানে মানুষের প্রয়োজনের প্রকৃতি, ইচ্ছা, অনিচ্ছা এবং ক্ষমতা নির্ভর করে সেই স্থানের মানুষের সংস্কৃতি ও সামাজিক আদর্শের উপর”। 

ভিদালের এই তত্ত্বের বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা আলোচনা করার আগে জেনে রাখা দরকার যে সম্ভাবনাবাদের অপর সঙ্গী লুই ফেভর যিনি ভিদালের মৃত্যুর পরে ১৯৩২ সালে চরম সম্ভাবনাবাদের কথা তুলে ধরেন। তাঁর মতে ভিদাল মানুষ প্রকৃতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আংশিকভাবে পরিবেশগত নিয়ন্ত্রনবাদের সমর্থন করেছেন। তাই তিনি চরমসম্ভাবনাবাদের কথা বলেন যেখানে প্রকৃতি একেবারে নিস্ক্রিয় থাকে। যদিও পরবর্তীকালে এই পরিবেশগত নিয়ন্ত্রনবাদ ও সম্ভাবনাবাদ এর পারস্পরিক বিতর্কের অবসান ঘটাতে অস্ট্রেলীয় ভূবিজ্ঞানী গ্রিফিথ টেলর নবনিয়ন্ত্রনবাদের প্রতিষ্ঠা করেন যা টেলরকে বিশ্বে পরিচিত করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনাবাদকে ভূগোলে এমনভাবে প্রচার করা হয়েছিল সবার কাছে মনে হয়েছিল যে প্রাকৃতিক পরিবেশগত নিয়ন্ত্রনবাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে সম্ভাবনাবাদের জন্ম হয়েছিল। বাস্তবে যেমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রনবাদকে সমর্থন করা যায় না তেমনি পরিপূর্ণ সম্ভাবনাবাদকে মানা যায় না। তাঁর কারন প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিবন্ধকতা সবসময় কাটানো সম্ভব হয় নি। মানুষের শিক্ষা সংস্কৃতি রুচির সাথে সভ্য জগতের উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে প্রকৃতিকে আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রন করলেও মনেপ্রাণে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাকে ঝেড়ে ফেলতে পারে নি। সেখানেই সম্ভাবনাবাদের সীমা নির্ধারণ হয়ে যায়। বিশেষ করে যে সকল জনজাতি আজও প্রকৃতির সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত, তারা পরিপূর্ণভাবে পরিবেশের উপর নির্ভর করে, পরিবেশের নিয়ন্ত্রনকে প্রাধান্য দেয়। আমাদের সভ্য জগতের মানুষ নিজের শিক্ষার সাহায্যে মরুভূমিতে ক্যানাল কেটে সবুজের সমারোহ করেছে, কিংবা হিমালয়ের চুড়ায় তাঁর দেশের পতাকা দিতে পেরেছে, সাগরের অতল তলে ডুব দিয়ে তুলে এনেছে মহামূল্যবান রত্নসামগ্রী কিন্তু কোনটাই যেমন প্রকৃতি নিয়ন্ত্রনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয় না (যদি প্রকৃতি নিজে না চায়) তেমনি মানুষও নির্ভয়ে প্রকৃতির বুকে বিচরণ করতে পারে না, আজও পারছে না বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি হাতে নিয়েও। তাই বিজ্ঞানী ও. এইচ. কে. স্পেট (১৯৫৭) এর বক্তব্যে বিজ্ঞানভিত্তিক সম্ভাবনাবাদ এর কথা উঠে আসে।

