জীবন দর্শন (চতুর্থ পর্ব)
আনুমানিক পঠন সময় : ৪ মিনিট

লেখক : সনৎকুমার পুরকাইত
দেশ : India , শহর : ডায়মন্ডহারবার

কিশলয়তে প্রথম আত্মপ্রকাশ - ২০২০ , জুন
প্রকাশিত ৯৭ টি লেখনী ৪০ টি দেশ ব্যাপী ৩৭৮০৯ জন পড়েছেন।
  প্রিয় পাঠক, এর আগের একটা পোস্টে আমি বলেছিলাম যে বটগাছের থেকে জীবের জীবন দর্শন পাওয়ার আছে। অনেক ছাত্রছাত্রী ও পাঠকের আবদারে সেই তত্ত্ব আজ প্রকাশ করতে এলাম। আগেও বলেছি ভণ্ডামি আর গোঁড়ামি বাদ দিলে আমাদের ধর্মীয় বিধান আর নীতিশাস্ত্রের নির্দেশ জগতজীবের কল্যাণের মার্গ করে উন্মোচন। সেই পথে আমরা যদি এগিয়ে চলতে পারি জীবন হবে নিয়ন্ত্রিত, যুক্তিসম্মত ও ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য নমস্য। বাইরে থেকে দেখলে এইসকল বিষয় অনেকের কাছে এক তথ্য বলে মনে হতে পারে, কিন্তু অন্তর দিয়ে অনুভব করার ক্ষমতা অর্জন করলে এর মধ্যে নিগুঢ় তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন। খুঁজে পাবেন জীবন গঠনের আসল রসদ, সে আপনি যে ধর্মে বিশ্বাস করুন না কেন, চলার পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য সবার এক। এবার যে যেমন মার্গে নিজেকে প্রতিস্থাপিত করেন তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে তেমন সময় লাগে।

  এবার আসি আসল কথায়। আমরা সবাই বটগাছ চিনি, মানে দেখেছি। বিশেষ করে যারা গ্রামে থাকি তাঁরা সবাই এই বটগাছের মহিমা অন্তর দিয়ে জানি। এই বটগাছ হল আমাদের আশেপাশে যত বৃক্ষ দেখা যায় সে সকল বৃক্ষের শ্রেষ্ঠ বৃক্ষ বলে পরিগণিত। কিন্তু মজার বিষয় এত বড় বৃক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এই বটবৃক্ষের নীচে কোটি কোটি বটের বীজ পড়ে থাকলেও একটা বটের চারা জন্মায় না। বিজ্ঞান এর কারণ হয়তো অন্যভাবে বের করবে কিন্তু আমি আজ আলোচনা করবো একটা রূপক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। আপনারা ভাবুন কেউ দেখেছেন কোনদিন যে বটের তলায় কোন বটের চারা জন্মাতে? দেখেন নি, দেখবেনও না। কিন্তু ঐ বটের বীজ যদি কোন পক্ষী ভক্ষন করে বিষ্ঠা ত্যাগ করে এবং সেই বিষ্ঠা যদি গাছের ডালে কিংবা কংক্রিটের ছাদে গিয়ে পড়ে সেখানে দেখা যায় বটের চারা জন্ম নিয়েছে অর্থাৎ বটের বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটেছে। সেখানে জীবনের নিয়ম অনুযায়ী মৃত্তিকা বা জলের সদা উপস্থিতি না থাকলেও চলে। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন পুরানো মন্দির বা বাড়ির দেওয়াল, ছাদ বা গাছের ডালে এহেন বটের গাছ বিদ্যমান থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরবর্তীকালে এই বটগাছের বিকাশের সাথে সাথে সেই বাড়ি বা প্রাচীন মন্দির ধ্বংস হতে বসেছে। এবার নিম্নগোত্রীয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রে যেমন খেজুর, তেঁতুল বা আম, জামগাছ ইত্যাদির বীজ সেই গাছের নীচে পড়লে সেখানে তার অঙ্কুরোদগম ঘটে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। ব্যতিক্রম এই বটবৃক্ষের ক্ষেত্রে। এর থেকে কোন জীবন দর্শন উঠে আসে? আসুন এবার জেনে নিই।

