জীবন দর্শন (পঞ্চম পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : সনৎকুমার পুরকাইত
দেশ : India , শহর : ডায়মন্ডহারবার

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৯৭ টি লেখনী ৪০ টি দেশ ব্যাপী ৩৭৩৭৬ জন পড়েছেন।
প্রিয় পাঠক আজ জীবন দর্শনের পাতায় একটি প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সবার সামনে তুলে দিলাম। হয়তো এমন প্রশ্ন অনেকের মনে ঘোরাফেরা করে।

অভিজিৎঃ আচ্ছা, প্রবাদ কথা অনুযায়ী কর্মই যদি ফল হয় তবে- বৃদ্ধাশ্রমের মানুষদের কোন কর্মের ফল? বা একজন ঘুষ দেওয়া চাকরীধারী(প্রতিযোগিতার যোগ্যতা ছাড়া উত্তীর্ণ) তিনি কোন কর্মযোগের ফল? একটু বৃত্তান্ত যদি বলা যেত.........

উত্তরঃ দেখ অভিজিৎ, এই জগতে কারণ ছাড়া কোন কাজ সম্পন্ন হয় না। যা কিছু প্রবাদ প্রবচন তার কিছুটা আঞ্চলিক জনজাতির মুখে মুখে রটেছে। তার পিছনে সংস্কার থাকতে পারে যেমন, তেমন লুকিয়ে থাকতে পারে যুক্তিবাদ। কিছু আছে খনার বচন, কিছু আছে চাণক্যের শ্লোক। তার বাইরে বর্তমান আছে শাস্ত্রের বচন। যেমন কর্ম তেমন ফল যদি বলো, তাহলে সেই সত্যতা রয়েছে বটে। কর্মের উপর বিচার করে চিরকাল ফলাফল তৈরি হয়ে এসেছে। সে কুকর্ম হোক আর সুকর্ম, সব কর্মের একটা ফল আছে।

  তোমার বক্তব্য অনুযায়ী, বৃদ্ধাশ্রমের অসহায় মানুষের কি দোষ? তাঁরা কোন কর্মের ফলে এমন দোষে দুষ্ট? সকল পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলি মানুষ বৃদ্ধ হলে তাঁকে দেখভাল করেন তাঁর সন্তান। কিন্তু সেই সন্তান যদি ঠিকঠাক নৈতিক শিক্ষায় না বড়ো করতে পারেন, তাহলে সে সন্তান বাবা মা কে বৃদ্ধকালে দেখেন না। নিজে না প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে, সেই সন্তান উচাটন হয়ে যায়, সমাজের মূল স্রোত থেকে ছিটকে যায়। জড়িয়ে পড়ে অত্যাচার, অনাচার আর ব্যাভিচারে। সে সন্তান হয় দুরাচার, সমাজবিরোধী। তাঁর কাছ থেকে সেবা প্রত্যাশা করা একেবারে অন্যায়। যে সন্তান নিজে খেতে পায় না, তাঁর নৈতিক শিক্ষা থাকলে নিজে না খেয়ে বাবা মা কে খাওয়াবেন। নইলে সম্পদের প্রাচুর্যে ডুবে থেকেও বাবা মা কে বঞ্চিত করবে জীবনের সুখ থেকে। সে সন্তান অন্ধ। যে নিজে চোখে দেখতে পায় না, সে কি করে অন্যকে আলো দেখাবে? সন্তানকে এমনভাবে মানুষ করতে হবে যে লোকের কাছে তাঁর জন্য বাহবা পাওয়া যাবে, আর সেই কারণে জন্মদাতা হয়ে উঠবে বাবা। সব জন্মদাতা কিন্তু বাবা হয় না। এখানেই কর্মের ফের। কর্ম যদি ঠিক থাকে তাহলে সুফল পাবেন।
.
  আবার আপনি দেখবেন, কোন বৃদ্ধ বাবা মা যদি যৌবনে তাঁর বাবা মাকে সন্তানের সামনে নিগ্রহ করেন কিংবা দায়িত্ব অস্বীকার করে নিজ সুখ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত থাকেন। সেক্ষেত্রে সেই শিশুমন তেমন রুক্ষ্ম স্বভাব অর্জন করতে থাকেন। সেদিন সেই পিতামাতা ভাবেন না যে তাঁরাও একদিন বৃদ্ধ হবেন, সমস্ত সামর্থ্য হারিয়ে একদিন তাঁদের সন্তানের দারস্থ হতে হবে। সেদিনের সেই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা না করায়, তাঁদের ভবিষ্যতের আলো দায়িত্ব নিয়ে তাঁরা নিভিয়ে দেন। এবার আসি উল্টোপুরানে, সন্তান সুপ্রতিষ্ঠিত, উচ্চ আয়, বিদেশে থাকেন। ফলে বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে হয়। এক্ষেত্রেও সন্তানকে প্রতিষ্ঠা ও উপার্জনের যন্ত্র তৈরি করেছেন, সমাজবদ্ধ জীব তৈরি করেন নি। টাকা আছে, আবেগ নেই। যোগাযোগ আছে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন। এর পশ্চাতে কিন্তু অবস্থান করে সেই যৌবনের পিতামাতা। তাঁদের কর্মের ফেরে ফল ভোগ করতেই হয় তাঁদের।

