শ্রী নর্মদা মন্দিরঃ
শ্রী নর্মদা মন্দিরের নির্মাণ নিয়ে সঠিক কোন প্রামান্য নথি পাওয়া না গেলেও সম্ভবত দশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে কালচুরী রাজাদের আমলে বাঁশ বনের মধ্যে নর্মদার উদ্গম কুণ্ড আবিস্কার করার পর রেবা নায়েক এখানে মন্দির নির্মাণ করান স্বপ্নাদেশ পেয়ে। কিন্তু কালের গর্ভে সেই মন্দির বিলুপ্ত হয়ে যায়। সাম্প্রতিক অতীতে নাগপুরের ভোঁসলে রাজারা মন্দিরের জীর্ণ কাঠামো উদ্ধার করেন এবং রেবার মহারাজ গুলাব সিংহ এই মন্দিরকে সংস্কার করান। দূর থেকে এটির নির্মাণ শৈলী অনেকটাই মুসলিম ঘরানার মতো দেখায়। কারণ হিসাবে প্রবীন অমরকণ্টক নিবাসীর কাছে জানা যায় যে গুলাব সিংহের মুখ্য কারিগর ছিলেন মুসলিম। রাজা গুলাব সিংহ নির্মাণ কাজ দেখতে এসে দেখেন মন্দিরের প্রবেশদ্বারের তোরণটি অনেকটা মসজিদের প্রবেশদ্বারের মতো লাগছে। তাই রাজার নির্দেশে কারিগর প্রবেশ দ্বারের শীর্ষে গণেশ মূর্তি স্থাপন করে দেন। মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে আপনি বিশালাকার প্রস্তরময় চত্বর দেখতে পাবেন। এই চত্বরে নর্মদা মন্দির ছাড়াও একে একে পার্বতী ও অমরকন্ঠেশ্বর মহাদেব মন্দির, শ্রী কার্ত্তিক মন্দির, শ্রী অন্নপূর্ণা মন্দির, শ্রী রামদরবার, শ্রীবিষ্ণু মন্দির, শ্রী দশাবতার মন্দির, শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, শ্রী সূর্য মন্দির, শ্রী রোহিনীমাতা মন্দির, শ্রী নর্মদা উদ্গম মন্দির, শ্রী বংশেশ্বর মন্দির, শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দির, শ্রী গোরক্ষনাথ মন্দির, শ্রী ঘণ্টেশ্বর মন্দির, প্রাচীন অষ্টবসু বাঁ নবগ্রহ মন্দির, শ্রী ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির, শ্রী দুর্গা মন্দির, শ্রী সিদ্ধেশ্বর মন্দির, শ্রী গৌরীশঙ্কর মন্দির, শ্রী রামজানকী মন্দির, শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির বা মুরলীমনোহর মন্দির, শ্রী একাদশ রুদ্র মন্দির, শ্রী ওঙ্কারেশ্বর মহাদেব মন্দির, শ্রী রেবা নায়েক মন্দির, শ্রী হনুমান মন্দির, ভৈরবী চক্র ও যজ্ঞশালা দেখতে পাবেন। মন্দির পরিসরে মোট ২৭ টি মন্দির আছে। মূলমন্দিরে বিরাজমান রয়েছে মা নর্মদা।এখানে পূজা দিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম অন্য মন্দিরে। প্রণিপাত মা নর্মদা ও দেবাদিদেব মহাদেব কে। সামনেই একটি প্রস্তরের হাতি বর্তমান যার নিচ দিয়ে গলে যেতে পারলেই পুণ্য অর্জন হয় বলে ভক্তদের ধারনা। আপনিও চেষ্টা করতে ভুলবেন না।
পূর্বমুখী মন্দিরে মায়ের কালো নিরাভরণ আকর্ণ বিস্তৃত চোখ, উন্নত নাক, ক্ষীণকটি তপস্বিনী কষ্টি পাথরের মূর্তি। তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সামনের দিকে পশ্চিমমুখী মন্দিরের অভ্যন্তরের পিতা অমরনাথ বা অমরকন্ঠেশ্বর মহাদেবের দিকে। এই সকল মন্দির নর্মদার ন্যায় জাগ্রত বলে মনে করা হয়। মন্দিরের পূজা ও যজ্ঞাদির কাজকর্ম নিয়ম করেই হয়। এই স্থানের সাথে শংকরাচার্যের নাম জড়িত কারণ তিনি এই মন্দিরের ভৈরবী চক্র, হনূমান