  একদা ক্লাস নিতে গিয়ে একটি ধনী পরিবারের ছেলে বলেছিল যে স্যার আমার কলেজে না আসলেও চলে, কারণ আমার বাবা ইচ্ছে করলে আমার জন্য সব বিষয়ে এক একজন গৃহশিক্ষক রাখতে পারেন। সে ছেলের মধ্যে প্রচুর দাম্ভিকতা, অর্থের অহমিকা। পিতার সুত্রে প্রাপ্ত। সেইক্ষেত্রে এই বটবৃক্ষের দর্শন পুরোপুরি কার্যকরী। আমরা যারা উচ্চপদাধিকারীর সন্তান, কেউ আমরা যেমন বড়াই করে বলতে পারি না যে আমি আমার বাবার মত পদাধিকারী হবই হব, তেমনি কোন উচ্চপদাধিকারী পিতাও গর্বের সাথে বলতে পারেন না যে আমার সন্তান আমার মত শিক্ষক, অধ্যাপক, ডক্টর কিংবা ব্যারিস্টার হবেই হবে। তিনি ভালোবেসে বলতে পারেন যে আমি আমার সন্তানকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করবো যাতে সে আমার মতো ডক্টর হতে পারে। এটা হল তাঁর ইচ্ছে, অধিকার নয়। কিন্তু, যে পিতা চা দোকানদার, ভ্যানচালক কিংবা সব্জিবিক্রেতা, তাঁদের সন্তান কিন্তু না চাইলেও তাঁদের মত হয়ে যেতে পারে ঠিক ঐ আম, জামের মত নিম্নগোত্রীয় বৃক্ষের মত। কঠিন সদিচ্ছা আর একান্ত সাধনার বলে বলীয়ান হলে তবে দেখা যায় অন্যথা ঘটে থাকে। ঘটেও, অনেক পিছিয়ে পড়া পিতার সন্তান আইএএস অফিসারও হয়েছেন। সেটাই তাঁদের সাধনা।

  ঐ বটের বীজ যেমন পাখির পেটের মধ্যে যে তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসে যেমন অঙ্কুরোদগম হয়, ঠিক তেমন আপনার যতই টাকা থাকা প্রতিপত্তি থাক আপনার সন্তানকে শিক্ষা নামক আঙ্গিনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানস্বরূপ পাখির পেটের মধ্যে শিক্ষকের জ্ঞানরূপ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসার মধ্যে দিয়ে আপনার সন্তানের প্রতিষ্ঠা মিলবে। যারা কেবল অর্থের অহমিকা ছেড়ে এই নৈতিক শিক্ষার মধ্যে থেকে এগিয়েছেন তাঁরা পিতার থেকে আরও বড় পদাধিকারী হয়েছেন। তাই শুধু পিতৃপরিচয় দিয়ে নিজের জায়গা করা যায় না, নীতিশিক্ষা আর আদর্শকে অবলম্বন করে বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর মাঝে নিজেকে তৈরি করতে হবে। সেখানে আসেন ভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন সংস্কৃতির ধারক বাহক। সেই সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে হবে আর তাতেই স্নান করে নিজেকে পবিত্র করলে অর্থের অহমিকার সাথে নিজের সঙ্কীর্ণতা দূর হবেই হবে। সেদিন একজন অধ্যাপক, ডক্টর, ব্যারিস্টার চিৎকার করে বলতে পারবেন, নিশ্চিন্ত হতে পারবেন যে আমার সন্তান আমার মতই হবে, যেদিন বটবৃক্ষের তলায় বটের বীজ পড়ে বটের মত বিরাট মহীরুহের জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটবে। শুধু বড় হলেই তো হয় না, বড় মন থাকা চাই। তাই তো ঠাকুর রামকৃষ্ণ বললেন, ওরে নরেন বটগাছের মত হয়ে ওঠ, যেখানে সংসার জ্বালায় পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া জীব এসে একটু শীতল ছায়ার জন্য আশ্রয় নেবেন। কাঠবিড়ালি বা পাখির মত কিছু প্রাণী এসে মলমুত্র ত্যাগ করলেও কোন ক্ষতি নেই। নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে গেলে কাঠবিড়ালি বা পাখির মতো যে সকল মানুষ আপনার মনকে বা জীবনকে নোংরা করতে আসে তাঁদেরকে এড়িয়ে যান, কারণ আপনার ছত্রছায়ায় অনেক মানুষ উপকৃত হন। তাঁরাই আপনার জীবন ও কর্মকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আপনি মরেও বেঁচে থাকবেন। এই দর্শন আপনাকে অমরত্ব প্রদান করবে।
রচনাকাল : ১৫/৬/২০২০
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

শেয়ার করুন    whatsapp fb-messanger fb-messanger



যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 4  France : 1  Germany : 1  India : 83  Ireland : 2  Russian Federat : 9  Sweden : 11  Ukraine : 3  United States : 65  
যেখান থেকে লেখাটি পড়া হয়েছে -


Canada : 3  China : 4  France : 1  Germany : 1  
India : 83  Ireland : 2  Russian Federat : 9  Sweden : 11  
Ukraine : 3  United States : 65  
© কিশলয় এবং সনৎকুমার পুরকাইত কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
জীবন দর্শন (চতুর্থ পর্ব) by Sanat Kumar Purkait is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivs 3.0 Unported License Based on a work at this website.

অতিথি সংখ্যা : ১০৫০৭০৩৫
  • প্রকাশিত অন্যান্য লেখনী