মোদ্দাকথা হল, আমরা প্রকৃতির এই বিজ্ঞানের কাছে নিজেরা ধরা দেব কিনা? আমরা দেখে বিজ্ঞানী এলেন সেম্পেল এ বিষয়ে কি বলেছেন। এলেন সেম্পেলের কথায়, ‘Man is the product of the earth’s surface. This means not merely that he is a child of the earth,- dust of her dust; but the earth has mothered him, fed him, set to task, directed his thoughts….’। অর্থাৎ মানুষ যতই নিজের বীরত্ব প্রকাশ করুক না কেন, তাঁর যে একটা সীমারেখা বর্তমান তা সেম্পেলের কথায় প্রমানিত। মানুষ যতই সভ্যতার চরম শিখরে পোঁছাক না কেন, টাকে প্রকৃতির নিয়ম মেনে প্রকৃতির কোলে অবস্থান করাটাই বিধিলিপি। আজকের যুবসমাজ বিজ্ঞানের কয়েকটা পাতা পড়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যে বিজ্ঞান ছাড়া সবকিছু অবাস্তব। কিন্তু প্রকৃতির বিজ্ঞান না জানলে যে পরম বিজ্ঞানকে জানা হয় না। আমরা সাময়িকভাবে অস্বীকার করতেই পারি, কিন্তু এই প্রকৃতির ধারাপাতে যা কিছু এক অজানা নিয়মে সদাচলমান তা জানলে বোধগম্য হবে যে প্রকৃতির বিজ্ঞান এতটাই উচ্চমার্গের তা রপ্ত করা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই একে ভাঁড়ামি বা গোঁড়ামি বলে পাশে সরিয়ে নিজের চলার পথকে কুসুমাস্তীর্ণ করতে চেয়েছে। তা হয় না, তাই যদি হত, কাজী নজরুল ইসলামের মতো মানুষ লিখতে বসতেন না ‘খেলিছ এ বিশ্বলয়ে বিরাট শিশু আনমনে...’। স্বামী বিবেকানন্দের মতো দত্ত পরিবারের জমিদারের ছেলে সবকিছু ছেড়ে প্রথাগত বিদ্যায় অল্পশিক্ষিত(?) ঠাকুর রামকৃষ্ণের চরণে নিজেকে এমনি এমনি নিবেদন করেন নি। তাঁর শেখানো অধ্যাত্মবিদ্যার আলোকে আলোকিত হয়ে বিশ্বের দরবারে ধর্মের সঠিক দিশা দেখিয়েছিলেন, তৈরি করেছিলেন ধর্মের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ধর্মীয় বিধানের সঠিক তাৎপর্য আর ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন সমাজের কুপ্রথা বা অবৈজ্ঞানিক কালা আইন।

আমরা জানি ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজার বিরোধিতা করা হলেও হিন্দু ধর্ম মূর্তি পূজা সর্বস্ব। তাই একবার সম্রাট আকবর তাঁর রাজসভার নবরত্নের এক রত্ন বীরবলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে বীরবল, তোমাদের এই মূর্তিপূজার গুরুত্ব কি? মূর্তিপূজায় কি আর ঈশ্বর মেলে? বীরবল সম্রাটের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে মাত্র দুদিন সময় নিয়েছিলেন। তিনি মহল্লায় গিয়ে হিন্দুদের এই সংস্কারের কারন খুঁজতে খুঁজতে একজায়গায় গিয়ে দেখলেন একদল লোক ব্যান্ড বাজিয়ে উল্লাসে মত্ত আর মঞ্চের উপর সম্রাট আকবরের মূর্তি তৈরি করে মালা পরিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছেন। বীরবল তখন সম্রাট আকবরকে জানালেন যে, ‘সম্রাট, আপনার মূর্তি তৈরি করে একদল লোক আনন্দে উল্লাসে মত্ত হয়ে নৃত্য করছে’। সম্রাট শুনে বিস্মিত হয়ে বললেন কারন টা কি? বীরবল বললেন তা জানি না। সম্রাট, মনে মনে ভাবলেন তাহলে তো একবার ছদ্মবেশে গিয়ে দেখতে হয়। তাই তিনি চললেন আর বীরবলের কথার সত্যতার প্রমান পেলেন। তখন তিনি তাঁদেরকে প্রশ্ন করলেন, ওহে, তোমরা সম্রাটের মূর্তি তৈরি করে কি করছ এখানে? তাঁরা তখন বললেন আমাদের সম্রাট আমাদের ভগবান তুল্য, তাই তাঁকে আমরা আরাধনা করছি। মূর্তি তৈরি করে কেন? কারন আমরা তো আর দিল্লীর সম্রাটের কাছে যেতে পারবো না, আর গেলেও তাঁর কাছে পৌঁছানোর অনুমতি মিলবে না, তাই। সম্রাটকে কেউ চিনতে পারলেন না, বীরবলকে সম্রাট জিজ্ঞাসা করলেন, বীরবল ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না তো। তখন বীরবল বলেছিলেন যে সম্রাট অপরাধ নেবেন না। আপনি আমায় একটা প্রশ্ন করেছিলেন, মূর্তি পূজার গুরুত্ব কি? আপনার সামনেই আপনার প্রশ্নের উত্তর আছে। সামান্য জনজাতি যদি সম্রাটের মূর্তি তৈরি করে দিল্লির সম্রাটকে সিংহাসন থেকে রাস্তায় নামাতে পারে, তাহলে ঈশ্বরের মূর্তি তৈরি করে আরাধনা করলে ভক্ত বা উপাসকের কাছে ঈশ্বর আসতে বাধ্য। তাই মূর্তি পূজার বিধেয়। মৃন্ময়ী রূপে চিন্ময়ীকে খোঁজা। তাই আমাদের এই বিশ্বপ্রপঞ্চের আনাচে কানাচে প্রকৃতির পদধ্বনি শুনতে পেলেও আমরা অস্বীকার করে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করতে ব্যস্ত থাকি। তাই তত্ত্ব আর তথ্য মিলে মিশে একাকার হয়ে পড়ে। প্রকৃত জ্ঞান অর্জন না করে, করি শুধু সমালোচনা। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই ঘটনার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে সবসময় ভাবার কোন কারন নেই যে এটা অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত, বরং সেটা যে ভাবতে গেলে যে বিজ্ঞানের চেতনা দরকার সেটা মানুষ রপ্ত করে উঠতে পারে নি এখনও। ধর্ম আর প্রকৃতির পাঠ আমাদের দেয় নৈতিক বোধ যাতে করে এই জগত সংসারে লোভ ও লালসার হাত থেকে মানুষ বাঁচে। অনাচার, অত্যাচার, ব্যাভিচার থেকে মানুষ দূরে থাকে। অপরদিকে বিজ্ঞানের হাত ধরে মানুষ ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে ভুলে গেছে তাঁর শিকড়কে, অস্বীকার করে প্রকৃতির ধারাপাতকে। এটা বিজ্ঞানের চেতনা নহে, বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞানতা।

