আগের পর্বে লোকাল ট্রেনে ডাকাতির আশঙ্কা নিয়ে বাড়ি ফেরার গল্প শুনিয়েছিলাম। আজ শোনাবো, লোকাল ট্রেনে চাক্ষুষ করা একটি সত্যি ডাকাতির ঘটনা। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাস। আমরা তখন জেলার স্বনামধন্য বিদ্যালয় ডায়মন্ডহারবার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা এখান থেকে অনেকেই যেতাম। সেদিন শনিবারের ক্লাস শেষে আমরা দুটোর ট্রেনে ফিরছিলাম। প্রতিদিন যেমন ফিরি, আজও ফিরছি। সঙ্গে অন্য স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা, ব্যাঙ্ক বীমা কর্মচারীসহ অনেকেই নিত্যযাত্রী। তবে অন্যদিনের তুলনায় এই শনিবারগুলোতে একটু ভিড় কম থাকে।
আমরা বন্ধুরা সবাই নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে আসছি। ট্রেন এগোচ্ছে, আমাদের ভিন্ন ভিন্ন আলোচনায় নিজেদের মধ্যে ডুবে আছি। কারণ, আমাদের সবাই টার্মিনাল থেকে উঠতাম বলে মোটামুটি পছন্দের জায়গা পেয়ে গোল হয়ে বসে যেতাম। কিছুদূর যাওয়ার পরে, বুঝলাম কিছু একটা অস্বস্তিকর ঘটতে চলেছে। আমরা সবাই নিশ্চুপ হয়ে ক্যাঙ্গারুর মতো দেখার চেষ্টা করছি, কামরার অপর প্রান্তে কি ঘটছে।
পাশের এক কাকু বললেন, এই তোমরা চুপ করে বসো। ট্রেনে ছিনতাই হচ্ছে। আমাদের মধ্যে একজন বলল ডাকাতি হচ্ছে রে। আমার তো বুকের মধ্যে হাবড়া-শিয়ালদা করতে শুরু করেছে। আমার কাছে সম্পদ বলতে একটা Casio fx 100 MS ক্যালকুলেটর, গোটা দশেক ফাইনাল সিট আর একটা রট্রিং পেন। এসব সাতপাঁচ ভাবছি, ঠিক তখন দেখলাম হাতে বন্দুক আর ধারালো ছুরি নিয়ে দুজন ওদিকে কেড়ে নিচ্ছে। হটাত আর একজন ছুটে এসে আমাদের বলে গেল।
- তোরা একদম চুপচাপ বসে থাকবি, কেউ ওঠার চেষ্টা করবি না। তোদের কোন ভয় নেই।
যাক একটু নিশ্চিন্ত হলেও মনের মধ্যে খোঁচা দিতে থাকলো, যদি আমার ক্যালকুলেটরটা নিয়ে নেয়! কিন্তু, ওরা তড়িঘড়ি টার্গেট লোকদের থেকে যা নেবার নিয়ে নেমে গেল পরের স্টেশনে ট্রেন ছাড়ার পরে। জীবনের প্রথম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লুঠপাট দেখলাম, তাও মাত্র ১৭ বছর বয়সে। সেকি জীবনে ভোলা যায়। সে যে লোকাল ট্রেনের ভোকাল টনিকের মত সেবন করা হয়ে গেছে। অনিবার্য কারণে ষ্টেশনের নাম ও চরিত্রের নাম কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম।
রচনাকাল : ১৬/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।