ভূতুড়ে প্রতিশোধ
আনুমানিক পঠন সময় : ৫ মিনিট

লেখক : দেবমাল্য মুখার্জী
দেশ : India , শহর : Kolkata

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ১৩ টি লেখনী ১৭ টি দেশ ব্যাপী ২৫৩৮ জন পড়েছেন।
Debmalya Mukherjee
ভূতুড়ে প্রতিশোধ
দেবমাল্য মুখোপাধ্যায়
(১)
গ্রামের নাম পাতিপুকুর। গ্রামের পাশ দিয়ে ছোট্ট একটা নদী বয়ে গেছে, নদীর নাম শিউলি। নদীর পাশ দিয়ে একটা মেঠো রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তার শেষে আছে একটা পুরানো বাড়ি। লোকে বলে বাড়িটা না কি গ্রামের জমিদার রাজনারায়ন সিংহের ছিল। রাজনারায়ন সিংহের নামে বাঘে গরুতে একঘাটে জল খেত। ওনার মত অত্যাচারী জমিদার খুব কমই ছিল। কিন্তু ওনার একটা দুর্বল জায়গা ছিল, সেটা হল ওনার মেয়ে চাপা। চাপাকে একদম চোখের মণি করে রাখত জমিদার বাবু। ছোট থেকেই চাপার কোনো ইচ্ছাই অপূর্ন রাখত না জমিদার বাবু। চাপার একটি ভাই ছিল তার নাম ছিল সূর্যনারায়ণ। সূর্য্যনারায়ণও ছিল তার বাপের মত অত্যাচারী। এই গ্রামেই থাকত নটবর বারুজ্যে বলে এক নিষ্ঠাবান ব্রাম্ভন ছিল। এই ব্রাম্ভনের ছিল একটি মেয়ে। তাঁর নাম ছিল সুভা। সুভার মত সুন্দরী মেয়ে পাতিপুকুর গ্রামে আর দ্বিতীয় একটি ছিল না। ঘন কালো মেঘের মত চুল। সরু কটিদেশ, সুডৌল স্তন। এককথায় পুরো সুন্দরী ছিল এই সুভা। দেখতে দেখতে জমিদার মারা গেল। নতুন জমিদার হয়ে আসল সূর্যনারায়ণ। এই সূর্য্য নারায়নের একমাত্র সঙ্গী ছিল রবিন। রবিন ছোট থেকেই খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি এইসবে সিদ্ধহস্ত ছিল। তো সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। গায়ের পাশে যে বাঁশবাগান ছিল সেই বাঁশবাগানেই ছিল সূর্যনারায়নের ডেরা। তো সেদিন গ্রামের একটি গরিব মেয়েকে ধরে এনেছিল সূর্যনারায়ণ ফুর্তি করবে বলে। তো সূর্যনারায়ণ আর তার বন্ধুরা মিলে মেয়েটাকে গনধর্ষণ করে যখন খুন করতে যাবে, ঠিক সেই সময় সুভা সেখান থেকে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা মেয়ের চিৎকার শুনে সুভা সেই চিৎকার অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে দেখে সূর্য নারায়ণ সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে মেয়েটার সঙ্গে সঙ্গম করার চেষ্টা করছে। সেটা দেখে সুভা একছুটে গ্রামে গেল। আর গ্রামের মোড়ল সদানন্দ হাজরা কে সব বলল। পরেরদিন গ্রামের ফাঁসিতলায় বিচার বসল সূর্যনারায়নের। সূর্যনারায়নের বিরুদ্ধে সব গ্রামবাসী তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করল। বিচারে সূর্যনারায়নের ফাঁসি হল ও তারপর সূর্য নারায়নকে পুড়িয়ে মারা হল। ফাঁসি তে যাওয়ার আগে সূর্যনারায়ণ সুভা কে বলে গেল যে আজ তোর জন্য আমি ফাঁসিতে ঝুললাম, মনে রাখিস আমি আবার ফিরে আসব। আর যেদিন ফিরে আসব সেদিনই হবে তোর জীবনের শেষরাত। 

