বিবর্তন
আনুমানিক পঠন সময় : ৬ মিনিট

লেখিকা : নন্দিতা সরকার
দেশ : India , শহর : সোনারপুর

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , এপ্রিল
প্রকাশিত ১৬ টি লেখনী ২৯ টি দেশ ব্যাপী ১০৬০৪ জন পড়েছেন।
Nandita Sarkar
অনেক ঝড় সামলে আজ তপস্যা নিজের একটা জায়গা করেছে।নিজে কোনো দিন কারো ওপর নির্ভরশীল থাকবেনা ,এটাই তার তপস্যা ছিল । 

    ছোট থেকেই দেখে এসেছে মেয়ে বলে তাকে অনেক লড়াই লড়তে হয়েছে। সে থেমে থাকেনি। তার মা কে ও শুনতে হয়েছে  তাদের বংশ রক্ষা হোলো না। একটা সদুত্তর সমাজের কাছে পাইনি, ছেলেরা বংশ প্রদীপ, আর   মেয়েরা  কি ....প্রদীপ এর নিচের অন্ধকার? হাসি পায় একবিংশ শতাব্দী তে ও এখনও মানুষ যে তিমিরে ,সেই তিমিরেই আছে। শুধু পোশাকে পরিবর্তন হলেও মন টা হাজার বছর পিছিয়ে। আজও তার প্রশ্ন জাগে কারা এই সমাজ তৈরি করেছে?যেখানে জাতের বড়াই করে এক শ্রেণীর মানুষ আজও গলা ফাটাচ্ছে উচু জাতের তকমা এঁটে।তাদের সাথে মেশার পর দুদিন বাদে যখন তার কি জাত জেনে যায় শুনতে হয় সেই মিছরির ছুরি ' কিছু মনে করিসনা ..তোরা তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিস।এক বিন্দু ,তখন যে বলছে কথা গুলো তার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না। সমাজবিদ্যা নিয়ে পড়ে সে, জাতিভেদ প্রথা কি ভাবে কাজের ভিত্তিতে তৈরি করিয়ে নিজেদের মধ্যে মনুর সন্তান রা ভেদাভেদ এনেছে সেটা বুঝেও যায়।কিন্তু এখনও সেটা চলেই আসছে। আজ নর্দমা পরিষ্কার করছে... তারা মেথর,কিন্তু এই নোংরা পরিষ্কার যদি তারা না করতো তবে  তো চারিদিক পূতি গন্ধময় হয়ে যেত ,সেটা সমাজ কি করে ভুলে যায়।ছোটবেলায় তাদের বাড়িতে খবর , গল্পনাটক, সে পড়ার ফাঁকে রেডিও তে শুনত।এমন এক রাতে সে সংবিধান এর রূপকার  বাবা সাহেব আম্বেদকর এর জীবন  নিয়ে একটা নাটক শুনেছিল।সেটা আজও তার মণিকোঠায় বর্তমান।

    একটা ছেলে তৃষ্ণার্ত , জল  চেয়ে ও তাকে কেউ জল দেয় নি ...তার অপরাধ সে নিচু জাতের ছেলে। মা কে প্রশ্ন করে ছিল এমন কেন হয় মা? মা বুঝিয়ে বলেছিল।চোখে জল এসেছিল।তখন থেকেই তার মনে জাতিভেদ প্রথা না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছিলো।

    বাস্তব যে  কত  রূঢ় ! তো সে নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছে। পরীক্ষার ফল  তার বরাবরই ভালো।তাই সেখানে আঘাত তার বন্ধুরা করতে না পারলেও বলতেও ছাড়েনি।মিছরির ছুরি কি সেটা সে বুঝেছে। চাকরি তে ও সে অনেক উচু জাতের উপরে টপকালেও শুনতে  হয় ...তাদের একটা সিট সে বেদখল করেছে। অ্যাকাডেমিক স্কোর এ ও বেশি সবার থেকে তাও পিছনে টিপ্পনী কাটার লোকের অভাব হয় নি।সে চিনেছে সবাই কে 
  কিন্তু একটা ভুল সে করেই বসলো ...মন টা সে এক তথা কথিত উচু জাতের গোঁড়া পরিবারে র ছেলে কে দিয়ে ফেললো।তার ফল ও মারাত্মক।

   আজ ও তার শ্বশুর বাড়ী তে হাভে ভাবে বুঝিয়ে দেয় সে কোন জাতির। পূজোর অধিকার সে পাইনি।নিচু জাতের থালা আলাদা,এমন মানসিকতা র মানুষ দের সাথে মিশতে তার রুচি তে বাধে।কিন্তু সংসার এর শান্তি কল্পে মানতে বাধ্য হয়।

      এমন একদিন আসবে সে কল্পনা ও করেনি।হাসপাতালে যে শুয়ে আছে।তার শাশুড়ি মা।অবশ্য বিয়ের পর মায়ের রূপ এর থেকে তার শাশুড়ির রূপ টা প্রকট ছিল। বুঝিয়ে দিতে এক পাও পিছিয়ে ছিলনা তার আদরের মেয়ে ও উচ্চ বংশ জাত উঁচু পদে চাকুরে জামাই ও।ঘেন্না করতো মনে মনে আর ঠাকুর কে ডাকতো যেনো ঠাকুর যদি সত্য হয়  তবে উলোট পুরান টা সে যেনো দেখে।আর ও ঘেন্না করে যাকে বিয়ে করেছে সেই মাতৃ ভক্ত অমেরুদণ্ডী প্রাণী কে যে মায়ের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি।

     তার এই চিন্তায় ছেদ পড়লো তার মাতৃ ভক্ত স্বামী যখন চিন্তিত মুখে বলল রক্ত পাবো কোথায়? মারণব্যাধি র জন্য অন্য কোথা থেকে রক্ত নিতেও ভয় হয়।

  তপস্যা মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলো কোন গ্রুপ? 

  বি নেগেটিভ।। রেয়ার গ্রুপ।পাওয়া মুশকিল।। করোনা র সময় অচেনা কারো থেকে তো রক্ত নিতেও ভয়।

  তপস্যা আস্তে আস্তে বললো ।।"আমার গ্রুপতো বি নেগেটিভ"।

তার বরের এবার মনে পড়লো সত্যি তো ।।তার তো চিন্তা করা উচিত হয়নি।  তপস্যা বলল কিন্তু... সবাই  কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে রইলো ।।।সে বললো তার রক্ত কি তাদের উচু জাতের রক্তে র সাথে মিলবে? বললো রক্তের রং কি আলাদা? চামড়া কেটে গেলে তো সবার রক্ত লাল দেখেছে! 
     আর বেশি সময় নেই, তাড়াতাড়ি করতে হবে বলে  তার বর ডক্টর এর কাছে ছুটলো মুস্কিল আসান  হলো বলে ।

     তার বর আর নন্দাই এর চোখ সমিহে নত। যেনো কি মহান কাজ সে করেছে  ।।

বিছানা র পাশে যখন সবাই রক্ত দেওয়ার পর...সে একটাই কথা বলল... রক্তের রঙ টা কি মিলেছে?তার বর বললো কেনো এমন বলছো?
তপস্যা বললো ...এমন দিন যে আসবে সেও জানত না।ছোট থেকে একটা কথা জানে..গরীব ,বড়োলোক, মুচিমেথর ,মুসলিম ,খ্রিস্টান সবাই  এক।সবার রক্ত লাল।কিন্তু মানুষের রুচি বা শিক্ষা কালের বিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়নি।তাইতো এত ভেদাভেদ,তাই দেশের এত দুর্দশা যখন সমগ্র মানুষ  জাতি র এক হওয়ার দিন এসেছে তখনও মানুষ জাতপাত এর হিসেব কষছে এরা প্রকৃত শিক্ষা বলতে বোঝে কতকগুলো কাগজ, মনুষ্যত্বের বিকাশ হওয়া তে এদের এখনও   অনেক বার মনুষ্য জন্ম নিতে হবে।এদের মানুষ রূপের  বিবর্তন সেদিন হবে যখন একটাই জাতি হবে --। মানুষ। আর গোত্র হবে _মনুষ্যত্ব  । সে চোখ টা বন্ধ করলো ক্লান্তি তে । সারারাত সেও জেগেছিল হাসপাতাল এ। 