  অনেক মানুষ নিঃসন্তান থেকে যান শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে। তাঁদের অনেকেই আবার অন্যের সন্তানকে দত্তক নেন। সেক্ষেত্রেও দেখা যায় তাঁদের অনেককেই বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে হয়েছে শেষ জীবন। কেন? সেখানেও দেখা যায় তিনি সেই দত্তক নেওয়া সন্তানকে কোন একটা স্বার্থপূরণে এনে পালন করেছিলেন। তাই তাকে কোনদিন মন থেকে আপন করতে পারেন নি। দেন নি প্রকৃত শিক্ষা। ফলে সেই সন্তান বড় হবার সাথে সাথেই পালক পিতা মাতা অপেক্ষা প্রতিবেশীর কথা শুনে চলতে বেশী পছন্দ করেন এবং বিশ্বাস করেন যে তিনি ঐ পিতামাতার সন্তান নন। ফলে তাঁর মনে জন্মায় একটা বীতশ্রদ্ধ মনোভাব। ভেঙ্গে যায় বাবামায়ের এতদিনের স্বপ্ন। আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, এপিজে আব্দুল কালাম, রতন টাটা প্রমুখের সন্তান ছিল না। কারণ এঁদের মধ্যে প্রথম দুজন বিয়ে করলেও আধ্ম্যাত্মিক জগতের ডাকে সাড়া দিতে ডুবে যান ভাবসাগরে আর পরের তিনজন তো বিয়েই করলেন না। সেক্ষেত্রে তাঁদের জীবনে এই বৃদ্ধাশ্রম বা সন্তানের অভাব যন্ত্রণা লাগে নি। কারণ সমাজের প্রতি এরা এতটা দায়বদ্ধ ছিলেন যে এই অভাব পূরণ করে দিয়েছিলেন শতসহস্র গুণমুগ্ধ ভক্ত। তাঁরা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে আসেন নি, তাই তাঁদের এই বিশ্বসংসারের পার্থিব জ্বালা স্পর্শ করতে পারে নি। রতন টাটা এখনও বেঁচে। তিনি এধরণের কাজে এখনও লিপ্ত। অন্যেরা তো বার্ধক্যে পৌঁছালেন না, কর্ম জগতে থাকতে থাকতে চলে গেলেন। জন্মই সন্ন্যাস, কর্মই ধর্ম আর মৃত্যুই ত্যাগ। তাই কর্ম করার সামর্থ্য যতদিন তাহা অপেক্ষা বাঁচার মধ্যে কোন মহিমা নেই। তখন গলগ্রহ হয়েই থাকতে হয়।

  নীতিশাস্ত্র যারা মেনে চলেন নি তাঁরা নৈতিক জ্ঞানের স্পর্শ যেমন পান নি, তেমন পরবর্তী প্রজন্মকে তা প্রদান করতে পারেন নি। মহাজন বলেন, আমরা অতীতের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ হয়ে বর্তমানের আলোকে আলোকিত হয়ে ভবিষ্যতের পথে পাড়ি দিতে থাকি। তাই যার অতীত ভালো না, তিনি যদি বর্তমানটা নিজের চেষ্টায় ভালো না করে তাঁর ভবিষ্যৎ ঘুণাক্ষরে ভালো হয় না। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি ভালো না হয়, তাহলে তাঁর থেকে বর্তমান প্রজন্ম কিভাবে নৈতিকতা প্রত্যাশা করতে পারে? তাই এমন জীবনচর্চা করতে হবে যাতে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত যেন স্বামীজি বা আব্দুল কালাম মহাশয়ের মত কর্ম করে যেতে পারা যায়। সেখানেই মানুষের বেঁচে থাকা। কর্মের মাঝে মানুষের অমরত্ব। আমরা যারা এই পোষ্ট পড়লাম, চেষ্টা করব নিজেদের পিতামাতাকে সেবা করার এবং আমাদের সন্তানদের সেই সেবার শিক্ষা প্রদান করার। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

(পরের প্রশ্নের উত্তর পরের পর্বে ............)
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 5  France : 1  Germany : 1  Hungary : 1  India : 87  Ireland : 1  Russian Federat : 12  Saudi Arabia : 3  Sweden : 12  
Ukraine : 3  United States : 58  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 2  China : 5  France : 1  Germany : 1  
Hungary : 1  India : 87  Ireland : 1  Russian Federat : 12  
Saudi Arabia : 3  Sweden : 12  Ukraine : 3  United States : 58  
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
জীবন দর্শন (পঞ্চম পর্ব) by Sanat Kumar Purkait is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৪৮৫০৯৯
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী