কবি সুপ্রকাশ ঘোষাল। ওপার বাংলায় জন্ম ও শৈশব কাটলেও বাবা মায়ের হাত ধরে এক সময় এদেশে চলে আসেন। তারপর এখানে উচ্চশিক্ষা ও লেখালেখি শুরু। তাঁর লেখনিতে বেশ জোর আছে বলতে হবে। দুই বাংলার আপামর মানুষ তাঁর লেখনিতে বেশ গুণমুগ্ধ পাঠক হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রত্যেকটা বই বেস্টসেলার তকমা পায়। অনেকেই একনিষ্ঠ ভক্ত হলেও শত্রু যে বিশেষ নেই তা বলা যাবে না। এখন তাঁর বিরাট নাম, একডাকে সবাই চেনেন। দুই বাংলার মানুষ মেতে আছে তাঁর প্রেমের কবিতায়। তাঁর কবিতায় মানুষ হাসে, তাঁর কবিতায় মানুষ কাঁদে। তাঁর কবিতায় মানুষ নতুন করে প্রেমে পড়ে।এ বছর ডি. লিট. পুরস্কার এ মনোনীত হয়েছেন কবি সুপ্রকাশ ঘোষাল। তাঁর মত সুখী আর কে থাকতে পারে বলো। অনেকদিনের স্বপ্ন পুরন হতে চলেছে সুপ্রকাশ বাবুর। চারিদিকে কবি সুপ্রকাশের ব্যাপক নাম ডাক। এখন বাড়ির মেন গেটের সামনে নেমপ্লেট বসাতে হয়েছে। পাবলিশার্সদের আনাগোনা বেড়েছে। সবাই জানে কবির সুখের অন্ত নাই। সুখী তো বটেই। সুপ্রকাশ বিয়ে করেছিলেন এক সুন্দরী রমণী-শুচিস্মিতার সাথে। ছেলেপুলেও আছে। দুই সন্তান- সঙ্ঘমিত্রা ও সুশোভন। কিন্তু ওই পর্যন্ত। সংসারের কোন খেয়াল রাখেন না। ছেলে মেয়ে তাদের পড়াশুনা থেকে শুরু করে সবকিছুই একা হাতে সামলায় শুচিস্মিতা। এই নিয়ে সুপ্রকাশের সাথে কম ঝামেলা হয় নি। এতো গেল একদিকের কথা। যাকে আমরা সর্বসুখী বলে মনে করছি তিনি কিন্তু সর্বসুখী না। কারন, কবি সুপ্রকাশ বাড়ি ফিরে যখন কমোডে বসেন। রাতের পর রাত জেগে, খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম করে যে মানুষ দুই বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতার জন্য ভেবেছেন আর কলমের গতি বাড়িয়েছেন, তাঁকে সময় গ্রাস করেছে। একটু চাপে যখন ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরে, তখন কবির চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরে। সব সুখ সম্মান শুন্যে মিলিয়ে যায়। বাইশ বছর ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী। অর্শের ব্যাথা তাঁর সব আনন্দ নিয়েছে কেড়ে। যিনি ডি. লিট. সম্মান পাওয়ার আনন্দ পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারছেন না, শুধুমাত্র তাঁদের প্রতি কর্তব্য পালন করেন নি বলে। আমরা যারা তাঁর লেখা পড়ে পাগলপারা হই, তারা কেউ জানি না তাঁর এই দুরারোগ্য ব্যাধির কথা। সবাই বহিরাঙ্গের কথা ভাবি, সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। অন্তরঙ্গের কথা জানার চেষ্টাও করি না। তাই আবার প্রশ্ন রেখে যায়, সুখ কোথায়? যে লোক লিখতে পারে নি কোনদিন সে তাঁর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চুটিয়ে সংসারের স্বাদ আস্বাদন করেছেন তিনি তো সুখের স্বর্গে বাস করেন। নাই বা চিনল তাঁকে সারা পৃথিবীর লোক। খ্যাতি মানুষকে মহৎ করে তোলে, কিন্তু খ্যাতির বিড়ম্বনা আছে। তার ফল অত্যন্ত করুন। সুখ স্বপনে, শান্তি শ্মশানে। সুখ অনুভব করতে হয়। কেউ আপনজনদের বঞ্চিত করে নিজ সুখ প্রতিষ্ঠা করতে বধ্যপরিকর, আবার কেউ নিজ স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পরহিতে জীবন শেষ করে। আমরা ভুলে যায় যে, যশ, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা। শুকরের বিষ্ঠা। তাই আপনজনের প্রতি কর্তব্য প্রাথমিক সুখ প্রদান করে সেটা দেরিতে হলেও অনুভব করেছিলেন কবি সুপ্রকাশ। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই গল্পের কাহিনী ও সংশ্লিষ্ট চরিত্র সবই কাল্পনিক। ঘটনার মধ্যে কেউ যদি তাঁর জীবনের বাস্তব ছবি প্রতীয়মান হতে দেখেন তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এড়িয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।