মূর্তি ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপন করেন। এছাড়াও আপনারা কোটি তীর্থ, রোহিণীকুণ্ড, প্রাচীন রঙমহল ও কর্ণমন্দির দেখতে পাবেন। এই কর্ণ মন্দির মহারাজ কর্ণের সময় অমরকণ্টক ক্ষেত্র খুবই সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। রাজা কর্ণ অত্যন্ত সাত্ত্বিক প্রকৃতির ও শক্তিশালী ছিলেন। কালচুরী রাজাদের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই মন্দির নির্মাণ করানো হয় পরবর্তীকালে। নর্মদা মন্দিরের বাঁদিকে ১০০ মিটার দূরে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরগুলি বর্তমানে ভারতের পুরাতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত। প্রাচীনতার মাঝে আধুনিকতার ছোঁয়া আপনাকে বাংলার মুর্শিদাবাদ থেকে দক্ষিণ ভারতের গোলাপবাগকে স্মরণ করাবে। এর পূর্বদিকে প্রায় ১ কিমি দূরে নানান ওষধি গাছের সমাহারে মা নর্মদার খেলার জায়গা মাই কি বাগিয়া বা মায়ের খেলার বাগান বর্তমান। চলুন এবার মায়ের বাগানে যাওয়া যাক।
মাই-কি-বাগিয়া (মায়েরবাগান):
নর্মদা মন্দিরের পূর্বদিকে প্রায় ১ কিমি হাঁটা পথে মাই-কি-বাগিয়া বা মায়ের বাগান।এর অন্য নাম চরনোদক কুণ্ড। এটি মা নর্মদার খেলার জায়গা। আমরা অবশ্য গাড়িতে করে গেলাম। মৈকল রাজার কন্যা রূপে নর্মদা তার বাল্য সখা গোলাব কাউলির সঙ্গে এই বনে খেলা করতেন। এখানে একটি জলকুণ্ড আছে। এই জল নর্মদার জলময়ী রূপ। সেটি চরনোদক কুণ্ড নামে পরিচিত। মায়ের বাগানে বিভিন্ন প্রকার ওষধি বৃক্ষ রয়েছে। গোলাব কাউলি বৃক্ষ চোখের রোগে খুব উপকারী। পূর্বে গোলাব কাউলি কেবল অমরকন্টকে দেখতে পাওয়া গেলেও এখন অন্যত্র এর চাষ বর্তমান। এখানে বানরকুল তাদের সাম্রাজ্য বিনা বাধায় বিস্তার ঘটিয়েছে। আপনারা একটু বেখেয়াল হলে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারাতে পারেন।
শোনমুড়াঃ
মাইকি বাগিয়া থেকে বেরিয়ে ১ কিমি দুরে শোনমুড়ার অবস্থান। হাঁটাপথে মিনিট দশেক চলার পর বাঁদিকে বাঁধানো সিড়ি নেমে গেছে পাহাড়ি খাদের দিকে। শোনমুড়া শোন নদের উৎস স্থল। স্থানীয়নাম 'শনেমারা'। সিঁড়ি দিয়ে অনেকটা নেমে একটা বাঁধানো কুণ্ড। লেখা রয়েছে ব্রহ্মপুত্র শোন। আট দশ হাত দুরে আরেকটি কুণ্ড। ভদ্রনদের উৎপত্তিস্থল। ভদ্রনদ কয়েকহাত দুরে গিয়ে তির তির জল ধারায় মিশে গেছে। উভয়ের মিলিত নাম শোনভদ্র। শোনভদ্রের মিলিত জলধারা সেখান থেকে নেমে ক্রমে চলে যাচ্ছে ১৫০ মিটার দুরে পাহাড়ি গিরিখাদের দিকে। সেখান থেকে জলপ্রপাত রূপে শোননদ পাহাড় থেকে নিচের গভীর খাদে পড়ে প্রায় পাঁচশো মাইল দীর্ঘপথ অতিক্রম করে বিহারের রাজধানী পাটনার কাছে গঙ্গার সাথে মিলিত হয়েছে। শোনের অপর নাম হিরন্যবাহ। যেখান থেকে জলধারা পাহাড়ের নিচে পড়ছে, সেখানে ভিউপয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে। সাধারন ভ্রমনার্থীরা এটিকে সুইসাইড পয়েন্ট নামে চেনে। যাইহোক, ভিউপয়েন্ট থেকে দূরের ঘন অরণ্যে সজ্জিত পর্বতরাজির দৃশ্য খুবই নয়নাভিরাম।
পুরাণ মতে ব্রহ্মার অশ্রু থেকে শোননদের উৎপত্তি। তবে স্থানীয় কাহিনী ও বর্তমান। পুরাকালে মেকল পর্বতে রাজা মৈকালের একমাত্র কন্যার নাম ছিল নর্মদা। পিতার আদরের কন্যার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পিতা সুরম্য ফুলের বাগান ও সুসজ্জিত শিবমন্দির নির্মান করান। নর্মদার সৌন্দর্য ইতিপূর্বে আপনারা জেনেছেন। একদা শোনভদ্র নামে এক রাজপুত্র সন্ন্যাসী বেশে নর্মদা উদ্যানে এসে তাঁর রূপে মোহিত হয়ে প্রেম নিবেদন করেন ও নর্মদাও তার প্রতি অনুরক্ত হয়। তখন রাজপুত্র তাঁর নিজের পরিচয় দান করেন। শিব সাক্ষী করে দুজনের বাগদানপর্ব সম্পন্ন হয়। এরপর শোনভদ্র পিতাকে সঙ্গে নিয়ে এসে রাজা মৈকাল এর কাছে পাণি প্রার্থনা করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিনি নিজ রাজ্যে গিয়ে যুদ্ধকার্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে সময়ের সাথে সাথে রাজা মৈকাল মেয়েকে পাত্র দেখে বিয়ে দিতে চাইলে নর্মদা রাজী হয়ে যান। এদিকে বিয়ের পরে পরেই রাজা শোনভদ্র পিতাকে নিয়ে হাজির হন ও সবকিছু জানার পরে নর্মদাকে অভিশাপ দেন। ' নর্মদা তুমি আমার প্রেমের অবমাননা করেছ, বিশ্বাসঘাতকতা করেছ। আজ থেকে তুমি নদীতে পরিনত হও। তখন নর্মদা বললেন, বিনাদোষে তুমি আমায় অভিশাপ দিলে। আমি যদি নদী হই তবে তুমিও নদে পরিনত হও।' তবে এসব গল্পগাথা কালের ক্রমবিবর্তনে আজও বিদ্যমান। নর্মদার পুরাতাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক সত্ত্বা সর্বজন স্বীকৃত।
শোনাক্ষী দেবীর মন্দিরঃ
প্রিয়পাঠক, শোনমুড়াতেই শোননদের উদ্গম কুণ্ডের পাশেই দেখতে পাবেন শোনাক্ষী দেবীর মন্দির। এই মন্দির সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম সতীপীঠ। দক্ষযজ্ঞে দেবী অপমানিত হয়ে যখন দেহত্যাগ করার পর দেবাদিদেব মহাদেব সতীর দেহ কাঁধে চড়িয়ে সারাজগৎ পরিভ্রমন করছিলেন এবং ভগবান বিষ্ণু তাঁর সুদর্শনচক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ডবিখণ্ড করছিলেন তখন এইস্থানে দেবীর বামনিতম্ব পতিত হয়। কালক্রমে তা তীর্থক্ষেত্রে রূপ নেয়। তবে অন্যান্য সতীপীঠের ন্যায় এর জৌলুসতা নেই। এখানেও আপনাকেও আপনার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র সাবধানে রাখতে হবে, কারন মাইকিবাগিয়ার মতো এখানেও বানর কুলের আধিপত্য বর্তমান। এখানে নবরাত্রিতে ধুমধাম করে পূজা ও উৎসব হয়।
সুইসাইড পয়েন্টঃ
দেবীর মন্দির থেকে বেরিয়ে ডানদিকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলে যেখানে সবুজ আস্তরণে মোড়া নর্মদা ও শোন উপত্যকা দেখতে পাওয়া যায়। এখানেই রয়েছে সুইসাইড পয়েন্ট। অনেকের ধারনা আছে, সুইসাইড পয়েন্ট মনে হয় কোন একটি জায়গা, কিন্তু তা নয়। পাহাড়ে বা সাগরের উপকুলে এমন অনেক জায়গা বর্তমান যা সুইসাইড পয়েন্ট নামে পরিচিত। কারন ঐ সকল স্থান থেকে কেউ পড়লে আর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে না। তবে ঝুঁকি না নিলে পরমানন্দ মিলে না। তাই সুইসাইড পয়েন্ট এ না দাঁড়ালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিপূর্ণ ভাবে উপভোগ করা যায় না।
আদিনাথ জৈন মন্দির বা জৈন তীর্থঃ
নর্মদা মন্দিরের ১ কিমি উত্তরে পাহাড়ের চড়াইয়ে আদিনাথ জৈন মন্দিরের নির্মাণ কাজ চলছে। জৈন সম্প্রদায়ের আচার্য পূজ্য ১০৮ শ্রী শ্রী বিদ্যাসাগর মহারাজের প্রেরণায় সুবিশাল মন্দিরটির নির্মাণ কাজ চলছে। রাজস্থানী বেলেপাথরের নির্মিত মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ৪৫০ ফুট, প্রস্থ ১২৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৫১ ফুট। গর্ভগৃহে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার ও ২৪ টন ওজনের ভগবান আদিনাথ বা ঋসভদেবের অষ্টধাতুর বিগ্রহ বিদ্যমান। আমরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জনজাতির সংস্কৃতির সাথে সাথে তাদের শিল্পকলা, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নিদর্শন পেয়েছি। দক্ষিন ভারতের রামেশ্বরম মন্দির বা পদ্মনাভস্বামীনারায়ন মন্দির, পূর্বভারতের পুরীর জগন্নাথ মন্দির, কোনারকের সূর্যমন্দির বা মধ্যভারতের খাজুরাহো বা পশ্চিমভারতের দ্বারকার সোমনাথ মন্দির বা কৈলাশ, কেদার, লিঙ্গরাজ, মহাবলিপুরম, বিরূপাক্ষ, দ্বারকাধীশ, রঙ্গনাথস্বামী, মাদুরাই এর মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বরম মন্দির, এর শিল্পকলা আধুনিক মানুষকে ভাবায় তার কারুকলা ও নৈপুন্যতায়। কিন্তু সেসব সুপ্রাচীন অতীতকালের শিল্পমাধুর্য্যধারা। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আদিনাথ জৈন মন্দিরের ভাস্কর্য্য নতুন করে ভাবায়। নীরবে বলতে চায়, "শিল্পীর কোন দিন মৃত্যু হয় না"। একবিংশ শতকের যান্ত্রিক যুগে দাঁড়িয়ে রাজস্থানী বেলেপাথরের উপর মানুষের হাতের সুনিপুন খোদিত তুলির টান আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করবেই। বিগ্রহ দর্শনের পাশাপাশি মন্দিরের ভাস্কর্য আপনাকে বিন্দুতে বিন্দুতে আটকে রাখবে। তবে শিল্পীর রসমাধুর্য বুঝতে গেলে অবশ্যই আপনাকে রসিক মানুষ হতে হবে।
শ্রীযন্ত্র মহামেরু মন্দিরঃ
নর্মদা মন্দিরের দক্ষিনে সোনমুড়া যাওয়ার রাস্তায় কিছুটা দুরেই নির্মীয়মাণ এই মন্দিরটি । মন্দিরের নামেই বোঝা যাচ্ছে মন্দিরটি শ্রী যন্ত্রের ন্যায় নির্মিত। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রতিটিই ৫২ ফুট। মন্দিরের গায়ে সুন্দর দেবদেবীর ভাস্কর্য বিদ্যমান। স্বামী সুকদেবানন্দজী শ্রীযন্ত্র মহামেরু মন্দিরের প্রাণপুরুষ। এই মন্দিরে একটি বিশালাকার হাতি ছিল যেটি সম্প্রতি মারা যায়।এই মন্দিরের সংস্কারের কাজ চলায় আমরা প্রবেশাধিকার পায় নি। তবে বাইরে থেকে যেটুকু বোঝা যায় এই মন্দির।
কপিলধারাঃ
নর্মদা নদীর পশ্চিমে প্রায় ৮ কিমি দূরে গেলে দেখতে পাবেন নর্মদার প্রথম প্রাকৃতিক জলপ্রপাত কপিলধারা। শোনা যায় মহামুনি কপিল এখানে দাঁড়িয়ে শিবের তপস্যা করেছিলেন। তাই তাঁর নামানুসারে এই জলধারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যে ২২ জন কপিলের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে কোন কপিল এখানে তপস্যা করেন তা বিশদভাবে জানা যায় না। নর্মদা এখানে প্রায় ১০০ ফুট নিচে ভূপতিত হচ্ছে। পর্যটকদের দেখার জন্য এখানে ভিউপয়েন্ট করে দেওয়া হয়েছে। জলপ্রপাতের কিছু আগে কপিলমুনির প্রস্তরীভূত পায়ের ছাপ বর্তমান। নর্মদা নদীর উপরে আছে ছোট্ট লোহার সেতু যেটি পেরোলেই দেখতে পাবেন উত্তরতটে স্থিত শিবলিঙ্গ যা কিনা কপিলেশ্বর নামে সমধিক পরিচিত।
দুধধারাঃ
কপিলধারা বাঁদিকে রেখে নিচে ঘন জঙ্গলের মধ্যে আরও প্রায় এক কিলোমিটার পথ নিচের দিকে হাঁটলে দেখবেন নর্মদার দ্বিতীয় জলপ্রপাত দুধধারা। জলপ্রপাতের উচ্চতা মাত্র ১০ ফুট হলেও এর পবিত্রতা আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিন্যাস করে তুলেছে অতীব মনোরম ও মাধুর্য্যমন্ডিত। কথিত আছে এখানে দুর্বাসা ঋষি তপস্যা করেছিলেন। দুধধারার পাশেই দুর্বাশার গুহা আজও বিদ্যমান। সেই কারনে এই স্থান প্রথমে দুর্বাসাধারা নামে পরিচিত হলেও উচ্চারনের অপভ্রংশের জন্য পরবর্তী কালে দুধধারা নামে পরিচিতি পায়। আবার মতান্তরে, রেবা রাজ্যের রাজকুমার এই স্থানে নর্মদাকে একটি দুধের ধারারূপে প্রবাহিত হতে দেখেন তাই এরূপ নামকরন। এই জলপ্রপাতের জলে পুন্যার্থীরা স্নান করে পুন্য অর্জন করেন। জুতা পরে নর্মদার জলে নামতে দেওয়া হয় না।
জলেশ্বর মহাদেবঃ
অমরকন্টক থেকে রাজেন্দ্রগাঁওগামী রাস্তায় ১০ কিমি যাওয়ার পর ডানদিকে অর্থাৎ ঠিক মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড় এর সীমান্ত বরাবর পেন্ড্রারোড স্টেশনে যাওয়ার পথেই বাঁদিকেই পড়বে জলেশ্বর মহাদেব মন্দির। জলেশ্বর পাহাড়ে অবস্থিত এই মন্দির ও বিগ্রহ আড়ম্বরহীন অবস্থায় বিদ্যমান। এর মাহাত্ম্য সর্বজনবিদিত। মানস সরোবরের পাশেই কৈলাস শিবের আদি বাসস্থান হলেও অমরকন্টকের জলেশ্বর শিবের দ্বিতীয় কৈলাশ বলে মনে করা হয়। তিনি এখানে ত্রিপুরাসুর বধ করবার জন্য একহাজার বছর নির্মিলিত নয়নে চেয়ে থেকে অঘোর দিব্যাস্ত্র প্রাপ্ত হন। একভাবে দীর্ঘকাল তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ থেকে যে অশ্রু নির্গত হয় তাই রুদ্রের অক্ষ- রুদ্রাক্ষ। মন্দিরের গর্ভগৃহে দুই ফুট নিচে চ্যাপ্টা শিবলিঙ্গ জলেশ্বর মহাদেব। আপনি মন্দিরের ভিতরে পূজারী বা পূজার উপকরন না দেখতে পেলেও, শিবকে তার দ্বিতীয় কৈলাসে বসে থাকতে দেখবেন ভক্তবাঞ্ছা কল্পতরু রূপে।
অম্বিকেশ্বরঃ
জলেশ্বর মহাদেব মন্দির অর্থাৎ শিবের দ্বিতীয় কৈলাস থেকে বেরিয়ে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত অম্বিকেশ্বর মহাদেবের মন্দির যেখানে শিবের দ্বাদশ লিঙ্গ বর্তমান। এই মন্দিরের গর্ভগৃহে ১২ ফুট উচ্চতার বিরাট আকারের শিবলিঙ্গ ভক্তদের কাছে এক মাহাত্ম্য ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। নবনির্মিত এই মন্দির খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই মন্দির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। আপনারাও অবশ্যই করে এই মন্দিরে পদার্পণ করে দেবদর্শন করে আসবেন।
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।