   বাড়িতে শাশুড়ি কে নিয়ে তার বর আসলে সে কাছে আসতে শাশুড়ি তার হাত ধরে বলল---এ যাত্রায়  তোমার জন্য বেঁচে ফিরতে পারলাম।তুমি রক্ত না দিলে তোমাদের কাছে ফিরতে হতো না ।। 

তপস্যা বললো .. ও কথা থাক মা। তার শাশুড়ি র চোখের জল বুঝিয়ে দিল এতদিন যা করেছে তার জন্য সে লজ্জিত।

    তপস্যা  বুঝলেও সে প্রকাশ করলো না নিজেকে ।কিছু ক্ষ্ত থেকে যায় অনেকদিন । শুকিয়ে গেলেও যেমন দাগ  থেকে যায়, কাঁচ  ও জোড়ে না।। জুড়লে ও তার চির খাওয়া দাগ মনে করিয়ে দেয় সেও ভেঙে ছিল।সম্পর্ক তেমন ই। মন সে শক্ত করে । কারণ বিশাল পৃথিবী তে যে অনেক কাজ তার বাকি। ক্ষুদ্র গণ্ডি ছেড়ে বৃহৎ ব্রম্ভান্ড এ তো তাকে বেরোতেই হবে বিপুল আনন্দে এর খোঁজে।নিজেকে বিলিয়ে দেবার সময় এখন তার এসেছে। অনেক কাজ যে এই জনমে তার করার আছে । বিপুল তরঙ্গে তাকেও যে আর্ত মানুষ আর তার কাছের বন্ধু গাছ দের নিয়ে ভাসা র সময় এসেছে......

  সে যে এক আলোক তরঙ্গের হদিস পেয়েছে তার 'পরশ' এর মত সেচ্ছাসেবি সংস্থা র কাছে যারা পুরুলিয়া তে উপজাতি মানুষ দের উন্নতির জন্য কাজ করছে। এই তরঙ্গ যখন আলোক রূপে প্রকাশিত হয় তা উজ্জ্বল ,আর এই তরঙ্গ জীবনে প্রকাশিত হলে টা চঞ্চল। তাই তো গাইতে ইচ্ছে করে...

বিপুল তরঙ্গ রে, বিপুল তরঙ্গ রে।
সব গগন উদ্‌বেলিয়া-- মগন করি অতীত অনাগত
আলোকে-উজ্জ্বল জীবনে-চঞ্চল      একি আনন্দ-তরঙ্গ ॥
          তাই, দুলিছে দিনকর চন্দ্র তারা,
          চমকি কম্পিছে চেতনাধারা,
আকুল চঞ্চল নাচে সংসারে,              কুহরে হৃদয়বিহঙ্গ ॥
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 2  Canada : 22  China : 8  France : 4  Germany : 2  Hungary : 2  India : 195  Ireland : 40  Japan : 1  Philippines : 1  
Russian Federat : 9  Saudi Arabia : 5  Sweden : 12  Ukraine : 10  United States : 302  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 2  Canada : 22  China : 8  France : 4  
Germany : 2  Hungary : 2  India : 195  Ireland : 40  
Japan : 1  Philippines : 1  Russian Federat : 9  Saudi Arabia : 5  
Sweden : 12  Ukraine : 10  United States : 302  
লেখিকা পরিচিতি -
                          নন্দিতা সরকার ১লা জানুয়ারি দক্ষিণ পরগণা জেলার সোনারপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি একজন গৃহবধূ হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষকতার সাথেও যুক্ত। এর পাশাপাশি তিনি সাহিত্য চর্চাতেও সমান আগ্রহী। কবিতা লেখা তাঁর ভীষণ প্রিয়, এর সাথে সাথে তিনি স্কুলে গীতি আলেখ্যও লেখালেখি করেন। কিশলয় পত্রিকার মাধ্যমেই তাঁর প্রথম অনলাইন পত্রিকায় লেখালেখি করার আত্মপ্রকাশ। 
                          
© কিশলয় এবং নন্দিতা সরকার কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
বিবর্তন by Nandita Sarkar is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৪১৭
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী