(১)
ছেলে হলে নাম রাখবো ডেল্টা,
যার অর্থ ব-দ্বীপ।
মনে মনে বলেছিল সম্প্রীতি ।
তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে গঙ্গার নিত্য আনাগোনা।
গঙ্গা যখন পূর্ণ যৌবনা,
উছল ধারায় হত প্রবাহিত,
হিমাচল থেকে সমুদ্রের অতল আহ্বানে।
যৌবনের গঙ্গার পবিত্রতা সবাই বুঝেছিল।
তাই হরিদ্বার, বারানসী, নবদ্বীপ থেকে কালিঘাট।
এমনকি গঙ্গোত্রী বা গঙ্গাসাগরও বাদ যায় নি,
সর্বত্র রচিত হল তাঁর পবিত্রতায় মন্দির, দেউল।
উন্মত্ত কল্লোলিনী লাবন্যময়ী প্রদীপ্তা গঙ্গার সাথে মিলতে চাইল অনেকেই!
অজয়, দামোদর থেকে শুরু করে রূপনারায়ণ।
গঙ্গা যেন তাঁদের ছোঁয়া পেয়ে নারী থেকে হল মাতৃস্বরূপা।
প্রবাহের প্রতিটা পলেপলে আনন্দধারা।
আজ গঙ্গা তাঁর নারীত্বের পূর্ণ স্বাদ পেয়েছে।
মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে সন্তানসম একগুচ্ছ বদ্বীপ।
দ্বীপের সংখ্যা বাড়ে, আয়তন বাড়ে।
ভুলে যায় অজয়, দামোদরও মনে রাখে নি গঙ্গাকে।
শুধু বাদলদিনে মাতাল হয়ে অত্যাচারের পাত্রী হিসাবে গঙ্গাকে ভাবে,
আর নেশার ঘোরে তাঁর হৃদয়কে করে কলঙ্কিত।
শত সহস্র বছর ধরে এই সংসারের চাপ নিয়ে চলেছে কলঙ্কিত গঙ্গা।
সব সহ্য করতে করতে গঙ্গা আজ রিক্ত।
তাই সে মাঝে, মাঝেই হৃদয়ের টান ভুলে উবে যায়।
সে শান্তিপুর হোক আর দক্ষিণেশ্বর।
নিতান্ত অভিমানে ভোগে রক্তশুন্যতায়, থুড়ি জলশুন্যতায়।
আমরা কেউ দেখেও দেখি না,
কিভাবে যৌবনের লেলিহানশিখা ধীরেধীরে শেষ হয়ে যায়।
তাঁর আর কি পাওয়ার আছে যে সে বাঁচবে!
সবাই ভুললেও ভোলে না তাঁর সৃষ্টি।
গঙ্গা তাই বেঁচে থাকে উপকুলে, মোহনায়, ব-দ্বীপের মাঝখানে।
তাঁরাই তো অপত্যসম, মায়ের সম্মান রক্ষায় অতন্দ্রপ্রহরী।
তাই ছেলে হলে নাম রাখবো ডেল্টা, যার অর্থ ব-দ্বীপ।
মনে মনে বলেছিল সম্প্রীতি।
(২)
সম্প্রীতি গঙ্গার পাড়ে খেলে বেড়ায়।
গঙ্গার বুকে কান পেতে, হাসির মাঝে কান্না শোনে।
সুন্দরবনের নদীপাড়ে যৌবনের প্রদীপ জ্বেলে,
আলো করে রাখে সভ্যতার অন্ধকার।
তারপর একদিন নতুন ভোরের আলো মেখে,
চোখে মুখে স্বপ্ন নিয়ে সম্প্রীতি আসে তিলোত্তমা কলকাতায়।
দারিদ্র্য আর লড়াইয়ের মাঝে, শক্তি শুধুই সততা আর মেধার প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা।
সদাহাস্যময়ী সম্প্রীতি জিতে যায় দারিদ্র্যকে হারিয়ে।
চাকরী পেয়ে যায় শহরতলীর স্কুলে।
উছলধারায় মিশতে চায় অজয়, দামোদর রা।
একদিন গভীর ভালোবাসায় কাছে টানে শহর থেকে ইংরেজির শিক্ষক অমলেশ।
প্রেম, বিয়ে, সংসার- সব মিলিয়ে সম্প্রীতির নতুন স্বর্গ।
সম্প্রীতি মা হল, পেল নারীত্বের পূর্ণ স্বাদ।
কিন্তু, ডেল্টা নাম রাখা হল না সন্তানের।
সম্প্রীতি'র কোল আলো করে এল মেয়েবেলার সম্প্রীতি।
আদর করে নাম রাখে সৃজনী।
একদিন সম্প্রীতির জীবনে এল দূর্যোগ।
অমলেশ অন্য স্কুলে চলে গেল।
অজয়, দামোদরের মত সম্প্রীতি, সৃজনীতে অমলেশ থাকে উদাসীন।
ভুলে গেল সুখের সাগরের প্রানবন্ত ঢেউ।
অনেক চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে সৃজনী।
জৈবিক তাড়নায় থাকে নির্বিকার।
সৃজনীকে আগলে ধরে জীবন নদীর ধারা বহে চলে সম্প্রীতির।
ঠিক যেমন ডেল্টাকে আঁকড়ে ধরে আজও বাঁচে গঙ্গা।
গঙ্গা আর সম্প্রীতি আজও আছে সচল, সমান্তরাল ধারায়।
শুধু অজয়, দামোদর, অমলেশদের বুকে ফেরে দুরে রাখার যন্ত্রনা।
সৃজনী হয়ে যায় সম্প্রীতি'র ডেল্টা।
অজয়ের পাড়ে / ২৭-০১-২০১৯
(সকল চরিত্র কাল্পনিক)
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।