বাংলার সংস্কৃতি জগতে বিপ্লব এনেছিলেন যিনি, যার হাত ধরে বাংলার হিন্দু মুসলমান মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছিল সেই প্রেমের ঠাকুর মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের এত পাণ্ডিত্য থাকা সত্ত্বেও কোন গ্রন্থ লিখে যান নি তার কারন অন্যসময় আলোচনা করা যাবে। কিন্তু তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন মাত্র আটটি শ্লোক যার প্রথম শ্লোকে বলেছেন ‘চেতদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি নির্বাপণম্‌...’ অর্থাৎ আমাদের জ্ঞানার্জন করতে গেলে প্রথমে চিত্ত দর্পণ মার্জিত করে তা জ্ঞান আহরণের উপযুক্ত করে তুলতে হবে, নইলে আয়নার উপরে যেমন ধুলা ময়লা জমে থাকলে যেমন পূর্ণিমার চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয় না, ঠিক তেমনিভাবে মানুষের হৃদয়ে অজ্ঞানতার মলিনতা দূর না করলে জ্ঞান সূর্যের আলোর প্রতিফলন ঘটে না। মানুষের সেই সত্ত্বা দরকার যা তাঁকে প্রতিটা বিষয়কে ছুঁড়ে ফেলার আগে তাঁকে বিশেষভাবে জানার ইচ্ছা প্রদান করবে। নইলে বাহিরের তথ্য জেনে নিজেকে সমৃদ্ধ ঘোষণা করে ভিতরের প্রকৃত তত্ত্বকে জানার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রকৃতির প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধকতা আসে। আমরা যারা আধুনিক সভ্যতার মানুষ তাঁরা বিভিন্ন চিরাচরিত ধারনাকে ভুল বলতে দ্বিধা বোধ করি না বা মুহূর্তে তা ভুল বলে প্রমান করার চেষ্টা করি। কিন্তু যেটা সময়ের সাথে সাথে আমাদের সমাজে চলমান তার নিশ্চয় একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বিদ্যমান থাকে। প্রাচীনকাল থেকে সাধু মুনি ঋষি যোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ধ্যানধারনা বা নিয়মের  ব্যাখ্যা আমাদের কাছে সবসময় সঠিকভাবে জ্ঞাত থাকে না বলে আমরা তা ত্যাগ করার পরামর্শ দিতে পারি না।                                                                                      



রচনাকাল : ১৭/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  France : 1  Germany : 1  Hungary : 1  India : 96  Romania : 2  Russian Federat : 12  Saudi Arabia : 6  Sweden : 12  
Ukraine : 8  United States : 63  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 1  China : 6  France : 1  Germany : 1  
Hungary : 1  India : 96  Romania : 2  Russian Federat : 12  
Saudi Arabia : 6  Sweden : 12  Ukraine : 8  United States : 63  
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
প্রকৃতির বিজ্ঞানই প্রকৃত বিজ্ঞান by Sanat Kumar Purkait is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫০৭১৬৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী