কাশীনাথ মিত্র এ পাড়ার খুব নামকরা মাস্টারমশাই। দীর্ঘদিন শিক্ষকতার চাকরী করে যশ, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা সব জুটেছে কপালে। এখন তাঁর ভরা সংসার। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ভালো পরিবারের ভালো চাকুরে ছেলে দেখে। বড় ছেলে সুশোভন কে বিয়ে দিয়েছেন একটি লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে দেখে। মিত্তিরদের লক্ষ্মীমন্ত বড়বউ উপাসনা। যেমনি শিক্ষিত, তেমনি গুনবতী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার ডিগ্রিতে ফার্স্ট ক্লাস। বছর তিনেক হল তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হয়েছে। নাম রেখেছে অভিনন্দন। অভিনন্দন মিত্রকে সাউথ পয়েন্ট এর কিডস সেকসানে এডমিশন করেছে। তুলসী তলায় প্রদীপ দেখানো থেকে ছোট্ট ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া। হেঁশেল থেকে নাচ গানে পারদর্শিতার অভাব নাই। কাশীনাথ মিত্রের এই নিয়ে পাড়ায় দারুন সুখ্যাতি। বেশ সুখেই কাটছিল দিন। সকালে ছোট বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে অপেক্ষা করে আবার স্কুল শেষে তাকে নিয়ে আবার ফিরে আসে। এভাবেই দিন যায়, দিন আসে। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে অন্য বাচ্চাদের মায়েদের সাথে গল্প করে সময় কাটায় উপাসনা। তারপর বাবুকে নিয়ে দুপুর গড়িয়ে বাড়িতে ফেরা। এভাবেই চলছিল, এমনটাই সবাই জানতো। এমনি সুখের সংসারে আগুন ধরল। সেদিন মিত্রবাবু ব্যাঙ্কের কাজে একটু গড়িয়াহাট যেতে হয়েছিল। ফেরার পথে তাঁর মনে হল আজ নাতি ও বৌমাকে সঙ্গে করে নিয়ে একসাথে ফিরবেন। এতক্ষনে নিশ্চিত অভির ক্লাস শেষ হয়ে গ্যাছে। সাউথ পয়েন্টের কাছাকাছি আসতেই মিত্র মহাশয় অবাক হলেন। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। চোখদুটো দু একবার রগড়ে নিয়ে ভালো করে দেখলেন। যা দেখলেন তা মিত্র মশায়ের চোদ্দ পুরুষের নাম ভুলে যাওয়ার জোগাড়। সতীসাধ্বী উপাসনা হাতেনাতে ধরা পড়লো রতনবাবুর ডান্সিংকারে। একেবারে আলুথালু অবিন্যস্থ কেশরাজি নিয়ে নেমে এল মিত্তির বাড়ির লক্ষ্মীমন্ত বড় বউ উপাসনা। রতন বাবুর সাথে তাঁর পরিচয় গত মাস পাঁচেক আগে। রতন লাহিড়ী হলো বাবু’র বন্ধু শিবার বাবা। বেশ কয়েকদিনের আলাপে সুন্দর সম্পর্কটা ধীরে ধীরে গাড়ির কালো কাঁচের ওপারে চলে গেছিল। অবৈধ নেশায় ধরা দিয়েছিল কোন এক কালো দিনে। ভাঙল সুখের হাট। এখানে গীতিকারের গান রচনায় সার্থকতা।
সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়... কেউ হয়না
জানিনা বলে যা লোকে... সত্যি কিনা
কপালে সবার নাকি সুখ সয়না।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই গল্পের কাহিনী ও সংশ্লিষ্ট চরিত্র সবই কাল্পনিক। ঘটনার মধ্যে কেউ যদি তাঁর জীবনের বাস্তব ছবি প্রতীয়মান হতে দেখেন তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এড়িয়ে যাবেন। ধন্যবাদ।
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।