(২)
ফাঁসি দিয়ে সবাই চলে যাওয়ার পর রবিন গাছে উঠে সূর্যনারায়নের মৃতদেহ নামিয়ে আনল। রবিন সেই মৃতদেহ নিয়ে চলে গেল পাশের গ্রামে। সেখানে এক পিশাচ সিদ্ধ তান্ত্রিক আছে। তার নাম লালবাবা।লালবাবার সঙ্গে রবিনের ভালোই বন্ধুত্ব ছিল, কারণ শব সাধনার জন্য বেআইনি ভাবে লাশ এনে দিত লালবাবাকে এই রবিন। রবিন গিয়ে লালবাবাকে সব কিছু খুলে বলল, সব শুনে লালবাবা বলল, চিন্তা মত কর বেটা, হামি জরুর কুছ করবে। এই বলে লালবাবা মন্ত্রপুত বরফের একটা চাই আনল। আর সেখানে সূর্যনারায়নের মৃতদেহ শুয়ে রাখল। আর বলল, বেটা আগামী অমাবস্যায় তুই আয়।  হামি ওইদিন তোর দোস্তের নয়া জীবন দেবে। রবিন বলল, ওই জন্যই তো আপনার কাছে এসেছি বাবা। কারণ আপনিই একমাত্র পারেন আমার এই বন্ধুটিকে নতুন জীবন দিতে। লালবাবা বলল, ওর এক বাত বেটা , আমার একটা টাটকা কুমারী যুবতী চাই, ওর বলি চড়িয়ে সেই রক্ত দিয়ে স্নান করাব তোর বন্ধুকে। আর তোর বন্ধু নিজেকে সমর্পণ করবে শয়তানের দূত হিসাবে। ওর বেঁচে থাকার রসদ হবে যুবতী মেয়ের রক্ত। প্রতি অমাবস্যার রাতে ও যত যুবতী মেয়ের রক্ত খাবে। তত তাড়াতাড়ি ও নিজের ভালো রূপ ফিরে পাবে। কারণ ওটাতেই ওর পুড়ে যাওয়া রূপ কমে গিয়ে আবার আগের রুপ ফিরে পাবে। কিন্তু অমাবস্যা ব্যতীত অন্য কোনোদিন যদি ও রক্ত পান করে তাহলে কিন্তু ও আবার আগের রূপ ফিরে পাবে।

(৩)
অবশেষে অমাবস্যার দিন এল। লালবাবার সামনে হোমকুন্ড জ্বলছে। আর হোম কুণ্ডের সামনে একটা নগ্ন যুবতী শুয়ে আছে। লালবাবা দুর্বোধ্য স্বরে কিসব মন্ত্র পড়ছে। আর মাঝে মাঝে ঘি ঢালছে আগুনে। আর বারবার কারণবারী সেবা করছে। হঠাৎ মন্ত্র বন্ধ হয়ে গেল। জোরে জোরে ঢাক, কাসর বাজতে লাগল। লালবাবা যুবতী মেয়েটিকে একটি লাল রঙের কাপড় পড়ালো। আর মেয়েটির মাথা দিল হারিকাঠে। এক কোপে মেয়েটির মুন্ড নামিয়ে দিল । মুন্ডটা কাটার পর সেটা নাচতে নাচতে আবার জুড়ে গেল মেয়েটির ধরে। মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে অট্টহাসি হাসতে লাগল। আর মেয়েটির মুখের দুই পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসল স্ব-দন্ত, আর পিঠের দুইপাশে বেরিয়ে আসল বাদুড়ের মত ডানা। মেয়েটি উড়ে গিয়ে সূর্য নারায়নের উপর পড়ল, আর রক্ত খেতে লাগল। আসতে আসতে সূর্যনারায়ণ বেঁচে উঠল ড্রাকুলা হয়ে।
(৪)
লালবাবা সূর্যনারায়নের সঙ্গে মেয়েটির বিবাহ দিয়ে দিল। আর গ্রামের বাইরে মায়াবলে তৈরি করল এক প্রাসাদ। সেই প্রাসাদেই থাকতে লাগল মালবিকা আর সূর্যনারায়ণ। এইভাবে অনেক বছর কেটে গেল। সবাই ভুলে গেল সূর্যনারায়নের কথা। হঠাৎ গ্রামের বাইরে একটা যুবতী মেয়ের লাশ পাওয়া গেল, তার গলায় কে যেন দাঁত ফুটিয়ে সব রক্ত পান করেছে। এই ভাবে প্রতি অমাবস্যার রাতে গ্রাম থেকে উধাও হতে লাগল একের পর এক যুবতী, আর তাদের প্রত্যেকের গলাতে সেই একই দাগ। গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হল। 

(৫)
এইবার আসি সুভার কথায়। নটবর মারা যাওয়ার আগে সুভাকে শিখিয়ে দেয় তন্ত্রবিদ্যা। সেই তন্ত্রবিদ্যা দিয়ে সুভা উপকার করে গ্রামবাসীদের। সবাই সুভাকে মাতাজি বলে ডাকে। গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে সুভার শরণাপন্ন হয়। সুভা সব শুনে চোখ বুজে ফেলে আর তারপর নিজের মনের শক্তি দ্বারা সবকিছু জানতে পারে। সবকিছু জেনেই সুভা বলে আজ থেকে দশ বছর আগেকার কথা। বলেই সুভা পুরো গল্পটা বলে সব গ্রামবাসীদের। এই গ্রামবাসীদের মধ্যে ই ছিল একজন বুড়ো মত লোক। সে সুভার কথা শুনে বলল, হ্যা আজও মনে আছে সেই দিন। শয়তান সূর্যনাড়ায়ন মারা যাওয়ার আগে বলেছিল যে সে আবার ফিরে আসবে। তাহলে সে সত্যিই ফিরে আসল না তো। আর এইভাবেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ওই সূর্যনারায়ণ। 
(৬)
গ্রামবাসীরা তখন বলল, তাহলে এর থেকে বাঁচার উপায়। সুভা বলল, তবে ও এই কাজ করছে না। ও কারোর মদতপুষ্ট হয়ে এই কাজ করছে। এই বলে সুভা ঘরের ভিতরে গেল, আর একটা কিলক নিয়ে এল। 

সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত। যথারীতি রবিন নতুন শিকার খুঁজতে বেরিয়েছে। হঠাৎ তার নজর পড়ল সুভার দিকে। সুভার পরনে শুধুমাত্র সায়া আর ব্লাউজ। রবিন সুভাকে দেখেই পিছন দিক থেকে জাপটে ধরল। আর নিয়ে গেল সেই ভাঙা প্রাসাদে। সুভা ঘরে ঢুকেই কিলক টা ছুড়ে মারল মালবিকার বুক লক্ষ করে। কিলক গিয়ে সোজা ঢুকল মালবিকার বুকের ভিতর। মারা গেল মালবিকা। রবিন কে এক ঘুষি তে অজ্ঞান করে সুভা গেল ভিতরের ঘরে। সেখান থেকে চুলের মুঠি ধরে সূর্যনারায়ন কে নিয়ে আসল গ্রামবাসীদের সামনে। কিন্তু ততক্ষণে সূর্যনারায়ণ সুভার গলায় নিজের দাঁত ফুটিয়ে দিয়েছে। দেখতে দেখতে ভোর হয়ে গেল। সবাই দেখল তিনটে জ্যোতি বলয় হাতধরাধরি করে আকাশে উঠে গেল। এই ভাবেই পাতিপুকুরের আতঙ্ক শেষ হল।
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং দেবমাল্য মুখার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 2  China : 12  France : 4  Germany : 1  India : 86  Russian Federat : 7  Sweden : 12  Ukraine : 10  United States : 57  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Bangladesh : 1  Canada : 2  China : 12  France : 4  
Germany : 1  India : 86  Russian Federat : 7  Sweden : 12  
Ukraine : 10  United States : 57  
© কিশলয় এবং দেবমাল্য মুখার্জী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
ভূতুড়ে প্রতিশোধ by Debmalya Mukherjee is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৩৭৭৬১১
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী